পরিচ্ছেদঃ ৩৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইশরাক ও চাশ্তের সালাত
১৩১৮-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক ’যুহার’ (চাশত) দু’ রাক্’আত সালাতের যত্ন নিবে, তার সকল (সগীরাহ্) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমমানের হয়। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَافَظَ عَلَى شُفْعَةِ الضُّحَى غُفِرَتْ لَهُ ذنُوبه وَإِن كَانَت مثلا زَبَدِ الْبَحْرِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: সালাতুয্ যুহার উপর অটল থাকবে অথবা যদি একবারও তা আদায় করে, তা যথাযথভাবে আদায় করবে। এখানে شُفْعَةِ الضُّحى দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সালাতুয্ যুহার দু’ রাক্‘আত। আল্লামা জাযূরী আন্ নিহায়া (রহঃ) বলেনঃ এখানে شَفْعٌ দ্বারা জোড়া বস্ত্ত উদ্দেশ্য। শব্দটি যবর এবং পেশ উভয়ভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিশ্চয় সালাতুয্ যুহা একের অধিক হওয়ার কারণে তাকে জোড় হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইশরাক ও চাশ্তের সালাত
১৩১৯-[১১] উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি চাশ্তের (চাশতের) আট রাক্’আত করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি বলতেন, আমার জন্যে যদি আমার মাতা-পিতাকেও জীবিত করে দেয়া হয় তাহলেও আমি এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছাড়ব না। (মালিক)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا كَانَتْ تُصَلِّي الضُّحَى ثَمَانِي رَكَعَاتٍ ثُمَّ تَقُولُ: «لَوْ نُشِرَ لِي أَبَوَايَ مَا تركتهَا» . رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যা: আল্লামা বাজী (রহঃ) বলেন যে, হতে পারে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কোন হাদীসের ভিত্তিতে এরূপ ‘আমল করতেন, যেমন উম্মু হানী (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস। এজন্য তিনি এ সংখ্যার উপরই সালাতুয্ যুহা সংক্ষেপ করতেন এবং এটাও হতে পারে যে, এ সংখ্যার উপর তিনি সর্বদা ‘আমল করেছেন। তিনি বলেন, সালাতুয্ যুহা সংখ্যায় সীমাবদ্ধ সালাতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে, তা বৃদ্ধি বা কম করা যাবে না বরং তা উৎসাহমূলক ‘আমল, মানুষ তা সাধ্য অনুযায়ী পালন করবে। আল্লামা যুরক্বানী (রহঃ) বলেন যে, এটা বাজী (রহঃ)-এর নিজ পছন্দ, কিন্তু আমাদের মত হলো তার সর্বোচ্চ সংখ্যক রাক্‘আত হলো ৮, কারণ এটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিক কর্ম দ্বারা প্রমাণিত।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমার বাবা আবূ বাকর ও মা উম্মু রুমান জীবিত থাকত তবুও আমি তাদের জীবিত থাকার বিনিময়ে সালাতুয্ যুহা পরিত্যাগ করতাম না। এর সমর্থনে মুয়াত্ত্বার অপর বর্ণনায় রয়েছে।
সালাতুয্ যুহার রাক্‘আতগুলো পরিত্যাগ করতাম না কারণ এর স্বাদ তাদের জীবিত থাকার স্বাদের তুলনায় অধিক।
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইশরাক ও চাশ্তের সালাত
১৩২০-[১২] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিতভাবে চাশ্তের (চাশতের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকতেন। আমরা বলাবলি করতাম, তিনি হয়ত এ সালাত আর ছাড়বেন না। আর যখন ছেড়ে দিতেন অর্থাৎ বন্ধ করতেন, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি হয়ত এ সালাত আর কখনো আদায় করবেন না। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى حَتَّى نَقُولَ: لَا يَدَعُهَا وَيَدَعُهَا حَتَّى نَقُولَ: لَا يُصليهَا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস দু’টি কথার উপর দলীল এ মর্মে যে, সালাতুয্ যুহা কখনো আদায় করা, কখনো বর্জন করাই মুস্তাহাব হবে এ দিক দিয়ে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর অনড় থাকেননি বা সর্বদাই তা পালন করেননি বরং কখনো তা বর্জন করেছেন। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল কোন ‘আমল থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করা এবং গুরুত্বের সাথে তা গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে আলোচনা সামনের হাদীসের ব্যাখ্যায় আসবে। (ইনশা-আল্ল-হ)
আর সালাতুয্ যুহা তার উপর ওয়াজিব মর্মে যে রিওয়ায়াত তার থেকে রয়েছে, তা য‘ঈফ। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ এ মর্মে (ওয়াজিব ব্যাপারে) কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি।
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইশরাক ও চাশ্তের সালাত
১৩২১-[১৩] মুওয়াররিক্ব আল ’ইজলী (রহঃ) বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি যুহার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, ’উমার (রাঃ) আদায় করতেন? তিনি বললেন, না। আবার আমি প্রশ্ন করলাম, আবূ বকর (রাঃ) কি আদায় করতেন? তিনি বললেন, না। পুনরায় আমি প্রশ্ন করলাম, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আদায় করতেন? তিনি বললেন, আমার জানা মতে তিনিও আদায় করতেন না। (বুখারী)[1]
وَعَنْ مُوَرِّقٍ الْعِجْلِيِّ قَالَ: قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ: تُصَلِّي الضُّحَى؟ قَالَ: لَا. قُلْتُ: فَعُمَرُ؟ قَالَ: لَا. قُلْتُ: فَأَبُو بَكْرٍ؟ قَالَ: لَا. قُلْتُ: فَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: لَا إخَاله. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসের সমর্থনে সহীহুল বুখারীতে ‘উমরাহ্’ অধ্যায়ের প্রথমে অন্যভাবে রয়েছে যে,
عَنْ مُجَاهِد قَالَ: دَخَلْتُ أَنَا وَعُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ الْمَسْجِدَ، فَإِذَا عَبْدُ اللهِ بْنِ عُمَرَ جَالِسٌ إِلى حُجْرَةٍ عَائِشَةَ، وَإِذَا نَاسٌ يُصَلُّوْنَ الضُّحى فَسَأَلْنَاهُ عَنْ صَلَاتِهِمْ، فَقَالَ: بِدْعَةٌ
অর্থাৎ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং ‘উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) মসজিদে নাবাবীতে প্রবেশ করলাম, দেখি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হুজরায় বসে আছেন আর লোকজন সালাতুয্ যুহা আদায় করছে, আমরা তাকে তাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, (সালাতুয্ যুহা) বিদ্‘আত।
এখানে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসগুলোতে শার‘ঈভাবে প্রতিষ্ঠিত সালাতুয্ যুহা প্রত্যাখ্যান করছে না। কারণ তার নিষেধাজ্ঞাটা তার না দেখার উপর প্রমাণ করছে উক্ত ‘আমলে পতিত না হওয়ার উপর নয়। অথবা তিনি সালাতুয্ যুহার নির্দিষ্ট পদ্ধতি নিষেধ করছেন।
‘আয়ায (রহঃ) ও অন্যান্যগণ বলেছেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার (সালাতুয্ যুহা) আবশ্যকতা, মসজিদে আদায়ের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা এবং জামা‘আতের সাথে আদায় করতে অপছন্দ করতেন। নিশ্চয় তার ঘৃণাটি সুন্নাতের বিরোধী নয় (সালাতুয্ যুহা বিরোধী নয়)। আবার কেউ বলেছেন ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট সালাতুয্ যুহার প্রতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমল ও এ মর্মে তাঁর নির্দেশ পৌঁছেনি।