পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৫৪-[১] মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন মুয়াযযিনগণ সবচেয়ে উঁচু ঘাড় সম্পন্ন লোক হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
عَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْمُؤَذِّنُونَ أَطْوَلُ النَّاسِ أعناقا يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: মুয়াযযিনগণের সবচেয়ে দীর্ঘ ঘাড়ের কথা বলে মূলত মুয়াযযিনগণের সম্মান ও মর্যাদা বুঝাবার ইঙ্গিত হয়েছে। তাদেরকে সকলের উপর দিয়ে দেখা যাবে বা তারা অধিক সম্মানিত হবেন। কেউ কেউ বলেন, যারা দুনিয়াতে আযান দিয়েছে তারা অধিক মর্যাদা ও সাওয়াবের অধিকারী হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৫৫-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের জন্য আযান দিতে থাকলে শায়ত্বন (শয়তান) পিঠ ফিরিয়ে পালায় ও বায়ু ছাড়তে থাকে, যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামাত(ইকামত/একামত) শুরু হয় পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে। ইক্বামাত(ইকামত/একামত) শেষ হলে আবার ফিরে আসে। সালাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে থাকে। সে বলে, অমুক বিষয় স্মরণ কর। অমুক বিষয় স্মরণ কর। যেসব বিষয় তার মনে ছিল না সব তখন তার মনে পড়ে যায়। পরিশেষে মানুষ অবচেতন হয় আর বলতে পারে না কত রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «إِذا نُودي للصَّلَاة أدبر الشَّيْطَان وَله ضُرَاطٌ حَتَّى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِينَ فَإِذَا قَضَى النِّدَاءَ أَقْبَلَ حَتَّى إِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ أَدْبَرَ حَتَّى إِذَا قَضَى التَّثْوِيبَ أَقْبَلَ حَتَّى يَخْطِرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهِ يَقُولُ اذْكُرْ كَذَا اذْكُرْ كَذَا لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ حَتَّى يَظَلَّ الرجل لَا يدْرِي كم صلى»
ব্যাখ্যা: (أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَه ضُرَاطٌ) ‘‘শায়ত্বন (শয়তান) পিঠ ফিরিয়ে পালায় ও বায়ু ছাড়তে থাকে।’’ শায়ত্বন (শয়তান) দ্বারা উদ্দেশ্য ইবলীস ও তার সমজাতীয় জিন্। মলদ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হওয়াকে ضُرَاطٌ বলা হয়। প্রকৃতপক্ষেই শায়ত্বনের (শয়তানের) মলদ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হতে পারে। কেননা মানুষের যেমন শরীর আছে শায়ত্বনেরও তদ্রূপ শরীর আছে, তারা পানাহারও করে থাকে। অতএব তাদের বায়ু নির্গত হওয়া সম্ভব। আর এ বায়ু নির্গত হওয়ার কারণ এই যে, আযানের শব্দ শ্রবণ করার ফলে তাদের অন্তরে ভীষণ ভয়ের সৃষ্টি হয়। আর এ ভয়ের কারণেই তাদের অনিচ্ছায়ই এ বায়ু নির্গত হয়।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী আলক্বারী বলেনঃ গাধার বোঝা বেশী ভার হওয়ার কারণে বোঝা বহনের সময় যেমন তার মলদ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হয় তেমনি আযানের শব্দ শায়ত্বনের জন্য সহ্য শক্তির চাইতে ভার হওয়ার কারণে তার বায়ু নির্গত হয়। এটাও বলা হয়ে থাকে যে, শায়ত্বন ইচ্ছাকৃতভাবেই এ সময় বায়ু ছাড়ে যাতে এ বায়ুর আওয়াজের কারণে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে।
(حَتّى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِينَ) ‘‘যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে’’ এ বাক্য দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আযানের শব্দ উচ্চৈঃস্বরে হওয়া মুস্তাহাব।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৫৬-[৩] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতদূর পর্যন্ত মানুষ, জিন্ বা অন্য কিছু মুয়াযযিনের আযানের ধ্বনি শুনবে তারা সকলেই কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (বুখারী)[1]
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ وَلَا إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ إِلَّا شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মুয়াযযিনের ফাযীলাত বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সাথে আযানের শব্দ জোরে উচ্চারণ করারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হাদীসে ‘মাদা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থ শেষসীমা, শেষ প্রান্ত অর্থাৎ- আযানের শব্দ দূরে যেতে যেতে, এমন স্থানে শেষ হবে যার পরে আযানের কোন শব্দ বুঝা যায় না। এই দূরত্বের মধ্যে মানুষ, জিন, পশু-পাখী- যারা এ শব্দ শুনবে তারা মুয়াযযিনের এ খিদমাত ও তার ঈমানের সাক্ষ্য দিবে।
ইবনে খুযায়মার বর্ণনায় রয়েছে যে, জিন্, ইনসান, পাথর, গাছ-পালা সবকিছুই সাক্ষ্য দেবে। আবূ দাঊদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে, প্রত্যেক শুকনো এবং ভেজা জিনিস মুয়াযযিনের জন্য সাক্ষ্য দেবে। জড় বস্ত্তর মধ্যেও আল্লাহ তা‘আলা এক ধরনের অনুভূতি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ১৭ নং সূরার ৪৪ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন যে, وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِه
