পরিচ্ছেদঃ ৬৮/১. মহান আল্লাহরবাণীঃ ‘‘হে নাবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে তালাক দাও তাদের ‘ইদ্দাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আর ‘ইদ্দাতের হিসাব সঠিকভাবে গণনা করবে।’’ সূরাহ আত্-ত্বলাক ৬৫/১)
أَحْصَيْنَاه“ : حَفِظْنَاه“ وَعَدَدْنَاهُ.
أَحْصَيْنَاه” অর্থাৎ حَفِظْنَاه” আমরা তার হিফাযত করেছি عَدَدْنَاهُতার হিসাব রেখেছি।
وَطَلاَقُ السُّنَّةِ أَنْ يُطَلِّقَهَا طَاهِرًا مِنْ غَيْرِ جِمَاعٍ وَيُشْهِدَ شَاهِدَيْنِ.
সুন্নাত তালাক হল, পবিত্রাবস্থায় সহবাস ব্যতীত স্ত্রীকে তালাক দেয়া এবং দু’জন সাক্ষী রাখা।
৫২৫১. ’আবদুল্লাহ্ ইবন ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল এর যুগে তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। ’উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে নির্দেশ দাও, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে এবং নিজের কাছে রেখে দেয় যতক্ষণ না সে মহিলা পবিত্র হয়ে আবার ঋতুমতী হয় এবং আবার পবিত্র হয়। অতঃপর সে যদি ইচ্ছে করে, তাকে রেখে দিবে আর যদি ইচেছ করে তবে সহবাসের পূর্বে তাকে তালাক দেবে। আর এটাই তালাকের নিয়ম, যে নিয়মে আল্লাহ্ তা’আলা স্ত্রীদের তালাক দেয়ার বিধান দিয়েছেন। [৪৯০৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬২[1])
** ত্বলাক্ব (বিবাহ বিচ্ছেদ)
হালাল জিনিসের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট জিনিস হচ্ছে ত্বলাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ। যদিও এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত তবুও স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারলে ইসলামে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে এ ত্বলাকের মাধ্যমে। এখানে ত্বলাক সংক্রান্ত কয়েকটি নিয়ম উধৃত করা হলো।
১। কোন স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর প্রতি অবাধ্যতার লক্ষণ দেখা দিলে স্ত্রীকে সদুপদেশ দিতে হবে। প্রয়োজনে তার শয্যা ত্যাগ করতে হবে, শিক্ষামূলক প্রহার করতে হবে। এ মর্মে সূরা আন-নিসাঃ ৩৪ আয়াত দেখুন)
২। যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দেয় তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করতে হবে। ‘‘তারা দু’জন সংশোধনের ইচ্ছে করলে আল্লাহ তাদের উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য করে দেবেন।’’ সূরা আন-নিসাঃ ৩৫)
৩। যদি তালাক দেয়া একান্তই অপরিহার্য হয়, তাহলে নারী যে সময়ে ঋতুমুক্তা ও পরিচ্ছন্না হবে, সে সময় যৌন মিলনের পূর্বেই স্বামী তাকে এক তালাক দিবে আর স্ত্রী তালাকের ইদ্দত তথা তিন ঋতু বা ঋতুমুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে- বাকারাঃ ২৮। এ ইদ্দতের মধ্যে যাতে পুনর্মিলন ও সন্ধির সুযোগ থেকে যায় সে জন্য স্বামী স্ত্রীকে তার গৃহ থেকে বহিস্কৃত করবে না, আর স্ত্রীও গৃহ থেকে বের হয়ে যাবে না। অবশ্য স্ত্রী যদি খোলাখুলি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা। সুরা আত-ত্বলাক-১)
