পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬২৭-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফায় যুহরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করলেন। এরপর তাঁর কুরবানীর পশু আনালেন এবং এর কুঁজের ডান দিকে ফেঁড়ে দিলেন ও এর রক্ত মুছে ফেলে গলায় দু’টি জুতার মালা পরিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সওয়ারীতে উঠে বসলেন। তারপর (সামনে গিয়ে) বায়দাতে বাহন সোজা হয়ে দাঁড়ালে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জের তালবিয়াহ্ (লাব্বায়কা) পাঠ করলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ ثُمَّ دَعَا بِنَاقَتِهِ فَأَشْعَرَهَا فِي صَفْحَةِ سَنَامِهَا الْأَيْمَنِ وَسَلَّتَ الدَّمَ عَنْهَا وَقَلَّدَهَا نَعْلَيْنِ ثُمَّ رَكِبَ رَاحِلَتَهُ فَلَمَّا اسْتَوَتْ بِهِ على الْبَيْدَاء أهل بِالْحَجِّ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত ২ রাক্‘আত যুল হুলায়ফায় আদায় করেন। অতঃপর উটনীর চিহ্ন দিলেন যাতে মানুষেরা বুঝতে পারে যে, এটা কুবরানীর পশু। সূরা আল মায়িদাহ্’য় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَا تُحِلُّوْا شَعَائِرَ اللَّهِ অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহর ঘরের দিকে পাঠানো পশুকে হালাল মনে করো না।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ২)
(إشعار) ইশ্‘আর শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অবহিত করা। আর শারী‘আতের ভাষায় উটের কুঁজের এক পাশে ছুরি বা অস্ত্র দ্বারা আহত করে রক্ত প্রবাহিত করা। যাতে লোকেরা কুরবানীর উট ও অন্য উটের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। যাতে অন্য উটের সাথে মিশে বা হারিয়ে না যায়। আর চোরেরা এর থেকে দূরে থাকে। আর গরীবরা খেতে পারে যখন রাস্তায় যাবাহ করা হয় মৃত্যুর ভয়ে। হাদীসও প্রমাণ করে যে, ইশ্‘আর করা সুন্নাত। আর এটি অধিকাংশ ‘আলিমদের মত। তাদের মধ্য হতে তিন ইমাম। আর ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, ইশ্‘আর বিদ্‘আত ও মাকরূহ। আর মুসলা তথা পশুকে শাস্তি দেয়া হলে এটি হারাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি করেছিলেন মুশরিকদের উট নিতে বিরত রাখার জন্য আর তারা বিরত থাকতো না ইশ্‘আর করা ছাড়া। এখানে ইমাম আবূ হানীফার মতটি সহীহ হাদীসের বিরোধী।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬২৮-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর কুরবানীর পশু হিসেবে একপাল ছাগল (ভেড়া) পাঠালেন এবং এগুলোর গলায় (জুতার) মালা পরিয়ে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: أَهْدَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مرّة إِلَى الْبَيْت غنما فقلدها
ব্যাখ্যা: একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর দিকে কুরবানীর জন্য ছাগলের একটি পাল প্রেরণ করেন। আর এটি ছিল বিদায়ী হজ্জের পূর্বে। তাদের সাথে যারা মদীনাহ্ থেকে হজ্জে গিয়েছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জে যাননি। এখানে হাদীসে ‘‘একবার ছাগল প্রেরণ করেছিলেন’’- এ কথা প্রমাণ করে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্য সময় উট প্রেরণ করতেন। কারণ এটিই উত্তম। আর ছাগল দেয়া জায়িয আছে। আর উক্ত ছাগলের গলায় হার লটকিয়ে দেন। এটিই অধিকাংশ ‘উলামাগণের মত। এ বিষয়ে বিরোধিতা করেন হানাফী ও মালিকী মাযহাবগণ তারা বলেন ছাগলের হার পরিধান করা ঠিক না। কিন্তু তাদের মত হাদীসের পরিপন্থী।