পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং হজ্জ ছুটে যাওয়া

(الْإِحْصَارِ) ’’ইহসা-র’’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো আবদ্ধ রাখা ও বাধা দেয়া। ইসলামী শারী’আতের পরিভাষায় কাবা ঘরের তাওয়াফ ও ’আরাফাতে অবস্থান করতে বাধা প্রদানকে إِحْصَارِ বলে। যদি কোন ব্যক্তি তাওয়াফ এবং ’আরাফাতে অবস্থান এ দু’টি কাজের কোন একটি কাজ করতে সমর্থ হয় তবে তিনি মুহসার তথা বাধাপ্রাপ্ত নন।

(فوت الحج) হজ্জ/হজ ছুটে যাওয়া।

কোন ধরনের বাধাকে(إِحْصَارِ) বলা হবে- এ সম্পর্কে তিনটি অভিমত পাওয়া যায়।

(১) ’ইহসা-র’ দ্বারা উদ্দেশ্য শত্রু দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। এ মতের প্রবক্তা ইবনু ’আব্বাস, ইবনু ’উমার, আনাস, ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, সা’ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) প্রমুখ এ অভিমত গ্রহণ করেছেন মারওয়ান, ইসহাক প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী আহমাদ ইবনু হাম্বল। ইমাম মালিক ও ইমাম শাফি’ঈর মাযহাব এটাই। এ অভিমত অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ইহরাম বাধার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার জন্য হালাল হওয়া বৈধ নয়। এ মতের পক্ষে দলীলঃ

(ক) আল্লাহ তা’আলার বাণী-فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ’’কিন্তু যদি তোমরা বাধাগ্রস্ত হও, তবে যা সম্ভব কুরবানী দিবে’’- (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৯৬)। এ আয়াতটি তখন নাযিল হয়েছে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সহচরবৃন্দ হুদায়বিয়াতে মুশরিকদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আর উসূলবিদগণের নিকট এটি সর্বসম্মতিক্রমে সাব্যস্ত যে, যে কারণে আয়াত নাযিল হয়েছে ঐ বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে হুকুমের অন্তর্ভুক্ত, কোন বিশেষ কারণ দ্বারা ঐ বিষয়টি ঐ হুকুম থেকে বের করা যায় না।

(খ) বিভিন্ন আসার দ্বারা সাব্যস্ত আছে যে, অসুস্থতার কারণে তাওয়াফ ও সা’ঈ ব্যতীত হালাল হওয়া যায় না। অতএব বুঝা গেল যে, ইহসার দ্বারা শত্রু কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হওয়াই উদ্দেশ্য।

(২) ইহসা-র দ্বারা উদ্দেশ্য যে কোন ধরনের বাধা, তা শত্রু কর্তৃক বাধাই হোক অথবা অসুস্থতার কারণে বা অনুরূপ কোন কারণে বাধাপ্রাপ্ত হোক। এ অভিমতের প্রবক্তা হলেন ইবনু মাস্’ঊদ, মুজাহিদ, ’আত্বা, কাতাদা ’উরওয়া ইবনুয্ যুবায়র ইব্রাহীম নাখ্’ঈ, আলক্বমাহ্, সাওরী, হাসান বাসরী, আবূ সাওর ও দাঊদ প্রমুখ ’উলামাগণ। ইমাম আবূ হানীফার অভিমত এটিই।

এ অভিমতের দলীলঃ

(ক) পূর্বে বর্ণিত আয়াত যা দ্বারা শত্রু কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত আছে।

(খ) অসুস্থতা একটি বাধা, তার দলীল- আহমাদ, সুনান আরবা’আহ্, ইবনু খুযায়মাহ্, হাকিম, বায়হাক্বী প্রভৃতি গ্রন্থে হাজ্জাজ ইবনু ’আমর আল আনসারী বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যার হাড় ভেঙ্গে যায় অথবা লেংড়া হয়ে যায় সে হালাল হয়ে যাবে এবং তাকে আবার পুনরায় হজ্জ/হজ করতে হবে। ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) বলেনঃ বিষয়টি আমি ইবনু ’আব্বাস ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর নিকট উপস্থাপন করলে তারা উভয়ে বলেনঃ তিনি সত্য বলেছেন।

