পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা
২৪৭৯-[২৩] ক’ক’ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা’ব আল আহবার বলেছেন, যদি আমি এ বাক্যগুলো না বলতাম, তবে ইয়াহূদীরা নিশ্চয়ই আমাকে গাধা বানিয়ে ফেলতো। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, সে বাক্যগুলো কি? তিনি বলেন,
’’আ’ঊযু বিওয়াজ্ হিল্লা-হিল ’আযীম আল্লাযী লায়সা শাইউন আ’যমা মিনহু, ওয়াবিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তিল্লাতি লা- ইউজা-বিযুহুন্না বাররুন ওয়ালা- ফা-জিরুন, ওয়াবি আসমা-য়িল্লা-হিল হুসনা-, মা- ’আলিমতু মিনহা-, ওয়ামা- লাম্ আ’লাম মিন্ শাররি মা- খলাকা ওয়া যারাআ ওয়া বারাআ’’
(অর্থাৎ- আমি মহান আল্লাহর সত্তার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তাঁর অপেক্ষা মহান আর কেউ নেই এবং আমি আল্লাহর পূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয় নিচ্ছি যা অতিক্রম করার শক্তি ভালো-মন্দ কোন লোকের নেই। আমি আরো আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর ’আসমা-য়ি হুসনা-’ বা উত্তম নামসমূহের, যা আমি জানি আর যা আমি জানি না তাঁর সৃষ্টির অনিষ্টতা হতে যাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছেন ও পৃথিবীতে ছড়িয়ে রেখেছেন।)। (মালিক)[1]
عَنِ الْقَعْقَاعِ: أَنَّ كَعْبَ الْأَحْبَارِ قَالَ: لَوْلَا كَلِمَاتٌ أَقُولُهُنَّ لَجَعَلَتْنِي يَهُودُ حِمَارًا فَقِيلَ لَهُ: مَا هُنَّ؟ قَالَ: أَعُوذُ بِوَجْهِ اللَّهِ الْعَظِيمِ الَّذِي لَيْسَ شَيْءٌ أَعْظَمَ مِنْهُ وَبِكَلِمَاتِ اللَّهِ التامَّاتِ الَّتِي لَا يُجاوزُهنَّ بَرٌّ وَلَا فاجرٌ وَبِأَسْمَاءِ اللَّهِ الْحُسْنَى مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَذَرَأَ وبرأ. رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে কা‘ব আল আহবার-এর উক্তি ইয়াহূদীরা আমাকে গাধা বানাবে বলে তিনি ইয়াহূদী কর্তৃক অপমানিত হওয়ার কথা বুঝিয়েছেন। কারণ গাধার সাথে কাউকে তুলনা করা মানে তাকে অপমানিত করা। তাছাড়া এর ব্যাখ্যা এমনও হতে পারে যে, ইয়াহূদীরা আমাকে যাদু করে সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত করত। এমনকি যাদুর প্রভাবে আমি গাধার মতো আচরণ করতাম (এমন আচরণ যে কিছুই বুঝতে পারছি না)। বিভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায় যে, ইয়াহূদীরা যাদুবিদ্যায় পারদর্শী ছিল।
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যাদু সত্য। যখন কাউকে যাদু করা হয় তখন তার খেয়াল, বুদ্ধি-বিবেচনা নষ্ট হয়ে যায়, মাথার মধ্যে খারাপ, ভ্রষ্ট চিন্তা আসে।
এ হাদীসে বর্ণিত দু‘আটি যাদুর হাত থেকে বাঁচার জন্য ও অপমানিত হওয়ার থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা
২৪৮০-[২৪] মুসলিম ইবনু আবূ বকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবূ বকরা (রাঃ) সালাত আদায় শেষে বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্ আ’ঊযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি ওয়া ’আযা-বিল কবরি’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কুফরী, পরমুখাপেক্ষিতা ও কবর ’আযাব হতে আশ্রয় চাই)। আর আমিও তাই বলতাম। একবার তিনি আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি এটা (দু’আটি) কার থেকে গ্রহণ করেছো? আমি বললাম, আপনার কাছে থেকেই তো। তখন তিনি বললেন, তবে শুন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্য সালাত শেষ হবার পর বলতেন। (তিরমিযী; নাসায়ী ’সালাত শেষে’ শব্দ ছাড়া, আহমাদ শুধু দু’আটি বর্ণনা করেছেন, তবে তাঁর বর্ণনায় রয়েছে ’প্রতিটি সালাত শেষে’)[1]
وَعَن مُسلم بن أبي بَكرةَ قَالَ: كَانَ أَبِي يَقُولُ فِي دُبُرِ الصَّلَاةِ: اللَّهُمَّ إِن أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ فَكُنْتُ أَقُولُهُنَّ فَقَالَ: أَيْ بُنَيَّ عَمَّنْ أَخَذْتَ هَذَا؟ قُلْتُ: عَنْكَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يقولهُنَّ فِي دُبرِ الصَّلاةِ. رَوَاهُ النَّسَائِيّ وَالتِّرْمِذِيّ إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يُذْكَرْ فِي دُبُرِ الصَّلَاةِ
وَرَوَى أَحْمَدُ لَفْظَ الْحَدِيثِ وَعِنْدَهُ: فِي دُبُرِ كل صَلَاة
