পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬১-[২৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি, বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন বিক্রি হওয়া দ্রব্য হতে অনির্দিষ্ট পরিমাণ কিয়দংশ বাদ রেখে ক্রয়-বিক্রয় করতে। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাদ রেখে বিক্রি করলে তা জায়িয। (তিরমিযী)[1]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الثُّنْيَا إِلَّا أنْ يُعلمَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, (اَلثُّنْيَا) হলো বাগানের ফল বিক্রি করা এবং সেই সাথে উক্ত বাগানের অনির্ধারিত কিছু অংশ আলাদা করা (অর্থাৎ- অনির্ধারিত কিছু অংশ বিক্রয়ের মধ্যে না রেখে তা স্বতন্ত্রভাবে নিজের জন্য রাখা)। এ ধরনের কেনা-বেচা বাতিল বলে গণ্য হবে। কারণ এতে বিক্রিত বস্তুতে অজ্ঞতা বা ধোঁকা রয়েছে। আর বিক্রিত বস্তু থেকে যদি নির্দিষ্ট কোনো অংশ আলাদা করা হয় যেমন বাগানের এক-চতুর্থাংশ অথবা বাগানের নির্দিষ্ট কয়েকটি গাছের ফল আলাদা করা হলে জায়িয হবে। কারণ তাতে কোনো ধরনের ধোঁকার সম্ভাবনা নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬২-[২৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালো না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আঙ্গুর ও হৃষ্টপুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত শস্যজাত দ্রব্য বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ; আর তারা উভয়ে এক বর্ণনায় আনাস হতে বর্ণনা করেছেন)[1]
মাসাবীহ সংকলক অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন যে, ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লাল বা হলুদ আকার ধারণ না করা পর্যন্ত খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি হাসান গরীব।
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَيْعِ الْعِنَبِ حَتَّى يَسْوَدَّ وَعَنْ بَيْعِ الْحَبِّ حَتَّى يَشْتَدَّ هَكَذَا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ عَنْ أَنَسٍ. وَالزِّيَادَة الَّتِي فِي المصابيح وَهُوَ قولُه: نهى عَن بيْعِ التَمْرِ حَتَّى تزهوَ إِنَّما ثبتَ فِي رِوَايَتِهِمَا: عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: نَهَى عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتَّى تَزْهُوَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث حسن غَرِيب
ব্যাখ্যা: এ মর্মে ‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেন, গাছেই খেজুর পরিপক্কতার পর তা খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করা নিষিদ্ধ। তবে তা দীনার বা দিরহাম কিংবা টাকা-পয়সা ইত্যাদির বিনিময়ে বিক্রি করা যাবে। আর পাকা খেজুর খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করা নিষিদ্ধ, তবে ‘আরা-ইয়া হলে এটি জায়িয। (بيع العاريا) ‘আরা-ইয়া নামক কেনা-বেচার আলোচনা অতিবাহিত হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩৭১)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬৩-[৩০] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের বিনিময়ে ঋণ ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। (দারাকুত্বনী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم نهى عَن بيع الكالئ بالكالئ. رَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيّ
