পরিচ্ছেদঃ ৩৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সালাত
১৩২৪-[৩] ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমীরুল মু’মিনীন আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)আমাকে বলেছেন এবং তিনি সম্পূর্ণ সত্য বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন লোক অন্যায় করার পর (লজ্জিত হয়ে) উঠে গিয়ে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তারপর তিনি এ আয়াত পড়লেন (মূল আয়াত হাদীসে আছে) ’’এবং যেসব লোক এমন কোন কাজ করে বসে যা বাড়াবাড়ি ও নিজেদের ওপর যুলম, এরপর আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, তখন নিজেদের গুনাহের জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৩৫)। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; কিন্তু ইবনু মাজাহ উপরোক্ত আয়াত উল্লেখ করেননি।)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو بَكْرٍ وَصَدَقَ أَبُو بَكْرٍ. قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَا مِنْ رَجُلٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا ثُمَّ يَقُومُ فَيَتَطَهَّرُ ثُمَّ يُصَلِّي ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللَّهَ إِلَّا غَفَرَ الله لَهُ ثمَّ قَرَأَ هَذِه الاية: (وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذكرُوا الله فاستغفروا لذنوبهم)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ إِلَّا أَنَّ ابْنَ مَاجَه لم يذكر الْآيَة
ব্যাখ্যা: (صَدَقَ أَبُو بَكْرٍ) এ বাক্যটি একটি স্বতন্ত্র বাক্য ‘আলী (রাঃ) তা দ্বারা আবূ বাকর (রাঃ)-এর বড়ত্ব বর্ণনা করেছেন এবং সত্যবাদিতায় তিনি পরিপূর্ণ, এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রেখেছেন সিদ্দীক্ব। এখানে اِسْتَغْفَارٌ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অনুশোচনার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট তাওবাহ্ করা এবং পাপ কাজে না ফেরার দৃঢ় প্রত্যয় বা অঙ্গীকার করা।
পরিচ্ছেদঃ ৩৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সালাত
১৩২৫-[৪] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চিন্তিত করে তুললে তিনি নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দাঁড়িয়ে যেতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন অস্পষ্ট বিষয়ে দুর্বোধ্য কাজে অবতরণ করতেন, অথবা চিন্তাগ্রস্ত হতেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন দুঃচিন্তায় নিপতিত হতেন তখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন আল্লাহ তা‘আলার এ আয়াত (‘‘তোমরা সালাত ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য চাও’’- সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ৪৫) বাস্তবায়নকল্পে। সুতরাং চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তির সালাতে মাশগুল হওয়া উচিত, আল্লাহ তা‘আলা সালাতের বারাকাতে তার পক্ষ থেকে সব মুসীবাত দূর করে দিবেন। আল্লামা ক্বারী (রহঃ) বলেন, এ সালাতকে সালাতুল হাজাত হিসেবে নামকরণ করা উচিত। কারণ সেটা পদ্ধতিগত দিক দিয়ে নির্দিষ্ট নয় (সকল সালাতের মতই) এবং কোন ওয়াক্তের সাথে নির্দিষ্টও নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সালাত
১৩২৬-[৫] বুরায়দাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজ্রের (ফজরের) সময় বিলালকে ডাকলেন। তাকে তিনি বললেন, কি ’আমল দ্বারা তুমি আমার পূর্বে জান্নাতে চলে গেছ। আমি যখনই জান্নাতে প্রবেশ করেছি, তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি। বিলাল আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি আযান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অবশ্যই আদায় করি। আর আমার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নষ্ট হয়ে গেলে তখনই আমি উযূ করে আল্লাহর জন্যে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা জরুরী মনে করেছি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, এ কারণেই তুমি এত বিশাল মর্যাদায় পৌঁছে গেছ। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: أَصْبَحَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَعَا بِلَالًا فَقَالَ: «بِمَ سَبَقْتَنِي إِلَى الْجَنَّةِ مَا دَخَلْتُ الْجَنَّةَ قَطُّ إِلَّا سَمِعْتُ خَشْخَشَتَكَ أَمَامِي» . قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَذَّنْتُ قَطُّ إِلَّا صَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ وَمَا أَصَابَنِي حَدَثٌ قَطُّ إِلَّا تَوَضَّأْتُ عِنْدَهُ وَرَأَيْتُ أَنَّ لِلَّهِ عَلَيَّ رَكْعَتَيْنِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بِهِمَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘‘আল্লাহর জন্যে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করা’’ অর্থাৎ অপবিত্রতা দূর করার উপর এবং পবিত্রতা অর্জনের সক্ষমতার উপর আল্লাহ তা‘আলার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা।
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, এখানে ইঙ্গিত রয়েছে যে, উভয়টির উপর তিনি সর্বদাই ‘আমল করতেন। (بِهِمَا) এ ব্যাপারে আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এখানে তাসনিয়া বা দ্বিবচনের সর্বনাম (هُمَا) টি নিকটবর্তী দু’টো বিষয়কে নির্দেশ করে, তা হলো সর্বদা পবিত্র থাকা এবং পবিত্রতার কৃতজ্ঞতায় দু’ রাক্‘আত সালাতের মাধ্যমে তার পূর্ণতা দান করা।
আলোচ্য হাদীসে দলীল পাওয়া যায় যে, সবসময় পবিত্র থাকা মুস্তাহাব ও তার পুনঃপ্রতিদান হলো জান্নাতে প্রবেশ করা। কেননা পবিত্র অবস্থায় রাত যাপনের জন্য যে সর্বদা পবিত্রতা আবশ্যক করে এবং পবিত্র অবস্থায় রাত যাপন করে, তার আত্মা ‘আরশের নিচে সাজদায়রত থাকে যেমন বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-এর হাদীস থেকে বর্ণনা করেছেন এবং ‘আরশ (আরশ) হলো জান্নাতের সা‘দ।
আর আলোচ্য হাদীসের বাহ্যিক রূপ হলো যে, নিশ্চয় এ সাওয়াবটি ঐ ‘আমলের কারণেই পাওয়া যায়। তবে সেটার মাঝে ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা, ‘আমল তোমাদের কাউকেই জান্নাত প্রবেশ করাবে না এর মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই, কারণ এখানে হাদীস এবং আল্লাহ তা‘আলা কথা ‘‘তোমাদের ‘আমল এর মাধ্যমেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো’’- (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ৩২)-এর সমাধানে বলা যায় যে, জান্নাতে প্রবেশ করাটা আল্লাহর রহমাতের হবে এবং জান্নাতে বিভিন্ন মর্যাদা ‘আমল অনুপাতেই হবে।
আর আলোচ্য হাদীসে এটাও প্রমাণিত হয় যে, জান্নাত এখনো বিদ্যমান রয়েছে, আর জান্নাতের বর্তমান বিদ্যমান থাকা অস্বীকার করে মু‘তাযিলা সম্প্রদায়।
পরিচ্ছেদঃ ৩৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সালাত
১৩২৭-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহর নিকট বা কোন লোকের নিকট কারো কোন দরকার হয়ে পড়লে সে যেন ভাল করে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পড়ে, এ দু’আ পড়ে (দু’আর বাংলা অর্থ)-
’’আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি বড়ই ধৈর্যশীল ও অনুগ্রহশীল। আল্লাহ মহাপবিত্র, তিনি ’আরশে আযীমের অধিপতি। সব প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ঐসব জিনিস চাই যার উপর তোমার রহমত বর্ষিত হয় এবং যা তোমার ক্ষমা পাওয়ার উপায় হয়। আর আমি আমার ভাল কাজের অংশ চাই। সকল গুনাহ থেকে বাঁচতে চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার কোন গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া ব্যতীত, আমার কোন দুঃখ দূর করে দেয়া ব্যতীত, আমার কোন দরকার যা তোমার নিকট পছন্দনীয়, পূরণ করা ব্যতীত রেখে দিও না, হে আরহামার রহিমীন’’। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব।)[1]
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَتْ لَهُ حَاجَةٌ إِلَى اللَّهِ أَوْ إِلَى أحد من بني آدم فَليَتَوَضَّأ فليحسن الْوُضُوءَ ثُمَّ لْيُصَلِّ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ لْيُثْنِ عَلَى اللَّهِ تَعَالَى وَلْيُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لْيَقُلْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ لَا تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلَّا غَفَرْتَهُ وَلَا هَمًّا إِلَّا فَرَّجْتَهُ وَلَا حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًى إِلَّا قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস প্রমাণ করে যে, সালাতুল হাজাত আদায় করা শারী‘আত সম্মত তবে এ শর্তে যে, তা বৈধ হবে। (ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব নয়)।