পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০১-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা কিছু পরিধান করবে এবং উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে, তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে।[1] (আহমাদ, আবূ দাঊদ)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذا لبستم وَإِذا توضأتم فابدؤوا بأيامنكم» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: জামা, পায়জামা, জুতা, সেন্ডেল, মোজা- এগুলোর মতো অন্য কিছু পরিধান ইত্যাদি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সময় ডান দিক হতে আরম্ভ করতে হবে। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান দিক হতে কোন কাজ শুরু করাকে ভালোবাসতেন। এটা সুন্নাত। সুন্নাত মেনে চলার মধ্যেই ফাযীলাত ও বারাকাত রয়েছে।
নাসায়ী ও তিরমিযীতে আছে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত (ان انبى ﷺ: اذا لبس قميصابدأ بميامنه) অর্থাৎ- ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জামা পরিধান করতেন তখন ডান দিক হতে শুরু করতেন’’।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০২-[১২] সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূর শুরুতে ’বিসমিল্লা-হ’ (আল্লাহ তা’আলার নাম) পড়েনি তার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) হয়নি। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَن سعيد بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ الله عَلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার শুরুতে আল্লাহর নাম উল্লেখ করলো না, অর্থাৎ- ‘বিস্মিল্লা-হ’ বললো না তার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) হবে না।
‘‘যে ব্যক্তির উযূ করার সময় বিসমিল্লা-হ বলেনি তার উযূ বিশুদ্ধ হয়নি।’’ বিসমিল্লা-হ বলা সুন্নাত।
* শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) ‘‘হুজ্জাতুল্লা-হিল বা-লিগাহ্’’-তে বলেনঃ হাদীসটি দলীল- বিসমিল্লা-হ বলাটা ركن অথবা شرط অর্থাৎ- এর অর্থ দাঁড়ায় উযূ পরিপূর্ণ হবে না।
* অন্য হাদীসে রয়েছে لَا صَلوةَ لِمَنْ لَا وَضُوْءَ لَه অর্থাৎ যার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বিশুদ্ধ হবে না তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)ও হবে না। অতএব উযূ শুরু করার পূর্বে বিসমিল্লা-হ বলার গুরুত্ব অপরিসীম।
* বিসমিল্লা-হ বলার হাদীস অধিক বিশুদ্ধ ও অধিক শক্তিশালী এবং الوضوء بالنبيذ হাদীস থেকে অধিক প্রসিদ্ধ।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০৩-[১৩] আহমাদ ও আবূ দাঊদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে হাদীসটি বর্ণিত।[1]
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
-
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০৪-[১৪] দারিমী আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে ও তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ প্রমুখ তাদের বর্ণনায় তার প্রথমে এ কথা বৃদ্ধি করেছেন যার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নেই তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)ও নেই, অর্থাৎ- উযূ ব্যতীত সালাত হয় না।[1]
والدارمي عَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ عَن أَبِيه وَزَادُوا فِي أَوله:
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি সহীহ হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে যথার্থভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে না। তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হবে না। আল্লাহ তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) গ্রহণ করবেন না। (ইচ্ছাকৃত কেউ উযূ ছাড়া সালাত আদায় করলে পাপী হবে)।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০৫-[১৫] লাক্বীত্ব ইবনু সবুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সম্পর্কে বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, উযূর অঙ্গগুলো পরিপূর্ণভাবে ধুবে। আঙ্গুলগুলোর মধ্যে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করবে এবং উত্তমরূপে নাকে পানি পৌঁছাবে, যদি সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) না হও। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী; আর ইবনু মাজাহ ও দারিমীبَيْنَ الْاَصَابِعِ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنْ لَقِيطِ بْنِ صَبِرَةَ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي عَنِ الْوُضُوءِ. قَالَ: «أَسْبِغِ الْوُضُوءَ وَخَلِّلْ بَيْنَ الْأَصَابِعِ وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَرَوَى ابْنُ مَاجَه والدارمي إِلَى قَوْله: بَين الْأَصَابِع
ব্যাখ্যা: লাক্বীত্ব ইবনু সবুরাহ্ (রাঃ) প্রসিদ্ধ সাহাবী। তার বর্ণিত ২৪টি হাদীস রয়েছে। উযূর অঙ্গগুলো পরিপূর্ণভাবে ধৌত করা। তিনবার করে ধৌত করা, ঘষে পরিষ্কার করা শুভ্রতাকে দীর্ঘ করা ইত্যাদি। এদের মধ্যে খিলাল করার মাধ্যমে হাতের ও পায়ের অঙ্গুলির মাঝে পানি পৌঁছিয়ে দেয়া অন্যতম।
কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া জরুরী। সায়িম (রোযাদার) হলে নাকের অভ্যন্তরের পানি দেয়া কিংবা কুলি করার সময় গড়গড়া করা যাবে না, কারণ এতে গলার মধ্যে পানি প্রবেশ করতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০৬-[১৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি যখন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে, হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করবে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী [রহঃ] বলেছেন, হাদীসটি গরীব।)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا تَوَضَّأْتَ فَخَلِّلْ بَيْنَ أَصَابِعِ يَدَيْكَ وَرِجْلَيْكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ نَحْوَهُ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০৭-[১৭] মুস্তাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সময় দেখেছি যে, তিনি বাম হাতের ছোট আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَن الْمُسْتَوْرد بن شَدَّاد قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا تَوَضَّأَ يُدَلِّكُ أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ بِخِنْصَرِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: قوله (وَعَنِ الْمُسْتَوْرِدٍ) এর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৭টি। শুধু মুসলিমে ২টি রয়েছে। মিসর বিজয়ে উপস্থিত ছিলেন। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দু’ পায়ের আঙ্গুলের মাঝের স্থানগুলো খিলাল না করলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) পরিপূর্ণতা নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০৮-[১৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সময় এক কোষ পানি নিয়ে চিবুকের নিচ দিয়ে দাড়িতে প্রবেশ করিয়ে তা খিলাল করে নিতেন এবং বলতেনঃ আমার রব আমাকে এরূপ করতে নির্দেশ করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا تَوَضَّأَ أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَأَدْخَلَهُ تَحْتَ حَنَكِهِ فَخَلَّلَ بِهِ لحيته وَقَالَ: «هَكَذَا أَمرنِي رَبِّي» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: قوله (أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ) মুখমণ্ডল ধৌত করার সময় নিশ্চয়ই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাড়ি খিলাল করতেন আঙ্গুলসহ হাতের তালু দ্বারা। পানি গলার দিক থেকে প্রবেশ করানো যায় যাতে তা’ সব দিক থেকে দাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
এভাবে দাড়ি খিলাল করার জন্য আমার রব আদেশ করেছেন। অর্থাৎ- জিবরীল (রাঃ)-এর মাধ্যমে তাঁকে এ আদেশ করা হয়েছিল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ প্রত্যেক লোমের নিচে অপবিত্রতা রয়েছে। পানি পৌঁছে দেয়া আবশ্যক দাড়ির অভ্যন্তরে চাই দাড়ি ঘন হোক বা হালকা হোক। আরো বলেন, (فَبَلُو الشَّعْرُ وَانْقُوا الْبَشَرُ) লোম বা চুল ভিজাও আর চামড়া পরিষ্কার করো।
এটাকে ইমাম বুখারী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে صِفَةُ الْوَضُوْءِ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর একচুল্লু পানি গ্রহণ করেন, সেটার দ্বারা স্বীয় মুখমণ্ডল ধৌত করেন।
