পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ব্যাপকতা
২৩৭৫-[১২] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অসৎ কাজ করার পর আবার সৎ কাজ করে, তার দৃষ্টান্ত হলো ঐ ব্যক্তির মতো, যার গায়ে সংকীর্ণ বর্ম রয়েছে এবং তা তার গলা কষে ধরেছে। অতঃপর সে কোন সৎ কাজ করল যাতে তার একটি গিরা খসে পড়ল। অতঃপর আর একটি সৎ কাজ করল এতে আর একটি গিরা খুলে গেল। পরিশেষে বর্মটি খুলে মাটিতে পড়ে গেল। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ
عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مَثَلَ الَّذِي يعْمل السَّيئَة ثُمَّ يَعْمَلُ الْحَسَنَاتِ كَمَثَلِ رَجُلٍ كَانَتْ عَلَيْهِ دِرْعٌ ضَيِّقَةٌ قَدْ خَنَقَتْهُ ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً فَانْفَكَّتْ حَلْقَةٌ ثُمَّ عَمِلَ أُخْرَى فَانْفَكَّتْ أُخْرَى حَتَّى تَخْرُجَ إِلَى الْأَرْضِ»
رَوَاهُ فِي شَرْحِ السّنة
ব্যাখ্যা: (كَانَتْ عَلَيْهِ دِرْعٌ) এটি এমন একটি জামা যা বোতাম ও লোহা দ্বারা তৈরি। শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার্থে যা পরিধান করা হয়।
(حَتّٰى تَخْرُجَ إِلَى الْأَرْضِ) অর্থাৎ- পরিশেষে ঐ বর্মটি খুলে পড়ে যায়। ইমাম ত্বীবী বলেন, পরিশেষে সম্পূর্ণরূপে খুলে যায় এবং পরিধানকারী তার সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসে।
হাদীস থেকে উদ্দেশ্য হল, নিশ্চয়ই পাপ কাজ করা কর্তার অন্তরকে সংকীর্ণ করে, তাকে তার বিষয়ে পেরেশানী করে, তাকে সে বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে ফলে তার বিষয়াবলী তার কাছে সহজ হয় না, তার অন্তর কালো হয়ে যায়, তার ওপর তার রিযক সংকীর্ণ হয়ে যায় ও তাকে মানুষের কাছে ঘৃণিত করে। আর যখন ভালো কাজ করে তখন ভালো কাজ তার মন্দ কর্মের পাপকে দূর করে। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই ভালো কাজ পাপসমূহকে দূর করে’’- (সূরা হূদ ১১ : ১১৫)। আর যখন পাপ দূর হয়ে যায় তখন তার অন্তর ও তার রিযক প্রশস্ত হয়। তার অন্তর শান্তি পায়, তার বিষয়াবলী সহজ হয় এবং মানুষের অন্তরে সে প্রিয় হয়ে যায়। সুতরাং হাদীসটি আল্লাহর إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ এ বাণীর ব্যাখ্যা ও উপমা।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ব্যাপকতা
২৩৭৬-[১৩] আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দানকালে বলতে শুনেছেন, ’’যে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন হিসাব দেবার জন্য) নিজের রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য দু’টি জান্নাত রয়েছে’’- (সূরা আর্ রহমান ৫৫ : ৪৬)। বর্ণনাকারী [আবূ দারদা (রাঃ)] বলেন, আমি (এ কথা শুনে) জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি সে যিনা করে অথবা চুরি করে, তারপরও কি (সে দু’টি জান্নাত পাবে)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বিতীয়বার বললাম, ’’যে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) নিজের রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য দু’টি জান্নাত রয়েছে’’। আমি দ্বিতীয়বার বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি সে যিনা করে অথবা চুরি করে, তারপরও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তৃতীয়বারও বললেন, ’’যে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) নিজের রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য দু’টি জান্নাত রয়েছে’’। আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! সে ব্যক্তি যিনা করে অথবা চুরি করে, তারপরও কি? এবারও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, যদি আবূ দারদার নাকও কাটা যায় (ধূলায়িত হয়)। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ: أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُصُّ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَقُول: (ولِمنْ خافَ مقامَ رَبِّهِ جنَّتانِ)
قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ الثَّانِيَةَ: (وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جنَّتان)
فقلتُ الثانيةَ: وإِنْ زنى وسرق؟ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ الثَّالِثَةَ: (وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ)
فَقُلْتُ الثَّالِثَةَ: وَإِنْ زَنَى وسرق؟ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ أبي الدَّرْدَاء» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: وَلِمَنْ خَافَ অর্থাৎ- ভয়কারী এককসমূহ থেকে প্রত্যেকের জন্য অথবা তাদের সামষ্টিকের জন্য। অর্থাৎ- আলোচনা বণ্টন পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। সুতরাং দু’ জান্নাতের একটি মানুষ জাতির ভয়কারীর জন্য। অন্যটি জিন্ জাতির ভয়কারীর জন্য। অতএব প্রত্যেক ভয়কারীর জন্য একটি করে জান্নাত। প্রথমটিই নির্ভরযোগ্য।
مَقَامَ رَبِّهٗ আল্লাহ তা‘আলার সামনে দাঁড়ানো বলতে ঐ অবস্থানস্থল বান্দারা যেখানে হিসাবের জন্য দাড়াবে অথবা ভয়কারী তার প্রভুর কাছে হিসাবের জন্য দাঁড়ানো। অর্থাৎ- যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার রবের সামনে দাঁড়ানোর ভয় করে তার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অর্থাৎ- ‘‘যেদিন মানুষ সকল জগতের পালনকর্তা আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে’’- (সূরা আল মুতাফফিফীন ৮৩ : ৬)। একমতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ- সে তার ব্যাপারে তার রবের অবস্থানের ভয় করে। আর তা হল বান্দার অবস্থাসমূহের ব্যাপারে তার রবের পর্যবেক্ষণ এবং তার কর্ম ও উক্তিসমূহের ব্যাপারে অনুসন্ধান করা যে, সত্তা তার ব্যাপারে তত্ত্বাবধান করছে কেননা তিনি তার (বান্দার) পর্যবেক্ষণ করেছেন। যেমন তাঁর বাণীতে আছে, أَفَمَنْ هُوَ قَائِمٌ عَلٰى كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ অর্থাৎ- ‘‘প্রত্যেক আত্মা যা উপার্জন করেছে সে ব্যাপারে প্রত্যেক আত্মার উপর যিনি পর্যবেক্ষণকারী তিনিই কি?’’ (সূরা আর্ র‘দ ১৩ : ৩৩) এর সারাংশ হল المقام এর ব্যাখ্যাতে তিনটি সম্ভাবনা।
প্রথমটি হল, নিশ্চয়ই তা স্থান সম্বন্ধীয় বিশেষ্য। দ্বিতীয়ত নিশ্চয়ই তা ক্রিয়ামূল। তার অধীনে দু’টি সম্ভাবনা আছে, একটি হল তা আল্লাহর সামনে সৃষ্টিজীবের দাঁড়ানো- এ অর্থে ব্যবহৃত। অথবা সৃষ্টিজীবের সামনে আল্লাহর অবস্থান- এ অর্থে ব্যবহৃত। তিনি مقام শব্দটিকে সম্মানপ্রদর্শন ও ভীতিপ্রদর্শন এর উদ্দেশে الرب শব্দের দিকে সম্বন্ধ করেছেন। একমতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ- যে তার রবকে ভয় করে তার জন্য আধিক্যতাকে জড়িয়েছে এমন এক স্থান এটি। যেমন উক্তি তুমি তার থেকে বাঘের অবস্থান