লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা
২৬৩৯-[১৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কুরবানীর উটের মাংস (গোসত/মাংস) তিন দিনের বেশি খেতাম না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনুমতি দিয়ে বললেন, তিন দিনের বেশি সময় ধরে খেতে এবং ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিতে পারো। তাই আমরা খেলাম ও (ভবিষ্যতের জন্য) রেখে দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْهَدْىِ
وَعَن جابرٍ قَالَ: كُنَّا لَا نَأْكُلُ مِنْ لُحُومِ بُدْنِنَا فَوْقَ ثَلَاثٍ فَرَخَّصَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «كُلُوا وَتَزَوَّدُوا» . فَأَكَلْنَا وتزودنا
ব্যাখ্যা: জাবির (রাঃ)-এর হাদীসের ভাষ্য হলো, প্রথম পর্যায়ে তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশ্ত (গোসত/গোশত) খাওয়া নিষেধ ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে ছাড় দিয়ে বলেন, তোমরা খাও এবং পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখ। এ বিষয়ে জাবির (রাঃ) ছাড়াও আরো অন্য সাহাবী থেকে হাদীস রয়েছে যা এ বিষয় প্রমাণ করে যে, তিন দিনের পরেও গোশ্ত (গোসত/গোশত) গচ্ছিত রাখা যায়। কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেন, এ হাদীসগুলো গ্রহণের ব্যাপারে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়েছে। একদলের বক্তব্য হলঃ কুরবানীর গোশ্ত (গোসত/গোশত) জমা করে রাখা বা তিন দিনের পরে খাওয়া হারাম। আর এ হারামের বিধান এখন পর্যন্ত অবশিষ্ট রয়েছে। যেমনটি ‘আলী এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন। জমহূরের মতে, তিন দিনের পরে খাওয়া এবং পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখা বৈধ। আর এ বিষয়ে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞাটি জাবির, বুরায়দাহ্, ইবনু মাস্‘ঊদ, কাতাদা বিন নু‘মানসহ আরো অন্যান্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে মানসূখ হয়ে গেছে।
(কাযী বলেন) আর এটি হলো হাদীসের দ্বারা হাদীস মানসূখের পর্যায়ভুক্ত। আবার কারো কারো মতে, এটি মূলত মানসূখ নয় বরং হারামটি ছিল একটি বিশেষ কারণে। তাই যখন সে কারণ দূরীভূত হয়ে গেছে তখন হারামের বিধানও উঠে গেছে। সে কারণটি হল, (মদীনায়) ইসলামের প্রাথমিক সময়ে অভাব দেখা দেয়ায় এ বিষয়ে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। অতঃপর যখন সে অবস্থার অবসান ঘটল তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের তিন দিনের পরেও তা খাওয়ার এবং পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখার নির্দেশ দিলেন। যেমনটি এ বিষয়ে মুসলিমে বর্ণিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি সুস্পষ্ট বর্ণনা। তবে সঠিক কথা হলো জমহূরের বক্তব্য, অর্থাৎ- নিষেধাজ্ঞাটি মুত্বলাক্বভাবে (সাধারণভাবে) মানসূখ। হারাম বা কারাহাত কোনটিই অবশিষ্ট আর নেই। ফলে তিন দিনের পরেও খাওয়া এবং জমা করে রাখা বৈধ।
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেন, প্রায় সকল আহলে ‘ইলমদের ভাষ্যমতে তিন দিনের অধিক জমা করে রাখা বৈধ। তবে ‘আলী এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বৈধতা দেননি। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে নিষেধ করেছেন। আর আমাদের পক্ষে দলীল মুসলিমে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি আমি তোমাদেরকে তিনদিনের অধিক কুরবানীর গোশ্ত (গোসত/গোশত) জমা রাখতে নিষেধ করেছিলাম। তবে এখন তোমরা যতদিন খুশি জমা করে রাখতে পারো। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে সহীহ সনদে বর্ণিত অনেক হাদীস রয়েছে। আর ‘আলী এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বিষয়টি হলো তাদের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছাড়ের বিষয়টি পৌঁছেনি। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিষেধ করতে শুনেছিলেন ফলে তারা যা শ্রবণ করেছেন তাই বর্ণনা করেছেন।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে বলেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, সম্ভবত ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট মানসূখের বিষয়টি পৌঁছেনি। আবার অন্যরা বলেছেন, এ সম্ভবনাও রয়েছে যে, ‘আলী (রাঃ) যে সময়ে এ কথাটি বলেছেন সে সময়ে মানুষের প্রয়োজন ছিল যেমনটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ঘটেছিল। ইমাম ইবনু হাযম এ বিষয়টিকে অকাট্য বলে বর্ণনা করেছেন। এটি কোন বছরে নিষেধ করা হয়েছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, পঞ্চম হিজরীতে। আবার কেউ বলেন, নবম হিজরীতে নিষেধ করা হয়েছিল আর দশম হিজরীতে রুখসাত (ছাড়) দেয়া হয়েছিল। তবে শেষের বক্তব্যটিই সঠিক যা বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।