পরিচ্ছেদঃ ৩২/৪৩. খায়বারের যুদ্ধ।
১১৮০. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার অভিযানে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা খুব ভােরে ফজরের সালাত আদায় করলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হলেন। আবূ ত্বলহা (রাঃ)-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবু ত্বলহার পিছনে উপবিষ্ট ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সওয়ারীকে খায়বারের পথে চালিত করলেন। আমার হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঊরুতে লাগছিল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উরু হতে ইযার সরে গেল। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উরুর উজ্জ্বলতা যেন এখনো আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করলেন তখন বললেনঃ আল্লাহু আকবার! খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গণে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভাের হবে কতই না মন্দঃ এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ খায়বারের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠল, মুহাম্মাদ! আবদুল ’আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী পূর্ণ বাহিনীসহ (ওয়াল খামীস) শব্দও যোগ করেছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বর জয় করলাম।
غزوة خيبر
حديث أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزَا خَيْبَرَ فَصَلَّيْنَا عِنْدَهَا صَلاَةَ الْغَدَاةِ بِغَلَسٍ، فَرَكِبَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَكِبَ أَبُو طَلْحَةَ وَأَنَا رَدِيفُ أَبِي طَلْحَةَ فَأَجْرَى نَبِيُّ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي زُقَاقِ خَيْبَرَ وَإِنَّ رُكْبَتِي لَتَمَسُّ فَخِذَ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ حَسَرَ الإِزَارَ عَنْ فَخْذِهِ حَتَّى إِنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ فَخِذَ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا دَخَلَ الْقَرْيَةَ، قَالَ: اللهُ أَكْبَرُ خَرِبَتْ خَيْبَرُ إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ قَالَهَا ثَلاَثًا قَالَ: وَخَرَجَ الْقَوْمُ إِلَى أَعْمَالِهِمْ، فَقَالُوا: مُحَمَّدٌ وَالْخَمِيسُ (يَعْنِي الْجَيْشَ) قَالَ: فَأَصَبْنَاهَا عَنْوَةً
পরিচ্ছেদঃ ৩২/৪৩. খায়বারের যুদ্ধ।
১১৮১. সালামাহ ইবনু আকওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খাইবার অভিযানে বেরোলাম। আমরা রাতের বেলা চলছিলাম, তখন দলের এক ব্যক্তি আমির (রাঃ) কে বলল, হে আমির! তোমার সমর সঙ্গীত থেকে আমাদেরকে কিছু শোনাবে না কি? আমির (রাঃ) ছিলেন একজন কবি। তখন তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং সঙ্গীতের তালে তালে কাফেলাকে এগিয়ে নিয়ে চললেন। তিনি গাইলেনঃ
হে আল্লাহ! তুমি না হলে আমরা হিদায়াত লাভ করতাম না,
সাদাকা দিতাম না আর সালাত আদায় করতাম না।
তাই আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন, যতদিন আপনার প্রতি সমৰ্পিত হয়ে থাকব।
শত্ৰুর মুকাবিলায় আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন।
এবং আমাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন।
আমাদেরকে যখন (কুফরের দিকে) ডাকা হয় আমরা তখন তা প্রত্যাখ্যান করি।
আর এ কারণে তারা চীৎকার করে আমাদের বিরুদ্ধে লোক-লস্কর জমা করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ সঙ্গীতের গায়ক কে? তাঁরা বললেন, আমির ইবনুল আকওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। কাফেলার একজন বললঃ হে আল্লাহর নবী! তার (শাহাদাত) নিশ্চিত হয় গেল। (হায়) আমাদেরকে যদি তার নিকট হতে আরো উপকার লাভের সুযোগ দিতেন। অতঃপর আমরা খাইবারে পৌছলাম এবং তাদেরকে অবরোধ করলাম। এক সময় আমরা ভীষণ ক্ষুধায় আক্রান্ত হলাম। কিন্তু পরেই মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করলেন।