অর্থাৎ- ‘‘এমন কোন জিনিস নেই যা আল্লাহর প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করে না।’’
সূরাহ্ আল বাক্বারার ৭৪ নং আয়াতে পাথর সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহর ভয়ে কোন কোন পাথর নীচে পড়ে যায়। আবার হাদীসে এ কথাও রয়েছে যে, এক পাহাড় অপর পাহাড়কে বলে, তোমার উপর দিয়ে কি এমন কেউ অতিক্রম করেছে যে আল্লাহকে স্মরণ করে? পাহাড় যখন বলে, হ্যাঁ, তখন বলা হয় সুসংবাদ গ্রহণ করো।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৫৭-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ’ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ’ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ’ওয়াসীলা’র দু’আ করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মুসলিম)[1]
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِيَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: যখন তোমরা মুয়াযযিনকে শুনতে পাবে- এর অর্থ হলো যখন তোমরা আযান শুনতে পাবে। তাই কেউ যদি দূরত্ব অথবা অন্ধত্বের কারণে মুয়াযযিনের শব্দ শুনতে না পায় তাহলে তার জন্য আযানের উত্তর দেয়ার বিধান প্রযোজ্য নয়।
মুয়াযযিনের আযানের জবাবে শ্রোতারা তাই বলবে যা মুয়াযযিন বলে। তবে দুই হাইয়্যা ‘আলা-এর ক্ষেত্রে (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ) ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ বলবে। আর এটা ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে। আর ফাজরের (ফজরের) আযানের সময় মুয়াযযিন যখন اَلصَّلَاةُ خَيْرُ مِّنَ النَّوْمِ বলেন তখন এর উত্তরে صَدَّقْتَ وَبَرَرْتَ বলার কোন দলীল পাওয়া যায় না।
আযানের জবাব দেয়ার পর দু‘আ পড়ার পূর্বে দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। ওয়াসীলা হলো জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্ধারিত। আযানের শেষে এই ওয়াসীলা যোগ করে দু‘আ করলে নাবীর শাফা‘আত পাবার আশা করা যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৫৮-[৫] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুয়ায্যিন যখন ’’আল্লা-হু আকবার’’ বলে তখন তোমাদের কেউ যদি (উত্তরে) অন্তর থেকে বলে, ’’আল্লা-হু আকবার’’ ’’আল্লা-হু আকবার’’, এরপর মুয়ায্যিন যখন বলেন, ’’আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’ সেও বলে, ’’আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’। অতঃপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ’’আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার্ রসূলুল্ল-হ’’, সেও বলে ’’আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ’’, তারপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ’’হাইয়্যা ’আলাস্ সলা-হ্’’, সে তখন বলে, ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’; পরে মুয়ায্যিন যখন বলে, ’’আল্লা-হু আকবার ’আল্লা-হু আকবার’’, সেও বলে, ’’আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার’’ এরপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’ সেও বলে ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
وَعَنْ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ فَقَالَ أَحَدُكُمُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ قَالَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ قَالَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ثُمَّ قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ثُمَّ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِنْ قَلْبِهِ دخل الْجنَّة» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি এ কথার উপর দলীল যে, মুয়াযযিন আযানের সময় দুই তাকবীর এক সাথে বলবে, আর এটা মুস্তাহাব বিধান। অর্থাৎ- আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার এতটুকু এক সাথে উচ্চারণ করবে।
এ হাদীসটি এ দিকেও ইঙ্গিত করে যে, মুয়াযযিন আযানের ক্ষেত্রে শাহাদাতায়ন ও হাইয়ালাতায়নকে এক এক করে উচ্চারণ করবে। অর্থাৎ- প্রথমে এককভাবে أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ কে উচ্চারণ করবে আবারও এককভাবে أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ উচ্চারণ করবে। অনুরূপ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ কে উচ্চারণ করবে। অনুরূপভাবে হাইয়ালাতাইনও উচ্চারণ করবে।
ক্বাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেন, আযানের মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষী দেয়া হয়, তার গুণগান গাওয়া হয় এবং আল্লাহর আনুগত্যের উপর আত্মসমর্পণ করা হয়। لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ বলার দ্বারা এ কথার উপর আত্মসমর্পণ করা হয় যে, সমস্ত শক্তির অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। আর যে ব্যক্তি এ বিষয়গুলো হাসিল করতে পারবে সে প্রকৃত ঈমান অর্জন করতে পারবে। আর তার মধ্যে ইসলাম পূর্ণতা লাভ করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৫৯-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে (ও এর উত্তর দেয়ার ও দরূদ পড়ার পর) এ দু’আ পড়ে, তার জন্য সুপারিশ করা আমার অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। দু’আ হলোঃ ’’আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ্ দা’ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদা-নিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ্, ওয়াব্’আসহু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া’আদতাহ্’’ [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দান কর ওয়াসীলা; সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে), যার ওয়া’দা তুমি তাঁকে দিয়েছ।] কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য আমার শাফা’আত আবশ্যকীয়ভাবে হবে। (বুখারী)[1]
