পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানির বিবরণ

অপবিত্রতা মিশ্রিত পানির বিষয়ে ’আলিমগণ মতবিরোধ করেছেন। ইমাম মালিক এবং যাহিরীদের মতে পানির গন্ধ, স্বাদ এবং রং- এ তিনটি গুণ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত পানিতে নাজাসাত মিশ্রিত হলেও তা অপবিত্র হবে না চাই তা যতই কম হোক না কেন। যেহেতু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পানিকে কোন বস্তুতে অপবিত্র করতে পারে না তবে যদি তার গন্ধ, রং এবং স্বাদ পরিবর্তন হয় (তাহলে তা অপবিত্র হয়ে যাবে)। তারা অল্প বা বেশির মাঝে পার্থক্য করেননি বরং তাদের নিকট অপবিত্রতার মাপকাঠি হলো পানির গুণের পরিবর্তন। শাফি’ঈ এবং হানাফীদের মতে পানি দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথমত অল্প পানি যাতে অপবিত্রতা পতিত হলেই তা অপবিত্র হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত বেশি পানি যা তিনটি বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত অপবিত্র হয় না। বেশি পানির পরিমাণ নির্ধারণে মতবিরোধ রয়েছে। তবে সঠিক মত হলো, পানি দুই কুল্লা বা পাঁচশত রতল হলে তা বেশি পানি বলে পরিগণিত হবে। যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পানির পরিমাণ দু’ কুল্লা হলে তা অপবিত্র হবে না।


৪৭৪-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন (বহমান নয় এমন) বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব না করে। অতঃপর এতে গোসল করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে নাপাক অবস্থায় গোসল না করে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আবূ হুরায়রাহ্! সে কীভাবে করবে? তিনি বললেন, সে তা থেকে পানি উঠিয়ে নিয়ে গোসল করবে।[2]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الْمَاءِ الدَّائِمِ الَّذِي لَا يجْرِي ثمَّ يغْتَسل فِيهِ»
وَفِى رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «لَا يَغْتَسِلُ أَحَدُكُمْ فِي الْمَاءِ الدَّائِمِ وَهُوَ جُنُبٌ» . قَالُوا: كَيْفَ يَفْعَلُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ قَالَ: يَتَنَاوَلُهُ تَنَاوُلًا

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يبولن احدكم في الماء الداىم الذي لا يجري ثم يغتسل فيه» وفى رواية لمسلم قال: «لا يغتسل احدكم في الماء الداىم وهو جنب» . قالوا: كيف يفعل يا ابا هريرة؟ قال: يتناوله تناولا

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানির বিবরণ

৪৭৫-[২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُبَالَ فِي الْمَاءِ الراكد. رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال: نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يبال في الماء الراكد. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন’’। কেননা বদ্ধ পানির পরিমাণ যদি দু’ কুল্লার কম হয় আর তার মধ্যে প্রস্রাব করা হয় তাহলে প্রস্রাব করার কারণে ঐ পানি নাপাক হয়ে যাবে। ফলে তা দ্বারা উযূ-গোসল কোনটাই বৈধ হবে না। আর তা যদি দু’ কুল্লা পরিমাণ হয় তবুও প্রস্রাব করার কারণে ঐ পানির স্বাদ পরিবর্তন হয়ে তা নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটার পরিমাণ দু’ কুল্লার বেশী হলে আর তাতে প্রস্রাব করার অনুমতি দিলে একের পর এক তাতে প্রস্রাব করার ফলে প্রস্রাবের আধিক্যের কারণে তা পরিবর্তন হয়ে নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। ইবনু মালিক (রহঃ) বলেনঃ বদ্ধ পানিতে পায়খানা করার হুকুম প্রস্রাব করার হুকুমের মতোই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানির বিবরণ

৪৭৬-[৩] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালা আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার এ বোনপুত্র অসুস্থ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বারাকাতের দু’আ করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন। আমি তাঁর উযূর পানি (কিছু) পান করলাম। অতঃপর আমি তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে তাঁর দুই কাঁধের মধ্যে মশারীর বা পর্দার ঘণ্টির মতো ’মুহরে নুবূওয়্যাত’ দেখতে লাগলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

وَعَن السَّائِب بن يزِيد قَالَ: ذَهَبَتْ بِي خَالَتِي إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ ابْنَ أُخْتِي وَجِعٌ فَمَسَحَ رَأْسِي وَدَعَا لي بِالْبَرَكَةِ ثُمَّ تَوَضَّأَ فَشَرِبْتُ مِنْ وَضُوئِهِ ثُمَّ قُمْتُ خَلْفَ ظَهْرِهِ فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتَمِ النُّبُوَّةِ بَين كَتفيهِ مثل زر الحجلة

وعن الساىب بن يزيد قال: ذهبت بي خالتي الى النبي صلى الله عليه وسلم فقالت يا رسول الله ان ابن اختي وجع فمسح راسي ودعا لي بالبركة ثم توضا فشربت من وضوىه ثم قمت خلف ظهره فنظرت الى خاتم النبوة بين كتفيه مثل زر الحجلة

ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে জানা যায় যে, উযূতে ব্যবহৃত পানি পবিত্র। কিন্তু কতিপয় হানাফীদের মতে তা অপবিত্র এবং তাদের পক্ষ হতে বলা হয় যে, তা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস। কারণ, তাঁর ব্যবহারের উচ্ছিষ্ট পবিত্র। কিন্তু তাদের এ দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুকুম ও তার উম্মাতের হুকুম এক ও অভিন্ন। তবে হ্যাঁ, যদি এমন কোন দলীল পাওয়া যায় যা কোন বিধানকে তাঁর সাথে খাস বা নির্দিষ্টকরণের প্রমাণ বহন করে তবে তা অবশ্যই মানার দাবিদার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উযূর অবশিষ্ট পানি রসূলের সাথে নির্দিষ্ট করার কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং সর্বক্ষেত্রে সবার উযূর অবশিষ্ট পানি পবিত্র।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে