পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৭৫) হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের হৃদয়ে চাটাইয়ের পাতা (বা ছিলকার) মত একটির পর একটি করে ক্রমান্বয়ে ফিতনা প্রাদুর্ভূত হবে। সুতরাং যে হৃদয়ে সে ফিতনা সঞ্চারিত হবে সে হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে যাবে এবং যে হৃদয় তার নিন্দা ও প্রতিবাদ করবে সে হৃদয়ে একটি সাদা দাগ অঙ্কিত হবে। পরিশেষে (সকল মানুষের) হৃদয়গুলি দুই শ্রেণীর হৃদয়ে পরিণত হবে। প্রথম শ্রেণীর হৃদয় হবে মসৃণ পাথরের ন্যায় সাদা; এমন হৃদয় আকাশ-পৃথিবী অবশিষ্ট থাকা অবধি-কাল পর্যন্ত কোন ফিতনা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর হৃদয় হবে উবুড় করা কলসীর মত ছাই রঙের; এমন হৃদয় তার সঞ্চারিত ধারণা ছাড়া কোন ভালোকে ভালো বলে জানবে না এবং মন্দকে মন্দ মনে করবে না (তার প্রতিবাদও করবে না)।
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رسول الله ﷺ تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৭৬) আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে যে যুগ আসবে তার চেয়ে তার পরবর্তী যুগ হবে অধিকতর মন্দ। আর এইভাবে মন্দ হতে হতে প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময় এসে উপস্থিত হয়ে পড়বে।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رسول الله ﷺ لَا يَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ إِلَّا الَّذِي بَعْدَهُ شَرٌّ مِنْهُ حَتَّى تَلْقَوْا رَبَّكُمْ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৭৭) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের নিকট এমন ধোকাব্যঞ্জক যুগ আসবে, যাতে মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদীরূপে এবং সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদীরূপে পরিগণিত করা হবে। যখন খেয়ানতকারীকে আমানতদার মনে করা হবে এবং আমানতদার আমানতে খেয়ানত করবে। যখন জনসাধারণের ব্যাপারে তুচ্ছ লোক মুখ চালাবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّهَا سَتَأْتِي عَلَى النَّاسِ سِنُونَ خَدَّاعَةٌ يُصَدَّقُ فِيهَا الْكَاذِبُ وَيُكَذَّبُ فِيهَا الصَّادِقُ وَيُؤْتَمَنُ فِيهَا الْخَائِنُ وَيُخَوَّنُ فِيهَا الْأَمِينُ وَيَنْطِقُ فِيهَا الرُّوَيْبِضَةُ قِيلَ وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ قَالَ السَّفِيهُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৭৮) সাওবান (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অনতিদূরে সকল বিজাতি তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, যেমন ভোজনকারীরা ভোজপাত্রের উপর একত্রিত হয়। (এবং চারদিক থেকে ভোজন করে থাকে।) একজন বলল, ’আমরা কি তখন সংখ্যায় কম থাকব, হে আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, বরং তখন তোমরা সংখ্যায় অনেক থাকবে। কিন্তু তোমরা হবে তরঙ্গতাড়িত আবর্জনার ন্যায় (শক্তিহীন, মূল্যহীন)। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের বক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি ভীতি তুলে নেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ে দুর্বলতা সঞ্চার করবেন। একজন বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! দুর্বলতা কী?’ তিনি বললেন, দুনিয়াকে ভালোবাসা এবং মরতে না চাওয়া।