বা ভয় দূর করলে। মুজাহিদ ও নাখ্‘ঈ বলেন, সেটা এমন এক লোক যে অবাধ্যতার ইচ্ছা করে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ হলে তাঁর ভয়ে ঐ পাপ ছেড়ে দেয়। এতে রয়েছে একই বিষয়ে দু’টি জান্নাত লাভের কারণের প্রতি ইঙ্গিত। আর তা শুধু ভয় নয় বরং আল্লাহ সম্পর্কে সৃষ্ট ভয়ে অবাধ্যতা বর্জন। আর ইবনু জারীর ইবনু ‘আব্বাস থেকে এ আয়াত সম্পর্কে সংকলন করেন, নিশ্চয়ই তিনি বলেন, আল্লাহ ঐ সকল মু’মিনদেরকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যারা তাঁর অবস্থানকে ভয় করছে ও তাঁর ফরয করা বিষয়সমূহ আদায় করেছে। ইবনু জারীর ইবনু ‘আব্বাস থেকে আরো সংকলন করেন, ইবনু ‘আব্বাস বলেন, প্রথমে ব্যক্তি ভয় করে, অতঃপর সে মুত্তাক্বী হয়; আর ভয়কারী বলতে যে আল্লাহর আনুগত্যে জড়িত হয় এবং অবাধ্যতাকে বর্জন করে।
جَنَّتٰنِ অর্থাৎ- অনেক শাখা পল্লব বিশিষ্ট দু’টি উদ্যান; কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখিত দু’টি গুণের শেষ পর্যন্ত। নিশ্চয়ই জান্নাতসমূহ থেকে উল্লেখিত জান্নাতদ্বয় এদের পরে উল্লেখিত জান্নাতদ্বয় অপেক্ষা উঁচুমানের। এ কারণেই তিনি বলেছেন, এ ছাড়াও দু’টি উদ্যান আছে যা স্তর, নিয়ামত ও সম্মানে এদের নিম্নে। আর উল্লেখিত জান্নাতদ্বয়ের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা হয়েছে, প্রথমত একমতে বলা হয়েছে, আনুগত্যমূলক কাজের জন্য একটি জান্নাত এবং অপরটি অবাধ্যতা বর্জনের জন্য। একমতে বলা হয়েছে, একটি বিশ্বাসের জন্য অপরটি ‘আমলের জন্য। একমতে বলা হয়েছে, একটি ‘আমলের মাধ্যমে অপরটি অনুগ্রহস্বরূপ। স্পষ্ট যে, জান্নাত দু’টি স্বর্ণের হবে এদের পাত্র, এদের প্রাসাদ, এদের অলংকার এবং এদের মাঝে যা আছে সবকিছু স্বর্ণের। আর এদের অপেক্ষা নিম্নমানের দু’টি জান্নাত আছে যা রৌপ্যের। ইবনু কাসীরও এ মত পোষণ করেছেন। যেমন তিনি বলেন, বিশুদ্ধ মত হল, নিশ্চয়ই এ আয়াতটি ব্যাপক। যেমন ইবনু ‘আব্বাস ও অন্যান্যগণ আল্লাহর বাণী وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٗ جَنَّتَانِ (সূরা আর্ রহমা-ন ৫৫ : ৪৬) কিয়ামতের দিন পরাক্রমশালী ও মহা মর্যাদাবান আল্লাহর সামনে وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰى (সূরা আন্ না-যি‘আ-ত ৭৯ : ৪০) আর সীমালঙ্ঘন করেনি, পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দেয়নি, নিশ্চয়ই পরকাল উত্তম ও স্থায়ী এ কথা জেনেছে, অতঃপর আল্লাহর ফরয করা বিষয়সমূহ আদায় করেছে এবং তার হারাম বিষয়সমূহ থেকে বিরত থেকেছে। তার জন্য কিয়ামতের দিন তার রবের কাছে দু’টি জান্নাত থাকবে। এর ব্যাখ্যায় বলেছেন। যেমন ইমাম বুখারী (তার সানাদে) আবূ মূসা আল আশ্‘আরী থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেন স্বর্ণের এবং রৌপ্যের দু’টি জান্নাত এবং তাদের পাত্র ও তাদের মাঝে যা কিছু আছে সব কিছু রৌপ্যের।
(قُلْتُ: وَإِنْ زَنٰى وَإِنْ سَرَقَ؟ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ) অর্থাৎ- যদিও যিনা ও চুরি করে থাকে তথাপিও ভয়কারীর জন্য দু’টি জান্নাত। ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, যদিও এ ভয়ের পূর্বে তার কর্তৃক যিনা ও চুরির মতো কোন পাপ পূর্বে হয়ে থাকে এবং পরে বলাও বিশুদ্ধ হবে, যদি এ ভয় সত্ত্বেও কর্মদ্বয় করে থাকে। আর ভয়ের পরবর্তী দিক হল, এ ভয় তোমার গুনাহের কাজ এবং এদের অনুরূপ কাজ একত্র হওয়া।
একমতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ- যে ব্যক্তি তার অবাধ্যতার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে তা ছেড়ে দিবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দু’টি বাগান দান করবেন যদিও কোন সময় সে চুরি, যিনা করে থাকে এবং তাওবাহ্ করে থাকে এ ক্ষেত্রে তার চুরি ও যিনা ঐ যিনা এবং চুরি ছাড়া অন্য কোন অবাধ্যতার কারণে তার আল্লাহর ভয়ের পুণ্যকে বাতিল করবে না।
(وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ أبِى الدَّرْدَاءِ) অর্থাৎ- যদিও অপমানের কারণে আবূ দারদা (রাঃ) এর নাক মাটির সাথে লেগে যায়। কারী বলেন, হাদীসটির বাহ্যিক দিক হল, নিশ্চয়ই (مَنْ) শব্দটি তার ব্যাপকতার উপর আছে। হাদীসে ভয়কারী বলতে মু’মিন উদ্দেশ্য। এ ধরনের একটি হাদীস বুখারী, মুসলিম আবূ যার (রাঃ) থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেন, যে কোন বান্দা لا اله الا الله বলবে, অতঃপর এর উপরই মারা যাবে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে তথাপিও কি? অতঃপর তৃতীয়বার অথবা চতুর্থবার বললেন, আবূ যার-এর নাক ধূলায় ধূসরিত হলেও। (আল হাদীস)
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, ইমাম আহমাদ অনুরূপ হাদীস তার কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪৪২ পৃষ্ঠাতে আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (لا اله الا الله وحده لا شريك له) পাঠ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেন, আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে তথাপিও? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে। অতঃপর তৃতীয়বার বললেন, আবূ দারদা (রাঃ) এর নাক ধূলায় ধূসরিত হলেও। তিনি বলেন, এরপর আমি বের হলাম যাতে এ ব্যাপারে মানুষের মাঝে ঘোষণা দিতে পারি। তিনি বললেন, অতঃপর ‘উমার আমার সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি আমাকে বললেন, তুমি ফিরে যাও কেননা মানুষ যদি এ ব্যাপারে জানে তাহলে এর উপর তারা ভরসা করে নিবে। সুতরাং আমি সেখান থেকে ফিরে গিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে জানালে তিনি বললেন, ‘উমার সত্য বলেছে। হাদীসটি হাফেয ইবনু কাসীর তার তাফসীর গ্রন্থে এনেছেন এবং ইমাম আহমাদ-এর দিকে কোন সম্বন্ধ করেননি বরং একে ইবনু জারীর ও নাসায়ীর দিকে সম্বন্ধ করেছেন। আর তিনি বলেন, এটিকে আবূ দারদা (রাঃ) এর ব্যাপারে মাওকূফ সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, তার থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি তার রবের অবস্থানের ভয় করল, যিনা করেনি, চুরি করেনি, হাদীসটিকে ইমাম হায়সামী তাঁর ‘‘মাজমা‘উয্ যাওয়ায়িদ’’ গ্রন্থে ৭ম খণ্ডে ১১৮ পৃষ্ঠাতে ইমাম আহমাদ ও ত্ববারানীর দিকে সম্বন্ধ করেছেন এবং তিনি বলেছেন আহমাদ-এর রাবীগণ সহীহ।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ব্যাপকতা
