পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৯৪-[১৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের চাবি হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আর সালাতের চাবি হলো ত্বহারাত (উযূ (ওযু/ওজু/অজু)। (আহমাদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلَاة الطّهُور» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: ইমাম ত্বীবী বলেনঃ সালাতকে জান্নাতে প্রবেশের ভূমিকা বলা হয়েছে যেমন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) কে সালাতের ভূমিকা করা হয়েছে। উযূ ছাড়া যেমন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিশুদ্ধ হয় না তেমন সালাত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করা যায় না। যারা সালাত বর্জনকারীকে কাফির বলে এ হাদীসটি তাদের দলীল আর নিশ্চয়ই এ সালাত ঈমান ও কুফরের মাঝে পার্থক্যকারী।
আর অন্যান্যগণ বলেনঃ এ হাদীস সালাতের ব্যাপারে উৎসাহ দানকারী। আর তা এমন এক বিষয় যা থেকে অমুখাপেক্ষী থাকা যায় না এবং এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শাস্তি ছাড়া প্রথমেই জান্নাতে প্রবেশের কারণ।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৯৫-[১৫] শাবীব ইবনু আবূ রাওহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক সাহাবী হতে বর্ণনা করেন। একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং (সালাতে) সূরাহ্ আর্ রূম তিলাওয়াত করলেন। সালাতের মধ্যে তাঁর তিলাওয়াতে গোলমাল বেঁধে গেল। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মানুষের কি হল! তারা আমার সাথে সালাত আদায় করছে অথচ উত্তমরূপে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করছে না। এটাই সালাতে আমার ক্বিরাআতে গোলযোগ সৃষ্টি করে। (নাসায়ী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن شبيب بن أبي روح عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَقَرَأَ الرُّومَ فَالْتَبَسَ عَلَيْهِ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ: «مَا بَالُ أَقْوَامٍ يُصَلُّونَ مَعَنَا لَا يُحْسِنُونَ الطَّهُورَ فَإِنَّمَا يلبس علينا الْقُرْآن أُولَئِكَ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসটি অনেকেই বর্ণনা করেছেন প্রত্যেকেই সাহাবী থেকে। তার মাঝে ইমাম নাসায়ী ও আহমাদও বর্ণনা করেছেন তাদের উভয়ের সানাদের রাবীগুলো বিশুদ্ধ কিন্তু মুজতারাবুল ইসনাদ। তবে তাদের দু’জনের সানাদই রাজেহ। হাদীস দ্বারা বুঝা যায় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) তে ত্রুটি সৃষ্টিকারীরা ইমামের ক্বিরাআতে ত্রুটি সৃষ্টির কারণ।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৯৬-[১৬] বানী সুলায়ম গোত্রের এক ব্যক্তি (সাহাবী) বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি কথা আমার হাতে অথবা তাঁর নিজের হাতে গুণে বললেনঃ ’সুবহা-নাল্ল-হ’ বলা হলো দাঁড়ি পাল্লার অর্ধেক, আর ’আলহামদু লিল্লা-হ’ বলা হলো দাঁড়ি পাল্লাকে পূর্ণ করা এবং ’আল্লা-হু আকবার’ বলা হলো আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা আছে তা পূর্ণ করে দেয়া। সিয়াম ধৈর্যের অর্ধেক এবং পাক-পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ رَجُلٍ مِنْ بَنِي سُلَيْمٍ قَالَ: عَدَّهُنَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي يَدِي أَوْ فِي يَدِهِ قَالَ: «التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ يَمْلَؤُهُ وَالتَّكْبِيرُ يَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَالصَّوْمُ نِصْفُ الصَّبْرِ وَالطُّهُورُ نِصْفُ الْإِيمَانِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
ব্যাখ্যা: হাদীসটি দুর্বল, তবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতেও বর্ণিত, হাদীসে সওম (রোযা)-কে সবরের অর্ধেক বলা হয়েছে, তার কারণ সবর যেহেতু নাফসকে আনুগত্যে নিয়োজিত রাখে ও অবাধ্যতা হতে বিরত রাখে, সওম তেমন নাফসের প্রবৃত্তিকে অবাধ্য কাজ হতে পূর্ণাঙ্গভাবে দূরে রাখে। সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ হতে সওম সবরের অর্ধেক।