প্রথমপক্ষ হাজ্জাজ ইবনু ’আমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের দু’টি জবাব দিয়েছেনঃ

(ক) অত্র হাদীসে হালাল হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য অসুস্থতা ব্যতীত অন্য কোন কারণে হজ্জ/হজ ছুটে গেলে যেভাবে হালাল হতে হয় এখানেও সেভাবেই হালাল হতে হবে।

(খ) কেউ যদি ইহরামের সময় শর্ত করে যে, যেখানেই সে বাধাপ্রাপ্ত সেখানেই সে হালাল হবে, অনুরূপ অত্র হাদীসে হালাল দ্বারা উদ্দেশ্য শর্তযুক্ত ইহরাম থেকে হালাল হওয়া।

(৩) তৃতীয় অভিমতঃ ইহসার দ্বারা উদ্দেশ্য শুধুমাত্র অসুস্থ হওয়ার কারণে বাধা প্রাপ্ত হওয়া, অন্য কোন ওযর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত উদ্দেশ্য নয়। অধিকাংশ ভাষাবিদগণের অভিমত এটাই।

এদের মতে শত্রু দ্বারা বাধাপ্রাপ্তের হুকুম অসুস্থতার দ্বারা বাধাপ্রাপ্তের হুকুমের সাথে সংযুক্ত।

’আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ আমাদের মতে দলীলের ভিত্তিতে ইমাম মালিক, শাফি’ঈ ও আহমাদ ইবনু হাম্বল-এর প্রসিদ্ধ বর্ণনাটিই সঠিক।


২৭০৭-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (৬ষ্ঠ হিজরীতে কুরায়শদের দ্বারা ’উমরা করতে গিয়ে) বাধাপ্রাপ্ত হলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা মুণ্ডন করলেন, স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করলেন এবং কুরবানীর পশু যাবাহ করলেন। অতঃপর পরবর্তী বছর (কাযা হিসেবে) ’উমরা আদায় করলেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْإِحْصَارِ وَفَوْتِ الْحَجِّ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَدْ أُحْصِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَلَقَ رَأَسَهُ وَجَامَعَ نِسَاءَهُ وَنَحَرَ هَدْيَهُ حَتَّى اعْتَمَرَ عَامًا قَابلا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن ابن عباس قال: قد احصر رسول الله صلى الله عليه وسلم فحلق راسه وجامع نساءه ونحر هديه حتى اعتمر عاما قابلا. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (جَامَعَ نِسَاءَه) ‘‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার স্ত্রীদের সাথে সহবাস করলেন’’। অর্থাৎ- কুরবানীর পশু যাবাহ করা ও মাথা মুন্ডনের মাধ্যমে পূর্ণ হালাল হওয়ার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার স্ত্রীদের সাথে সহবাস করেছেন।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার বৎসর ‘উমরা পালনে বাধাগ্রস্থ হয়ে তাঁর কুরবানীর পশু হেরেমের মধ্যে যাবাহ করেছিলেন না-কি হেরেমের বাইরে যাবাহ করেছিলেন- এ নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘কুরবানীর পশু যাবাহ করার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে অপেক্ষমাণ’’- এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি হেরেমের বাইরে কুরবানীর পশু যাবাহ করেছিলেন। বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কুরবানীর পশু যাবাহ করার স্থান কোনটি এ ব্যাপারে অনেক বক্তব্য রয়েছে।

(১) বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেখানে হালাল হবে সেখানেই কুরবানীর পশু যাবাহ করবে। জমহূর ‘উলামাগণের অভিমত এটি।।

(২) হেরেমের বাইরে কুরবানীর পশু যাবাহ করা যাবে না। হানাফীদের অভিমত এটাই।

(৩) কুরবানীর পশু যদি হেরেমে পৌঁছানো সম্ভব হয় তাহলে তা সেখানে পৌঁছানো ওয়াজিব এবং তা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাবার পূর্বে হালাল হওয়া বৈধ নয়। আর তা সম্ভব না হলে যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হবে সেখানেই যাবাহ করে হালাল হয়ে যাবে।

(حَتّٰى اِعْتَمَرَ عَامًا قَابِلًا) ‘‘পরবর্তী বৎসর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘উমরা করলেন।’’ অর্থাৎ- কুরায়শদের সাথে সন্ধি চুক্তি অনুযায়ী তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরবর্তী বৎসর ‘উমরা করলেন।

