পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্রয়-বিক্রয়ের শর্তসমূহ
২৮৭৯-[৫] মাখলাদ ইবনু খুফাফ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি দাস কিনেছিলাম এবং তার মাধ্যমে কিছু উপার্জনও করিয়েছিলাম। অতঃপর আমি তার মধ্যে একটি দোষ সম্পর্কে অবগত হলাম এবং শাসনকর্তা ’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ)-এর কাছে আমি তার বিষয়ে অভিযোগ করলাম। তিনি বিচার করলেন যে, আমি তাকে ফেরত দিতে পারবো, তবে অবশ্যই তার দ্বারা উপার্জিত সব কিছুই আমাকে ফেরত দিতে হবে। আমি ’উরওয়াহ্ (রহঃ)-এর নিকট এ রায় জানালাম। তিনি বললেন, আমি সন্ধ্যাকালেই শাসনকর্তার নিকট যাবো এবং তাঁকে অবহিত করবো। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) আমাকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় ঘটনায় রায় দিয়েছেন যে, উপার্জিত আয় তার তত্ত্বাবধান ব্যয় বলে সাব্যস্ত হবে। ’উরওয়াহ্ (রহঃ) সন্ধ্যাকালেই ’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ)-এর কাছে গেলেন। এমতাবস্থায় তিনি বিচার করলেন যে, উক্ত উপার্জিত আয় তিনি পূর্বে (প্রথমে) যাকে দেয়ার জন্য আদেশ করেছিলেন তার কাছ থেকে আমি যেন তা ফেরত নেই। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
عَنْ مَخْلَدِ بْنِ خُفَافٍ قَالَ: ابْتَعْتُ غُلَامًا فَاسْتَغْلَلْتُهُ ثُمَّ ظَهَرْتُ مِنْهُ عَلَى عَيْبٍ فَخَاصَمْتُ فِيهِ إِلَى عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَقَضَى لِي بِرَدِّهِ وَقَضَى عَلَيَّ بِرَدِّ غَلَّتِهِ فَأَتَيْتُ عُرْوَةَ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ: أَرُوحُ إِلَيْهِ الْعَشِيَّةَ فَأُخْبِرُهُ أَنَّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَضَى فِي مِثْلِ هَذَا: أَنَّ الْخَرَاجَ بِالضَّمَانِ فَرَاحَ إِلَيْهِ عُرْوَةُ فَقَضَى لِي أَنْ آخُذَ الْخَرَاجَ مِنَ الَّذِي قَضَى بِهِ عَلَيِّ لَهُ. رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ
ব্যাখ্যা: ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, বিচারক যখন কোনো বিচার কার্যে ভুল করবেন, অতঃপর ভুল প্রমাণিত হলে পুনরায় সঠিক বিচার করা আবশ্যক। যেমন ‘উমার বিন ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) করেছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্রয়-বিক্রয়ের শর্তসমূহ
২৮৮০-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যদি কোনো মতবিরোধ দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে বিক্রেতার কথা অগ্রাধিকার হবে এবং ক্রেতার জন্য অবকাশ থাকবে। (তিরমিযী)[1]
ইবনু মাজাহ ও দারিমী-এর বর্ণনায় রয়েছে, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যদি মতবিরোধ দেখা দেয় এবং বিক্রিত দ্রব্য হুবহু সমুপস্থিত থাকে, আর কোনো পক্ষে সাক্ষী না থাকে, সেক্ষেত্রে বিক্রেতার কথা অগ্রাধিকার পাবে। অথবা উভয়ে ক্রয়-বিক্রয়কে বাতিল করে পরস্পর দ্রব্য ও মূল্য ফেরত দিয়ে দিবে।
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اخْتَلَفَ الْبَيِّعَانِ فَالْقَوْلُ قَوْلُ الْبَائِعِ وَالْمُبْتَاعُ بِالْخِيَارِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيِّ قَالَ: «الْبَيِّعَانِ إِذَا اخْتَلَفَا وَالْمَبِيعُ قَائِمٌ بِعَيْنِهِ وَلَيْسَ بَيْنَهُمَا بَيِّنَةٌ فَالْقَوْلُ مَا قَالَ الْبَائِعُ أَو يترادان البيع»
ব্যাখ্যা: যখন ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে মূল্য, বিক্রিত পণ্য কিংবা লেনদেনের কোনো শর্তের ব্যাপারে দ্বন্দ্ব দেখা দিবে, তখন বিক্রেতার কথা শপথের সাথে (অর্থাৎ বিক্রেতা শপথ করে তার দাবির পক্ষে কথা বলবে) গ্রহণযোগ্য হবে। যেমন শারী‘আতের কায়দায় বলা যায় যে, (أن مَن كان القول قوله فعليه اليمين) অর্থাৎ যার কথাই আসল বলে গৃহীত হবে, কসম তাকেই করতে হবে। সুবুলুস্ সালামেও অনুরূপ রয়েছে। আহমাদ, নাসায়ীর বর্ণনায় আবূ ‘উবায়দ হতে বর্ণিত রয়েছে, তার কাছে বিক্রেতা ও ক্রেতা বিক্রিত পণ্য নিয়ে আসলো এবং ক্রেতা বলল, আমি এটা এমন এমন বিনিময়ে গ্রহণ করেছি। আর বিক্রেতা বলল, আমি এটা এমন এমন কিছুর বিনিময়ে বিক্রি করেছি। (উভয় দাবি ভিন্ন ভিন্ন) অতঃপর ‘উবায়দাহ্ (রহঃ) বললেন, ‘আবদুল্লাহ এমন বিষয় নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এমন বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিক্রেতাকে শপথ করার নির্দেশ দিলেন এবং ক্রেতাকে ইচ্ছাধীন দিলেন। চাইলেই সে উক্ত পণ্য কিনতে পারে অথবা বর্জন করতে পারে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২৭০)
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্রয়-বিক্রয়ের শর্তসমূহ
২৮৮১-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুসলিম ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয় ভঙ্গ করবে (ফেরত দিবে), কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
এ হাদীসটি শারহুস্ সুন্নাহ্-এর মধ্যে মাসাবীহের শব্দ দ্বারা শুরাইহ, শামী মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَقَالَ مُسْلِمًا أقاله اللَّهُ عَثْرَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
وَفِي «شَرْحِ السُّنَّةِ» بِلَفْظِ «الْمَصَابِيحِ» عَن شُرَيْح الشَّامي مُرْسلا
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নগদ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বলেছেন, (إقالة البيع) বা বিক্রয় ভঙ্গ করার পদ্ধতি হলো, যখন কোনো ব্যক্তি কারো কাছে থেকে কিছু ক্রয় করল, অতঃপর সে চিন্তিত হয়ে পড়ল ক্রয়ের ব্যাপারে। হয়ত তা প্রতারণার আশংকায় কিংবা তার ওই পণ্যের প্রয়োজন না থাকায় অথবা মূল্য না থাকায় আত্ম-প্রবঞ্চনায় লজ্জিত হয়ে বিক্রেতাকে উক্ত পণ্য ফেরত দিল এবং বিক্রেতা তা গ্রহণ করল। আল্লাহ তা‘আলা প্রতিদানে তার জটিলতা দূর করে দিবেন কিয়ামতের দিন। কারণ তার (বিক্রেতা) পক্ষ হতে ক্রেতার ওপর ইহসান করা হয়েছে। কেননা বিক্রিত পণ্য বিক্রেতা ফেরত না নিলে তা ক্রেতার পক্ষে ফেরত দেয়া সম্ভব ছিল না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৪৫৭)