পরিচ্ছেদঃ ৩৩/১. মানুষদের উপর কুরাইশদের প্রাধান্য এবং খিলাফাত বা প্রতিনিধিত্ব হবে কুরাইশদের মধ্যে থেকে।
১১৯৩. আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খিলাফত ও নেতৃত্বের ব্যাপারে সকলেই কুরাইশের অনুগত থাকবে। মুসলিমগণ তাদের মুসলিমদের এবং কাফিররা তাদের কাফিরদের অনুগত।
الناس تبع لقريش والخلافة في قريش
حديث أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: النَّاسُ تَبعٌ لِقُرَيْشٍ فِي هذَا الشَّأْنِ، مُسْلِمُهُمْ تَبَعٌ لِمُسْلِمِهِم، وَكَافِرُهُمْ تَبَعٌ لِكَافِرِهِمْ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/১. মানুষদের উপর কুরাইশদের প্রাধান্য এবং খিলাফাত বা প্রতিনিধিত্ব হবে কুরাইশদের মধ্যে থেকে।
১১৯৪. ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ বিষয় (খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা) সর্বদাই কুরাইশদের হাতে থাকবে, যতদিন তাদের দু’জন লোকও বেঁচে থাকবে।
الناس تبع لقريش والخلافة في قريش
حديث عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ يَزَالُ هذَا الأَمْرُ فِي قُرَيْشٍ مَا بَقِيَ مِنْهُمُ اثْنَانِ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/১. মানুষদের উপর কুরাইশদের প্রাধান্য এবং খিলাফাত বা প্রতিনিধিত্ব হবে কুরাইশদের মধ্যে থেকে।
১১৯৫. জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, বারজন আমীর হবে। এরপর তিনি একটি কথা বলছিলেন যা আমি শুনতে পারিনি। তবে আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি বলেছিলেন সকলেই কুরাইশ গোত্র থেকে হবে।
الناس تبع لقريش والخلافة في قريش
حديث جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، وَأَبِيهِ سَمُرَةَ بْنِ جُنَادَةَ السُّوَائِيّ قَالَ جَابِرُ بْنُ سَمُرَةَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: يَكُونُ اثْنَا عَشَرَ أَمِيرًا فَقَالَ كَلِمَةً لَمْ أَسْمَعْهَا فَقَالَ أَبِي: إِنَّهُ قَالَ: كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/২. কাউকে খালীফা নিযুক্ত করা বা তা বাদ দেয়া।
১১৯৬. আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। ’উমার (রাঃ)-কে বলা হল, আপনি কি (আপনার পরবর্তী) খলীফা মনোনীত করে যাবেন না? তিনি বললেনঃ যদি আমি খলীফা মনোনীত করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন তিনি খলীফা মনোনীত করে গিয়েছিলেন, অর্থাৎ আবু বকর (রাঃ)। আর যদি মনোনীত না করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন তিনি খলীফা মনোনীত করে যাননি। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এতে লোকরা তাঁর প্রশংসা করল। তারপর তিনি বললেন, কেউ এ ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষী আর কেউ ভীত। আর আমি পছন্দ করি আমি যেন এ থেকে মুক্তি পাই সমানে সমান, না পুরস্কার না শাস্তি। আমি জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে এর দায়িত্ব বহন করতে পারব না।
الاستخلاف وتركه
حديث عُمَرَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: قِيلَ لِعُمَرَ، أَلاَ تَسْتَخْلِفُ قَالَ: إِنْ أَسْتَخْلِفْ فَقَدِ اسْتَخْلَفَ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي، أَبُو بَكْرٍ؛ وَإِنْ أَتْرُكْ فَقَدْ تَرَكَ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي، رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَثْنَوْا عَلَيْهِ فَقَالَ: رَاغِبٌ رَاهِبٌ، وَدِدْتُ أَنِّي نَجَوْتُ مِنْهَا كَفَافًا، لاَ لِي وَلاَ عَلَيَّ، لاَ أَتَحَمَّلُهَا حَيًّا وَمَيِّتًا
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৩. নেতৃত্ব চাওয়া ও তার প্রতি লালায়িত হওয়া নিষিদ্ধ।
১১৯৭. আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ’আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ! তুমি নেতৃত্ব চেয়ো না। কেননা, চাওয়ার পর যদি নেতৃত্ব পাও তবে এর দিকে তোমাকে সোপর্দ করে দেয়া হবে। আর যদি না চেয়ে তা পাও তবে তোমাকে এর জন্য সাহায্য করা হবে।