এ হাদীস দ্বারা দলীল প্রদান করা হয় যে, বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কাযা ‘উমরা করতে হবে। কিন্তু এ হাদীসে কাযা ‘উমরা করার দলীল নেই। কেননা অত্র হাদীসে সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কেননা পরবর্তী বৎসর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘উমরা করেন তখন হুদায়বিয়ার বৎসর যে সকল সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হালাল হয়েছিলেন তাদের অনেকেই এ ‘উমরাতে অংশগ্রহণ করেননি। তাদের কোন ওযরও ছিল না। কাযা ‘উমরা করা যদি ওয়াজিব হত তাহলে অবশ্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তা পালন করতে আদেশ করতেন। অথচ তিনি তা করেননি। তবে যদি কোন ব্যক্তি ওয়াজিব হজ্জ/হজ ও ‘উমরা পালন করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হন তাহলে তাকে অবশ্যই তা কাযা করতে হবে। এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই।

অতএব ‘উমরা পালনকারী ব্যক্তি বাধাপ্রাপ্ত হলে তিনি হালাল হয়ে যাবে। আর বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হালাল হওয়া শুধুমাত্র হজ্জের জন্য খাস নয়। যেমনটি ইমাম মালিক মনে করে থাকেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং হজ্জ ছুটে যাওয়া

২৭০৮-[২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (’উমরা করতে) বের হলাম। কুরায়শ কাফিররা আমাদের ও বায়তুল্লাহর মধ্যে (হুদায়বিয়ায়) প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নিজের কুরবানীর পশুগুলো যাবাহ করলেন, মাথা মুণ্ডন করলেন এবং তাঁর সাথীগণ মাথার চুল ছাটলেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْإِحْصَارِ وَفَوْتِ الْحَجِّ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَالَ كَفَّارُ قُرَيْشٍ دُونَ الْبَيْتِ فَنَحَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَدَايَاهُ وَحَلَقَ وَقَصَّرَ أَصْحَابه. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عبد الله بن عمر قال: خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فحال كفار قريش دون البيت فنحر النبي صلى الله عليه وسلم هداياه وحلق وقصر اصحابه. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (فَنَحَرَ النَّبِىُّ ﷺ هَدَايَاهُ وَحَلَقَ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কুরবানীর পশুসমূহ যাবাহ করলেন এবং স্বীয় মাথা মুন্ডালেন।’’ অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়াতে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি সেখানেই কুরবানীর পশু যাবাহ করার পর স্বীয় মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেলেন।

মুহসার তথা হজ্জ/হজ অথবা ‘উমরার ইহরাম বাঁধার পর বাধাপ্রাপ্ত হলে কুরবানীর পশু যাবাহ করার পর মাথা মুন্ডানো অথবা চুল ছেঁটে ফেলা ওয়াজিব কি-না এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে ভিন্ন মত রয়েছে।

(ক) শাফি‘ঈ-এর মতে মাথা নেড়ে করা অথবা চুল ছেঁটে ফেলা ওয়াজিব। কেননা মাথা নেড়ে করা অথবা চুল ছেঁটে ফেলাও ‘ইবাদাত। ইমাম আবূ ইউসুফ এবং আহমাদ ইবনু হাম্বল থেকেও একটি বর্ণনা এরূপ পরিলক্ষিত হয়।

(খ) ইমাম আহমাদ-এর প্রসিদ্ধ মত হলো তা ওয়াজিব নয়। ইমাম আবূ হানীফা এবং মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান- এ মতের প্রবক্তা, মালিকীদের অভিমত এটাই।

ইমাম নাবাবী তাঁর মানাসিক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, তিনটি কাজের মাধ্যমে ইহরাম থেকে হালাল হওয়া অর্জিত হয়।

(ক) পশু যাবাহ করা,

(খ) হালাল হওয়ার নিয়্যাত করা,

(গ) মাথা নেড়ে করা অথবা চুল ছেঁটে ফেলা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং হজ্জ ছুটে যাওয়া