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ‘‘যখন আযান শেষ হবে’’ এখানে শেষ হওয়ার সাধারণ অর্থ হলো, আযান যখন পূর্ণ হয়। আর এর প্রমাণ ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস। আযান শেষ হলে আযানের দু‘আ পড়বে।
* ইমাম হাফিয (রহঃ)-এর মতে উক্ত দু‘আর মধ্যকার দা‘ওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- একত্ববাদের দিকে ডাকা। যে আহবানের মধ্যে কোন শির্ক নেই। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদের ১৩নং সূরা্হ আর্ রা‘দ এর ১৪নং আয়াতে বলা হয়েছে لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ অর্থাৎ- তার জন্যই সত্যের দিকে আহবান করা।
* উক্ত দু‘আর একটি অংশ ‘‘ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাহ্’’ এর উদ্দেশ্য হল- ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম থাকবে। কোন দল বা কোন শারী‘আত একে রহিত করতে পারবে না। অর্থাৎ- আল্লাহ ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যে সকল সালাত প্রতিষ্ঠিত তা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবস পর্যন্ত স্থির থাকবে।
* আর ওয়াসীলা হলো- জান্নাতের একটি নির্দিষ্ট স্থানের নাম। যা একমাত্র রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্দিষ্ট।
* আলোচ্য হাদীসে ফাযীলাহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সম্মানের অতিরিক্ত পর্যায় যা সমগ্র সৃষ্টিকূলের মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেই প্রদান করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য প্রশংসিত উঁচু স্থান নির্ধারণ করেছেন। এ মর্মে আল কুরআনের ১৭নং সূরার ৭৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে- عَسى أَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
অর্থাৎ- উপরে বর্ণিত দু‘আ পড়লে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে পাওয়া যাবে। এ মর্মে তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনে মাজাহ-তে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৬০-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেনাবাহিনী নিয়ে কোথাও যখন যেতেন ভোরে শত্রুদের ওপর) আক্রমণ চালাতেন। ভোরে তিনি কান পেতে আযান শোনার অপেক্ষায় থাকতেন। (যে স্থানে আক্রমণ করার পরিকল্পনা হতো) ওখান থেকে আযানের ধ্বনি কানে ভেসে এলে আক্রমণ করতেন না। আর আযানের ধ্বনি কানে ভেসে না এলে আক্রমণ করতেন। একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুর ওপর আক্রমণ করার জন্য রওনা হতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তিনি এক ব্যক্তিকে ’আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার’ বলতে শুনলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ইসলামের উপর আছে (কারণ আযান মুসলিমরাই দেয়)। এরপর ওই ব্যক্তি বলল, ’’আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি (শির্ক থেকে বিরত থাকার কারণে) জাহান্নাম থেকে বেঁচে গেলে। সাহাবীগণ চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন, আযানদানকারী তা বকরীর পালের রাখাল। (মুসলিম)[1]
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُغِيرُ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ وَكَانَ يَسْتَمِعُ الْأَذَانَ فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا أَمْسَكَ وَإِلَّا أَغَارَ فَسَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَى الْفِطْرَةِ» ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَرَجْتَ من النَّار» فنظروا فَإِذا هُوَ راعي معزى. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: কোন এলাকায় আযান শোনা গেলে, সে এলাকায় আক্রমণ করা যাবে না। কোন অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে আযানের বাক্য শোনা গেলে বুঝতে হবে সে দীন তথা ইসলামের মধ্যে অবস্থান করছে। কেননা, আযান শুধু মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট। আর আযানের তাকবীরও মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট। ‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, আযান হলো ইসলাম ধর্মের নিদর্শন। অর্থাৎ- আযানের মাধ্যমে বুঝা যাবে যে, কোন ব্যক্তি বা কোন জাতি মুসলিম কিনা? যদি কোন দেশের অধিবাসীরা আযান ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করে, তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রের সুলতানের দায়িত্ব হলো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা। আযান