পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যাকাত যাদের জন্য হালাল নয়
১৮২৯-[৯] আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী মাখযূম-এর এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়কারী করে পাঠালেন। যাবার সময় সে ব্যক্তি আবূ রাফি’কে বলল, আপনিও আমার সাথে চলুন। এতে কিছু অংশ আপনিও পেয়ে যাবেন। আবূ রাফি’ বললেন, না, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস না করে আমি যেতে পারি না। তাই তিনি তাঁর কাছে গেলেন। তাঁকে তার সাথে যাবার অনুমতি চাইলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) আমাদের (বানী হাশিমের) জন্য হালাল নয়। আর কোন গোত্রের দাস তাদের মধ্যেই গণ্য (তুমি তো আমাদেরই দাস)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
عَنْ أَبِي رَافِعٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ رَجُلًا مِنْ بَنِي مَخْزُومٍ عَلَى الصَّدَقَةِ فَقَالَ لِأَبِي رَافِعٍ: اصْحَبْنِي كَيْمَا تُصِيبُ مِنْهَا. فَقَالَ: لَا حَتَّى أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْأَلَهُ. فَانْطَلَقَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَهُ فَقَالَ: «إِنَّ الصَّدَقَةَ لَا تَحِلُّ لَنَا وَإِنَّ مَوَالِيَ الْقَوْمِ مِنْ أَنْفُسِهِمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: সাহাবী আবূ রাফি' বলেন, জনৈককে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি তখন আবূ রাফি‘কে বলেন, তুমি আমার সঙ্গে থাকো। তোমারও গনীমাতের মাল অর্জন হবে।
তিনি বললেন, না, যতক্ষণ না নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হবে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যাকাত-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) আমার জন্য হালাল নয়। আর কোন ক্বওমের গোলাম এ ক্বওমের ন্যায় একই হুকুমের আওতায় থাকে। হাদীসটিকে ইমাম আত্ তিরমিযী সহীহ বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যাকাত যাদের জন্য হালাল নয়
১৮৩০-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকাতের মাল ধনীদের জন্য হালাল নয়, সুস্থ সবলদের (খেটে খেতে সক্ষম) জন্যও নয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, দারিমী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَحِلُّ الصَّدَقَةُ لِغَنِيٍّ وَلَا لِذِي مِرَّةٍ سَوِيٍّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد والدارمي
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ধনী বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সকল ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়িয নয়। আর এ বিষয়ে ‘উলামাদের মধ্যে কোন ইখতিলাফে নেই। তবে ইখতিলাফ হলো কি পরিমাপ মাল থাকলে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) নেয়া নিষেধ। হানাফী পুস্তকে উল্লিখিত যে, তিন প্রকারের মধ্যে যাকাত নেয়া জায়িয নয়। ১ম হলো যার কাছে নিসাব পরিমাপ মাল আছে যার ওপর যাকাত ফরয হয়েছে। ২য় প্রকার হলো এমন ধনী যার ওপর যাকাত হারাম আর যার ওপর ফিত্বরাহ্ ও কুরবানী ওয়াজিব। ৩য় প্রকার হলো ঐ ধনী যার ওপর ভিক্ষা করা হারাম। যেমন তার কাছে এক দিনের খাদ্য আছে ও কাপড়ও আছে। আর ইমাম আহমাদ-এর কাছে যার দিরহাম আছে তার ভিক্ষা করা জায়িয নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যাকাত যাদের জন্য হালাল নয়
১৮৩১-[১১] এ হাদীসটিকে আহমাদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ عَنْ أَبِي هُرَيْرَة
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস থেকেও বুঝা যায় যে, যুবক ও সুস্বাস্থ্য ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়িয নয়। হানাফী মাযহাব অনুসারে যাকাত গ্রহণ হালাল হওয়ার মাধ্যম হলো অভাব ও প্রয়োজন। তবে যাকাত আদায়কারী অথবা মুজাহিদের জন্য। অথবা যদি কেউ নিজ মাল দিয়ে কোন গোলাম খরিদ করে আযাদ করার জন্য। অথবা কারোর যদি প্রতিবেশি মিসকীন থাকে, অতঃপর তার ওপর সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে বা মিসকীন ব্যক্তি যদি হাদিয়্যাহ্ দেয় তবে গ্রহণ করতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যাকাত যাদের জন্য হালাল নয়