২৭০৯-[৩] মিস্ওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুন্ডনের আগে পশু যাবাহ করেছেন এবং এভাবে করার জন্য সাহাবীগণকে আদেশ করেছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْإِحْصَارِ وَفَوْتِ الْحَجِّ

وَعَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحَرَ قَبْلَ أَنْ يَحْلِقَ وَأَمَرَ أَصْحَابَهُ بِذَلِكَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن المسور بن مخرمة قال: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نحر قبل ان يحلق وامر اصحابه بذلك. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (إِنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ نَحَرَ قَبْلَ أَنْ يَحْلِقَ) অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কুরবানীর পশু যাবাহ করেছেন, এরপর মাথা নেড়ে করেছেন এবং তার সঙ্গীদেরকেও এ আদেশ দিয়েছেন। হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, প্রথমে কুরবানীর পশু যাবাহ করবে, এরপর মাথা নেড়ে করবে। পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, প্রথমে মাথা নেড়ে করবে এরপর কুরবানী করবে।

অতএব অত্র হাদীসের জবাবে বলা হয়েছে যে, মিস্ওয়ার (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীসটিতে হুদায়বিয়ার বৎসরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাধাপ্রাপ্ত হয়ে কুরবানীর পশু যাবাহ করার পর মাথা নেড়ে করেছিলেন। অতএব এ বিধান বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য।

ইমাম শাওকানী বলেনঃ এ হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রথমে কুরবানীর পশু যাবাহ করবে এরপর মাথা নেড়ে করবে। অতএব বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি কুরবানীর পশু যাবাহ করার পূর্বে মাথা নেড়ে করে তাহলে তাকে দম দিতে হবে। অর্থাৎ- কাফফারাহ স্বরূপ একটি পশু যাবাহ করতে হবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে প্রকাশমান দলীল হলো তা ওয়াজিব হবে না, বরং তা সুন্নাত।

ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তির ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে অত্র হাদীস তার বিপক্ষে দলীল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং হজ্জ ছুটে যাওয়া

২৭১০-[৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের জন্য রসূলুল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত কি যথেষ্ট নয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যদি তোমাদের কাউকে (’আরাফার অবস্থান হতে) হজে আটকে রাখা হয় তবে সে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ায় সা’ঈ করবে। অতঃপর আগামী বছরে হজ্জ/হজ করা পর্যন্ত সব জিনিস হতে হালাল হয়ে যাবে। (সা’ঈর পর) সে কুরবানীর পশু যাবাহ করবে অথবা যদি কুরবানীর পশু না পায় তবে সিয়াম পালন করবে। (বুখারী)[1]

بَابُ الْإِحْصَارِ وَفَوْتِ الْحَجِّ

وَعَن ابنِ عمَرَ أَنَّهُ قَالَ: أَلَيْسَ حَسْبُكُمْ سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ إِنْ حُبِسَ أَحَدُكُمْ عَنِ الْحَجِّ طَافَ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ حَلَّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى يَحُجَّ عَامًا قَابِلًا فَيَهْدِيَ أَوْ يَصُومَ إِنْ لَمْ يَجِدْ هَديا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عمر انه قال: اليس حسبكم سنة رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ ان حبس احدكم عن الحج طاف بالبيت وبالصفا والمروة ثم حل من كل شيء حتى يحج عاما قابلا فيهدي او يصوم ان لم يجد هديا. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (أَلَيْسَ حَسْبُكُمْ سُنَّةِ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ؟) ‘‘তোমাদের জন্য কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতই যথেষ্ট নয়।’’ এর দ্বারা ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর উদ্দেশ্য হলো বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য ইহরাম বাঁধার সময় শর্ত করা জরুরী নয়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়াতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ইহরাম থেকে হালাল হয়েছিলেন অথচ তিনি ইহরাম বাঁধার সময় এ শর্ত করেননি যে, আমি যদি বাধাপ্রাপ্ত হই তাহলে সেখানেই হালাল হব।

ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ ইবনু ‘উমার যদি যুবা‘আহ্ বর্ণিত হাদীস জানতে পারতেন তাহলে ইহরাম বাধার সময় শর্তারোপ করার বিষয় অস্বীকার করতেন না।