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে কুফর বলতে সকল প্রকার কুফরকে (ছোট বা বড়, প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য) বুঝানো হচ্ছে। ফাকর বা দারিদ্র্য বলতে এমন দারিদ্র্য যার মধ্যে কোন কল্যাণ বা পরহেজগারিতা নেই। এ জন্যই বর্ণিত হয়েছে, (كاد الفقر أن يكون كفرًا) অর্থাৎ- দারিদ্র্য কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। হাদীসটি আবূ না‘ঈম তার ‘‘আল হুলিয়্যাহ্’’ গ্রন্থে এবং ইমাম বায়হাক্বী তার ‘‘শু‘আবূল ঈমান’’ গ্রন্থে আনাস (রাঃ) থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সানাদ য‘ঈফ। ‘আল্লামা সান্‘আনী বলেন, এ মর্মে আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, দারিদ্র্য ব্যক্তিকে কুফরীতে পতিত হওয়ার নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ দারিদ্র্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করায় এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিযক্বের প্রতি অসন্তুষ্ট করে। এভাবে ক্রমশ তা কুফরীর দিকে নিয়ে যায়- না‘ঊযুবিল্লাহ।
‘আল্লামা কারী বলেন, এখানে দারিদ্রের ফিতনা থেকে অথবা অন্তরের দারিদ্র্যতা; যা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করার দিকে ব্যক্তিকে নিয়ে যায়; তা থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে দারিদ্র্যকে কুফরীর সাথে একত্রে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য এ হতে পারে যে, দারিদ্রের ফলে দরিদ্র ব্যক্তি তার প্রতি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বণ্টনের প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারে না এবং আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত (অনুগ্রহ) দিয়েছেন তার জন্যে তাঁর শুকরিয়া আদায় করে না। ফলে তার এ দারিদ্র্যতা তাকে ক্রমশ কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। এক সময় সে আল্লাহকে অস্বীকার করে বসে- না‘ঊযুবিল্লাহ।
অত্র হাদীসে উল্লিখিত দু‘আটি প্রত্যেক ফরয বা নফল সালাতের সালাম ফিরানোর পূর্বে বা পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা
২৪৮১-[২৫] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আ’ঊযুবিল্লা-হি মিনাল কুফরি ওয়াদ্দায়নি’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কুফরী ও ঋণ হতে আশ্রয় চাই)। এটা শুনে জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলো, হে আল্লাহ রসূল! আপনি ঋণকে কুফরীর সমান মনে করেছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কুফরী ও পরমুখাপেক্ষিতা হতে আশ্রয় চাই)। তখন এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রসূল! এ দু’টো কি সমান (এক বিষয়)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْكُفْرِ وَالدَّيْنِ» فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَعْدِلُ الْكُفْرَ بِالدَّيْنِ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ» . قَالَ رَجُلٌ: وَيُعْدَلَانِ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: প্রশ্নকারী ব্যক্তি স্পষ্টভাবে বুঝতে চেয়েছেন যে, কুফরী ও ঋণকে কেন একসাথে উল্লেখ করা হলো? এ দু’টোর মধ্যে কি সমান অনিষ্ট বিরাজমান যা দু’টিকে সমান করেছে? ঋণের দায় কি এতই কঠিন যে, সেটা কুফরীর সমান হলো? তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কৌতুহল দূর করে উত্তর বুঝিয়ে দিলেন, হ্যাঁ। ঋণ ঋণী ব্যক্তির জন্য কুফরীর মতো জান্নাতে প্রবেশের পথে স্থায়ী বাধা যতক্ষণ না ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি তা ঋণদাতাকে পরিশোধ না করে। (অর্থাৎ- ঋণী ব্যক্তি যতক্ষণ না ঋণদাতাকে ঋণ পরিশোধ না করবে ততক্ষণ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।)
ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি কাফির ও মুনাফিক্বের মতো। কারণ যখন ব্যক্তির ওপর ঋণের বোঝা থাকে তখন সে মিথ্যা বলে এবং ওয়া‘দা দিলে তা ভঙ্গ করে। এগুলো মুনাফিক্বের বৈশিষ্ট্য ও নিফাক্বের চিহ্ন। আর দরিদ্র ব্যক্তি (ফকীর) কখন অধৈর্য হয়ে যায়। ফলে তার দারিদ্র্যই তাকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। এর এটা ঋণী ব্যক্তির থেকেও খারাপ অবস্থা।