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬২৯-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন (মিনায়) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করেছিলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَن جَابر قَالَ: ذَبَحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَائِشَةَ بَقَرَةً يَوْمَ النَّحْرِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবাহ করেছেন। অন্য হাদীসে নাহর (উট নাহর করেছেন) আছে। আসলে নাহর বলেঃ গর্দান ও সিনায় ছুরি নিক্ষেপ করা। আর যাবাহ বলে, হলকে বা গলায় ছুরি নিক্ষেপ করা। সুতরাং যাবাহ হলো গর্দানের রগ কেটে ফেলা। তাকমিলাতুয্ যুহর-এ আছেঃ যাবাহ করতে গিয়ে সম্পূর্ণ গলা কেটে ফেললে কোন অসুবিধা নেই বা তার নিচে, তার মধ্যে ও উপরে হওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। এ হাদীসটি অধিকাংশ ‘উলামাগণের দলীল। অর্থাৎ- গরু নাহর বা কুরবানী করা জায়িয গরু যাবাহ করাটা উত্তম। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করেন যে, ‘‘কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় কর এবং কুরবানী কর।’’ (সূরা আল কাওসার ১০৮ : ২)
আর হাসান বিন সালিহ ও মুজাহিদ নাহর মুস্তাহাব বলেছেন। ইমাম মালিক বলেন, জরুরী ছাড়া উট যাবাহ করা অথবা বিনা প্রয়োজনে ছাগল নাহর করা হলে তার গোশ্ত (গোসত/গোশত) খাওয়া জায়িয হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩০-[৪] জাবির (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী দিয়েছিলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعنهُ قَالَ: نَحَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ نِسَائِهِ بَقَرَةً فِي حَجَّتِهِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: বিদায়ী হজ্জে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গরু নাহর বা কুরবানী করেন তার স্ত্রীদের পক্ষ হতে। অন্য বর্ণনায় আছে, একটি বকরী দিয়েছিলেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘উমরা আদায়কারী স্ত্রীদের পক্ষ হতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গরু কুরবানী করেন। জাবির, ‘আয়িশাহ্ ও আবূ হুরায়রার হাদীসে প্রমাণিত কুরবানী যদি উট বা গরু হয় তবে তাতে শারীক হতে পারে। এ বিষয় ‘উলামাগণের ইখতেলাফ আছে। ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আহমাদ এবং অধিকাংশ ‘আলিমদের মত হলো কুরবানীর মধ্যে শারীক হওয়া জায়িয। চাই কুরবানী ওয়াজিব হোক বা নফল হোক। আর দাঊদ, যাহিরী ও কিছু মালিকীদের মতে নফল কুরবানীতে শারীক হওয়া জায়িয আছে, ওয়াজিব কুরবানীতে জায়িয নেই। এ মত ঠিক নয় কারণ জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ফায়েদা উঠাতাম ফলে আমরা গরু যাবাহ করতাম সাতজনের পক্ষ হতে। আমরা তাতে শারীক হতাম। আর ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে কোন অবস্থাতেই কুরবানীতে শারীক হওয়া জায়িয নয়। তবে তার এ মত এখানে আলোচিত অধ্যায়ের খিলাফ। তবে তার থেকে আহমাদ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি এ মত হতে ফিরে এসেছেন। আর অধিকাংশদের সাথে মত ব্যক্ত করেছেন। আর সম্ভবত ইমাম মালিক-এর নিকট এ হাদীস পৌছায়নি। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মত হলো সব অবস্থায় শারীক কুরবানী জায়িয। চাই ওয়াজিব হোক আর নফল হোক।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩১-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার নিজ হাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশু উটের মালা তৈরি করেছি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা পশুদের গলায় পরিয়েছেন এবং এগুলোর কুঁজ ফেঁড়ে দিয়েছেন। তারপর এগুলোকে কুরবানীর পশু হিসেবে (বায়তুল্লাহয়) পাঠিয়েছেন। এতে তাঁর উপরে কোন জিনিস হারাম হয়নি, যা তাঁর জন্যে আগে হালাল করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: فَتَلْتُ قَلَائِدَ بُدْنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيَّ ثُمَّ قَلَّدَهَا وَأَشْعَرَهَا وَأَهْدَاهَا فَمَا حَرُم عَلَيْهِ كانَ أُحِلَّ لَهُ