৪। স্বামী যদি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চায় [এক তালাক অথবা দু’তালাকের পরে] তাহলে তাকে ইদ্দতের মধ্যে স্বাচ্ছন্দে ফিরিয়ে নিতে পারবে। এ শারঈ রীতির আরেকটি বড় সুবিধা এই যে, এক তালাক অথবা দু’তালাকের পরে ইদ্দতের সীমা শেষ হয়ে গেলেও স্বামী তার তালাকদত্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে নতুনভাবে মাহর নির্ধারণ ও সাক্ষীর মাধ্যমে। অন্য পুরুষের সাথে স্ত্রীটির বিবাহিতা হওয়ার কোন প্রয়োজন হবে না। এ অবস্থায় পূর্ব স্বামী তাকে বিবাহ করতে না চাইলে স্ত্রী যে কোন স্বামীর সঙ্গে বিবাহিতা হতে পারবে।
৫। আব্দুল্লাহ বিন উমার বর্ণিত আবূ দাঊদের হাদীস থেকে জানা যায়, কেউ ঋতু অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে সে তালাককে রসূল ﷺ তালাক হিসেবে গণ্য করেননি। কাজেই কেউ তালাক দিতে চাইলে স্ত্রীর পবিত্রাবস্থায় তালাক দিতে হবে।
৬। কেউ স্ত্রীকে এক তালাক দিয়ে ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে একটি তালাক বলবৎ থাকবে। স্ত্রীর ঋতুমুক্ত অবস্থায় স্বামী দ্বিতীয় তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে। এক তালাক বা দু’ তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিলে তাদের মধ্যে বিয়ে পড়ানোর প্রয়োজন হয় না।
৭। এক তালাক অথবা দ্বিতীয় তালাক দেয়ার পর ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে স্বামী ইচ্ছে করলে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। এতে যেন স্ত্রীর অভিভাবকরা বাধা সৃষ্টি না করে- সূরা আল-বাকারাহঃ ২৩২)
৮। স্বামী তার স্ত্রীকে পরপর ৩টি তুহুরে বা ঋতুমুক্ত অবস্থায় তিন তালাক না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তিন তুহুরে তিন তালাক দিলেও বিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ঐ স্বামী স্ত্রী আবার সরাসরি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। তারা পুনরায় কেবল তখনই বিয়ে করতে পারবে যদি স্ত্রীটি স্বাভাবিকভাবে অন্য স্বামী গ্রহণ করে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয় অতঃপর ঐ স্বামী মারা যায় বা স্ত্রীটিকে তালাক দেয়- বাকারাঃ ২৩০। উল্লেখ্য তিন তালাক হয়ে গেলে প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ের জন্য অন্য পুরুষের সাথে মহিলাকে বিয়ে করে তার সাথে মিলন ঘটতে হবে এবং সে [দ্বিতীয় স্বামী] যদি কোন সময় স্বেচ্ছায় তাকে তালাক দেয় তাহলে প্রথম স্বামী পুনরায় বিয়ে করতে পারবে।
একত্রিত তিন তালাক প্রসঙ্গঃ
ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে আব্দুর রাযযাকের প্রমুখাৎ, তিনি তাউসের পুত্রের বাচনিক এবং তিনি স্বীয় পিতার নিকট হতে আব্দুল্লাহ বিন ‘আববাস রাঃ) এর সাক্ষ্য উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ এর পবিত্র যুগে আর আবূ বাকরের রাঃ) সময়ে আর উমার রাঃ) এর খিলাফাতের দু’বৎসর কাল পর্যন্ত একত্রিতভাবে তিন তালাক এক তালাক বলে গণ্য হত। অতঃপর উমার রাঃ) বললেন, যে বিষয়ে জনগণকে অবকাশ দেয়া হয়েছিল, তারা সেটাকে তরান্বিত করেছে। এমন অবস্থায় যদি আমরা তাদের উপর তিন তালাকের বিধান জারী করে দেই, তাহলে উত্তম হয়। অতঃপর তিনি সেই ব্যবস্থাই প্রবর্তিত করলেন।
একত্রে তিন তালাক দেয়া হলে এক তালাক বলে গণ্য হবে। এর প্রমাণঃ আবূ রুকানার দ্বিতীয় স্ত্রী আল্লাহর রসূল ﷺ-এর নিকট তার শারীরিক অক্ষমতার কথা প্রকাশ করলে) নাবী ﷺ আবদ ইয়াযীদকে আবূ রুকানাকে) বললেন, তুমি তাকে ত্বালাক দাও। তখন সে ত্বলাক দিল। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি তোমার পূর্ব স্ত্রী) উম্মু রুকানা ও রুকানার ভাইদেরকে ফিরিয়ে নাও। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমিতো তাকে তিন ত্বলাক দিয়ে ফেলেছি। তিনি ﷺ বললেন, আমি তা জানি। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, ‘‘হে নাবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে ত্বলাক দিবে তখন তাদেরকে ইদ্দাতের উপর ত্বলাক দিবে।’’ আত-ত্বলাক ৬৫ঃ ১) সহীহ আবূ দাউদ হাদীস নং ২১৯৬)
