পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮১৮-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেদের মধ্যে এমন যুগ আসবে যখন একজন মানুষও সুদের ব্যবহার থেকে মুক্ত হতে পারবে না। সে প্রত্যক্ষভাবে সুদ না খেলেও সুদের ধোয়া বা ধূলা তাকে সংস্পর্শ করবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا أَكَلَ الرِّبَا فَإِنْ لَمْ يَأْكُلْهُ أَصَابَهُ مِنْ بُخَارِهِ» . وَيُرْوَى مِنْ «غُبَارِهِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (فَإِنْ لَمْ يَأْكُلْهُ أَصَابَه مِنْ بُخَارِه) ‘‘সে যদি সুদ নাও খায় তবুও তার গায়ে এর তাপ লাগবে’’ অর্থাৎ সুদ এত ব্যাপকতা লাভ করবে যে, তা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। কেউ যদি সরাসরি সুদ খাওয়া থেকে বিরতও থাকে তবুও তার ওপর সুদের প্রভাব পড়বেই। যেমন- কেউ হয়ত সুদ খায় না কিন্তু তার কোনো আত্মীয় সুদ খায় এবং আত্মীয়তার খাতিরে তার বাড়ীতে দা‘ওয়াত খেতে হয়। অথবা কেউ তার নিকট উপঢৌকন পাঠালো কিন্তু তা সুদের টাকায় কেনা হয়েছে। আর সে ঐ উপঢৌকন গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮১৯-[১৩] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রূপার বিনিময়ে রূপা, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, লবণের বিনিময়ে লবণ বিক্রি করো না- যতক্ষণ পর্যন্ত উভয় দিকের বস্তু সমপরিমাণ না হয়, উভয় বস্তু নগদ লেনদেন না হয় এবং উপস্থিত মাজলিসে হাতে হাতে না হয়। হ্যাঁ, তবে রূপার বিনিময়ে স্বর্ণ, স্বর্ণের বিনিময়ে রূপা, যবের বিনিময়ে গম, গমের বিনিময়ে যব, লবণের বিনিময়ে খুরমা, খেজুরের বিনিময়ে লবণ- উভয়পক্ষ হতে উপস্থিত নগদ লেনদেনের মাধ্যমে যেভাবে ইচ্ছা বিক্রি করতে পারে। (শাফি’ঈ)[1]
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَبِيعُوا الذَّهَبَ بِالذَّهَبِ وَلَا الْوَرِقَ بِالْوَرِقِ وَلَا الْبُرَّ بِالْبُرِّ وَلَا الشَّعِيرَ بِالشَّعِيرِ وَلَا التَّمْرَ بِالتَّمْرِ وَلَا الْمِلْحَ بِالْمِلْحِ إِلَّا سَوَاءً بِسَوَاءٍ عَيْنًا بِعَيْنٍ يَدًا بِيَدٍ وَلَكِنْ بِيعُوا الذَّهَبَ بِالْوَرِقِ وَالْوَرِقَ بِالذَّهَبِ وَالْبُرَّ بِالشَّعِيرِ وَالشَّعِيرَ بِالْبُرِّ وَالتَّمْرَ بِالْمِلْحِ وَالْمِلْحَ بِالتَّمْرِ يَدًا بِيَدٍ كَيْفَ شِئْتُمْ» . رَوَاهُ الشَّافِعِي
ব্যাখ্যা: (لٰكِنْ بِيعُوا الذَّهَبَ ..... كَيْفَ شِئْتُمْ) ‘‘রূপার বিনিময়ে সোনা যেমন ইচ্ছা তেমন নগদে বিক্রয় কর’’ অর্থাৎ সুদ কার্যকর এমন দ্রব্য তা ভিন্ন জাতের দ্রব্যের কমবেশী করে বেচা-কেনাতে কোনো সমস্যা নেই যদি তা নগদ হয়। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ মুদ্রা অথবা খাদ্যদ্রব্য যদি একজাতীয় না হয়ে ভিন্ন জাতীয় হয় তবে তা নগদে যেমন খুশী তেমন বেচা-কেনা কর। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২০-[১৪] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পাকা তাজা খেজুরের বিনিময়ে শুকনা খুরমা ক্রয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে (নিজ কানে) শুনেছি। জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পাকা তাজা খেজুর শুকালে ওযনে কি কমে? প্রশ্নকারী বললেন, হ্যাঁ! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাকা তাজা খেজুরের বিনিময়ে খুরমা ক্রয় করতে নিষেধ করলেন। (মালিক, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ شِرَاءِ التَّمْرِ بِالرُّطَبِ فَقَالَ: «أَيَنْقُصُ الرُّطَبُ إِذَا يَبِسَ؟» فَقَالَ: نَعَمْ فَنَهَاهُ عَنْ ذَلِكَ. رَوَاهُ مَالِكٌ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: (أَيَنْقُصُ الرُّطَبُ إِذَا يَبِسَ؟) ‘‘ভেজা দ্রব্য শুকাইলে পরিমাণে কম হয় কি?’’ যেহেতু ভেজা দ্রব্য শুকাইলে ওযনে বা পরিমাণে কমে যায় তাই বেচা-কেনার সময় তা ওযনে বা পরিমাণে সমান সমান হলেও প্রকৃতপক্ষে তা সমান সমান নয়।