ব্যাখ্যা: ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর এ হাদীস প্রমাণ করে যে, কুরবানীর পশুর গলায় হার লটকানো জায়িয এবং ইশ্‘আর করা (কুঁজের উপর রক্ত বের করে দেয়া) জায়িয। আর কুরবানীর জানোয়ার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবম হিজরীতে আবূ বাকর সিদ্দীক্ব-এর কাছে মক্কায় প্রেরণ করেন। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর কিছু হারাম প্রমাণিত হয়নি। আর এ হাদীস প্রমাণ করে যে, হারামে কুরবানীর জানোয়ার প্রেরণ করা জায়িয। যদিও সে নিজে সফর না করে বা নিজে ইহরাম না পরিধান করে। আর এ হাদীস এটাও প্রমাণ করে যে, একজনের পশু অন্যজন কুরবানী দিতে পারে। আর এ হাদীস হতে ইমাম মালিক দলীল গ্রহণ করেন যে, গরু কুরবানী করা উত্তম। তবে তার এ মাযহাব অন্যদের নিকট অগ্রহণীয়।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩২-[৬] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে যে পশম ছিল তা দিয়ে আমি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) কুরবানীর পশুর মালা তৈরি করেছি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে আমার পিতার সাথে (মক্কায়) পাঠিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: فَتَلْتُ قَلَائِدَهَا مِنْ عِهْنٍ كَانَ عِنْدِي ثُمَّ بَعَثَ بِهَا مَعَ أَبِي
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উটের রশি আমি নিজেই পাকিয়েছিলাম যা কুসুম রংয়ের পশমের ছিল। কেউ বলেছেন, লাল ছিল। আর প্রেরণের সাল ছিল নবম হিজরী, সে সনে আবূ বাকর (রাঃ) মানুষকে নিয়ে হজ্জে যান। ইবনুত্ তীন বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ইচ্ছা করেন এর থেকে পুরা ঘটনা অথবা তিনি অনুমান করছেন এটা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ কর্ম।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩৩-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি কুরবানীর উট চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এর উপর উঠে যাও। তখন লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো কুরবানীর উট। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, চড়ে যাও! সে পুনরায় বললো, এটা যে কুরবানীর উট! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে বললেন, আরে হতভাগা এর উপর চড়ে যাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا يَسُوقُ بَدَنَةً فَقَالَ: «ارْكَبْهَا» . فَقَالَ: إِنَّهَا بَدَنَةٌ. قَالَ: «ارْكَبْهَا» . فَقَالَ: إِنَّهَا بَدَنَةٌ. قَالَ: «ارْكَبْهَا وَيلك» فِي الثَّانِيَة أَو الثَّالِثَة
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে بُدْنَةٌ (বুদনাতুন) শব্দটি উট নর-নারী উভয়ের পর ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে এর ব্যবহার هَدْيٌ (হাদয়ুন) শব্দে বেশি হয়ে থাকে।
‘আল্লামা কুসতুলানী বলেন, بُدْنَةٌ (বুদনাতুন) শব্দটি উটের নর-নারী ও গাভীর নর ও নারীকে বুঝানো হয়েছে। এ হাদীস হতে প্রমাণ হল যে, কুরবানীর জানোয়ারের উপর সওয়ার হওয়া জায়িয। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে আদব শিক্ষা দেয়ার জন্য বলেছিলেন, ‘‘তোমার ধ্বংস হোক’’। আসমা‘ঈ বলেন, وَيْلٌ শব্দটি ধমক এবং রহমাতের জন্যও ব্যবহার হয়। সীবুওয়াইহ বলেন, وَيْحٌ শব্দটি ‘আযাব ঐ ব্যক্তির জন্য জন্য যে ধ্বংসের কাছে উপনীত হয়েছে। হাদীসে আছে যে, وَيْلٌ এটি জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। এখানে এ শব্দ দ্বারা ধমক বুঝানো হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩৪-[৮] আবুয্ যুবায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে কুরবানীর উটের উপর বসে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। জবাবে তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কষ্ট না দিয়ে সুন্দরভাবে এর উপর আরোহণ কর যখন তুমি এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ো যতক্ষণ না অন্য একটি সওয়ারী পাও। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عبدِ اللَّه سُئِلَ عَنْ رُكُوبِ الْهَدْيِ فَقَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «ارْكَبْهَا بِالْمَعْرُوفِ إِذَا أُلْجِئْتَ إِلَيْهَا حَتَّى تَجِدَ ظَهْرًا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: জাবির (রাঃ)-এর এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, কুরবানীর পশুর উপর প্রয়োজনের সময় সওয়ার হওয়া জায়িয। অর্থাৎ- পশুর যাতে কোন রকম সমস্যা না হয়। আর অন্য পশু পেলে কুরবানীর পশুর উপর সওয়ার হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩৫-[৯] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার (মক্কায়) এক ব্যক্তির সাথে কুরবানী করার জন্য ১৬টি উটনী পাঠালেন এবং তাকে কুরবানী করার জন্য দায়িত্ব বুঝে দিলেন। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! যদি পথিমধ্যে উটগুলোর কোনটি অচল হয়ে পড়ে তখন আমার করণীয় কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাবাহ করে দেবে। অতঃপর এর মালার জুতা দু’টি এর রক্তে রঞ্জিত করে তার কুঁজের পাশে রাখবে। তবে তুমি ও তোমার সাথীদের কেউ তা (মাংস) খাবে না। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتَّةٌ عَشَرَ بَدَنَةً مَعَ رَجُلٍ وَأَمَّرَهُ فِيهَا. فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ أَصْنَعُ بِمَا أُبْدِعَ عَلَيَّ مِنْهَا؟ قَالَ: «انْحَرْهَا ثُمَّ اصْبُغْ نَعْلَيْهَا فِي دَمِهَا ثُمَّ اجْعَلْهَا عَلَى صَفْحَتِهَا وَلَا تَأْكُلْ مِنْهَا أَنْتَ وَلَا أَحَدٌ مِنْ أهل رفقتك» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসটি মিশকাতের সকল নুসখায় এবং সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৬টি উট একটি লোকের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। লোকটি বলল, আমি তার কোনটি দুর্বল বা অসুস্থ হলে কি করবো হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, তুমি তা নাহর করো এবং তার জুতায় (মালাদ্বয়ে) রক্ত লাগাও। অতঃপর তা তার কাঁধে লাগিয়ে দাও। আর তুমি এবং তোমার সাথীগণ যেন তা হতে খাবে না। সুতরাং হাদীসটি প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি কুরবানীর জানোয়ার হারামে প্রেরণ করবে, অতঃপর রাস্তায় যদি অসুস্থ হয়ে যায়, হালাল হওয়ার স্থানে পৌছানোর আগেই তবে তা নাহর বা কুরবানী করে দিবে। অতঃপর তার দুই জুতায় রক্ত লাগাবে আর রক্ত মাখানো জুতা কুঁজে ঝুলিয়ে দিবে- এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত হলো যে, কুরবানীর পশুর মালিক এবং তার বন্ধু-বান্ধব খেতে পারবে না, কিন্তু ফকীর-মিসকীনদের খাওয়া জায়িয আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩৬-[১০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর সাতজনের পক্ষ হতে একটি উট এবং সাতজনের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করেছি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَن جابرٍ قَالَ: نحَرْنا مَعَ رَسولِ اللَّهِ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَة. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: জাবির (রাঃ)-এর এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, উটে ও গুরুতে কুরবানীতে সাতজন শারীক হতে পারে। আর এটা জমহূর (অধিকাংশ) এর মত। দাঊদ যাহিরী ও কিছু মালিকীদের মতে নাফলের ক্ষেত্রে জায়িয, ওয়াজিবের ক্ষেত্রে নয়। আর ইমাম মালিক-এর মত কোন অবস্থায় জায়িয নয়। মালিকী মাযহাবের লোকেরা এ হাদীসকে অনেক রকমের তা’বীল করেন, যা অনর্থক ঠাট্টা তাবিল। যে ব্যক্তি চায় সে যেন মুয়াত্ত্বার শরাহ যুরক্বানীর অধ্যয়ন করে। জাবির থেকে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, হজ্জে ও ‘উমরার মধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে উটে আমরা সাতজন শারীক হয়েছিলাম। এক ব্যক্তি বললো, গরু ও উটে একই রকম শারীক হবো? তিনি বললেন, গরু তো উটের দলভুক্ত। মুসলিমের মধ্যে তার থেকে বর্ণিত হয়েছে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ/হজ করতে বের হয়েছিলাম, ফলে তিনি আমাদেরকে উট ও গরুতে সাতজন শারীক হতে আদেশ করলেন।