উপরোক্ত হাদীসে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত হাদীসে তিন ত্বলাক দেয়া বলতে বিখ্যাত ভাষ্য গ্রন্থ ‘আউনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড ১৯০ পৃষ্ঠায় طلقها ثلاثا এর ব্যাখ্যায় في مجلس واحد উল্লেখ করেছেন। যার অর্থ আবূ রুকানা তার স্ত্রীকে এক সাথেই তিন ত্বলাক প্রদান করেছিলো।
এখন প্রশ্ন, উমার রাঃ) এ নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন কেন? প্রকাশ থাকে যে, ইসলামী বিধানগুলো মোটামুটি দু’ভাবে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীর আইনগুলো স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে এবং ইজতিহাদের পরিবর্তনে কোন অবস্থানেই কোনক্রমে এক চুল পরিমাণও বর্ধিত, হ্রাসপ্রাপ্ত ও পরিবর্তিত হতে পারে না। যেমন ওয়াজিব আহকাম, হারাম বস্ত্তসমূহের নিষিদ্ধতা, যাকাত ইত্যাদির পরিমাণ ও নির্ধারিত দন্ডবিধি। স্থান, কাল পাত্রভেদে অথবা ইজতিহাদের দরুণে উল্লিখিত আইনগুলো পরিবর্তন সাধন করা অথবা তাদের উদ্দেশ্যের বিপরীত ইজতিহাদ করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
দ্বিতীয় শ্রেণীর আইনগুলো জনকল্যাণের খাতিরে এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে এবং অবস্থাগত হেতুবাদে সাময়িকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। যথা শাস্তির পরিমাণ ও রকমারিত্ব। জনকল্যাণের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রসূলুল্লাহ ﷺও একই ব্যাপারে বিভিন্নরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন, যেমনঃ
ক) মদ্যপায়ীকে চতুর্থবার ধরা পড়ার পর হত্যা করার দন্ড-আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ।
খ) যাকাত পরিশোধ না করার জন্য তার অর্ধেক মাল জরিমানাস্বরূপ আদায় করা- আহমাদ, নাসায়ী, আবূ দাউদ।
গ) অত্যাচারীর কবল হতে ক্রীতদাসকে মুক্ত করে স্বাধীনতা প্রদান করা- আহমাদ, আবূ দাউদ, ইবনু মাজা।
ঘ) যে সকল বস্ত্তর চুরিতে হস্তকর্তনের দন্ড প্রযোজ্য নয়, সেগুলোর চুরির জন্য মূল্যের দ্বিগুণ জরিমানা আদায় করা- নাসায়ী ও আবূ দাউদ।
ঙ) হারানো জিনিস গোপন করার জন্য দ্বিগুণ মূল্য আদায় করা- নাসায়ী, আবূ দাউদ।
চ) হিলাল বিন উমাইয়াকে স্ত্রী সহবাস বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া- বুখারী, মুসলিম।
ছ) কারাদন্ড, কশাঘাত বা দুররা মারা ইত্যাদি শাস্তি রসূলুল্লাহ ﷺ প্রদান করেননি। অবশ্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিনি সাময়িকভাবে আটক করার আদেশ দিয়েছিলেন- আবূ দাউদ, নাসায়ী ও তিরমিযী।
রসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তিকালের পর খুলাফায়ে রাশেদীনও বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি ও দন্ড প্রদান করতেন। উমার ফারূক রাঃ) মাথা মুড়ানোর ও দুররা মারার শাস্তি দিয়েছেন। পানশালা আর যে সব দোকানে মদের ক্রয় বিক্রয় হত, সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছেন।