ثم حل) أي بالحلق والذبح (من كل شيء)) অতঃপর সবকিছু থেকেই হালাল হয়ে যাবে। মাথা মুড়িয়ে ও কুরবানীর পশু যাবাহ করে ইহরাম অবস্থায় হারামকৃত সকল বিষয় থেকে হালাল হয়ে যাবে।

(فَيَهْدِىَ) ‘‘অতঃপর একটি ছাগল যাবাহ করবে।’’ কেননা হালাল হওয়ার নিয়্যাত এবং কুরবানীর পশু যাবাহ করা ও মাথা মুড়ানো ছাড়া হালাল হওয়া যায় না।

(أَوْ يَصُوْمَ إِنْ لَمْ يَجِدْ هَدْيًا) ‘‘পশু যাবাহ করতে সামর্থ্য না হলে সিয়াম পালন করবে।’’ এ সিয়াম সফররত অবস্থায় করা যাবে। সফর থেকে ফিরে বাড়ীতে এসেও করা যাবে।

(حَتّٰى يَحُجَّ عَامًا قَابِلًا) ‘‘পরবর্তী বৎসর পুনরায় হজ্জ/হজ করবে।’’ হাদীসের এ অংশ দ্বারা প্রমাণ পেশ করা হয় যে, বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হালাল হলে তার জন্য পুনরায় হজ্জ/হজ করা ওয়াজিব। এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। হানাফীদের মতে কাযা করা ওয়াজিব। অত্র হাদীস তাদের দলীল।

শাফি‘ঈ ও মালিকীদের মতে তা ওয়াজিব নয়। তবে এ হজ্জ/হজ যদি ফরয হজ্জ/হজ হয়ে থাকে তাহলে তার ওপর ফরয হজ্জ/হজ পূর্বের অবস্থায়ই থাকবে। অর্থাৎ- তাকে অবশ্যই ফরয হজ্জ/হজ পুনরায় সম্পাদন করতে হবে। আর এটিই সঠিক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং হজ্জ ছুটে যাওয়া

২৭১১-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল­াহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আপন চাচাতো বোন) যুবা’আহ্ বিনতুয্ যুবায়র-এর নিকট এসে বললেন, মনে হয় তুমি হজ্জ/হজ পালনের ইচ্ছা পোষণ করো। তিনি (যুবা’আহ্) বললেন, আল্লাহর কসম! (হ্যাঁ, কিন্তু) আমি তো অধিকাংশ সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, হজের নিয়্যাত করে ফেলো এবং শর্ত করে বলো, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে (অসুখের কারণে) যেখানেই আটকে ফেলবে সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাবো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِحْصَارِ وَفَوْتِ الْحَجِّ

وَعَنْ عَائِشَةَ. قَالَتْ: دَخَلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ضُبَاعَةَ بِنْتِ الزُّبَيْرِ فَقَالَ لَهَا: «لَعَلَّكِ أَرَدْتِ الْحَجَّ؟» قَالَتْ: وَاللَّهِ مَا أَجِدُنِي إِلَّا وَجِعَةً. فَقَالَ لَهَا: حُجِّي وَاشْتَرِطِي وَقُولِي: اللَّهُمَّ مَحِلِّي حَيْثُ حبستني

وعن عاىشة. قالت: دخل رسول الله صلى الله عليه وسلم على ضباعة بنت الزبير فقال لها: «لعلك اردت الحج؟» قالت: والله ما اجدني الا وجعة. فقال لها: حجي واشترطي وقولي: اللهم محلي حيث حبستني

ব্যাখ্যা: (حُجِّىْ وَاشْتَرِطِىْ وَقُوْلِىْ: اَللّٰهُمَّ مَحِلِّىْ حَيْثُ حَبَسْتَنِىْ) ‘‘তুমি হজ্জের ইহরাম বাঁধো এবং শর্তারোপ করো আর বলো যে, আমি সেখানেই হালাল হব যেখানে আমাকে অসুস্থতা বাধা প্রদান করে।’’ ‘আল্লামা ‘আয়নী বলেনঃ এর অর্থ হলো তুমি যেখানেই হজ্জের কার্যাবলী সম্পাদন করতে অপারগ হবে এবং তা করতে বাধাপ্রাপ্ত হবে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানেই তুমি হালাল হয়ে যাবে।