ব্যাখ্যা: এটা হলো, কোনো ব্যক্তির ঋণ তার ক্রেতার ওপরে বিক্রি করা অপর ক্রেতার ঋণের বিনিময়ে কিছু বর্ধিত আদায়ের শর্তে বিক্রি করা।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬৪-[৩১] ’আমর ইবনু শু’আয়ব হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়না জাতীয় ক্রয়-বিক্রয় হতে নিষেধ করেছেন। (মালিক, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَيْعِ الْعُرْبَانِ. رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: আন্ নিহায়াহ্ গ্রন্থে রয়েছে যে, (بَيْعِ الْعُرْبَانِ) হলো পণ্য ক্রয় করার পর বিক্রেতার নিকট পূর্ণমূল্য পরিশোধ না করে আংশিক মূল্য এ শর্তে প্রদান করা যে, যদি ক্রয় সংঘটিত হয় তবে ক্রেতা পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে। আর যদি ক্রয় সংঘটিত না হয় তবে ক্রেতা উক্ত পণ্য ফেরত দেবে এবং পরিশোধিত আংশিক মূল্য বিক্রেতা ফেরত দেবে না। এটা সকল ফকীহদের মতে বাতিল। কারণ এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয়ে গারার রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬৫-[৩২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোর-জবরদস্তিমূলক ক্রয়-বিক্রয় ও প্রতারণামূলক দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় এবং পুষ্ট হওয়ার আগে ফল ক্রয়-বিক্রয় করা হতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَن بيْعِ المضطرِّ وعنْ بيْعِ الغَرَرِ وَعَنْ بَيْعِ الثَّمَرَةِ قَبْلَ أَنْ تُدْرِكَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আন্ নিহায়াতে রযেছে যে, জবরদস্তিমূলক ক্রয়-বিক্রয় দুই ধরনের হতে পারে।
১. বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতাকে চুক্তি সম্পাদনের জন্য জবরদস্তি করা- এটি বায়‘ই ফাসিদ। এতে ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হবে না। ২. ক্রেতার কাছে যদি বিক্রেতা ঋণগ্রস্ত থাকে তবে সে ঋণের মূল্য সমপরিমাণ পণ্য ক্রয় করতে বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতার ওপর চাপ প্রয়োগ বা জবরদস্তি করা, এ ক্ষেত্রে ক্রেতার উক্ত পণ্যের চাহিদা থাকলে জবরদস্তিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে বিদ্বানগণ এটাকে অপছন্দ করছেন। আল্লাহই ভালো জানেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩৮০)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬৬-[৩৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’কিলাব’ বংশের কতিপয় লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ষাড়ের পাল বা প্রজননের মজুরির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে তা করতে নিষেধ করলেন। সেই লোকটি তখন বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ষাড়ের পাল দেয়ার বিনিময়ে সৌজন্যমূলক কিছু পেয়ে থাকি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে সৌজন্য গ্রহণের অনুমতি দিলেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ رَجُلًا مِنْ كِلَابٍ سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَسْبِ الْفَحْلِ فَنَهَاهُ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نُطْرِقُ الْفَحْلَ فَنُكْرَمُ فَرَخَّصَ لَهُ فِي الْكَرَامَةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (فَنُكْرَمُ) অর্থাৎ- আমাদেরকে ষাড় গ্রহণকারিণী মাদি প্রাণীর মালিক কোনো শর্ত ছাড়াই হাদিয়া হিসেবে কিছু সম্মানী দিয়ে থাকে, বিনিময়ের ভিত্তিতে নয়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে হাদিয়া গ্রহণের অনুমতি দিলেন। আলোচ্য হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি মাদি প্রাণীর ষাড় গ্রহণের পর কোনো শর্ত ছাড়াই ষাড়ের মালিককে কিছু হাদিয়া বা সম্মানী দিয়ে থাকে তবে তা গ্রহণ করা বৈধ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২৭৪)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬৭-[৩৪] হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেছেন ঐ জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করতে যা আমার দখলে নেই। (তিরমিযী)[1]
তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী-এর আর এক বর্ণনায় আছে, রাবী বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কোনো ব্যক্তি এমন কোনো বস্তু আমার কাছে ক্রয় করতে চাইলো যা আমার কাছে নেই, আমি কি বাজার হতে তার জন্য তা কিনে আনবো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যা তোমার আয়ত্তে নেই, তা বিক্রি করো না।
وَعَنْ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ قَالَ: نَهَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَبِيعَ مَا ليسَ عندِي. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ فِي رِوَايَةٍ لَهُ وَلِأَبِي دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ: قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ يَأْتِينِي الرَّجُلُ فَيُرِيدُ مِنِّي الْبَيْعَ وَلَيْسَ عِنْدِي فَأَبْتَاعُ لَهُ مِنَ السُّوقِ قَالَ: «لَا تبِعْ مَا ليسَ عندَكَ»
ব্যাখ্যা: ‘‘যা তোমার হস্তগত নয় তা বিক্রি করার নয়’’ এর অর্থ হলো পালিয়ে যাওয়া দাস অন্যের নিকট বিক্রি করা, বিক্রয়যোগ্য বস্তু হস্তগত হওয়ার পূর্বেই বিক্রি করা, কিংবা অন্যের সম্পদ তার অনুমতি ছাড়াই বিক্রি করা। কারণ এতে জানা যায় না, মালিক বিক্রির ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছে কিনা- এরূপ লেনদেন ফাসিদ বলে গণ্য হবে। ইমাম শাফি‘ঈ এমনটাই বলেছেন।
তবে একদল ‘উলামাগণ বলেছেন, এ ক্ষেত্রে চুক্তি সংঘটিত হওয়া মালিকের অনুমতির উপরে নির্ভরশীল। এটা ইমাম মালিক, আসহাবে হানীফাহ্ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রমুখগণের কথা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫০০)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬৮-[৩৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই দ্রব্যের ক্রয়ের মধ্যে দু’ রকমে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (মালিক, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَيْعَتَيْنِ فِي بيعةٍ. رَوَاهُ مَالك وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা : শারহুস্ সুন্নাতে ‘উলামাগণ এক চুক্তিতে ২টি বিক্রির ব্যাখ্যা করেছেন দু’ ভাবে।
১. এটা বলা যে, এ কাপড় নগদে ১০ দিরহাম/দীনারের বিনিময়ে ও এক মাস সময়ের বিনিময়ে ২০ দিরহাম/দীনারের বিনিময়ে বিক্রি করলাম। এরূপ ক্রয়-বিক্রয় ফাসিদ হয়ে (ভেঙ্গে) যাবে। কারণ এতে মূল্য অনির্ধারিত রয়েছে।
২. আমি তোমার কাছে এ দাস ১০ দীনারের বিনিময়ে বিক্রি করলাম এ শর্তে যে, তোমার দাসী এর বিনিময়ে আমাকে প্রদান করবে। এটাও ফাসিদ বা বাতিল হবে। কেননা বিক্রি এবং শর্ত একাকার হয়ে গেছে, এর ফলে মূল্য অজ্ঞাত রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৬৯-[৩৬] ’আমর ইবনু শু’আয়ব হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এক বিক্রয়ের মধ্যে দু’ বিক্রয়ের ব্যবস্থা রাখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَيْعَتَيْنِ فِي صَفْقَةٍ وَاحِدَةٍ. رَوَاهُ فِي شرح السّنة
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৭০-[৩৭] উক্ত রাবী (’আমর ইবনু শু’আয়ব) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঋণ ও ক্রয়-বিক্রয় একসাথে জায়িয নয়। বিক্রয়ের সাথে দু’টি শর্তারোপ করাও জায়িয নয়। যে দ্রব্যে ঝুঁকির সম্ভাবনা (জিম্মাদারী) নেই সেই দ্রব্য হতে লভ্যাংশের অধিকার হাসিল হবে না। আর যে দ্রব্য তোমার আয়ত্তে নেই, তা বিক্রি করাও জায়িয নয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী; ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি সহীহ)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَحِلُّ سَلَفٌ وَبَيْعٌ وَلَا شَرْطَانِ فِي بَيْعٍ وَلَا رِبْحُ مَا لَمْ يضمن وَلَا بيع مَا لَيْسَ عِنْدَكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا صَحِيح