শোনার সুবিধার্থে কিছুক্ষণ যুদ্ধ বন্ধ রাখা যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৬১-[৮] সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে এই দু’আ পড়বে, ’’আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়ারসূলুহূ, রযীতু বিল্লা-হি রববাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা’’ (অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দীন হিসেবে ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানি ও মানি) এর উপর আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا غُفِرَ لَهُ ذَنبه» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে আযানের পর আল্লাহর একত্ববাদ ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দান এবং একটি বিশেষ দু‘আর মাহাত্ম্য ও ফাযীলাত বর্ণনা করা হয়েছে। আযানের জবাব দিলে শাহাদাতায়ন এর বাক্য উচ্চারণ করতে হয়। এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় আযানের জবাবের পর পৃথকভাবে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্যের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
শাহাদাতের বাক্যের পর যে দু‘আটি উল্লেখ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট থাকা, অর্থাৎ- তাঁর রবূবিয়্যাতের সকল বিষয়ের উপর সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়কে নিজের জন্য কল্যাণকর হিসেবে মেনে নেয়া।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে মেনে নেয়ার অর্থ তিনি বিশ্বাসগত এবং ‘আমলগত যেসব বিষয় নিয়ে আগমন করেছেন তার সব কিছুকেই মেনে নেয়া। ইসলামকে পেয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার অর্থ হলো ইসলামের সকল আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধানকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া ও এসবের বিরুদ্ধাচরণ না করা।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৬২-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আছে। অতঃপর তৃতীয়বার বললেনঃ এই সালাত ওই ব্যক্তির জন্য যে আদায় করতে চায়, ঐ ব্যক্তির জন্য যে আদায় করতে চায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, মাগরিবের আযান ও ইক্বামাতের মাঝে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। আর বুরায়দাহ্ হতে মাগরিব ব্যতীত অন্য সকল সালাতের আযান ও ইক্বমাতের মাঝে দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রয়েছে মর্মে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তা দুর্বল। অপরপক্ষে বুখারীতে বুরায়দাহ্ হতে হাদীস রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ صَلُّوْ قَبْلَ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ لِمَنْ شَاءَ خَشْىيَة أَنْ يَتَّخِذَهَا النَّاسُ
بَابُ فَضْلِ الْاَذَانِ وَاِجَابَةِ الْـمُؤَذِّنِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ» ثُمَّ قَالَ فِي الثَّالِثَةِ «لِمَنْ شَاءَ»
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে এ কথার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, দুই আযান তথা আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে হবে। তবে এখানে আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বলতে মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বেকার দুই রাক্‘আত নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ‘আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাঃ)-এর মত পাওয়া যায় যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের পূর্বে সালাত আদায় করতে বলেছেন। এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে (قَالَ النَّبِىُّ ﷺ صَلُّوْا قَبْلَ صَلَوةِ الْمَغْرِبِ) অর্থাৎ- তোমরা মাগরিবের (ফরয) সালাতের পূর্বে সালাত আদায় কর। (বুখারী ও মুসলিম)
মনে রাখতে হবে যে, এ সালাত আদায় করার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করতে বলেছেন এজন্য যে, আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু‘আ আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। সহীহ ইবনে হিব্বান নামক হাদীসের কিতাবে ‘আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাঃ) এর বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। আরেক হাদীসে পাওয়া যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের পূর্বে দুই রাক্‘আত নফল সালাত আদায় করলেন এবং সাহাবীগণকেও আদায় করতে বললেন। এটা মুহাম্মাদ ইবনু নাসর কর্তৃক বর্ণিত। মোটকথা, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে নফল সালাত আদায় করতেন- এ সংক্রান্ত হাদীস সহীহ। এ ব্যাপারে বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, নাসায়ী, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি কিতাবে বর্ণিত হাদীস প্রমাণ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ এবং তাবি‘ঈগণ- সকলেই এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। সুতরাং এ ব্যাপারে হানাফী ও মালিকী ও তাদের সমর্থনকারীর সিদ্ধান্তের উপর ‘আমল করা যাবে না। কেননা তাদের সিদ্ধান্ত সুস্পষ্ট হাদীসের হুকুমের বিপরীত।