শাওকানী (রহঃ) নিঃসন্দেহে বলেনঃ একচুল্লু পানি ঘন দাড়িতে যথেষ্ট হবে না, মুখমণ্ডল ধৌত করার জন্য এবং দাড়ি খিলাল করতে। পক্ষান্তরে যার দাড়ি পাতলা হবে যার চামড়া দেখা যাবে, তখন দাড়ির নিচে পানি পৌঁছানো অত্যাবশ্যক হবে। এ বইয়ের লেখকেরও এ মত এবং বলেনঃ আল্লাহ অধিক অবগত রয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪০৯-[১৯] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সময়) নিজের দাড়ি খিলাল করতেন। (তিরমিযী ও দারিমী)[1]
وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُخَلِّلُ لِحْيَتَهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: قوله (كَانَ يُخَلِّلُ لِحْيَتَه) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর হাত তাঁর দাড়ির মধ্যে প্রবেশ করায়ে খিলাল করতেন। তিরমিযী হাদীসটি তাঁর ‘‘ইলালিহিল কাবীর’’-এ বলেছেন, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা‘ঈল আল বুখারী বলেছেনঃ খিলাল করার প্রসঙ্গে অধিক বিশুদ্ধ বিষয় ‘উসমান (রাঃ)-এর হাদীস।
দাড়ি খিলাল করা সুন্নাত, তাই আমরাও খিলাল করবো। চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোর জন্য খিলাল করা ত্যাগ করবো না।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১০-[২০] আবূ হাইয়্যাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আলী (রাঃ)-কে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে দেখেছি। তিনি প্রথমে নিজের হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে পরিষ্কার করলেন। তারপর তিনবার কুলি করলেন ও তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার করে মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নিলেন। এরপর একবার মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং উযূর বাকী পানিটুকু নিয়ে তা দাঁড়ানো অবস্থায় পান করলেন। অতঃপর বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেছেন তা আমি তোমাদেরকে দেখাতে চাইলাম। (তিরমিযী ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي حَيَّةَ قَالَ رَأَيْتُ عَلِيًّا تَوَضَّأَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ حَتَّى أَنْقَاهُمَا ثُمَّ مَضْمَضَ ثَلَاثًا واستنشق ثَلَاثًا وَغسل وَجهه ثَلَاثًا وذراعيه ثَلَاثًا وَمسح بِرَأْسِهِ مرّة ثمَّ غسل قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثُمَّ قَامَ فَأَخَذَ فَضْلَ طَهُورِهِ فَشَرِبَهُ وَهُوَ قَائِمٌ ثُمَّ قَالَ أَحْبَبْتُ أَنْ أريكم كَيفَ كَانَ طَهُورِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: والمراد بالكفين দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দু’হাত হাতে দু’ কব্জাসহ ধৌত করেন উভয় হাত হতে ময়লা দূর করেন। নিশ্চয়ই তিনি তিন চুল্লু পানি দিয়ে তিনবার কুলি করেন, তিনবার নাকে পানি দেন আর দু’ হস্তদ্বয়কে আঙ্গুলের মাথা হতে কনুইসহ ধৌত করেন এবং তার মাথা মাসাহ করেন।
অতঃপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করেন। এ হাদীস উযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস। সর্বসাধারণকে দাঁড়িয়ে খেতে বা পান করতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন- সহীহ মুসলিমে এ মর্মে হাদীসে রয়েছে। পানি দাঁড়িয়ে পান করা উচিত নয়, নিষেধ।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১১-[২১] ’আবদ খায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বসে বসে ’আলী (রাঃ)-এর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা দেখছিলাম। তিনি ডান হাত পানির মধ্যে ডুবিয়ে পানি উঠিয়ে মুখ ভরে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তারপর বাম হাত দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তিনি এরূপ তিনবার করলেন, অতঃপর বললেন, কেউ যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) (করার পদ্ধতি) দেখে আনন্দ লাভ করতে চায়, তবে দেখুক, এরূপই ছিল তাঁর উযূ। (দারিমী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ خَيْرٍ قَالَ: نَحْنُ جُلُوسٌ نَنْظُرُ إِلَى عَلِيٍّ حِينَ تَوَضَّأَ فَأَدْخَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى فَمَلَأَ فَمَهُ فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَنَثَرَ بِيَدِهِ الْيُسْرَى فَعَلَ هَذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قَالَ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى طَهُورِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهَذَا طَهُورُهُ. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: ‘আলী (রাঃ) তার হাত প্রবেশ করান পাত্রে, অতঃপর হাত দিয়ে পানি নিলেন ও কুলি করলেন ও নাকের মধ্যে পানি দিয়ে নাকের ভিতরকার শিকনি, নাকের ময়লা বের করলেন। এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১২-[২২] ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করেছেন ও নাকে দিয়েছেন। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার করেছেন। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَن عبد الله بن زيد قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفٍّ وَاحِدَةٍ فَعَلَ ذَلِك ثَلَاثًا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: قوله (عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ) অর্থাৎ- ইবনু ‘আসিম আল মাযিনী (ইবনু ‘আসিম আল মাযিনী) এ হাদীস স্পষ্ট প্রত্যেকবার কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার কাজটি একত্র করা এভাবে যে, তিন চুল্লুতে প্রত্যেকবার কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১৩-[২৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মাথা ও দুই কান মাসাহ করেছেন। কানের ভিতরাংশ নিজের দুই শাহাদাত আঙ্গুল ও উপরিভাগ বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মাসাহ করেছেন। (নাসায়ী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَسَحَ بِرَأْسِهِ وَأُذُنَيْهِ: بَاطِنَهُمَا بِالسَّبَّاحَتَيْنِ وَظَاهِرَهُمَا بإبهاميه)
(رَوَاهُ النَّسَائِيّ)
ব্যাখ্যা: قوله (مَسَحَ بِرَأْسِه وَأُذُنَيْهِ) এ হাদীস হতে প্রমাণ হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার সঙ্গে কান মাসাহ করেন। এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট যে, মাথার পানি দিয়ে কান-মাথা উভয়টা মাসাহ করেন। ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি এক চুল্লু পানি নিয়ে স্বীয় মাথা ও কানদ্বয়ের অভ্যন্তরে শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে এবং স্বীয় দু’ বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানদ্বয়ের বাহ্যিক অংশে, অর্থাৎ- কর্ণদ্বয়ের পিঠে মাসাহ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১৪-[২৪] রুবায়্যিই’ বিনতু মু’আব্বিয (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে দেখেছেন। তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা মাসাহ করলেন সামনের দিক ও পেছনের দিক (অর্থাৎ গোটা মাথা), দুই কানের পার্শ্ব ও দুই কান একবার করে।
অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উযূ করলেন এবং দুই আঙ্গুল দুই কানের ছিদ্রে ঢুকালেন।[1]
তিরমিযী প্রথম রিওয়ায়াতটি এবং আহমাদ ও ইবনু মাজাহ দ্বিতীয় রিওয়ায়াতটি বর্ণনা করেছেন।
وَعَن الرّبيع بنت معوذ: أَنَّهَا رَأَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَوَضَّأُ قَالَتْ فَمَسَحَ رَأْسَهُ مَا أَقَبْلَ مِنْهُ وَمَا أَدْبَرَ وَصُدْغَيْهِ وَأُذُنَيْهِ مَرَّةً وَاحِدَةً
وَفِي رِوَايَةٍ أَنَّهُ تَوَضَّأَ فَأَدْخَلَ أُصْبُعَيْهِ فِي جُحْرَيْ أُذُنَيْهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ الرِّوَايَةَ الأولى وَأحمد وَابْن مَاجَه الثَّانِيَة
ব্যাখ্যা: দু’টি হাদীস শুধু বুখারী এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর থেকে একদল লোক বর্ণনা করেন। মাথার সামনের দিক (বা অংশ) থেকে তার মাথার শেষের অংশ পর্যন্ত মাসাহ করেছেন। অতঃপর তার হস্তদ্বয় ফিরান মাথার পিছন থেকে তার মাথার সামনের দিকে পর্যন্ত। তার দু’ কর্ণ ও চোখের মধ্যবর্তী স্থান সহ মাসাহ করেন।
হাদীসটি চোখ ও কানের মধ্যবর্তী স্থান মাথা সহ একবার মাসাহ করার হুকুম শারী‘আত সম্মত হিসেবে নির্দেশ করে।
আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি তার আঙ্গুলদ্বয় মাথা মাসাহ করার সময় এবং পরে তার উভয় কানের ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১৫-[২৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে দেখেছেন। আর এটাও দেখেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা মাসাহ করলেন এমন পানি দিয়ে, যা তাঁর দুই হাতের পানির অবশিষ্টাংশ নয় (অর্থাৎ- নতুন পানি দিয়ে মাসাহ করলেন)। (তিরমিযী; তবে ইমাম মুসলিম আরো কিছু বেশী বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ: أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ وَأَنَّهُ مَسَحَ رَأْسَهُ بِمَاءٍ غَيْرِ فَضْلِ يَدَيْهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَرَوَاهُ مُسلم مَعَ زَوَائِد
ব্যাখ্যা: قوله (بِمَاءٍ غَيْرِ فَضْلِ يَدَيْهِ) অর্থাৎ- হাতের অতিরিক্ত পানি দিয়ে নয় বরং নতুন পানি নিয়ে মাথা মাসাহ করেছেন। ইমাম নাবাবী বলেছেন, এর মাধ্যমে দলীল পেশ করা যাবে না যে, (اَلْمَاءُ الْمُسْتعْمَلِ) অর্থাৎ- ব্যবহৃত পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা সহীহ হবে না- এ কথা বুঝানো নয় বরং মাথা মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নিতে হবে।
ফলকথা হলো উভয় আদেশ আমার নিকট বৈধ, কিন্তু উত্তম মাথা মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নিবে এবং সীমাবদ্ধ হবে না হস্তদ্বয় ভিজানোর উপরে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১৬-[২৬] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ (ওযু/ওজু/অজু)-র কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, উযূর সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখের দুই কোন মললেন এবং বললেন, কান দু’টি মাথারই অংশ। (ইবনু মাজাহ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]
আবূ দাঊদ ও তিরমিযী এ কথাও বর্ণনা করেছেন যে, এ হাদীসের অপর রাবী হাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, আমি জানি না ’’কান দু’টি মাথারই অংশ’’ এ কথাটা কার, আবূ উমামার না রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর।
وَعَن أبي أُمَامَة ذَكَرَ وُضُوءَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: وَكَانَ يَمْسَحُ الْمَاقَيْنِ وَقَالَ: الْأُذُنَانِ مِنَ الرَّأْسِ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَذَكَرَا: قَالَ حَمَّادٌ: لَا أَدْرِي: الْأُذُنَانِ مِنَ الرَّأْسِ مِنْ قَوْلِ أَبِي أُمَامَةَ أَمْ مِنْ قَوْلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১৭-[২৭] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন যে, এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁকে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায়, তিনি তাকে তিন তিনবার করে (উযূর প্রতিটি অঙ্গ ধুয়ে) দেখালেন। অতঃপর বললেন, এই হলো ওযূ। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বাড়িয়ে করলো সে মন্দ করলো, সীমালঙ্ঘন করলো ও যুলম করলো। (নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جده قَالَ: جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُهُ عَنِ الْوُضُوءِ فَأَرَاهُ ثَلَاثًا ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: «هَكَذَا الْوُضُوءُ فَمَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَتَعَدَّى وَظَلَمَ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى أَبُو دَاوُدَ مَعْنَاهُ
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার করে উযূর অঙ্গগুলো ধৌত করলেন মাসাহ করা ব্যতীত, মাসাহ এবং ধৌত করা যেহেতু ভিন্ন বিষয়, সেজন্য এখানে ধৌত করার বিষয়টিই এসেছে।