এ সকল হাদীস প্রমাণ করে যে, কুরবানীতে শারীক হওয়া জায়িয আছে। অন্য হাদীসে এসেছে যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ফায়েদা উঠাতাম। আমরা গরু যাবাহ করতাম সাতজনের পক্ষ থেকে এবং আমরা তাতে শারীক হতাম। সুতরাং বহু সহীহ রিওয়ায়াত প্রমাণ করছে যে, উট ও গরুতে সাতজন শারীক হতে পারবে।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩৭-[১১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার তিনি এক ব্যক্তির কাছে আসলেন। দেখলেন যে, সে তার উটকে কুরবানী করার জন্য বসিয়েছে। (এ দৃশ্য দেখে) তখন তিনি তাকে বললেন, উটকে দাঁড় করাও এবং পা বেঁধে যাবাহ করো। এটাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَن ابنِ عمَرَ: أَنَّهُ أَتَى عَلَى رَجُلٍ قَدْ أَنَاخَ بِدَنَتَهُ يَنْحَرُهَا قَالَ: ابْعَثْهَا قِيَامًا مُقَيَّدَةً سُنَّةَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ব্যাখ্যা: ইবনু ‘উমার (রাঃ) মিনাতে এক লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন। সে তার উটকে বসিয়ে কুরবানী করতে উদ্ধত হয়েছে। ইবনু ‘উমার তাকে বললেন যে, তা ছেড়ে দাও দাঁড় করিয়ে নাহর বা কুরবানী কর। এটিই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। সুনানে আবূ দাঊদে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ উট নাহর বা কুরবানী করতেন তিন পায়ে দাঁড়ানো অবস্থায় ও বাম পা বাঁধা অবস্থায়। আর এ বিষয়টি প্রমাণ করে হারবী-এর বর্ণনায়। সেখানে আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন, তা নাহর বা কুরবানী কর দাঁড়নো অবস্থায়, কেননা এটা সুন্নাত। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, উট দাঁড়ানো অবস্থায় নাহর বা কুরবানী করা সুন্নাত। ইমাম বাজী বলেন, এটাই হলো ইমাম মালিক ও জমহূর (অধিকংশের) মত, হাসান বাসরী ব্যতীত।
এ বিষয়ে সহীহুল বুখারীতে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হস্তে দাঁড়িয়ে সাতটি উট নাহর করেছিলেন। ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইসহাক ও ইবনু মুনযীর এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম খাত্ত্বাবী এবং রায় পন্থীগণ উভয় পন্থাকে জায়িয বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩৮-[১২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (বিদায় হজে) কুরবানীর উটগুলো দেখাশুনা করতে, তার মাংস (গোসত/মাংস), চামড়া ও ঝুল (গরীবদের মাঝে) বণ্টন করে দিতে এবং কসাইকে কিছু না দিতে আদেশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা আমাদের নিজের কাছ থেকে তার (কসাইয়ের) পারিশ্রমিক দিবো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلَّتِهَا وَأَنْ لَا أُعْطِيَ الْجَزَّارَ مِنْهَا قَالَ: «نَحْنُ نُعْطِيهِ مِنْ عِنْدِنَا»
ব্যাখ্যা: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে আদেশ করেছেন যে, তার উট যা মক্কায় প্রেরণ করেছিলেন, যার সংখ্যা ছিল একশতটি। সেগুলোকে দেখাশুনা করা ও কুরবানী করে গোশ্ত (গোসত/গোশত) ও চামড়াগুলো সাদাকা করতে। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উটের গোশ্ত কসাইকে দিতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ- কুরবানীর গোশত কাজের বিনিময়ে কসাইদেরকে দিতে নিষেধ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩৯-[১৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কুরবানীর উটের মাংস (গোসত/মাংস) তিন দিনের বেশি খেতাম না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনুমতি দিয়ে বললেন, তিন দিনের বেশি সময় ধরে খেতে এবং ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিতে পারো। তাই আমরা খেলাম ও (ভবিষ্যতের জন্য) রেখে দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَن جابرٍ قَالَ: كُنَّا لَا نَأْكُلُ مِنْ لُحُومِ بُدْنِنَا فَوْقَ ثَلَاثٍ فَرَخَّصَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «كُلُوا وَتَزَوَّدُوا» . فَأَكَلْنَا وتزودنا