১৮৩২-[১২] ’উবায়দুল্লাহ ইবনু ’আদী ইবনু খিয়ার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে দু’ ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, বিদায় হাজ্জে মানুষের মধ্যে যাকাতের মাল বণ্টন করার সময় তারা উভয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তারা এ মালের কিছু অংশ নেবার জন্য আগ্রহ দেখান। দু’জন বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যাকাত নেবার আগ্রহ দেখে) আমাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলালেন। আমাদেরকে সুস্থ সবল দেখে বললেন, তোমরা যাকাত নিতে চাইলে আমি দিতে পারি। (কিন্তু মনে রাখবে,) সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ও যাকাতের সম্পদে ধনীদের কোন অংশ নেই। আর সুস্থ সবল এবং পরিশ্রম করতে সক্ষম লোকদের জন্য সদাক্বাহ্ ও যাকাত নয়। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ قَالَ: أَخْبَرَنِي رَجُلَانِ أَنَّهُمَا أَتَيَا النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ وَهُوَ يُقَسِّمُ الصَّدَقَةَ فَسَأَلَاهُ مِنْهَا فَرَفَعَ فِينَا النَّظَرَ وَخَفَضَهُ فَرَآنَا جَلْدَيْنِ فَقَالَ: «إِنْ شِئْتُمَا أَعْطَيْتُكُمَا وَلَا حَظَّ فِيهَا لِغَنِيٍّ وَلَا لِقَوِيٍّ مكتسب» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যাকাত যাদের জন্য হালাল নয়
১৮৩৩-[১৩] ’আত্বা ইবনু ইয়াসার মুরসাল পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ধনী লোকের জন্য যাকাতের মাল হালাল নয়। তবে পাঁচ অবস্থায় (১) আল্লাহর পথে জিহাদকারী ধনী [যখন কাছে যুদ্ধ সরঞ্জাম নেই] (২) যাকাত আদায়ে নিযুক্ত ধনী, (৩) জরিমানার হুকুমপ্রাপ্ত ধনী [যা তাকে পরিশোধ করতে হবে। অথচ ঐ সময় এ পরিমাণ সম্পদ তার নেই], (৪) নিজ মালের পরিবর্তে যাকাতের মাল ক্রয়কারী ধনী, (৫) আর ওই ধনীর জন্যও হালাল, যার প্রতিবেশী যাকাতের মাল পেয়ে প্রতিবেশী ধনী ব্যক্তিকে কিছু তোহফা দিয়েছে। (মালিক, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: لَا تَحِلُّ الصَّدَقَةُ لِغَنِيٍّ إِلَّا لِخَمْسَةٍ: لِغَازٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ لِعَامِلٍ عَلَيْهَا أَوْ لِغَارِمٍ أَوْ لِرَجُلٍ اشْتَرَاهَا بِمَالِهِ أَوْ لِرَجُلٍ كَانَ لَهُ جَارٌ مِسْكِينٌ فَتَصَدَّقَ عَلَى الْمِسْكِينِ فَأَهْدَى الْمِسْكِين للغني . رَوَاهُ مَالك وَأَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যাকাত যাদের জন্য হালাল নয়
১৮৩৪-[১৪] আবূ দাঊদ-এর এক বর্ণনায় আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। অথবা ইবনুস্ সাবীল অর্থাৎ বিপদগ্রস্ত মুসাফির ধনীও।[1]
وَفِي رِوَايَةٍ لِأَبِي دَاوُدَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ: «أوابن السَّبِيل»
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যাকাত যাদের জন্য হালাল নয়
১৮৩৫-[১৫] যিয়াদ ইবনু হারিস আস সুদায়ী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। তাঁর হাতে আমি বায়’আত গ্রহণ করলাম। এরপর যিয়াদ একটি বড় হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে বলতে লাগলেন, আমাকে যাকাতের মাল থেকে কিছু দান করুন। তিনি বললেন, আল্লাহ যাকাত (বণ্টন করার ব্যাপারে কাকে দেয়া যাবে) তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বা অন্য কাউকে কোন হুকুম দিতে রাজী হননি, বরং তিনি নিজে তা আটভাগে ভাগ করেছেন। তুমি যদি এ (আট) ভাগের কোন ভাগে পড়ো আমি তোমাকেও যাকাত দিব। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ زِيَادِ بْنِ الْحَارِثِ الصُّدَائِيِّ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْتُهُ فَذَكَرَ حَدِيثًا طَوِيلًا فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ: أَعْطِنِي مِنَ الصَّدَقَةِ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَرْضَ بِحُكْمِ نَبِيٍّ وَلَا غَيْرِهِ فِي الصَّدَقَاتِ حَتَّى حَكَمَ فِيهَا هُوَ فَجَزَّأَهَا ثَمَانِيَةَ أَجْزَاءٍ فَإِنْ كُنْتَ مِنْ تِلْكَ الْأَجْزَاء أَعطيتك» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: যাকাত গ্রহণ করতে পারে আট শ্রেণীর লোক, যাদের নাম আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্’র ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
আর এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, যাকাত শুধু এক প্রকার লোকদের দিলে হবে না। বরং অন্য প্রকারের মধ্যেও বণ্টন করতে হবে। আর এটাই ইমাম শাফি‘ঈর ও ‘ইকরিমার মত। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল এর মত যে, যাকাত যদি কোন এক শ্রেণীকে দেয়, তবে তা জায়িয হবে। এমনকি এক ব্যক্তিকে যদি দেয় তবুও জায়িয হবে। আর এ মত হলো হুযায়ফাহ্, ইবনু ‘আব্বাস এবং ‘উমারের। ইমাম শাফি‘ঈর উক্তি হলে অন্য সম্প্রদায় খাকতে শুধু এক প্রকারের মধ্যে বণ্টন জায়িয নয়।