পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৪০-[১৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর নিজের কুরবানীর পশুগুলোর মধ্যে আবূ জাহল-এর একটি উটকেও কুরবানীর পশু হিসেবে মক্কায় পাঠিয়েছিলেন। এর নাকে ছিল একটি রূপার নথ বা বলয়। অপর বর্ণনায় আছে, সোনার বলয় ছিল। এটি দ্বারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَهْدَى عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ فِي هَدَايَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَمَلًا كَانَ لِأَبِي جَهْلٍ فِي رَأْسِهِ بُرَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَفِي رِوَايَةٍ مِنْ ذَهَبٍ يَغِيظُ بِذَلِكَ الْمُشْركين. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের ভাষ্য হলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার বছরে যে সব জন্তু হাদী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন তার অন্তর্ভুক্ত ছিল বদর যুদ্ধে নিহত আবূ জাহলের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে প্রাপ্ত তার পুরুষ উটটি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ জন্তুটি এজন্য প্রেরণ করেছিলেন যাতে মুশরিকরা এটা দেখে ক্রোধান্বিত হয় বা রাগান্বিত হয়। এ হাদীস থেকে হাদীর ক্ষেত্রে পুরুষ উটও যে বৈধ এর দলীল পাওয়া যায় যার বৈধতার বিষয়ে অধিকাংশ আহলে ‘ইলমগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ভাষ্যকার ‘আল্লামা উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) অধ্যায় বেঁধেছেন, (بَابُ جَوَازِ الذَّكَرِ وَالْأُنْثٰى فِى الْهَدَايَا) অর্থাৎ- হাদীর ক্ষেত্রে পুরুষ এবং নারী উভয় প্রাণীই বৈধ। আর ইবনু মাজাহ (রহঃ) অধ্যায় বেঁধেছেন, (بَابُ الْهَدْىِ مِنَ الْإِنَاثِ وَالذُّكُوْرِ) অর্থাৎ- নর এবং মাদী প্রাণীর হাদীর অধ্যায়।
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেছেন, হাদীর ক্ষেত্রে নর এবং মাদী প্রাণী উভয়টিই সমান। ইবনুল মুসাইয়্যিব, ‘উমার বিন ‘আবদুল আযীয, মালিক, ‘আত্বা, এবং শামী প্রমুখ ব্যক্তিগণ নর উট হাদী প্রেরণের বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি কাউকে এরূপ করতে দেখিনি। আমার নিকট পছন্দনীয় হল মাদী উট নাহর করা। তবে প্রথম মতটিই ভালো/উত্তম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, (بدن) বুদন তথা হাদীর জন্তুসমূহকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন বানিয়েছি। তিনি এখানে নর বা মাদীর উল্লেখ করেননি। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও প্রমাণিত যে, তিনি আবূ জাহল-এর নর উটকে হাদী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কেননা, এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হলো গোশ্ত (গোসত/গোশত)। আর নর উটের গোশত বেশি এবং মাদীর গোশত তাজা। ফলে দু’টি সমান।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৪১-[১৫] নাজিয়াহ্ আল খুযা’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যে কুরবানীর পশু পথে অচল ও অপারগ হয়ে পড়বে, তার ক্ষেত্রে আমি কি করবো? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, একে কুরবানী করে ফেলবে। তবে তার মালার জুতা এর রক্তে ডুবিয়ে (কুঁজের পাশে রেখে) দিবে। অতঃপর এ কুরবানী করা পশুকে মানুষের মাঝে রেখে যাবে। (গরীবেরা) লোকেরা তা খাবে। (মালিক, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ نَاجِيَةَ الْخُزَاعِيِّ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ أَصْنَعُ بِمَا عَطِبَ مِنَ الْبُدْنِ؟ قَالَ: «انْحَرْهَا ثُمَّ اغْمِسْ نَعْلَهَا فِي دَمِهَا ثُمَّ خَلِّ بَيْنَ النَّاسِ وَبَيْنَهَا فَيَأْكُلُونَهَا» . رَوَاهُ مَالك وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৪২-[১৬] আবূ দাঊদ ও দারিমী (রহঃ) নাজিয়াহ্ আল আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُد والدارمي عَن نَاجِية الْأَسْلَمِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্য হলো সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন হাদীর যে প্রাণী ধ্বংসের উপক্রম হয়েছে সেটি আমি কি করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে নাহর কর, অতঃপর তার গলায় ঝুলানো জুতাটা রক্তে ডুবিয়ে তা মানুষের মাঝে রেখে দাও, তারা তা খেয়ে ফেলুক।