(فَنَهَاهُ عَنْ ذٰلِكَ) ‘‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে তা করতে নিষেধ করলেন’’ অর্থাৎ শুকানোর বিনিময়ে ভেজা দ্রব্যের বেচা-কেনা করতে নিষেধ করলেন। যেহেতু ভেজা দ্রব্য শুকিয়ে কমে যায়, ফলে তা সমান সমান হয় না, তাই এ ধরনের বেচা-কেনা বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২১-[১৫] সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো প্রাণীর বিনিময়ে মাংস/মাংস বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী সা’ঈদ বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে এক প্রকার জুয়ার প্রচলন ছিল। তখন ঐভাবে ক্রয়-বিক্রয় হতো। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ مُرْسَلًا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى عَن بَيْعِ اللَّحْمِ بِالْحَيَوَانِ قَالَ سَعِيدٌ: كَانَ مِنْ مَيْسِرِ أَهْلِ الْجَاهِلِيَّةِ. رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ
ব্যাখ্যা: (نَهٰى عَنْ بَيْعِ اللَّحْمِ بِالْحَيَوَانِ) ‘‘প্রাণীর বিনিময়ে গোশ্ত/গোশত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন’’।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, প্রাণীর বিনিময়ে গোশ্ত/গোশত বিক্রয় করা হারাম। তা একই জাতীয় প্রাণীর গোশ্ত/গোশত হোক অথবা ভিন্ন জাতীয় প্রাণীর গোশ্ত/গোশত হোক। ঐ প্রাণীর গোশ্ত/গোশত খাওয়া বৈধ হোক অথবা না হোক। ইমাম শাফি‘ঈ ঐ মতের প্রবক্তা।
পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে প্রাণীর বিনিময়ে গোশ্ত/গোশত বিক্রয় করা বৈধ। তাঁর মতে অত্র হাদীসের নিষেধ দ্বারা বাকীতে বিক্রয় উদ্দেশ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২২-[১৬] সামুরাহ্ বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবের বিনিময়ে জীব বাকিতে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ: أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ بَيْعِ الْحَيَوَانِ بِالْحَيَوَانِ نَسِيئَةً. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (نَهٰى عَنْ بَيْعِ الْحَيَوَانِ بِالْحَيَوَانِ نَسِيئَةً) ‘‘প্রাণীর বিনিময়ে প্রাণী বাকীতে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন’’।
ইমাম শাওকানী (রহঃ) নায়লুল আওত্বার-এ বলেনঃ জুমহূর ‘উলামাগণের মতে প্রাণীর বিনিময়ে প্রাণী বিক্রয় করা বৈধ। তা বাকীতেই হোক আর নগদই হোক। সমান সমান হোক অথবা কমবেশী হোক।
ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে, ভিন্ন জাতীয় প্রাণী হলে কমবেশী করে বিক্রয় করা বৈধ।
জুমহূর ‘উলামাগণ বলেনঃ সামুরাহ্ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি য‘ঈফ। পক্ষান্তরে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, প্রাণীর বিনিময়ে প্রাণী বাকীতে বিক্রয় করা বৈধ। তবে ইমাম শাফি‘ঈ আরো বলেনঃ যদি উভয়ের পক্ষ থেকেই অর্থাৎ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের পক্ষ থেকেই বাকী হয় তাহলে এ ধরনের বিক্রয় বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২৩-[১৭] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোনো এক যুদ্ধাভিযানের জন্য সৈন্যবাহিনী প্রস্তুতির আদেশ করেছিলেন। এ সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করতে (সরকারী কোষাগারে, অর্থাৎ- বায়তুল মালে) প্রয়োজনীয় উটের সংকট দেখা গেলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে সাদাকার উট পাওয়া সাপেক্ষে (বায়তুল মাল থেকে) উট ধার নেয়ার আদেশ করলন। সে হিসেবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদাকার উট সংগ্রহের সাপেক্ষে এক একটি উট দু’ দু’টি উটের বিনিময়ে গ্রহণ করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُ أَن يُجهِّزَ جَيْشًا فنفدتِ الإِبلُ فأمرَهُ أَن يَأْخُذَ عَلَى قَلَائِصِ الصَّدَقَةِ فَكَانَ يَأْخُذُ الْبَعِيرَ بِالْبَعِيرَيْنِ إِلَى إِبِلِ الصَّدَقَةِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (فَكَانَ يَأْخُذُ الْبَعِيرَ بِالْبَعِيرَيْنِ إِلٰى إِبِلِ الصَّدَقَةِ) ‘‘তিনি দুই উটের বিনিময়ে একটি উট ক্রয় করতেন যাকাতের উট অর্জনের সময় পর্যন্ত মেয়াদে’’ অর্থাৎ নগদ একটি উট গ্রহণ করতেন, বিনিময়ে দু’টি উট দিবেন যখন যাকাতের উট বায়তুল মালে এসে জমা হয়। আর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশক্রমেই এ কাজ করেছিলেন।
অতএব বুঝা গেল যে, প্রাণীর বিনিময়ে প্রাণী বাকীতে এবং কমবেশী করে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। অতএব প্রাণীর ক্রয়-বিক্রয়ে সুদ নেই।
ইমাম মালিক (রহঃ) বলেনঃ এতে পাওয়া যায় যে, প্রাণী বাকীতে এবং কম বেশী করে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)