পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৭০-[১২] ’আমর ইবনুল আহ্ওয়াস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বলতে শুনেছি, বিদায় হজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোকেরা! এটা কোন্ দিন? (সমস্বরে) লোকেরা বললো, এটা হজে আকবারের (বড় হজের) দিন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (মনে রাখবে) তোমাদের জীবন, সম্পদ, ইজ্জত পরস্পরের মধ্যে যেমন হারাম বা পবিত্র। তেমনি আজকের এ দিন এ শহরে হারাম বা পবিত্র। সাবধান! কোন অপরাধকারী যেন তার জীবনের ওপর যুলুম না করে। সাবধান! কোন অপরাধী যেন নিজের সন্তানের ওপর যুলুম না করে। কোন সন্তান যেন তার পিতার ওপর যুলুম না করে। সাবধান! শয়তান চিরদিনের জন্যে নিরাশ হয়ে গেছে এ শহরে তার কোন পূজা হবে (না এ প্রসঙ্গে)। কিন্তু তোমাদের যে সব কাজের মধ্য দিয়ে তার অনুসারী হবে, অথচ সেসব কাজ তোমরা তুচ্ছ মনে করবে। আর এতেই সে খুশী হবে। (ইবনু মাজাহ, তিরমিযী; তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)[1]
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْأَحْوَصِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ: «أَيُّ يَوْمٍ هَذَا؟» قَالُوا: يَوْمُ النَّحْر الْأَكْبَرِ. قَالَ: «فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا أَلا لَا يجني جانٍ عَلَى نَفْسِهِ وَلَا يَجْنِي جَانٍ عَلَى وَلَدِهِ وَلَا مَوْلُودٌ عَلَى وَالِدِهِ أَلَا وَإِنَّ الشَّيْطَانَ قد أَيسَ أَنْ يُعْبَدَ فِي بَلَدِكُمْ هَذَا أَبَدًا وَلَكِنْ ستكونُ لهُ طاعةٌ فِيمَا تحتقرونَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ فَسَيَرْضَى بِهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالتِّرْمِذِيّ وَصَححهُ
ব্যাখ্যা: (عَنْ عَمْرِو بْنِ الْأَحْوَصِ) তিনি হচ্ছেন ‘আমর ইবনুল আহওয়াস আল জাশমী তিনি বানী জাশম বিন সা‘দ-এর বংশধর। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তাকে ‘‘আত্ তাকরীব’’ নামক কিতাবে সাহাবী বলেছেন বিদায় হজ্জ/হজ সম্পর্কে তার বর্ণিত হাদীস রয়েছে। ‘আল্লামা ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) তার বংশ পরম্পরা বর্ণনা করেছেন এভাবে যে, তিনি হলেন, ‘আমর ইবনুল আহ্ওয়াস বিন জা‘ফার বিন কিলাব আল জাশমী আল কিলাবী। তবে তার বংশ পরস্পর সম্পর্কে সামান্য মতপার্থক্য রয়েছে। তার কাছ থেকে তার ছেলে সুলায়মান হাদীস বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি স্ত্রী-মাতা সহকারে বিদায় হজ্জ/হজ পালন করেছেন আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খুৎবা সম্পর্কে তার থেকে বর্ণিত হাদীস সহীহ।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, তিনি ইয়ারমূকের যুদ্ধে শাহীদ হন। তখন ‘উমার (রাঃ)-এর খিলাফাতকাল চলছিল।
(يَقُولُ فِىْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ) অর্থাৎ- يوم النحر তথা কুরবানীর দিন।
(أَىُّ يَوْمٍ هٰذَا؟» قَالُوا: يَوْمُ النَّحْر الْأَكْبَرِ) অন্য এক বর্ণনা রয়েছে اى يوم احرم অর্থাৎ- কোন দিনটি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত? উত্তরে সমবেত সকল মানুষ বললেন, يوم الحج الاكبر তথা বড় হজ্জের দিন। যারা বড় হজ্জ/হজ দ্বারা ইয়াওমুন্ নাহর তথা কুরবানীর দিন উদ্দেশ্য নেন এ হাদীস তাদের স্বপক্ষে দলীল। এ ব্যাপারে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে, ইমাম সুয়ূত্বী তার ‘‘আদ দুররুল মানসূর’’ এবং হাফিয ইবনু কাসীর তার তাফসীরে সেগুলো উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি হাদীস যা ইমাম বুখারী (রহঃ) (باب الخطبة)-তে ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে তা‘লীকান বর্ণনা করেছেন সেটা হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াওমুন্ নাহরে জামারায়ে ‘আক্বাবার মাঝে অবস্থান করে বলেছিলেন (যে সময় তিনি হজ্জ/হজ করছিলেন) এবং বলছিলেন এটাই হল বড় হজ্জের দিন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে থাকলেন, (اللهم الشهد) হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। মানুষদেরকে তিনি বিদায় জানালেন এবং পরক্ষণে মানুষেরা বলতে থাকলো এটাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর حجة الوداع তথা বিদায় হজ্জ/হজ। এ হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ, ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইমাম ত্ববারানী (রহঃ) মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন। এটাকে বিদায় হজ্জে নামকরণ করা হলো تمام الحج তথা হজ্জের পূর্ণতা ও معظم افعاله হজ্জের অধিকাংশ কার্যাবলী এখানে সম্পাদন করা হয়েছিল। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, (لان فيه تتكمل المناسك) কেননা এ দিনে হজ্জের বাকী কর্মগুলোকে পূর্ণাঙ্গরূপ দেয়া হয়।
তবে ‘উলামায়ে কিরামের অপর একদল বলেন, হজ্জে আকবার তথা বড় হজ্জ/হজ দ্বারা ‘‘ইয়াওমুন্ নাহর’’ তথা কুরবানীর দিন উদ্দেশ্য নয় বরং ইয়াওমু ‘আরাফাহ্ তথা ‘আরাফার দিন উদ্দেশ্য। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, الحج عرفة হজ্জ/হজই ‘আরাফাহ্। ‘উমার ইবনু ‘আব্বাস ও ত্বাউস (রাঃ) তারা এ মতপোষণ করেছেন। এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো কথা রয়েছে যা ‘আল্লামা ‘আয়নী ও হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তাঁর ফাতহুল বারীতে সূরা বারাআতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন। তবে প্রথম কথাটি সর্বাধিক সহীহ।
(فان دماءكم واموالكم واعراضكم بينكم حرام كحرمة يومكم هذا فى بلدكم هذا)
এখানে بلد তথা শহর দ্বারা মক্কা নগরী উদ্দেশ্য ইবনু মাজাহ ও ইমাম তিরমিযী (রহঃ) তার كتاب التفسير একটু বর্ধিত করে বলেছেন, (فى شهركم هذا) তথা তোমাদের এ মাস। উপরোক্ত কথাটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আত্মহত্যা করা অথবা অপর কোন মুসলিমকে হত্যা করা হারাম। অপরদিকে সম্পদের ক্ষেত্রে অপরের সম্পদ ভক্ষণ করা হারাম এমনকি নিজের সম্পদও হারাম তবে যদি হালাল পথে হয় তাহলে কোন অসুবিধা নেই। ‘আল্লামা সিন্দী (রহঃ) এ রকমই ব্যাখ্যা করেছেন।
(لَا يَجْنِىْ جانٍ عَلٰى نَفْسِه) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ অংশটুকু খবর হিসেবে ধরা হবে যদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে না-বোধকের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কথাটির অর্থ হল, কেউ যেন তার নিজের ওপর আক্রমণ না করে। অর্থাৎ- অপর কেউ হত্যা না করে কারণ অপর কাউকে হত্যা করলে তা ক্বিসাস তথা হত্যার বদলা হত্যা হিসেবে তাকেও হত্যার সম্মুখীন হতে হবে। বস্ত্ততঃ এখানে আত্মপক্ষের কথা বলে অপরের ক্ষেত্রে বিষয়টিকে আরো শক্তভাবে বলাই উদ্দেশ্য। কারণ সেখানে নিজেরই ক্ষতি করা নিষেধ সেখানে অপরের ক্ষতি করার তো কোন প্রশ্নই উঠে না।
(أَلَا وَإِنَّ الشَّيْطَانَ) এখানে শয়তান দ্বারা শয়তান প্রধান ইবলীস উদ্দেশ্য।