২৩৭৭-[১৪] ’আমির্ আর্ রম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি আসলো, যার গায়ে একটি চাদর জাতীয় জিনিস জড়ানো ছিল, আর তার হাতে কোন কিছু ছিল। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময়ে পাখির বাচ্চার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বাচ্চাগুলোকে আমার চাদরে রাখলাম। হঠাৎ এদের মা এসে আমার মাথার উপর ঘুরতে লাগল। অবস্থাদৃষ্টে আমি তার জন্য বাচ্চাগুলোকে উন্মুক্ত করলাম, এমন সময় মা পাখিটি ওদের মধ্যে এসে মিলে গেল। তখন আমি এদের সকলকে আমার চাদরে জড়িয়ে ফেললাম। এগুলো এখনো আমার সাথে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এদেরকে ছেড়ে দাও। আমি সাথে সাথে ছেড়ে দিলাম, কিন্তু তাদের মা বাচ্চাদের ছেড়ে গেল না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাচ্চাদের ওপর তাদের মায়ের মমত্ববোধ দেখে তোমরা কী আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ? সেই সত্তার কসম, যিনি আমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, বাচ্চাগুলোর ওপর তাদের মায়ের দয়ার চেয়েও অবশ্যই আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর বেশি দয়াবান। এগুলোকে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকে নিয়ে এসেছ যথাস্থানে তাদের মায়ের সাথে রেখে এসো। তাই সে (বাচ্চাগুলো) নিয়ে গেল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَامِرٍ الرَّامِ قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَهُ يَعْنِي عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أَقْبَلَ رَجُلٌ عَلَيْهِ كِسَاءٌ وَفِي يَدِهِ شَيْءٌ قَدِ الْتَفَّ عَلَيْهِ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَرَرْتُ بَغِيضَةِ شَجَرٍ فَسَمِعْتُ فِيهَا أَصْوَاتَ فِرَاخِ طَائِرٍ فَأَخَذْتُهُنَّ فَوَضَعْتُهُنَّ فِي كِسَائِي فَجَاءَتْ أُمُّهُنَّ فَاسْتَدَارَتْ عَلَى رَأْسِي فَكَشَفْتُ لَهَا عَنْهُنَّ فَوَقَعَتْ عَلَيْهِنَّ فَلَفَفْتُهُنَّ بِكِسَائِي فَهُنَّ أُولَاءِ مَعِي قَالَ: «ضَعْهُنَّ» فَوَضَعْتُهُنَّ وَأَبَتْ أُمُّهُنَّ إِلَّا لُزُومَهُنَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أتعجبون لرحم أم الْفِرَاخ فراخها؟ فو الَّذِي بَعَثَنِي بِالْحَقِّ: لَلَّهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ أُمِّ الْفِرَاخ بِفِرَاخِهَا ارْجِعْ بِهِنَّ حَتَّى تَضَعَهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَخَذْتَهُنَّ وَأُمُّهُنَّ مَعَهُنَّ . فَرَجَعَ بِهِنَّ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (فَكَشَفْتُ لَهَا عَنْهُنَّ) ‘‘আমি তার জন্য বাচ্চাগুলোকে উন্মুক্ত করলাম’’। অর্থাৎ- বাচ্চার মা যাতে বাচ্চাগুলো দেখতে পারে সেজন্য কাপড় কিছুটা সরিয়ে বাচ্চাগুলোর চেহারা তাদের মায়ের সামনে প্রকাশ করলাম।
(فَوَقَعَتْ) ‘‘মা তাতে পতিত হলো’’। অর্থাৎ- বাচ্চাগুলোর মা বাচ্চার সাথে গিয়ে মিলিত হলো।
(فَلَفَفْتُهُنَّ) অতঃপর আমি সবগুলো জড়িয়ে নিলাম। অর্থাৎ- বাচ্চার মা সহ বাচ্চাগুলোকে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে এসেছি।
(ارْجِعْ بِهِنَّ حَتّٰى تَضَعَهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَخَذْتَهُنَّ) ‘‘তুমি সেগুলো যেখান থেকে নিয়ে এসেছ সেখানে নিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আসো’’। বাচ্চাগুলোকে মা সহ সে স্থানে ফিরিয়ে দিতে বললেন যেখান থেকে তা নিয়ে এসেছে। এজন্য যে, ঐ স্থানটি ঐ পাখীর পরিচিত এবং ঐ জায়গার প্রতি তাদের ভালোবাসা আছে, তাই সেখানে ফিরিয়ে দিতে বললেন।
হাদীসের শিক্ষাঃ
১. অনর্থক পশু-পাখীকে কষ্ট দেয়া অবৈধ।
২. মানুষ যেমন স্বীয় আবাসস্থলকে ভালোবাসে, তদ্রূপ পাখীও তাদের আবাসস্থলকে ভালোবাসে।
৩. পশু-পাখীর প্রতি দয়া করা একটি উত্তম গুণ।