বিজয়ের দিন সন্ধ্যায় মুসলিমগণ (রান্নার জন্য) অনেক আগুন জ্বালাতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এ সব কিসের আগুন? তোমরা কী রান্না করছ? তারা জানালেন, মাংস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসের মাংস? লোকরা বললেন, গৃহপালিত গাধার মাংস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলি ঢেলে দাও এবং ডেকচিগুলো ভেঙ্গে ফেল। একজন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মাংসগুলো ঢেলে দিয়ে যদি পাত্রগুলো ধুয়ে নেই? তিনি বললেন, তাও করতে পার। এরপর যখন সবাই যুদ্ধের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িলে গেলেন, আর আমির ইবনুল আকওয়া (রাঃ)-এর তলোয়ারটা ছিল ছোট, তা দিয়ে তিনি এক ইয়াহুদীর পায়ের গোছায় আঘাত করলে তরবারির তীক্ষ ভাগ ঘুরে এসে তাঁর নিজের হাঁটুতে লেগে যায়। এতে তিনি মারা যান।
সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) বলেনঃ তারপর লোকরা খাইবার থেকে ফিরতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বললেন, কী খবর? আমি বললামঃ আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। লোকজন ধারণা করছে, (নিজ আঘাতে মারা যাওয়ায়) আমির এর আমল নষ্ট হয়ে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথা যে বলেছে সে মিথ্যা বলেছে। বরং আমিরের রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’টি আঙ্গুল একত্রিত করে দেখালেন। অবশ্যই সে একজন সচেষ্ট ব্যক্তি ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী। তাঁর মত গুণের অধিকারী আরবে খুব কমই আছে।
غزوة خيبر
حديث سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ رضي الله عنه، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى خَيْبَرَ، فَسِرْنَا لَيْلاً، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ، لِعَامِرٍ: يَا عَامِرُ أَلاَ تُسْمِعُنَا مِنْ هُنَيْهَاتِكَ وَكَانَ عَامِرٌ رَجُلاً شَاعِرًا، فَنَزَلَ يَحْدُو بِالْقَوْمِ، يَقُولُ:
اَللَّهُمَ لَوْلاَ أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَاوَلاَ تَصَدَّقْنَا وَلاَ صَلَّيْنَافَاغْفِرْ، فِدَاءً لَكَ، مَا أَبْقَيْنَاوَثَبِّتِ الأَقْدَامَ إِنْ لاَقَيْنَاوَأَلْقِيَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَاإِنَّا إِذَا صِيحَ بِنَا أَبَيْنَاوَبِالصِّيَاحِ عَوَّلُواعَلَيْنَافَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ هذَا السَّائِقُ قَالُوا: عَامِرُ بْنُ الأَكْوعِ قَالَ: يَرْحَمُهُ الله قَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ: وَجَبَتْ يَا نَبِيَّ اللهِ لَوْلاَ أَمْتَعْتَنَا بِهِ فَأَتَيْنَا خَيْبَرَ فَحَاصَرْنَاهُمْ حَتَّى أَصَابَتْنَا مَخْمَصَةٌ شَدِيدَةٌ ثُمَّ إِنَّ اللهَ تَعَالَى فَتَحَهَا عَلَيْهِمْ فَلَمَّا أَمْسى النَّاسُ مَسَاءَ الْيَوْم الَّذِي فُتِحَتْ عَلَيْهِمْ أَوْقَدُوا نِيرَانًا كَثِيرةً فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا هذِهِ النِّيرَانُ عَلَى أَيِّ شَيْءٍ توقِدُونَ قَالُوا: عَلَى لَحْمٍ قَالَ: عَلَى أَيِّ لَحْمٍ قَالُوا: لَحْمُ حُمُرِ الإِنْسِيَّةِ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أهْرِيقُوهَا وَاكْسِرُوهَا فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ أَوْ نُهَرِيقُهَا وَنَغْسِلُهَا؛ قَالَ: أَوْ ذَاكَ
فَلَمَّا تَصَافَّ الْقَوْمُ كَانَ سَيْفُ عَامِرٍ قَصِيرًا، فَتَنَاوَلَ بِهِ سَاقَ يَهُودِيٍّ لِيَضْرِبَهُ وَيَرْجِعُ ذُبَابُ سَيْفِهِ، فَأَصَابَ عَيْنَ رُكْبَةِ عَامِرٍ، فَمَاتَ مِنْهُ قَالَ: فَلَمَّا قَفَلُوا، قَالَ سَلَمَةُ: رَآنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ آخِذٌ بِيَدِي، قَالَ: مَا لَكَ قلْتُ لَهُ: فَدَاكَ أَبِي وَأُمِّي زَعَمُوا أَنَّ عَامِرًا حَبِطَ عَمَلُهُ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَذَبَ مَنْ قَالَهُ إِنَّ لَهُ لأَجْرَيْنِ وَجَمَعَ بَيْنَ إِصْبَعَيْهِ: إِنَّهُ لَجَاهِدٌ مُجَاهِدٌ، قَلَّ عَرَبِيٌّ مَشى بِهَا مِثْلَهُ