ব্যাখ্যা: জাবির (রাঃ)-এর হাদীসের ভাষ্য হলো, প্রথম পর্যায়ে তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশ্ত (গোসত/গোশত) খাওয়া নিষেধ ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে ছাড় দিয়ে বলেন, তোমরা খাও এবং পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখ। এ বিষয়ে জাবির (রাঃ) ছাড়াও আরো অন্য সাহাবী থেকে হাদীস রয়েছে যা এ বিষয় প্রমাণ করে যে, তিন দিনের পরেও গোশ্ত (গোসত/গোশত) গচ্ছিত রাখা যায়। কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেন, এ হাদীসগুলো গ্রহণের ব্যাপারে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়েছে। একদলের বক্তব্য হলঃ কুরবানীর গোশ্ত (গোসত/গোশত) জমা করে রাখা বা তিন দিনের পরে খাওয়া হারাম। আর এ হারামের বিধান এখন পর্যন্ত অবশিষ্ট রয়েছে। যেমনটি ‘আলী এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন। জমহূরের মতে, তিন দিনের পরে খাওয়া এবং পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখা বৈধ। আর এ বিষয়ে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞাটি জাবির, বুরায়দাহ্, ইবনু মাস্‘ঊদ, কাতাদা বিন নু‘মানসহ আরো অন্যান্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে মানসূখ হয়ে গেছে।
(কাযী বলেন) আর এটি হলো হাদীসের দ্বারা হাদীস মানসূখের পর্যায়ভুক্ত। আবার কারো কারো মতে, এটি মূলত মানসূখ নয় বরং হারামটি ছিল একটি বিশেষ কারণে। তাই যখন সে কারণ দূরীভূত হয়ে গেছে তখন হারামের বিধানও উঠে গেছে। সে কারণটি হল, (মদীনায়) ইসলামের প্রাথমিক সময়ে অভাব দেখা দেয়ায় এ বিষয়ে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। অতঃপর যখন সে অবস্থার অবসান ঘটল তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের তিন দিনের পরেও তা খাওয়ার এবং পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখার নির্দেশ দিলেন। যেমনটি এ বিষয়ে মুসলিমে বর্ণিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি সুস্পষ্ট বর্ণনা। তবে সঠিক কথা হলো জমহূরের বক্তব্য, অর্থাৎ- নিষেধাজ্ঞাটি মুত্বলাক্বভাবে (সাধারণভাবে) মানসূখ। হারাম বা কারাহাত কোনটিই অবশিষ্ট আর নেই। ফলে তিন দিনের পরেও খাওয়া এবং জমা করে রাখা বৈধ।
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেন, প্রায় সকল আহলে ‘ইলমদের ভাষ্যমতে তিন দিনের অধিক জমা করে রাখা বৈধ। তবে ‘আলী এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বৈধতা দেননি। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে নিষেধ করেছেন। আর আমাদের পক্ষে দলীল মুসলিমে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি আমি তোমাদেরকে তিনদিনের অধিক কুরবানীর গোশ্ত (গোসত/গোশত) জমা রাখতে নিষেধ করেছিলাম। তবে এখন তোমরা যতদিন খুশি জমা করে রাখতে পারো। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে সহীহ সনদে বর্ণিত অনেক হাদীস রয়েছে। আর ‘আলী এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বিষয়টি হলো তাদের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছাড়ের বিষয়টি পৌঁছেনি। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিষেধ করতে শুনেছিলেন ফলে তারা যা শ্রবণ করেছেন তাই বর্ণনা করেছেন।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে বলেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, সম্ভবত ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট মানসূখের বিষয়টি পৌঁছেনি। আবার অন্যরা বলেছেন, এ সম্ভবনাও রয়েছে যে, ‘আলী (রাঃ) যে সময়ে এ কথাটি বলেছেন সে সময়ে মানুষের প্রয়োজন ছিল যেমনটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ঘটেছিল। ইমাম ইবনু হাযম এ বিষয়টিকে অকাট্য বলে বর্ণনা করেছেন। এটি কোন বছরে নিষেধ করা হয়েছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, পঞ্চম হিজরীতে। আবার কেউ বলেন, নবম হিজরীতে নিষেধ করা হয়েছিল আর দশম হিজরীতে রুখসাত (ছাড়) দেয়া হয়েছিল। তবে শেষের বক্তব্যটিই সঠিক যা বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।