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৯৭-[১৭] ’আবদুল্লাহ (রাঃ) আস্ সুনাবিহী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মু’মিন বান্দা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে ও কুলি করে, তখন তার মুখ থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। আর যখন সে নাক ঝাড়ে তখন তার নাক থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধোয়, গুনাহ তার মুখ থেকে বের হয়ে যায়, এমনকি তার চোখের পাতার নীচ হতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। এরপর যখন নিজের দু’টি হাত ধোয়, তখন তার হাত হতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার হাতের নখের নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মাথা মাসাহ করে, মাথা হতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি দুই কান থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন নিজের পা দু’টো ধোয়, তার দুই পায়ের গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার পায়ের নখের নীচ হতেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর মসজিদের দিকে গমন এবং তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হয় তার জন্য অতিরিক্ত। (মুওয়াত্ত্বা মালিক ও নাসায়ী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَن عبد الله الصنَابحِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ فَمَضْمَضَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ فِيهِ وَإِذَا اسْتَنْثَرَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ أَنفه فَإِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ وَجْهِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَشْفَارِ عَيْنَيْهِ فَإِذَا غسل يَدَيْهِ خرجت الْخَطَايَا مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِ يَدَيْهِ فَإِذَا مَسَحَ بِرَأْسِهِ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رَأْسِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ أُذُنَيْهِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رِجْلَيْهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِ رِجْلَيْهِ ثُمَّ كَانَ مَشْيُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ وَصَلَاتُهُ نَافِلَةً لَهُ» . رَوَاهُ مَالك وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লিখিত মুখের গুনাহ বলতে- অশ্লীল কাজের দিকে ফুসলানো, অবাধ্য কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়া রয়েছে ইত্যাদি সগীরাহ্ গুনাহ। নাকের গুনাহ বলতে এমন বস্তুর ঘ্রাণ নেয়া যা বৈধ নয় যেমন- চুরি করা আতর। চেহারার গুনাহ বলতে এমন বস্তুর দিকে দৃষ্টি দেয়া যার দিকে দৃষ্টি দেয়া বৈধ নয় যেমন কোন গাইরে মাহরাম নারীর দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে দৃষ্টি দেয়া। হাতের গুনাহ বলতে এমন গুনাহ যা স্পর্শ করা জায়িয নয়। মাথার গুনাহ বলতে অশ্লীল চিন্তা করা, কানের গুনাহ বলতে অশ্লীল কিছু শোনা। পায়ের গুনাহ বলতে এমন কাজের উদ্দেশে হেঁটে যাওয়া যা করা উচিত নয়।
হাদীসে উল্লেখ হয়েছে ‘‘অতঃপর যখন সে মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথা হতে গুনাহ ঝরে যায় এমনকি তার কান হতেও।’’ উল্লিখিত অংশ প্রমাণ করছে কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। অতএব মাথা মাসাহের পানি দিয়ে কান মাসাহ করতে হবে নতুন পানি দ্বারা নয়। এ হাদীস نَافِلَةً لَهٗ বলা হয়েছে, মর্মার্থ হচ্ছে- ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সাথে সাথে তার উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর গুনাহ ঝরে যায় পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অঙ্গের গুনাহ থাকলে সেগুলোর গুনাহও মাফ হয়ে যায়, অর্থাৎ- সগীরাহ্ গুনাহ। সগীরাহ্ গুনাহ যদি না থাকে তাহলে তার কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হালকা করা হবে। যদি কোন প্রকার গুনাহ না থাকে তাহলে তার মর্যাদাকে উন্নীত করা হবে। হাদীসটি একজন মুসলিমকে উযূর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৯৮-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে (অর্থাৎ- মদীনার বাকী’তে) উপস্থিত হলেন এবং সেখানে (মৃতদের উদ্দেশে) বললেনঃ ’’আস্সালা-মু ’আলায়কুম, (তোমাদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) হে মু’মিন অধিবাসীগণ! আমরা ইনশা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত হচ্ছি। আমরা আশা করি, আমরা যেন আমাদের ভাইদের দেখতে পাই’’। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি (পরে আসবে)। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতদের যারা এখনো আসেনি, তাদের আপনি কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন কিভাবে চিনবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির একদল নিছক কালো রঙের ঘোড়ার মধ্যে ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা সম্পন্ন ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) সাদা ধবধবে কপাল ও সাদা হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে এবং আমি হাওযে কাওসারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসেবে উপস্থিত থাকবো। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم أَتَى الْمَقْبَرَةَ فَقَالَ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا قَالُوا أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ فَقَالُوا كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلَا يَعْرِفُ خَيْلَهُ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْض» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘‘আমরা ইন-শা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত হচ্ছি’’ বলেছেন অথচ মরণ সুনিশ্চিত। এ ব্যাপারে বিদ্বানদের একাধিক উক্তি আছে যা দশ পর্যন্ত পৌঁছাবে। সে উক্তিগুলো থেকে সর্বাধিক স্পষ্ট হচ্ছে- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারাকাতের জন্য إِنْ شَآءَ اللّهُ (ইন-শা-আল্লাহ) বলেছেন, সন্দেহের জন্য নয়। অন্য এক মতে বলা হয়েছে- আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য এরূপ বলেছেন। যেমন- আল্লাহর বাণীঃ وَلَا تَقُوْلَنَّ لِشَاىْءٍ اِنِّىْ فَاعِلٌ ذلِكَ غَدًا - اِلَّا اَنْ يَّشَآءَ اللّهُ অর্থাৎ- ‘‘কোন বিষয় সম্পর্কে কক্ষনো বল না যে, ‘ওটা আমি আগামীকাল করবো’। ‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে’ বলা ছাড়া’’- (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮ : ২৩)।
হাদীসে সাহাবীগণের প্রশ্ন ‘‘আমরা কি আপনার ভাই নই?’’ এর উত্তরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘‘তোমরা আমার সাহাবী।’’ এ ধরনের উত্তর দিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণেরকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন থেকে আলাদা করে দেননি। বরং তাঁদের একটি আলাদা সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের সামনে মু’মিনদের যে বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন তা কেবল উম্মাতে মুসলিমার জন্য খাস।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৯৯-[১৯] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন (আল্লাহর দরবারে) সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার অনুমতি দেয়া হবে। আর এভাবে আমিই প্রথম ব্যক্তি যাকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে মাথা উঠাবার অনুমতি দেয়া হবে। অতঃপর আমি আমার সামনে (উপস্থিত উম্মাতদের দিকে) দৃষ্টি নিক্ষেপ করবো এবং সকল নবী-রসূলদের উম্মাতদের মধ্য হতে আমার উম্মাতকে চিনে নিবো। এভাবে আমার পেছনে, ডান দিকে, বাম দিকেও তাকাবো। আমার উম্মাতকে চিনে নিবো। (এটা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিভাবে আপনি নূহ (আঃ) থেকে আপনার উম্মাত পর্যন্ত এত লোকের মধ্যে আপনার উম্মাতকে চিনে নিবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার উম্মাত উযূ (ওযু/ওজু/অজু)-র কারণে ধবধবে সাদা কপাল ও ধবধবে হাত-পা সম্পন্ন হবে, অন্য কোন উম্মাতের মধ্যে এরূপ হবে না। তাছাড়া আমি তাদেরকে চিনতে পারবো এসব কারণে যে, তাদের ডান হাতে ’আমলনামা থাকবে এবং তাদেরকে আমি এ কারণেও চিনবো যে, তাদের অপ্রাপ্ত বয়সের সন্তানরা তাদের সামনে দৌড়াদৌড়ি করবে। (আহমাদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَن أبي الدَّرْدَاء قَالَ: قَالَ رَسُولُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ بِالسُّجُودِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ أَنْ يرفع رَأسه فَأنْظر إِلَى بَيْنَ يَدِي فَأَعْرِفُ أُمَّتِي مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ وَمِنْ خَلْفِي مِثْلُ ذَلِكَ وَعَنْ يَمِينِي مِثْلُ ذَلِك وَعَن شمَالي مثل ذَلِك . فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَعْرِفُ أُمَّتَكَ مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ فِيمَا بَيْنَ نُوحٍ إِلَى أُمَّتِكَ؟ قَالَ: «هُمْ غُرٌّ مُحَجَّلُونَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ لَيْسَ أَحَدٌ كَذَلِكَ غَيْرَهُمْ وَأَعْرِفُهُمْ أَنَّهُمْ يُؤْتونَ كتبهمْ بأيمانهم وأعرفهم يسْعَى بَين أَيْديهم ذُرِّيتهمْ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, উযূর কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চমকানো উম্মাতে মুসলিমার খাস বৈশিষ্ট্য। এছাড়া হাদীসটিতে উম্মাতের আরো কতিপয় বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে যার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে চিনতে পারবেন। ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) বিভীষিকাময় দিনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাঁর উম্মাতের মুক্তির জন্য ব্যাস্ত হবেন হাদীসটিতে তা পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।