পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫১-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সাথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখা হলো। আমি তখন (বীর্যপাতের কারণে) নাপাক ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার হাত ধরলেন এবং আমি তার সাথে চলতে থাকলাম যে পর্যন্ত না তিনি বসলেন। তখন আমি চুপিসারে সরে পড়লাম এবং যথাস্থানে এসে গোসল করে নিলাম। অতঃপর আবার তাঁর কাছে চলে গেলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখনো সেখানে বসা আছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কোথায় ছিলে হে আবূ হুরায়রাহ্! আমি (সম্পূর্ণ) বিষয়টি তাঁর কাছে (খুলে) বললাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সুবহানাল্লাহ! মু’মিন (কক্ষনও) অপবিত্র হয় না।
এটা বুখারী (২৮৫ হাঃ)-এর বর্ণনা। অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস মুসলিমও বর্ণনা করেছেন এবং বুখারীর কথার পর তার বর্ণনায় এ কথাও আছে, আমি উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, যখন আমার সাথে আপনার দেখা হলো তখন আমি নাপাক ছিলাম। তাই গোসল না করে আপনার সাথে বসাটা ঠিক মনে করলাম না। বুখারীর আর একটি বর্ণনাও এভাবে এসেছে।[1]
بَابُ مُخَالَطَةِ الْجُنُبِ
عَن أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَقِيَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا جُنُبٌ فَأَخَذَ بِيَدِي فمشيت مَعَهُ حَتَّى قَعَدَ فَانْسَلَلْتُ فَأَتَيْتُ الرَّحْلَ فَاغْتَسَلْتُ ثُمَّ جِئْتُ وَهُوَ قَاعِدٌ فَقَالَ: «أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هُرَيْرَة» فَقُلْتُ لَهُ فَقَالَ: «سُبْحَانَ اللَّهِ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَنْجَسُ» . هَذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ وَلِمُسْلِمٍ مَعْنَاهُ وَزَادَ بَعْدَ قَوْلِهِ: فَقُلْتُ لَهُ: لَقَدْ لَقِيتَنِي وَأَنَا جُنُبٌ فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ حَتَّى أَغْتَسِلَ. وَكَذَا البُخَارِيّ فِي رِوَايَة أُخْرَى
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, মু’মিনের আত্মা কখনো মৌলিকভাবে নাপাক হয় না। যদি সে নাপাকীর সংশ্রবে আসে তবে সাময়িকভাবে অপবিত্র হয়। আর নাপাকী দূর হলেই পবিত্র হয়ে যায়। কাজেই মু’মিন ব্যক্তি সর্বদাই পবিত্রতার মধ্যে থাকেন। চাই তিনি অপবিত্র হোক বা নাপাক হোক। মৃত্যু অবস্থায় হোক বা জীবিত অবস্থায় হোক। এ ব্যাপারে সহীহুল বুখারীতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জীবিত অবস্থায় ও মৃত অবস্থায় মু’মিন ব্যক্তি কখনো নাপাক হবে না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে মুস্তাদরাকে হাকিমেও অনুরূপ হাদীস রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসদ্বয় হানাফী মাযহাবের দাবীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেন যে, মু’মিন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার কারণে নাপাক হয়ে যায় এবং মৃত ব্যক্তির গোসল দেয়া তারা নাপাক থেকে পবিত্রতা অর্জনের গোসল বলে মনে করেন। যা অবশ্যই সহীহ সুন্নাহ পরিপন্থী।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫২-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস বললেন, (কোন সময়) রাতে তার নাপাকী হয়ে গেলে (তৎক্ষণাৎ তার কী করা উচিত)? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন তুমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে, তোমার গুপ্তাঙ্গ ধুয়ে নিবে, অতঃপর ঘুমাবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مُخَالَطَةِ الْجُنُبِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنه قَالَ: ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ تُصِيبُهُ الْجَنَابَةُ مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَوَضَّأْ وَاغْسِلْ ذَكَرَكَ ثُمَّ نم»
ব্যাখ্যা: হাদীসে আদেশসূচক বাক্য দ্বারা মুসতাহাব উদ্দেশ্য। কেননা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন প্রকার ব্যবহার ছাড়াই নাপাকী অবস্থায় ঘুমাতেন। একদা ‘উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নাপাকী অবস্থায় ঘুমানো যাবে কিনা, এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মতি দিলেন এবং বললেন, যদি কেউ ইচ্ছা করে তবে সে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে এবং উযূর পূর্বে যৌনাঙ্গ ধৌত করবে। আর নাপাকী অবস্থায় ঘুমানোর সময় উযূ করলে অপবিত্রতা লাঘব হয়। যেমন শাদ্দাদ বিন আউস (রাঃ) থেকে সহীহ সানাদে বর্ণিত রয়েছে যে, যে ব্যক্তি নাপাকী অবস্থায় ঘুমাতে চায় সে যেন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে, কারণ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নাপাকীর গোসলের অর্ধেক।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫৩-[৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাপাক অবস্থায় ঘুমাতেন অথবা কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করলে তখন সালাতের উযূর মতো উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مُخَالَطَةِ الْجُنُبِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ جُنُبًا فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ ينَام تَوَضَّأ وضوءه للصَّلَاة
ব্যাখ্যা: উপরের হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নাপাকী অবস্থায় কেউ খাদ্য প্রহণ করতে চাইলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা উত্তম। এ ক্ষেত্রে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা মুস্তাহাব।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫৪-[৪] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করার পর আবারও যদি সঙ্গম করতে চায়, তাহলে সে যেন মধ্যখানে (সালাতের উযূর মতো) উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে নেয়। (মুসলিম)[1]
بَابُ مُخَالَطَةِ الْجُنُبِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ فَلْيَتَوَضَّأْ بَينهمَا وضُوءًا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে একবার সহবাসের পর দ্বিতীয়বার সহবাসের জন্য যে গোসলের আদেশ করা হয়েছে তা’ মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহবাস করতেন, এরপর তিনি পুনরায় সহবাসে ফিরতেন। কিন্তু তিনি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে না।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫৫-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের নিকট যেতেন একই গোসলে। (অর্থাৎ- মধ্যখানে শুধু উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন, গোসল করতেন না) (মুসলিম)[1]
بَابُ مُخَالَطَةِ الْجُنُبِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يطوف على نِسَائِهِ وَبِغسْلِ وَاحِد. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাত্রিতে তার স্ত্রীদের নিকট গমন করতেন এবং সব শেষে তিনি একবার গোসল করতেন। দু’ সহবাসের মাঝে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা বা না করা মুসতাহাব হয়ে গেল।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫৬-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতেন। (মুসলিম)[1]
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস, যা মাসাবীহের সংকলক এখানে বর্ণনা করেছেন, আমি কিতাবুল আত্ব’ইমাতে বর্ণনা করবো ইনশা-আল্লা-হ।
بَابُ مُخَالَطَةِ الْجُنُبِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَحَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ سَنَذْكُرُهُ فِي كِتَابِ الْأَطْعِمَةِ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
ব্যাখ্যা: সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করা বৈধ। পবিত্র, অপবিত্র, দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর বৈধ চলতে পারে। ইমাম নাবাবী বলেন, উল্লিখিত হাদীস অপবিত্র অবস্থায় তাসবীহ, তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) তাকবীর, (আল্লা-হু আকবার) তাহমীদ (আল হামদুলিল্লা-হ) এবং অনুরূপ যিকর-আযকারের বৈধতা রয়েছে।