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُوشِكُ الأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا فَقَالَ قَائِلٌ وَمِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ قَالَ بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ وَلَيَنْزِعَنَّ اللهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ وَلَيَقْذِفَنَّ اللهُ فِى قُلُوبِكُمُ الْوَهَنَ فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا الْوَهَنُ قَالَ حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৭৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ভবিষ্যতে বহু ফিতনা দেখা দেবে। যাতে উপবেশনকারী ব্যক্তি দণ্ডায়মান অপেক্ষা উত্তম হবে, দণ্ডায়মান ব্যক্তি বিচরণকারী অপেক্ষা উত্তম হবে এবং বিচরণকারী ব্যক্তি ধাবমান অপেক্ষা উত্তম হবে। নিদ্রিত ব্যক্তি জাগ্রত অপেক্ষা উত্তম হবে এবং জাগ্রত ব্যক্তি দণ্ডায়মান অপেক্ষা উত্তম হবে। যে ব্যক্তি তার প্রতি উঁকি দিয়ে দেখবে, সে (ফিতনা) তাকে গ্রাস করে ফেলবে। অতএব যে কেউ সে সময় কোন আশ্রয়স্থল পায়, সে যেন সেখানে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ سَتَكُونُ فِتَنٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِى وَالْمَاشِى فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِى مَنْ تَشَرَّفَ لَهَا تَسْتَشْرِفُهُ وَمَنْ وَجَدَ فِيهَا مَلْجَأً فَلْيَعُذْ بِهِ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮০) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের উপর এমন এক যুগ আসছে, যখন মুসলিমের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ হবে ভেঁড়া-ছাগল; তাই নিয়ে পর্বত-শিখরে ও পানির জায়গাতে চলে যাবে; ফিতনা থেকে নিজ দ্বীন নিয়ে পলায়ন করবে।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِي أَنَّهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ تَكُونُ الْغَنَمُ فِيهِ خَيْرَ مَالِ الْمُسْلِمِ يَتْبَعُ بِهَا شَعَفَ الْجِبَالِ أَوْ سَعَفَ الْجِبَالِ فِي مَوَاقِعِ الْقَطْرِ يَفِرُّ بِدِينِهِ مِنْ الْفِتَنِ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮১) উহবান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভবিষ্যতে ফিতনা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা দেবে। সুতরাং সে সময় এলে তুমি তোমার তরবারি ভেঙ্গে ফেলো এবং কাষ্ঠের তরবারি বানিয়ে নিয়ো।
عن أهبان قَالَ قَالَ رسول الله ﷺ سَتَكُونُ فِتَنٌ وَفُرْقَةٌ فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَاكْسِرْ سَيْفَكَ وَاتَّخِذْ سَيْفًا مِنْ خَشَبٍ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮২) আবূ যার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিতনার সময় যদি তুমি ভয় কর যে, তরবারির চমক তোমার চোখ ঝলসে দেবে, তাহলে তুমি তোমার চেহারা আবৃত করে নাও।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ قَالَ رسول الله ﷺ فَإِنْ خَشِيتَ أَنْ يَبْهَرَكَ شُعَاعُ السَّيْفِ فَأَلْقِ ثَوْبَكَ عَلَى وَجْهِكَ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮৩) খালেদ বিন উরফুত্বাহ (রাঃ) বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে খালেদ! আমার পরে বহু অঘটন, ফিতনা ও মতানৈক্য সৃষ্টি হবে। সুতরাং তুমি পারলে সে সময় আল্লাহর নিহত বান্দা হও এবং হত্যাকারী হয়ো না।
عَنْ خَالِدِ بْنِ عُرْفُطَةَ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ يَا خَالِدُ إِنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِي أَحْدَاثٌ وَفِتَنٌ وَاخْتِلَافٌ فَإِنْ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ عَبْدَ اللهِ الْمَقْتُولَ لَا الْقَاتِلَ فَافْعَلْ فَإِنْ أَدْرَكْتَ ذَاكَ فَكُنْ عَبْدَ اللهِ الْمَقْتُولَ، وَلَا تَكُنْ عَبْدَ اللهِ الْقَاتِلَ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮৪) হুযাইফাহ বিন য়্যামান (রাঃ) বলেন, লোকেরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইষ্ট ও মঙ্গল বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত, আর আমি ভুক্তভোগী হওয়ার আশঙ্কায় অনিষ্ট ও অমঙ্গল বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতাম। একদা আমি বললাম, ’হে আল্লাহর রসূল! আমরা মূর্খতা ও অমঙ্গলে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে এই মঙ্গল দান করলেন। কিন্তু এই মঙ্গলের পর আর অমঙ্গল আছে কি?’ তিনি বললেন, ’’হ্যাঁ আছে।’’ আমি বললাম, ’অতঃপর ঐ অমঙ্গলের পর আর মঙ্গল আছে কি?’ তিনি বললেন, ’’হ্যাঁ, আর তা হবে ধোঁয়াটে।’’ (অর্থাৎ, বিশুদ্ধ ও খাঁটি মঙ্গল থাকবে না। বরং তার সাথে অমঙ্গল, বিঘ্ন, মতানৈক্য এবং চিত্ত-বিকৃতির ধোঁয়াটে পরিবেশ থাকবে।) আমি বললাম, ’তার মধ্যে ধোঁয়াটা কি?’ তিনি বললেন, ’’এক সম্প্রদায় হবে, যারা আমার সুন্নাহ (তরীকা) ছাড়া অন্যের সুন্নাহ (তরীকা) অনুসরণ করবে এবং আমার হেদায়াত (পথনির্দেশ) ছাড়াই (মানুষকে) পথপ্রদর্শন করবে। যাদের কিছু কাজকে চিনতে পারবে (ও ভালো জানবে) এবং কিছু কাজকে অদ্ভূত (ও মন্দ) জানবে।’’
আমি বললাম, ’ঐ মঙ্গলের পর আর অমঙ্গল আছে কি?’ তিনি বললেন, ’’হ্যাঁ, (সে যুগে) জাহান্নামের দরজাসমূহে দণ্ডায়মান আহবানকারী (আহবান করবে)। যে ব্যক্তি তাদের আহবানে সাড়া দেবে, তাকে তারা ওর মধ্যে নিক্ষিপ্ত করবে।’’ আমি বললাম, ’ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে তাদের পরিচয় বলে দিন।’ তিনি বললেন, ’’তারা আমাদেরই চর্মের (স্বজাতি) হবে এবং আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে।’’ আমি বললাম, ’আমাকে কি আদেশ করেন -যদি আমি সে সময় পাই?’ তিনি বললেন, ’’মুসলিমদের জামাআত ও ইমাম (নেতা)র পক্ষাবলম্বন করবে।’’ আমি বললাম, ’কিন্তু যদি ওদের জামাআত ও ইমাম না থাকে?’ তিনি বললেন, ঐ সমস্ত দল থেকে দূরে থাকবে; যদিও তোমাকে কোন গাছের শিকড় কামড়ে থাকতে হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমার ঐ অবস্থাতেই মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়েছে।
عَنْ حُذَيْفَةَ بن اليمان قال: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَنِ الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِى فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا كُنَّا فِى جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ قَالَ نَعَمْ فَقُلْتُ هَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ قَالَ نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ قُلْتُ وَمَا دَخَنُهُ قَالَ قَوْمٌ يَسْتَنُّونَ بِغَيْرِ سُنَّتِى وَيَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِى تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ فَقُلْتُ هَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صِفْهُمْ لَنَا قَالَ نَعَمْ قَوْمٌ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ فَمَا تَرَى إِنْ أَدْرَكَنِى ذَلِكَ قَالَ تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ فَقُلْتُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ عَلَى أَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮৫) মুআয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচটির একটি পালন করবে সে আল্লাহর যামানতে হবে; কোন রোগীর সাথে সাক্ষাৎ করে তার অবস্থা জানবে, অথবা জিহাদে প্রস্থান করবে, কিংবা তার ইমাম বা নেতার নিকট তার শ্রদ্ধা ও সম্মান জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে আগমন করবে, অথবা (প্রকাশ্য কুফরী শুরু না হলে ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা বিদ্রোহ ঘোষণা না করে) স্বগৃহে উপবেশন করবে যাতে তার বাক্শক্তি ও অন্যান্য শক্তি হতে জনগণ এবং জনগণের বিভিন্ন অত্যাচার হতে সে নিরাপদে থাকবে।