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসের বাহ্যিক দিক বিচারে কতিপয় ‘উলামাগণ বলেনঃ ক্রয়-বিক্রয়ে একটি শর্তারোপ করা হলে তা সঠিক হবে আর দুই বা ততোধিক শর্তারোপ করা হলে তা বিশুদ্ধ হবে না। যেমন এটা বলা যে, আমি আমার (দোকানের) কাপড় তোমার কাছে বিক্রি করব এই শর্তে যে, তা আমি সেলাই করব, অর্থাৎ মজুরীর বিনিময়ে তা বানিয়ে দেব, এটা বিশুদ্ধ হবে। তবে এমনটি বলা বিশুদ্ধ নয় যে, আমি এটা কম করে দেব ও এর সেলাই আমি করব। তবে অধিকাংশ ‘উলামাগণের বক্তব্য হলোঃ এক শর্ত কিংবা দুই শর্তের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। আর তারা এ মর্মে একমত হয়েছেন যে, যে ধরনের ক্রয়-বিক্রয়ে দু’টি শর্ত রয়েছে, সেটি বিশুদ্ধ নয়।
(وَلَا رِبْحُ مَا لَمْ يَضَمْنَ) অর্থাৎ মালিকানা ছাড়া কোনো দ্রব্যের লাভ গ্রহণ করা জায়িয নেই। যেমন কোনো দ্রব্য ক্রয় করে তা বিক্রেতার কাছে থেকে হস্তগত করার পূর্বেই অন্যের কাছে বিক্রি করা, এটা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং এর লাভ গ্রহণ করাও জায়িয নেই। কারণ বিক্রিত পণ্য প্রথম বিক্রেতার হস্তগত রয়েছে। এটি হস্তগত না হওয়ার কারণে ক্রেতার জিম্মায় নেই।
ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন যে, সকল সালাফগণ এ মর্মে একমত রয়েছে যে, ঋণ গ্রহীতার ওপরে যদি বর্ধিত অর্থ কিংবা হাদিয়ার শর্ত দেয়া হয়, তবে বর্ধিত অর্থ বা হাদিয়া গ্রহণ করাটা সুদ বলে গণ্য হবে। ইবনু মাস্‘ঊদ, উবাই বিন কা‘ব এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, তারা সকলেই এমন ঋণ লেন-দেন হতে নিষেধ করেছেন যাতে মুনাফা চলমান থাকে।
ইবনু সীরীন (রহঃ) হতে বর্ণিত, ‘উমার উবাই বিন কা‘ব-কে দশ হাজার দিরহাম ঋণ দিলেন। অতঃপর উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর পক্ষ হতে তার নিজ ভূমিতে উৎপাদিত ফল ‘উমার (রাঃ)-কে হাদিয়া দেয়া হলো। ‘উমার তা গ্রহণ না করে ফিরে দিলেন। অতঃপর উবাই বিন কা‘ব তাঁর কাছে এসে বললেন, মদীনাবাসী এটা জানে যে, আমার ফলের উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। এটার আমার কোনো দরকার ছিল না, কেন আপনি এটা ফেরত দিলেন? এরপর তাঁকে হাদিয়া দেয়া হলো এবং তিনি তা গ্রহণ করলেন। এখানে উবাই বিন কা‘ব ঋণের কারণে হাদিয়া দিয়েছেন কিনা, এটা অস্পষ্ট থাকায় ‘উমার তা গ্রহণ না করে ফিরে দিলেন। যখন তিনি নিশ্চিত হলেন এটা ঋণের কারণে নয়, তখন তিনি তা গ্রহণ করলেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫০১)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৭১-[৩৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাক্বী’ নামক স্থানে উট বিক্রি করতাম দীনারের (স্বর্ণমুদ্রার) বিনিময়ে এবং ক্রয়ের সময় দিরহামের (রৌপ্যমুদ্রার) বিনিময়ে গ্রহণ করতাম। আবার কোনো সময় ’দিরহাম’ বিক্রি করে তার স্থলে ’দীনার’ গ্রহণ করতাম। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ জাতীয় বিনিময় গ্রহণে কোনো দোষ নেই। তবে স্বর্ণ-রৌপ্য মুদ্রার উপস্থিত মূল্য হারে উক্ত স্থানে বিনিময় করতে হবে, কিছু অংশ বাকী রেখে ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পর পৃথক হতে পারবে না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كُنْتُ أَبِيعُ الْإِبِلَ بالنقيع بِالدَّنَانِيرِ فآخذ مَكَانهَا الدارهم وأبيع بِالدَّرَاهِمِ فَآخُذُ مَكَانَهَا الدَّنَانِيرَ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ: «لَا بَأْسَ أَنْ تَأْخُذَهَا بِسِعْرِ يَوْمِهَا مَا لَمْ تَفْتَرِقَا وَبَيْنَكُمَا شَيْءٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: ‘‘দীনারের পরিবর্তে দিরহাম ক্রয়-বিক্রয় করা বা দিরহামের বিনিময়ে দীনার ক্রয়-বিক্রয় করা।’’ এ ধরনের লেন-দেন একই বৈঠকে উক্ত দিনের চলমান নির্ধারিত মূল্যে ক্রেতা-বিক্রেতা কর্তৃক পূর্ণ হস্তগত হওয়ার শর্তে সম্পাদন করা মুস্তাহাব। ‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, এরূপ লেনদেনে ক্রেতা বিক্রেতার মাঝে কোনো সমস্যা (দরদাম, পণ্য হস্তগত হওয়া, মূল্য নির্ধারিত থাকা বা না থাকা ইত্যাদি বিষয়ে) থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতার কেউ একে অপর থেকে আলাদা হতে পারবে না। কারণ দীনারের পরিবর্তে দিরহাম কেনা-বেচা এটি প্রতিরূপ বা পরিবর্তিত রূপ। আর পরিবর্তিত বস্তুর চুক্তি পূর্ণ হস্তগত হওয়া ছাড়া বিশুদ্ধ হবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩৫২)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৭২-[৩৯] ’আদ্দা ইবনু খালিদ ইবনু হাওযাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি একটি লিখিত চুক্তিপত্র করলেন, তাতে লেখা ছিল ’আদ্দা ইবনু খালিদ ইবনু হাওযাহ্ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে (ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত)। তিনি তাঁর নিকট হতে একটি দাস বা দাসী ক্রয় করেছেন যাতে কোনো প্রকার রোগ-ব্যাধি ছিল না, কোনো ত্রুটি ছিল না এবং দুই মুসলিমের মধ্যে পরস্পরের সম্মতিতে ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো অনিচ্ছা ছিল না। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنِ الْعَدَّاءِ بْنِ خَالِدِ بْنِ هَوْذَةَ أَخْرَجَ كِتَابًا: هَذَا مَا اشْتَرَى الْعَدَّاءُ بْنُ خَالِدِ بْنِ هَوْذَةَ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اشْترى مِنْهُ عبدا أَو أمة لَا دَاءَ وَلَا غَائِلَةَ وَلَا خِبْثَةَ بَيْعَ الْمُسْلِمِ الْمُسْلِمَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৭৩-[৪০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখন্ড কম্বল ও একটি পেয়ালা বিক্রি করতে ইচ্ছা পোষণ করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্রেতার আহবানে বলতে লাগলেন, এই কম্বলখন্ড ও পেয়ালা কে ক্রয় করবে? জনৈক ব্যক্তি বলল, আমি উভয়টিকে এক দিরহামের [রৌপ্য-মুদ্রার] বিনিময়ে কিনতে পারি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক দিরহামের চেয়ে বেশি কে দেবে? এক ব্যক্তি তাঁকে দুই দিরহামের বিনিময় দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত ব্যক্তির কাছে তা বিক্রি করে দিলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَاعَ حِلْسًا وَقَدَحًا فَقَالَ: «مَنْ يَشْتَرِي هَذَا الحلس والقدح؟» فَقَالَ رجل: آخذهما بِدِرْهَمٍ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَزِيدُ عَلَى دِرْهَمٍ؟» فَأَعْطَاهُ رَجُلٌ دِرْهَمَيْنِ فَبَاعَهُمَا مِنْهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: এখানে এটা প্রমাণিত হয় যে, বিক্রেতা যখন পণ্য বিক্রয় করতে রাজি না হবে তখন মূল্যের উপরে বর্ধিত কিছু বা মূল্য বাড়িয়ে দেয়া বৈধ।
‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেন, এটি কোনো ধরনের দর কষাকষি নয়। দর কষাকষি হলো পণ্য কিনতে আগ্রহী ব্যক্তি ও বিক্রেতার মাঝে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের উপর ক্ষান্ত থাকবে এবং উভয় চুক্তিবদ্ধ হবে না। আর ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে দরাদরি চলাবস্থায় অন্যজন বিক্রেতাকে বলবে যে, আমি এ পণ্য ক্রয় করব। এমনটি মূল্য নির্ধারিত হওয়ার পর করা হারাম। অন্যদিকে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের যদি কেউ বেশী বলে তবে এটি হারাম নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২১৮)