ভাষ্যকার ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসের (الذين يتبعون القافلة) দ্বারা উদ্দেশ্য কি তা নিয়ে মতভেদ আছে। ইমাম মালিক-এর মতে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য বন্ধুশ্রেণী ও অন্যান্যদের মধ্য হতে যারা ধনী এবং গরীব। হানাফীদের মতে, এর দ্বারা শুধু দরিদ্ররা উদ্দেশ্য চাই তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হোক বা অন্যদের থেকে হোক। আর শাফি‘ঈ ও হাম্বালীদের মতে, এর দ্বারা দরিদ্ররাই উদ্দেশ্য, তবে তারা হাদীর মালিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না আর এ মতটিই আমাদের নিকট প্রণিধানযোগ্য। যেহেতু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার থেকে তুমি এবং তোমার বন্ধুরা খাবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৪৩-[১৭] ’আব্দুল্লাহ ইবনু কুরত্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিন। অতঃপর ’ক্বার্’-এর দিন। সাওর বলেন, তা কুরবানীর দ্বিতীয় দিন। রাবী (’আব্দুল্লাহ) বলেন, (ঐ দিনে) পাঁচ বা ছয়টি উট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পেশ করা হলো। আর উটগুলো নিজেদেরকে তাঁর নিকট এজন্য পেশ করতে লাগল যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগে কোনটি কুরবানী করবেন। রাবী (’আবদুল্লাহ) বলেন, উটগুলো যখন মাটিতে শুইয়ে গেলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিম্নস্বরে একটা কথা বললেন যা আমরা বুঝতে পারলাম না। আমি নিকটস্থ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি বললেন? সে ব্যক্তি বললো, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যার ইচ্ছা হয় তা কেটে নিতে পারে। [আবূ দাঊদ; এ ব্যাপারে ইবনু ’আব্বাস ও জাবির (রাঃ) বর্ণিত দু’টি হাদীস বাবুল উযহিয়্যাহ্ বা কুরবানীর অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে][1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قُرْطٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ أَعْظَمَ الْأَيَّامِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمُ النَّحْرِ ثُمَّ يَوْمُ الْقَرِّ» . قَالَ ثَوْرٌ: وَهُوَ الْيَوْمُ الثَّانِي. قَالَ: وَقُرِّبَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَدَنَاتٌ خَمْسٌ أَوْ سِتٌّ فطفِقْن يَزْدَلفْنَ إِليهِ بأيتهِنَّ يبدأُ قَالَ: فَلَمَّا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا. قَالَ فَتَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ خَفِيَّةٍ لَمْ أَفْهَمْهَا فَقُلْتُ: مَا قَالَ؟ قَالَ: «مَنْ شَاءَ اقْتَطَعَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَذَكَرَ حَدِيثَا ابنِ عبَّاسٍ وجابرٍ فِي بَاب الْأُضْحِية
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্য হলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে মহান দিন হল কুরবানীর দিন। তবে এ হাদীসটি অন্যান্য সহীহ হাদীসে বর্ণিত ‘আরাফার দিনের শ্রেষ্ঠত্বের যে বিষয়টি এসেছে তার বিপরীত নয়, ফলে (إِنَّ أَعْظَمَ الْأَيَّامِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হবে কুরবানী এবং তাশরীকের দিনসমূহ। কেননা দিনের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি আপেক্ষিক এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে হয়। তাছাড়া সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম দিন রমাযানের শেষ দশক। কুরবানীর প্রথম দিন শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণ হলো সেটি সবচেয়ে বড় ঈদের দিন এবং এ দিনে হজ্জের সবচেয়ে বড় কর্মগুলো সম্পাদিত হয়। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা এটি সবচেয়ে বড় হজ্জের দিন বলে অবহিত করেছেন।
হাদীসের শেষাংশে উটগুলোর নাহর হওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী হওয়ার যে বর্ণনা এসেছে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট মু‘জিযার অন্তর্ভুক্ত। খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, জনসাধারণকে হিবা করা বৈধ।