(أَنْ يُعْبَدَ) ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে যে, তার অনুগত করতে গিয়ে মানুষ গায়রুল্লাহর ‘ইবাদাত করবে। আর কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে যে, কোন মু’মিনীন মূর্তিপূজার দিকে ফিরে আসবে না। তাইতো দেখা গেছে মুসায়লামাহ্ কাযযাব ও তার সাথীরা এবং যাকাত অস্বীকারকারীরাসহ অন্যান্য যারা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল তারা আর যাই করুক কিন্তু তারা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়নি। সুতরাং হাদীসটির অর্থ হলো দীন ইসলাম পরিবর্তন হয়ে আবার পূর্বে যেমন গোটা দুনিয়া শির্কের উপর চলছিল সেটা হওয়া থেকে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৭১-[১৩] রাফি’ ইবনু ’আমর আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি সাদা-কালো মিশ্রিত খচ্চরের উপর থেকে মিনায় ভাষণ দিতে দেখেছি, তখন সূর্য উপরে উঠেছিল। ’আলী(রাঃ) তাঁর বক্তব্যকে লোকদের কাছে পৌঁছাচ্ছিলেন (উচ্চস্বরে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন)। আর তখন লোকজনের মধ্যে কেউ দাঁড়ানো, কেউ বসা ছিল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن رافعِ بنِ عمروٍ والمُزَني قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ النَّاسَ بِمِنًى حِينَ ارْتَفَعَ الضُّحَى عَلَى بَغْلَةٍ شَهْبَاءَ وَعَلِيٌّ يُعَبِّرُ عَنْهُ وَالنَّاسُ بَين قَائِم وقاعد. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (وَعَنْ رَافِعِ بْنِ عَمْرِو الْمُزَنِىْ) তাকে মুযানী বলা হয় মুযায়নাহ্ গোত্রের প্রতি সম্পৃক্ত করে। তার নাম হচ্ছে রাফি' ইবনু ‘আমর ইবনু হিলাল আল মুযানী তার ভাইয়ের ‘আয়িদ বিন ‘আমর তারা দু’ভাই এবং তাদের পিতা সকলেই সাহাবী। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেন, রাফি'-এর নিকট থেকে ‘আমর ইবনু সুলায়ম আল মুযানী ও হিলাল ইবনু ‘আমির আল মুযানী হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তার ‘‘তাহযীবুত্ তাহযীব’’ নামক কিতাবে বলেন, রাফি‘ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু’টি হাদীস বর্ণনা করেছেন তার একটি হল (العجوة من الجنة) অর্থাৎ- আজ্ওয়াহ্ খেজুর জান্নাতী ফলমূলের অন্তর্গত। এ হাদীসটিকে ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন। দু’টি বিদায় হজ্জে তার অংশগ্রহণের হাদীস যা ইমাম আবূ দাঊদ ও ইমাম নাসায়ী বর্ণনা করেছেন।
ইবনু ‘আসাকির (রহঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রাফি' (রাঃ)-এর বয়স পাঁচ অথবা ছয় বছর ছিল।
(يَخْطُبُ النَّاسَ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ খুতবাটি মিনায় দিয়েছিলেন দিনের শুরুতে, এর প্রমাণ হলো হাদীসের পরবর্তী অংশ, (حين ارتفع الضحى على بغلة الشهباء) অর্থাৎ- যখন সকাল শুরু হল তখন শাহবা খচ্চরের পিঠের উপর বসে খুৎবা দিলেন।
‘শাহবা’ অর্থ হল সামান্য কালো মিশ্রিত সাদা। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের সাথে কুদামাহ্ বর্ণিত হাদীস,
( رأيت النبى ﷺ يرمى الجمرة يوم النحر على ناقة صهباء)
আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তিনি শাহবা উটের পিঠে উঠে খুৎবা দিয়েছেন। কারণ উপরের হাদীসে খচ্চর আর কুদামাহ্’র হাদীসে উটের কথা আছে তাহলে কি খুৎবা দু’টি ছিল না একটি? এর সমাধানে আমি বলবো, ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) এ ব্যাপারে আরো একটি হাদীসে আছে যা ইমাম আহমাদ ও ইমাম আবূ দাঊদ হিরমাস ইবনু যিয়াদ আল বাহিলী থেকে বর্ণনা করেছেন, হাদীসটি হলো,
رأيت النبى صلى الله عليه وسلم يخطب الناس على ناقته العضباء يوم الاضحى.
আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি ইয়াওমুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদের দিন ‘আয্বাহ্ উটের উপর বসে খুৎবা দিয়েছেন। এটা হচ্ছে তথা ৩য় নম্বরটি খুত্বাহটি হলো হজ্জের খুৎবা। আর উপরোক্ত গিয়েই হয়তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরু করেছিলেন। উটের উপর তারপর পরিবর্তন করে খচ্চরের উপর আরোহণ করেছেন এবং একই সময়ে দু’টি খুৎবা হওয়াও সম্ভব। তার একটি খুৎবা ছিল শুধু মানুষকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশে তা হজ্জের খুতবার অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৭২-[১৪] ’আয়িশাহ্ ও ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফে যিয়ারা কুরবানীর দিনে (১০ তারিখে) রাত পর্যন্ত দেরি করেছিলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ وَابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَّرَ طَوَافَ الزِّيَارَةِ يَوْمَ النَّحْرِ إِلَى اللَّيْلِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (أَخَّرَ طَوَافَ الزِّيَارَةِ يَوْمَ النَّحْرِ إِلَى اللَّيْلِ) অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফে যিয়ারাহ্-কে ইয়াওমুন্ নাহরে বিলম্ব করতে করতে রাত পর্যন্ত বিলম্ব করলেন। এ হাদীসটি এ বিষয়ে বর্ণিত পূর্বেকার সব ক’টি বর্ণনার সাথে সাংঘর্ষিক এ বৈপরীত্যের সমাধান বিভিন্ন জনে বিভিন্ন রকম দিয়ে থাকেন। যেমনঃ ইবনুল কাত্ত্বান আলফাসী, ইবনুল ক্বইয়্যিম, ইবনু হাযম সহ অনেকে ‘আয়িশাহ্ থেকে বর্ণিত অত্র হাদীসকে য‘ঈফ বলেছেন। শুধু য‘ঈফই নয় বরং বাতিলও। আবার কোন কোন ‘উলামায়ে কিরাম পূর্বেকার ইবনু ‘উমার ও জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হাদীসের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) এ ধরনের সবগুলো রিওয়ায়াত যেমন ইবনু ‘উমার ও জাবির (রাঃ) অপরদিকে ‘আয়িশাহ্ ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সকল বর্ণনাগুলো উল্লেখ করে বলেছেন,
اصح هذه الروايات حديث نافع عن ابن عمر وحديث جابر وحديث ابى سلمة عن عائشة حتى حديث البخارى نلفظ قالت : حجنا مع رسول الله ﷺ فاقصنا يوم النحر.
অর্থাৎ- এ বিষয়ে বর্ণিত সর্বাধিক সহীহ বর্ণনা হলো ইবনু ‘উমার ও জাবির ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণনা যেটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন।
অপর একদল ‘আলিম তারা এ রিওয়ায়াতগুলোর মধ্যে সমতা ফিরে আনার প্রয়াস পেয়েছেন। তার মধ্যে ইমাম বুখারী, ইবনু হিব্বান ও ‘আল্লামা সিন্দী অন্যতম। ‘আল্লামা সিন্দী সুনানে ইবনু মাজাহ্’র প্রান্তটীকায় বলেন, ‘আয়িশাহ্ ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কথা (اخر طواف الزيارة الليل) এটা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফে‘ল দ্বারা প্রমাণিত। আর এটা হচ্ছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয তাওয়াফ তাওয়াফে ইফাযাহ্ করেছেন রাতের পূর্বে। আর এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য এটাও হতে পারে যে, তিনি তাওয়াফে যিয়ারহ্-কে রাত পর্যন্ত বিলম্ব করার অবকাশ দিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৭৩-[১৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফে ইফাযার (তাওয়াফে যিয়ারার) সাত চক্কর রমল করেননি (জোর পায়ে চলেননি)। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَرْمُلْ فِي السَّبْعِ الَّذِي أَفَاضَ فِيهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (فِى السَّبْعِ الَّذِىْ أَفَاضَ فِيهِ) অর্থাৎ- তাওয়াফে ইফাযাতে কোন ‘‘রমল’’ নেই, যেমনিভাবে তাওয়াফুল ওয়াদা' তথা বিদায়ী তাওয়াফে ‘‘রমল’’ নেই। ‘‘রমল’’ শুধুমাত্র তাওয়াফুল কুদূমে আছে। এ হাদীসটি প্রমাণ করছে তাওয়াফে কুদূমের ক্ষেত্রে যেমন ‘‘রমল’’ করা বিধিসম্মত করা হয়েছে তেমনিভাবে তাওয়াফে যিয়ারাতে ‘‘রমল’’-কে বিধিসম্মত করা হয়নি।
ইমাম ত্ববারী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করছে যে, ‘‘রমল’’ তাওয়াফে কুদূমের সাথে নির্দিষ্ট অথবা ‘‘রমল’’ ঐ সমস্ত তাওয়াফের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যাতে সা‘ঈ রয়েছে। এ দু’টি কথাই মূলত ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর, তবে ‘‘রমল’’ তাওয়াফে কুদূমের সাথে নির্দিষ্ট- এ কথাটি সর্বাধিক সহীহ।
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৭৪-[১৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জামারাতুল ’আক্বাবায় (১০ তারিখে) পাথর মারার পর স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য সকল কাজ তার জন্যে হালাল হয়ে যাবে। [শারহুস্ সুন্নাহ; ইমাম বাগাবী বলেছেন, এর সানাদ দুর্বল।[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا رَمَى أَحَدُكُمْ جَمْرَةَ الْعَقَبَةِ فَقَدْ حَلَّ لَهُ كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا النِّسَاءَ» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة وَقَالَ: إِسْنَاده ضَعِيف
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) হানাফী মাযহাবের উপর ভিত্তি করে বলেছেন মাথা হলক অথবা চুল খাটো করার পর।
(فَقَدْ حَلَّ لَه كُلُّ شَىْءٍ إِلَّا النِّسَاءَ) অর্থাৎ- জামারায়ে ‘আক্বাবাতে কংকর নিক্ষেপ করতঃ মাথা হলক অথবা চুল খাটো করার পর স্ত্রী সহবাস, জড়িয়ে ধরা, চুম্বন করা, যৌন কামনার সাথে স্পর্শ করা, বিবাহের ‘আকদ ইত্যাদি ব্যতীত অন্য সবকিছু বৈধ তবে তাওয়াফে ইফাযার পর স্ত্রীর সাথে এ কাজগুলোও বৈধ হবে।
এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, স্ত্রী সঙ্গম ও এ জাতীয় কর্মগুলো ব্যতীত অন্যান্য হজ্জের নিষিদ্ধ কাজগুলো মাথা মুন্ডানোর আগে, কংকর নিক্ষেপও বৈধ হয় কিন্তু অপর এক হাদীস যা ইমাম আহমাদসহ অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন সেখানে বলা হয়েছে,
(اذا رميتم وحلقتم فقد حل لكم كل شيئ الا النساء) অর্থাৎ- যখন তোমরা কংকর নিক্ষেপ ও মাথা হলক করবে তখন তোমাদের জন্য স্ত্রী ব্যতীত অন্যান্য সব কাজ যেগুলো হজ্জের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ছিল তা বৈধ হয়ে যাবে।
তাহলে এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, কংকর নিক্ষেপ ও মাথা হলক দু’টিই হতে হবে। এ বিপরীত অর্থবোধক দু’টি হাদীসের সমাধান হলো, পরবর্তী হাদীস বা দ্বিতীয়টি য‘ঈফ। কারণ তার সনদে হাজ্জাজ বিন আরত্বাতা রয়েছে যিনি য‘ঈফ ও মুদাল্লিস।
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৭৫-[১৭] কিন্তু আহমাদ ও নাসায়ী ইবনু ’আব্বাস হতে হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কেউ জামারাতুল ’আক্বাবায়ে পাথর মারা শেষ করবে তার জন্য স্ত্রী সহবাস ছাড়া আর অন্য সব কাজ হালাল হয়ে যাবে।[1]
وَفِي رِوَايَةِ أَحْمَدَ وَالنَّسَائِيِّ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «إِذَا رَمَى الْجَمْرَةَ فَقَدْ حَلَّ لَهُ كلُّ شيءٍ إِلا النساءَ»
ব্যাখ্যা: (وَفِىْ رِوَايَةِ أَحْمَدَ وَالنَّسَائِىِّ) আর ইবনু মাজাহ, ত্বহাবী এবং বায়হাক্বীতেও (৫ম খণ্ড ১৩৬ পৃষ্ঠা) এ ধরনের বর্ণনা রয়েছে হাসান আল ‘আর্নী-এর সনদে এবং এ হাদীসটি ইবনু ‘আব্বাস থেকে মারফূ‘ এবং মাওকূফ দু’ভাবেই বর্ণিত হয়েছে।
(قَالَ: إِذَا رَمَى الْجَمْرَةَ) এখানে جمرة দ্বারা جمرة العقبة উদ্দেশ্য।
(فَقَدْ حَلَّ لَه كلُّ شَىْءٍ إِلَّا النِّسَاءَ) অর্থাৎ- তার জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাওয়াফে ইফাযাহ্ না করবে এতক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীসঙ্গত ছাড়া সবকিছুই বৈধ। আর এ হাদীসটি প্রমাণ করছে যে, প্রথম হালালের কারণ হিসেবে কংকর নিক্ষেপকেই ধরা হয় যেমনটি মালিকী মাযহাবের ফাতাওয়া রয়েছে। আর হানাফী মাযহাব অনুসারীরা হালক্বের বিষয়টি উহ্য হিসেবে ধরে নেন এ বিষয়ে বর্ণিত দু’ধরনের বর্ণনার মাঝে সমাধানকল্পে। আর এ হাদীসটি (যার ব্যাখ্যায় আমরা রয়েছি) মুনক্বতি। কারণ হাসান আল ‘আরনী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে শুনেননি। যেমনটা বলেছেন ইমাম আহমাদসহ অনেক।
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৭৬-[১৮] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায়ে পর দিনের শেষ বেলায় তাওয়াফে ইফাযাহ্ সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার মিনায় ফিরে এলেন এবং সেখানেই আইয়্যামে তাশরীক্বের দিনগুলো অবস্থান করলেন। এ দিনগুলোতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূর্যাস্তের পর জামারায় সাতটি করে পাথর মারতেন। প্রত্যেক পাথর মারার সাথে সাথে ’আল্লা-হু আকবার’ বলতেন। আর প্রথম ও দ্বিতীয় জামারার নিকট দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন ও আল্লাহর কাছে (অনুনয়-বিনয় করে) প্রার্থনা করতেন। কিন্তু তৃতীয় জামারায় (পূর্বের ন্যায় পাথর মারার পর) অপেক্ষা করতেন না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْهَا قَالَتْ
: أَفَاضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ حِينَ صَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مِنًى فَمَكَثَ بِهَا لَيَالِيَ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ يَرْمِي الْجَمْرَةَ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ كُلَّ جَمْرَةٍ بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ وَيَقِفُ عِنْدَ الْأُولَى وَالثَّانِيَةِ فَيُطِيلُ الْقِيَامَ وَيَتَضَرَّعُ وَيَرْمِي الثَّالِثَةَ فَلَا يَقِفُ عِنْدَهَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (أَفَاضَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ مِنْ اٰخِرِ يَوْمِه) এর অর্থ হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফে ইফাযাহ্ করেছেন ইয়াওমুন্ নাহরের শেষাংশে।
(حِيْنَ صَلَّى الظُّهْرَ) এর থেকে বুঝা যায় তিনি যুহরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করেছেন মক্কায় যা পূর্বোক্ত জাবির (রাঃ) কর্তৃক লম্বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আরো বুঝা যায় তিনি তাওয়াফ করেছিলেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর এমনকি সালাতুয্ যুহরের পর, কেননা হাদীসের শব্দ হলো (من اخر يومه) তথা কুরবানীর দিনের শেষ ভাগে যা এটাই প্রমাণ করে যদি এটা পূর্বে বর্ণিত ইবনু ‘উমার সহ অন্যান্যদের বর্ণিত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক যেখানে বলা হয়েছে (انه طاق قبل الظهر) তথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফ করেছেন যুহরের সালাতের পূর্বে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন,
افاض يوم النحر من منى الى مكة حين صلى الظهر، فيقيد انه صلى الظهر بمنى ثم افاض وهو خلاف ماثبت فى الأحاديث لابفاقها على انه صلى الظهر بعد الطواف مع اختلافها انه صلاها بمكة او بمنى.
অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন মিনা থেকে যুহরের সালাত আদায় করে মক্কা অভিমুখী হন।
এখান থেকে বুঝা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত মিনাতেই আদায় করেছেন, তারপর ইফাযাহ্ করেছেন আর এ বর্ণনাটি অনেক হাদীসের বিপরীত যেখানে এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত তাওয়াফের পরই আদায় করেছেন যদি এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে যে, যুহরের সালাত তিনি মক্কায় আদায় করেছেন না মিনাতে আদায় করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৭৭-[১৯] আবুল বাদ্দাহ ইবনু ’আসিম ইবনু ’আদী তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট চালকদেরকে মিনায় রাত যাপন না করার এবং কুরবানীর তারিখে (জামারাতুল ’আক্বাবায়) পাথর মারতে এবং তারপর কুরবানী দিনের পর দুই দিনের পাথর একদিনে মারতে অনুমতি দিয়েছিলেন। (মালিক, তিরমিযী, নাসায়ী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি সহীহ)[1]