যারা মনে করেন অসুস্থতা দ্বারা (মুহসার হয় না) হজ্জ/হজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয় না তারা এ হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে বলেন যে, অসুস্থতা যদি বাধা হত তাহলে শর্ত করার কোন প্রয়োজন ছিল না এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শর্তারোপ করতে বলতেন না। ইমাম শাফি‘ঈ ও তার সমর্থকদের বক্তব্য এটাই। আর যারা মনে করেন অসুস্থতাও হজ্জ/হজ পালনে বাধা, অর্থাৎ- এর দ্বারা মুহসার হয় যেমনটি হানাফীদের অভিমত তারা হাজ্জাজ ইবনু ‘আমর-এর হাদীস যাতে আছে- ‘‘যার হাড় ভেঙ্গে গেল অথবা লেংড়া হয়ে গেল সে হালাল হয়ে গেল’’ এটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীসটি ঐ ব্যক্তির জন্য শর্তারোপ করার বৈধতা প্রমাণ করে যিনি আশংকা করেন যে, আগত কোন বিপদ বা অসুস্থতা তাকে হজ্জে বাধা প্রদান করতে পারে। যে ব্যক্তি ইহরামের সময় এরূপ শর্তারোপ করে অতঃপর অসুস্থতা বা অনুরূপ কোন বাধার সম্মুখীন হয় তার জন্য হালাল হওয়া বৈধ। আর যে ব্যক্তি এরূপ শর্তারোপ করেনি তার জন্য অসুস্থতার কারণে হালাল হওয়া বৈধ নয়।

আর এরূপ শর্তারোপ করা মুবাহ, না-কি মুস্তাহাব, না-কি তা ওয়াজিব- এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে।

(১) এরূপ শর্ত করা বৈধ- এটি শাফি‘ঈদের প্রসিদ্ধ মত।

(২) এরূপ শর্ত করা মুস্তাহাব- ইমাম আহমাদের অভিমত এটিই।

(৩) এরূপ শর্ত করা ওয়াজিব- ইবনু হাযম আল যাহিরী এ মতের প্রবক্তা।

(৪) এরূপ শর্ত করা বৈধ নয়- হানাফী এবং মালিকী মাযহাবের অভিমত এটিই।

শর্ত করা বৈধ নয় এর অর্থ হলো এরূপ শর্ত করার কোন লাভ নেই, অর্থাৎ- এর ফলে তার জন্য হালাল হওয়া বৈধ হবে না। কেননা অসুস্থতা হানাফীদের মতানুসারে হজ্জ/হজ পালনে এমনিতেই বাধা। অতএব শর্তারোপ ছাড়াই অসুস্থ ব্যক্তি মুহসার তথা বাধাপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবে। তাই এ শর্ত নিষ্প্রয়োজন। তবে আবূ হানীফার মতে এ শর্তের একটি উপকারিতা এই যে, শর্তকারী ব্যক্তি হালাল হলে তাকে দম (কাফফারাহ) দিতে হবে না।

হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এই যে, হজ্জের ইহরামে শর্তারোপকারী হজ্জ/হজ সম্পাদনের পূর্বেই বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হালাল হলে তাকে কাফফারাহ (দম) দিতে হবে না হাম্বালী এবং শাফি‘ঈদের মত এটিই।

জমহূর ‘আলিমগণ এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যে, শর্তারোপ ব্যতীত অসুস্থ ব্যক্তির জন্য হালাল হওয়া বৈধ নয়। কেননা তা যদি বৈধ হত তাহলে শর্তারোপের প্রয়োজন হত না। অত্র হাদীস এও প্রমাণ করে যে, শর্তারোপ করার পর অসুস্থতার কারণে হালাল হয়ে গেলে তাকে তা কাযা করতে হবে না।

(مَحِلِّىْ حَيْثُ حَبَسْتَنِىْ) ‘‘বাধাপ্রাপ্ত স্থানই আমার হালালস্থল।’’ হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হবে সেখানেই হালাল হবে এবং সেখানেই কুরবানীর পশু যাবাহ করবে যদিও তা হেরেম এলাকার বাইরে হয়। ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ-এর অভিমত এটিই।

ইমাম আবূ হানীফা বলেনঃ হেরেম এলাকা ব্যতীত কুরবানীর পশু যাবাহ করা যাবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে