পরিচ্ছেদঃ ২৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান
১১১৫-[১০] আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের ব্যাপারে কিছু বলব না? (তাহলে) শুনো! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য (প্রথমে) পুরুষদের কাতার করালেন, এরপর তাদের পেছনে শিশুদের কাতার দাঁড় করালেন। তারপর তাদের নিয়ে সালাত আদায় করালেন। (আবূ মালিক) তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) সালাতের বিবরণ দেয়ার পর বললেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষে বললেন, এভাবে সালাত আদায় করতে হবে। ’আবদুল ’আলা যিনি আবূ মালিক থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমার মনে হয়, আবূ মালিক ’আমার উম্মাতের’- এ কথাটিও বলেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: أَلَا أُحَدِّثُكُمْ بِصَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: أَقَامَ الصَّلَاةَ وَصَفَّ الرِّجَالَ وَصَفَّ خَلْفَهُمُ الْغِلْمَانَ ثُمَّ صَلَّى بِهِمْ فَذَكَرَ صَلَاتَهُ ثُمَّ قَالَ: «هَكَذَا صَلَاة» قَالَ عبد العلى: لَا أَحْسَبُهُ إِلَّا قَالَ: أُمَّتِي . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসটি পুরুষ, শিশু ও মহিলাদের ধারাবাহিক অনুপাতে হওয়ার উপর প্রমাণ করছে অর্থাৎ প্রথমে পুরুষদের কাতার তারপর শিশুদের কাতার তারপর মহিলাদের কাতার হবে। সুবকী বলেন, এটা তখন হবে যখন শিশু দু’ বা ততোধিক হবে, অতঃপর শিশু যদি একজন হয় তাহলে সে পুরুষদের সঙ্গে দাঁড়াবে এবং ইমামের পেছনে একাকী দাঁড়াবে না। এর উপর প্রমাণ বহন করে প্রথম পরিচ্ছেদে আনাস (রাঃ)-এর পূর্বোক্ত হাদীস। কেননা ইয়াতীম একাকী দাঁড়ায়নি বরং সে আনাস (রাঃ)-এর সাথে কাতারবদ্ধ হয়েছিল। আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন, শিশু মসজিদের ইমামের পেছনে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে দাঁড়ানো মাকরূহ। তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক, পনের বছর বয়সে পদার্পণ করেছে তারা ছাড়া। ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে তিনি যখন কাতারে শিশু দেখতেন তাকে কাতার থেকে বের করে দিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান
১১১৬-[১১] ক্বায়স ইবনু ’উবাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মসজিদে প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলাম। এ সময় এক লোক আমাকে পেছন থেকে টেনে একপাশে নিয়ে নিজে আমার স্থানে দাঁড়ালেন। আল্লাহর শপথ! এ রাগে আমার সালাতে হুঁশ ছিল না। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করার পর আমি তাকিয়ে দেখলাম তিনি উবাই ইবনু কা’ব। আমাকে রাগান্বিত দেখে তিনি বললেন, হে যুবক! (আমার এর জন্যে) আল্লাহ তোমাকে যেন কষ্ট না দেয়! আমার জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াসিয়াত ছিল, আমি যেন তাঁর নিকট দাঁড়াই। তারপর ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে মুখ ফিরিয়ে তিনবার এ কথা বললেন, কা’বাররবের কসম! ধ্বংস হয়ে গেছে আহলুল ’আক্বদ। আরো বললেন, আল্লাহর কসম! তাদের ওপর (জনগণের সম্পর্কে) আমার কোন চিন্তা নেই। চিন্তা তো হলো তাদের জন্যে যাদের নেতারা গোমরাহ করছে। ক্বায়স ইবনু ’উবাদ বলেন, আমি উবাই ইবনু কা’বকে বললাম। হে আবূ ইয়া’কূব! ’আহলুল আক্বদ’ বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন। তিনি বললে, ’উমারাহ্’ (নেতা ও শাসকবর্গ)। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ قَيْسِ بْنِ عُبَادٍ قَالَ: بَيْنَا أَنَا فِي الْمَسْجِدِ فِي الصَّفِّ الْمُقَدَّمِ فَجَبَذَنِي رَجُلٌ مِنْ خَلْفِي جَبْذَةً فَنَحَّانِي وَقَامَ مَقَامِي فَوَاللَّهِ مَا عَقَلْتُ صَلَاتِي. فَلَمَّا انْصَرَفَ إِذَا هُوَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ فَقَالَ: يَا فَتَى لَا يَسُوءُكَ اللَّهُ إِنَّ هَذَا عُهِدَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا أَنْ نَلِيَهُ ثُمَّ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَقَالَ: هَلَكَ أَهْلُ الْعُقَدِ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: وَاللَّهِ مَا عَلَيْهِمْ آسَى وَلَكِنْ آسَى عَلَى مَنْ أَضَلُّوا. قُلْتُ يَا أَبَا يَعْقُوبَ مَا تَعْنِي بِأَهْلِ العقد؟ قَالَ: الْأُمَرَاء. رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে উবাই ইবনু কা‘ব এর কাজ আনাস (রাঃ) থেকে যা বর্ণনা করা হয়েছে তার সমর্থনকারী। আনাস (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালবাসতেন মুহাজির ও আনসারগণ তাঁর কাছে থাকাকে যাতে তাঁরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (সালাতের বিভিন্ন মাসআলাহ্) গ্রহণ করতে পারেন। আহমাদ, ইবনু মাজাহ একে সংকলন করেছেন। এভাবে সামুরাহ্ থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও ‘উবায়র কাজটি সমর্থিত যাতে আছে বেদুইনরা যেন মুহাজির ও আনসারদের পেছনে দাঁড়ায় যাতে সালাতের ক্ষেত্রে বেদুইনরা তাঁদের অনুসরণ করতে পারে। ত্ববারানী একে কাবীর গ্রন্থে হাসান সূত্রে সামুরাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন। বায়হাক্বী বলেন, এর সানাদে সা‘ঈদ বিন বাশীর আছে যাকে দিয়ে দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে মারফূ‘ভাবে যা বর্ণনা করা হয়েছে তাও ‘উবায়র কাজকে সমর্থন করেছে যাতে আছে প্রথম কাতারে যেন বেদুইন অনারবী ও অপ্রাপ্তবয়ষ্ক কেউ না দাঁড়ায়। এর সূত্রে লায়স বিন আবূ সুলায়ম আছে সে দুর্বল।
এ হাদীসগুলোতে বিদ্বান ও মর্যাদার অধিকারী লোকদের এগিয়ে দেয়ার শারী‘আত সম্মত রয়েছে। যাতে (সালাতে) তারা ইমামের বিভিন্ন অবস্থান দেখে তা গ্রহণ করতে পারে এবং তাদের থেকে অন্যরা গ্রহণ করতে পারে। কেননা তাঁরাই সালাতের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে, বর্ণনাকরণে, প্রচারকরণে, প্রয়োজনে ইমামকে সতর্ককরণে এবং প্রয়োজনে ইমামের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অধিক উপযুক্ত। ইমাম নাসায়ী একে বর্ণনা করেছেন। আহমাদ একে মুসনাদের ৫ম খন্ডে ১৪০ পৃষ্ঠাতে ইবনু খুযায়মাহ্ তার সহীহ গ্রন্থে।