عَنْ مُعَاذِ بن جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ خَمْسٌ مَنْ فَعَلَ وَاحِدَةً مِنْهُنَّ كَانَ ضَامِنًا عَلَى اللهِ: مَنْ عَادَ مَرِيضًا، أَوْ خَرَجَ مَعَ جَنَازَةٍ، أَوْ خَرَجَ غَازِيًا، أَوْ دَخَلَ عَلَى إِمَامِهِ يُرِيدُ تَعْزِيزَهُ وَتَوْقِيرَهُ، أَوْ قَعَدَ فِي بَيْتِهِ فَسَلِمَ النَّاسُ مِنْهُ وَسَلِمَ مِنَ النَّاسِ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮৬) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফিতনার সময় মানুষের নিরাপত্তার উপায় তার স্বগৃহে অবস্থান।
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَلَامَةُ الرَّجُلِ فِي الْفِتْنَةِ أَنْ يَلْزَمَ بَيْتَهُ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮৭) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেছেন, ’আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে দু’টি (জ্ঞান) পাত্র সংরক্ষণ করেছি। যার একটি তো আমি প্রচার করে দিয়েছি। কিন্তু ওর দ্বিতীয়টি যদি প্রচার করতাম, তাহলে আমার এই কণ্ঠনালী কাটা যেত।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ وِعَاءَيْنِ فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ وَأَمَّا الْآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮৮) আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, তোমার কওম যদি কুফরীর নিকটবর্তী যুগের (নও-মুসলিম) না হত, তাহলে অবশ্যই আমি কা’বা ঘরকে ভেঙ্গে ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তি অনুসারে পুনর্নির্মাণ করতাম এবং তার জন্য দু’টি দরজা বানাতাম। একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করত ও অন্যটি দিয়ে বের হতো।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ لها النَّبِيُّ ﷺ يَا عَائِشَةُ لَوْلَا قَوْمُكِ حَدِيثٌ عَهْدُهُمْ بِكُفْرٍ لَنَقَضْتُ الْكَعْبَةَ فَجَعَلْتُ لَهَا بَابَيْنِ بَابٌ يَدْخُلُ النَّاسُ وَبَابٌ يَخْرُجُونَ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৮৯) ইবনে উমার (রাঃ) শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব দিকে মুখ ক’রে বলেছেন, সাবধান! ওখানে আছে ফিতনা, ওখানে আছে ফিতনা, যেখান হতে শয়তানের শিং উদয় হবে।
عَنِ ابنِ عُمَرَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ وَهُوَ مُسْتَقْبِلُ الْمَشْرِقِ يَقُولُ أَلاَ إِنَّ الْفِتْنَةَ هَا هُنَا أَلاَ إِنَّ الْفِتْنَةَ هَا هُنَا مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ
পরিচ্ছেদঃ ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
(১৮৯০) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ’তোমাদের তখন কী অবস্থা হবে, যখন তোমাদেরকে ফিতনা-ফাসাদ গ্রাস করে ফেলবে? যাতে শিশু প্রতিপালিত (বড়) হবে এবং বড় বৃদ্ধ হবে, (তা সকলের অভ্যাসে পরিণত হবে) আর তাকে সুন্নাহ (দ্বীনের তরীকা) মনে করা হবে। পরন্তু তার যদি কোনদিন পরিবর্তন সাধন করা হয় তাহলে লোকেরা বলবে, ’এ কাজ গর্হিত!’