রসূলুল্লাহ ﷺ এর পবিত্র যুগে মদের ব্যবহার ক্বচিৎ হত। উমার রাঃ) এর যুগে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি ঘটায় তিনি এ অপরাধের শাস্তি ৮০ দুররা আঘাত নির্দিষ্ট করে দেন আর মদ্যপায়ীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। উমার রাযি.) কশাঘাত করতেন, তিনি জেলখানা নির্মাণ করান, যারা মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাতম ও কান্নাকটি করার পেশা অবলম্বন করত, স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে তাদেরকে পিটানোর আদেশ দিতেন। এ রকমই তালাক সম্বন্ধেও যখন লোকেরা বাড়াবাড়ি করতে লাগল আর যে বিষয়ে তাদেরকে অবসর ও প্রতীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছিল তারা সে বিষয়ে বিলম্ব না করে শারী‘আতের উদ্দেশ্যের বিপরীত সাময়িক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে ক্ষিপ্রগতিতে তালাক দেয়ার কাজে বাহাদুর হয়ে উঠল, তখন দ্বিতীয় খালীফা উমার রাযি.)’র ধারণা হল যে, শাস্তির ব্যবস্থা না করলে জনসাধারণ এ বদভ্যাস পরিত্যাগ করবে না, তখন তিনি শাস্তি ও দন্ডস্বরূপ এক সঙ্গে প্রদত্ত তিন তালাকের জন্য তিন তালাকের হুকুম প্রদান করলেন। যেমন তিনি মদ্যপায়ীর জন্য ৮০ দুররা আর দেশ বিতাড়িত করার আদেশ ইতোপূর্বে প্রদান করেছিলেন, ঠিক সেরূপ তাঁর এ আদেশও প্রযোজ্য হল। তাঁর দুররা মারা আর মাথা মুড়াবার আদেশ রসূলুল্লাহ ﷺ এবং প্রথম খালীফা আবূ বাকর রাঃ) এর সাথে সুসমঞ্জস না হলেও যুগের অবস্থা আর জাতির স্বার্থের জন্য আমীরুল মু’মিনীনরূপে তাঁর এরূপ করার অধিকার ছিল, সুতরাং তিনি তাই করলেন। অতএব তাঁর এ শাসন ব্যবস্থার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে টিকতে পারে না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও সুস্পষ্ট যে, খালীফা ও শাসনকর্তাদের উপরোক্ত ধরনের যে ব্যবস্থা আল্লাহর গ্রন্থ ও রসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতে বর্ণিত ও উক্ত দু’ বস্ত্ত হতে গৃহীত, কেবল সেগুলোই আসল ও স্থায়ী এবং ব্যাপক আইনের মর্যাদা লাভ করার অধিকারী। সুতরাং উমার ফারূকের শাসনমূলক অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলোকে স্থায়ী আইনের মর্যাদা দান করা আদৌ আবশ্যক নয়। পক্ষান্তরে যদি বুঝা যায় যে, তাঁর শাসনমূলক ব্যবস্থা জাতির পক্ষে সঙ্কট ও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দন্ডবিধির যে ধারার সাহায্যে তিনি সমষ্টিগত তিন তালাকের বিদ‘আত রুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, তাঁর সেই শাসনবিধিই উক্ত বিদ‘আতের ছড়াছড়ি ও বহুবিস্তৃতির কারণে পরিণত হয়ে চলেছে- যেরূপ ইদানীং তিন তালাকের ব্যাপারে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, হাজারে ও লাখেও কেউ কুরআন ও সুন্নাহর বিধানমত স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে কিনা সন্দেহ- এরূপ অবস্থায় উমার রাযি.) এর শাসনমূলক অস্থায়ী নির্দেশ অবশ্যই পরিত্যক্ত হবে এবং প্রাথমিক যুগীয় ব্যবস্থার পুনঃ প্রবর্তন করতে হবে। আমাদের যুগের বিদ্বানগণের কর্তব্য প্রত্যেক যুগের উম্মাতের বৃহত্তর কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং জাতীয় সঙ্কট দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। একটি প্রশাসনিক নির্দেশকে অাঁকড়ে রেখে মুসলিমদেরকে বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া উলামায়ে ইসলামের উচিত নয়।
সর্বশেষ কথা এই যে, হাফিয আবূ বাকর ইসমাঈলী সমষ্টিগতভাবে প্রদত্ত তিন তালাকের শারঈ তিন তালাকরূপে গণ্য করার জন্য উমার রাঃ) এর পরিতাপ ও অনুশোচনা সনদসহ রেওয়ায়াত করেছেন। তিনি মুসনাদে উমারে লিখেছেন- হাফিয আবূ ই‘য়ালা আমাদের কাছে রেওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলেন সালিহ বিনে মালেক আমাদের কাছে রেওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলেন, খালেদ বিনে ইয়াযীদ আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি স্বীয় পিতা ইয়াযীদ বিন মালিকের নিকট হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব বললেন- তিনটি বিষয়ের জন্য আমি যেরূপ অনুতপ্ত, এরূপ অন্য কোন কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত নই, প্রথমতঃ আমি তিন তালাককে তিন তালাক গণ্য করা কেন নিষিদ্ধ করলাম না। দ্বিতীয়তঃ কেন আমি মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসদেরকে বিবাহিত করলাম না, তৃতীয়তঃ অগ্নিপতঙ্গ কেন হত্যা করলাম না। ইগাসার নতুন সংস্করণে আছে, কেন আমি ব্যবসাদার ক্রন্দনকারীদের হত্যা করলাম না।
কোন দেশে যদি বিদ‘আতী পন্থায় তালাক দেয়ার প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ করে যেরূপ উমার এর যুগে ঘটেছিল তাহলে শুধুমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক যদি মনে করেন যে, এক সাথে তিন তালাককে তিন তালাক হিসেবেই গণ্য করা হবে, তাহলে তিনি এরূপ ঘোষণা শাস্তিমূলকভাবে দিতে পারেন। কিন্তু বর্তমান যুগে সে যুগের ন্যায় অবস্থা সৃষ্টি হয়নি এবং নেই।
আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন- দেখো, মাত্র দু’বার তালাক দিলেই স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে পুরুষ তাকে বিনা বিবাহে ফিরিয়ে নিতে পারে। অতঃপর হয় উক্ত নারীর সাথে উত্তমরূপে সংসার নির্বাহ অথবা উত্তম রূপে বিচ্ছেদ। আর যে মাহর তোমরা নারীদের দিয়েছ তার কিছুই গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয়.......সূরা আল-বাকারাহঃ ২২৯)
ابُ قَوْلُ اللَّهِ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ}
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّهُ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ وَهْىَ حَائِضٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مُرْهُ فَلْيُرَاجِعْهَا، ثُمَّ لِيُمْسِكْهَا حَتَّى تَطْهُرَ ثُمَّ تَحِيضَ، ثُمَّ تَطْهُرَ، ثُمَّ إِنْ شَاءَ أَمْسَكَ بَعْدُ وَإِنْ شَاءَ طَلَّقَ قَبْلَ أَنْ يَمَسَّ، فَتِلْكَ الْعِدَّةُ الَّتِي أَمَرَ اللَّهُ أَنْ تُطَلَّقَ لَهَا النِّسَاءُ ".
Narrated `Abdullah bin `Umar:
that he had divorced his wife while she was menstruating during the lifetime of Allah's Messenger (ﷺ) . `Umar bin Al-Khattab asked Allah's Messenger (ﷺ) about that. Allah's Messenger (ﷺ) said, "Order him (your son) to take her back and keep her till she is clean and then to wait till she gets her next period and becomes clean again, whereupon, if he wishes to keep her, he can do so, and if he wishes to divorce her he can divorce her before having sexual intercourse with her; and that is the prescribed period which Allah has fixed for the women meant to be divorced."