অবশ্য হাদীসে এসেছে যে, মাসাহ করতে হয় একবার। ধৌত করার সময় তিনের অধিক যে করবে তার বদনাম করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কঠোর শাস্তির কথা প্রকাশ করা হয় এবং এর থেকে তাকে ধমক দেয়া হয়, সাবধান করা হয়। অতএব উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে গিয়ে যে সমস্ত অঙ্গ ধৌত করতে হয় তা তিনবার ধৌত করবো এটা সুন্নাত, তিনবারের অধিক নয়। আর মাসাহ্-করণ একবার। তিনবারের অধিক করা অন্যায়, সীমালঙ্ঘন করা, যুলম করা।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১৮-[২৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি তার ছেলেকে এ দু’আ করতে শুনলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাতের ডান দিকে সাদা বালাখানাটি চাই। এ কথা শুনে তিনি বললেন, হে আমার ছেলে! তুমি আল্লাহর কাছে শুধু জান্নাত চাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, শীঘ্রই এ উম্মাতের মধ্যে এমন লোকের উদ্ভব হবে যারা পবিত্রতা অর্জনে ও দু’আর ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَن عبد الله بن الْمُغَفَّل أَنه سمع ابْنه يَقُول: الله إِنِّي أَسْأَلُكَ الْقَصْرَ الْأَبْيَضَ عَنْ يَمِينِ الْجَنَّةِ قَالَ: أَيْ بُنَيَّ سَلِ اللَّهَ الْجَنَّةَ وَتَعَوَّذْ بِهِ مِنَ النَّارِ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «إِنَّه سَيكون فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ قَوْمٌ يَعْتَدُونَ فِي الطَّهُورِ وَالدُّعَاءِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: পবিত্রতা অর্জনে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে সুন্নাতের অতিরিক্ত করা বা প্রত্যেক নির্ধারিত অঙ্গ তিনবারের অধিক ধৌত করা এবং মাথা মাসাহ একাধিকবার করা। সেই সাথে দু‘আয় সীমালঙ্ঘন হচ্ছে উচ্চশব্দে এবং সুর করে যা লম্বা করে দু‘আ করা। কবিতাকারে বা ছন্দবদ্ধভাবে দু‘আও বাড়াবাড়ির শামিল।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪১৯-[২৯] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ (ওয়াস্ওয়াসা দেবার জন্য) উযূর ক্ষেত্রে একটি শায়ত্বন (শয়তান) রয়েছে। এ শায়ত্বন (শয়তান) হলো ’ওয়ালাহান’। তাই (উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সময়) পানির ওয়াস্ওয়াসা হতে সতর্ক থাকবে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি গরীব, সানাদ দুর্বল। রাবী খারিজাহ্ ইবনু মুসহাব মুহাদ্দিসগণের মতে সবল নয়। অথচ তিনি ছাড়া অপর কেউ এ হাদীসকে মারফূ’ সূত্রে বর্ণনা করেননি।
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ لِلْوُضُوءِ شَيْطَانًا يُقَالُ لَهُ الْوَلَهَانُ فَاتَّقُوا وَسْوَاسَ الْمَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَلَيْسَ إِسْنَادُهُ بِالْقَوِيِّ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيثِ لِأَنَّا لَا نَعْلَمُ أَحَدًا أَسْنَدَهُ غَيْرَ خَارِجَةَ وَهُوَ لَيْسَ بِالْقَوِيّ عِنْد أَصْحَابنَا
ব্যাখ্যা: উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ও ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) অবস্থায় বেশী পানি প্রবাহিত করায় কুমন্ত্রণা, সন্দেহ পৌঁছে যায়। আর وسواس শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দ্বিধা ও ইতস্তত করা পানি পবিত্র হওয়ার ও নাপাক হওয়া মাঝে। নাপাকের চিহ্নসমূহ প্রকাশ হওয়া কিংবা সম্ভাবনা রয়েছে এমন ক্ষেত্রে পানি দ্বারা লক্ষ্য হলো পেশাব। অর্থাৎ- পেশাবের সন্দেহ পৌঁছে যাওয়া ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) পর্যন্ত। আর হাদীস নির্দেশ করে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে পানি অপচয়ের অপছন্দের উপর (অর্থাৎ- পানি অপচয় করা পছন্দনীয় কাজ নয়)।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন
৪২০-[৩০] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি যে, তিনি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার পর নিজের কাপড়ের কিনারা দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল মুছে ফেলতেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا تَوَضَّأَ مسح وَجهه بِطرف ثَوْبه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: قوله (مَسَحَ وَجْهَه) অর্থাৎ- উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার পর তার কাপড়ের কিনারা দিয়ে মুখমণ্ডল শুকিয়ে ফেলেন এটাতে প্রমাণ হলো যে, وضوء উযূ করার পর মুখমন্ডলের পানি মুছে ফেলা জায়িয। তবে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কথা হলো পানি মুছে ফেলা বৈধ।