-
[বিঃ দ্রঃ এ অধ্যায়ে তৃতীয় অনুচ্ছেদ নেই (وَهٰذَا الْبَابُ خَالٍ مِنْ الْفَصْلِ الثَّالِثِ)]
وَعَنْ أَبِي الْبَدَّاحِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عَدِيٍّ عَن أَبِيه قَالَ: رَخَّصَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم لرعاء الْإِبِل فِي البيتوتة: أَن يرملوا يَوْمَ النَّحْرِ ثُمَّ يَجْمَعُوا رَمْيَ يَوْمَيْنِ بَعْدَ يَوْمِ النَّحْرِ فَيَرْمُوهُ فِي أَحَدِهِمَا. رَوَاهُ مَالِكٌ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ
ব্যাখ্যা: (وَعَنْ أَبِىْ الْبَدَّاحِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عَدِىِّ) বর্ণনাকারীর নাম আবুল বাদ্দাহ বিন ‘আসিম বিন ‘আদী ইবনুল জাদ্দ ইবনুল ‘আজলান বিন হারিসাহ্ বিন যবী‘আহ্ আল কুযা‘ঈ আল বালাবী, তারপর আল আনসারী তিনি বানী ‘আমর বিন ‘আওফ গোত্রের নেতা ছিলেন, তিনি আনসারী সাহাবী ছিলেন।
‘আল্লামা ওয়াক্বিদী (রহঃ) ‘‘আবুল বাদ্দাহ’’ হলো তার উপাধী। এ উপাধীই বেশি প্রসিদ্ধ আর তার কুন্ইয়্যাতী তথা উপনাম হলো আবূ ‘আমর। ঠিক এমনইভাবে ‘আলী বিন মাদিনী ও ইবনু হিব্বানও বলেছেন তার উপনাম হলো আবূ ‘আমর।
আবার কেউ কেউ বলেছেন তার উপনাম আবূ বাকর, আবার কেউ কেউ বলেছেন তার উপনাম আবূ ‘আমর। বলা হয়ে থাকে তার নাম ‘আদী, তিনি ১১৭ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এটাই অধিকাংশের মতামত, আবার কেউ কেউ বলেছেন তার মৃত্যু ১১০ হিজরীতে হয়েছিল। ইবনু ‘আবদুল বার তার ‘‘আল ইস্তি‘আব’’ নামক কিতাবে বলেন, তিনি কি সাহাবী ছিলেন না তাবি‘ঈ ছিলেন- এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে তবে অধিকাংশেরা বলেছেন তিনি সাহাবী ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাখালদের জন্য আইয়্যামে তাশরীক্বে মিনায় রাত্রিযাপনের বিধানের ক্ষেত্রে ঢিল দিয়েছিলেন কারণ তারা তাদের উট রক্ষণাবেক্ষণের কর্মে লিপ্ত ছিল আর তারা যদি মিনায় রাত্রিযাপন করে তাহলে তাদের মালামাল নষ্ট যাওয়ার আশংকা ছিল। মিনায় রাত্রিযাপন ওয়াজিব নাকি সুন্নাত- এ ব্যাপারে মতভেদ ইমামদের উক্তিসহ পূর্বে আলোচিত হয়েছে। আহলে সিকায়াহ্ ও রাখালদের জন্য মিনায় রাত্রিযাপনের ক্ষেত্রে ছাড় আছে যে, এ ব্যাপারে সব ‘আলিমের মতানৈক্য রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে যে, এ সুযোগ কি শুধুমাত্র রাখাল ও আহলে সিক্বায়ার জন্য নির্দিষ্ট নাকি এ জাতীয় যত ব্যক্তি আছে যেমন অসুস্থ অথবা অন্য কোন ব্যস্ততায় যিনি ব্যস্ত থাকবেন তাদের সকলের জন্য উন্মুক্ত?
(أَنْ يَرْمُوْا يَوْمَ النَّحْرِ) অর্থাৎ- জামারায়ে ‘আক্বাবায়ে তারা অন্যান্য সকল হাজীদের মতো কংকর নিক্ষেপ করবেন।
‘আল্লামা বাজী (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে জানিয়ে দিলেন যে যারা রাখালী ও পানি পান করানোর দায়িত্বে ব্যস্ত থাকবেন তারা কুরবানীর দিন কংকর নিক্ষেপ করবেন এক্ষেত্রে কোন শিথিলতা করা হবে না।
(ثُمَّ يَجْمَعُوْا رَمْىَ يَوْمَيْنِ) অর্থাৎ- এখানে ১১ ও ১২ তারিখের কথা বলা হয়েছে।
(فَيَرْمُوهُ) এটাই মিশকাত ও মাসাবীহের বর্ণনা তবে তিরমিযীতে (فَيَرْمُوهُ) রয়েছে এবং এটাই রয়েছে মুসনাদে আহমাদ ও ইবনু মাজাহতে।