তাঁকে প্রশ্ন করা হল, ’(হে ইবনে মাসঊদ!) এমনটি কখন ঘটবে?’ তিনি বললেন, ’যখন তোমাদের মধ্যে আমানতদার লোক কম হবে ও আমীর (বা নেতার সংখ্যা) বেশী হবে, ফকীহ (বা প্রকৃত আলেমের সংখ্যা) কম হবে ও ক্বারী (কুরআন পাঠকারীর) সংখ্যা বেশী হবে, দ্বীন ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে জ্ঞান অন্বেষণ করা হবে এবং আখেরাতের আমল দ্বারা পার্থিব সামগ্রী অনুসন্ধান করা হবে।’
وعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كَيْفَ بِكُمْ إِذَا لَبِستكُمْ فِتْنَةٌ يَرْبُو فِيْهَا الصَّغِيْرُ وَ يُهْرِمُ فِيْهَا الكَبِيْرُ وَتَتَخِذُ سُنَّة فَإِنَّ غَيَّرَتْ يَوْمًا قِيْلَ هَذَا مُنْكَرٌ قِيْلَ : وَمَتَى ذَلِكَ ؟ قَاَل إِذَا قِلَّتْ أَمْنَاؤُكُمْ وَكَثُرَتْ أُمَرَاؤُكُمْ وَقِلَّتْ فُقَهَاؤُكُمْ وَكَثُرَتْ قُرَّاؤُكُمْ وَتَفَقَّهُ لِغَيْرِ الدِّيْنِ وَالتَّمَسَّتِ الدُّنْيَا بِعَمَلِ الآخِرَةِ
পরিচ্ছেদঃ যুগের মানুষ খারাপ হলে অথবা ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কা হলে অথবা হারাম ও সন্দিহান জিনিসে পতিত হওয়ার ভয় হলে অথবা অনুরূপ কোন কারণে নির্জনতা অবলম্বন করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَفِرُّوا إِلَى اللهِ إنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ
অর্থাৎ, সুতরাং তোমরা আল্লাহর দিকে পলায়ন কর; নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী। (সূরা যারিয়াহ ৫০)
(১৮৯১) সা’দ ইবনে আবী অক্কাস (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঐ বান্দাকে ভালোবাসেন, যে পরহেযগার (সংযমশীল), অমুখাপেক্ষী ও আত্মগোপনকারী।
وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُول الله ﷺ يَقُولُإنَّ الله يُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيَّ الغَنِيّ الْخَفِيَّ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ যুগের মানুষ খারাপ হলে অথবা ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কা হলে অথবা হারাম ও সন্দিহান জিনিসে পতিত হওয়ার ভয় হলে অথবা অনুরূপ কোন কারণে নির্জনতা অবলম্বন করা উত্তম।
(১৮৯২) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ’হে আল্লাহর রসূল! কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম?’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), ঐ মু’মিন যে আল্লাহর পথে তার জান ও মাল দিয়ে যুদ্ধ করে। সে বলল, ’তারপর কে?’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), ’’তারপর ঐ ব্যক্তি যে কোন গিরিপথে নির্জনে নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং লোকেদেরকে নিজের মন্দ আচরণ থেকে নিরাপদে রাখে।
وَعَن أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِي قَالَ : قَالَ رَجُلٌ : أيُّ النَّاسِ أفْضَلُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَمُؤْمِنٌ مُجَاهِدٌ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ في سَبيلِ اللهِ قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَثُمَّ رَجُلٌ مُعْتَزِلٌ فِي شِعْبٍ مِنَ الشِّعَابِ يَعْبُدُ رَبَّهُ وَفِيْ رِوَايَةٍيَتَّقِي اللهَ وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ যুগের মানুষ খারাপ হলে অথবা ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কা হলে অথবা হারাম ও সন্দিহান জিনিসে পতিত হওয়ার ভয় হলে অথবা অনুরূপ কোন কারণে নির্জনতা অবলম্বন করা উত্তম।
(১৮৯৩) উক্ত রাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সত্বর এমন এক সময় আসবে যে, ছাগল-ভেঁড়াই মুসলিমের সর্বোত্তম মাল হবে; যা নিয়ে সে ফিতনা থেকে তার দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য পাহাড়-চূড়ায় এবং বৃষ্টিবহুল (অর্থাৎ, তৃণবহুল) স্থানে পলায়ন করবে।
وَعَنهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُوشِكُ أنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالِ المُسْلِمِ غَنَمٌ يَتَّبِعُ بِهَا شَعَفَ الجِبَالِ وَمَواقعَ الْقَطْر يَفِرُّ بِدينِهِ مِنَ الفِتَنِ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ যুগের মানুষ খারাপ হলে অথবা ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কা হলে অথবা হারাম ও সন্দিহান জিনিসে পতিত হওয়ার ভয় হলে অথবা অনুরূপ কোন কারণে নির্জনতা অবলম্বন করা উত্তম।
(১৮৯৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী চরাননি। তাঁর সাহাবীগণ বললেন, ’আর আপনিও?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমিও কয়েক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيّاً إِلاَّ رَعَى الْغَنَمَ فَقَالَ أصْحَابُهُ : وأنْتَ ؟ قَالَ نَعَمْ كُنْتُ أرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ لأَهْلِ مَكَّةَ رواه البخاري