النهي عن طلب الإمارة والحرص عليها
حديث عَبْدِ الرَّحْمنِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا عَبْدَ الرَّحْمنِ بْنَ سَمُرَةَ لاَ تَسْأَلِ الإِمَارَةَ، فَإِنَّكَ إِنْ أُوتِيتَهَا عَنْ مَسْئَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِنْ أُوتِيتَهَا مِنْ غَيْرِ مَسْئَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৩. নেতৃত্ব চাওয়া ও তার প্রতি লালায়িত হওয়া নিষিদ্ধ।
১১৯৮. আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। আমার সঙ্গে আশ’আরী গোত্রের দু’ব্যক্তি ছিল। একজন আমার ডানদিকে, অপরজন আমার বামদিকে। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মিসওয়াক করছিলেন। উভয়েই তার কাছে আবদার জানাল। তখন তিনি বললেনঃ হে আবু মূসা! অথবা বললেন, হে ’আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! রাবী বলেন, আমি বললামঃ ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য দীনসসহ পাঠিয়েছেন, তারা তাদের অন্তরে কী আছে তা আমাকে জানায়নি এবং তারা যে চাকরি প্রার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি যেন তখন তাঁর ঠোটের নিচে মিস্ওয়াকের প্রতি লক্ষ্য করছিলাম যে তা এক কোণে সরে গেছে। তখন তিনি বললেন, আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিয়োগ দিব না বা দেই না যে নিজেই তা চায়। বরং হে আবু মূসা! অথবা বললেন, হে ’আবদুল্লাহ্ ইবনু কায়স! তুমি ইয়ামনে যাও।
এরপর তিনি তার পেছনে মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে পাঠালেন। যখন তিনি তথায় পৌছলেন, তখন আবু মূসা (রাঃ) তার জন্য একটি গদি বিছালেন। আর বললেন, নেমে আসুন। ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ঐ লোকটি কে? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, সে প্রথমে ইয়াহুদী ছিল এবং মুসলিম হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় সে ইয়াহুদী হয়ে গেছে। আবু মূসা (রাঃ) বললেন, বসুন। মুআয (রাঃ) বললেন, না, বসব না, যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে। এটাই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। এরপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল। তারপর তাঁরা উভয়েই কিয়ামুল লায়ল (রাত জাগরণ) সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন একজন বললেন, আমি কিন্তু ইবাদাতও করি, নিদ্রাও যাই। আর নিদ্রাবস্থায় ঐ আশা রাখি যা ইবাদাত অবস্থায় রাখি।
النهي عن طلب الإمارة والحرص عليها
حديث أَبِي مُوسى وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ أَبُو مُوسى: أَقْبَلْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَعِي رَجُلاَنِ مِنَ الأَشْعَرِيِّينَ، أَحَدُهُمَا عَنْ يَمِينِي وَالآخَرُ عَنْ يَسَارِي، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَاكُ فَكِلاَهُمَا سَأَلَ، فَقَالَ: يَا أَبَا مُوسى أَوْ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ قَيْسٍ قَالَ، قُلْتُ: وَالَّذِي بَعَثَك بِالْحَقِّ مَا أَطْلَعَانِي عَلَى مَا فِي أَنْفُسِهِمَا، وَمَا شَعَرْتُ أَنَّهُمَا يَطْلُبَانِ الْعَمَلَ فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى سِوَاكِهِ تَحْتَ شَفَتِهِ قَلَصَتْ فَقَالَ: لَنْ أَوْ لاَ نَسْتَعْمِلُ عَلَى عَمَلِنَا مَنْ أَرَادَهُ، وَلكِنِ اذْهَبْ أَنْتَ يَا أَبَا مُوسى أَوْ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ قَيْسٍ إلَى الْيَمَنِ ثُمَّ اتَّبَعَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ فَلَمَّا قَدِمَ عَلَيْهِ أَلْقَى لَهُ وِسَادَةً، قَالَ: انْزِلْ وَإِذَا رَجُلٌ عِنْدَهُ مُوثَقٌ قَالَ: مَا هذَا قَالَ: كَانَ يَهُودِيًّا فَأَسْلَمَ ثُمَّ تَهَوَّدَ قَالَ: اجْلِسْ قَالَ: لاَ أَجْلِسُ حَتَّى يُقْتَلَ، قَضَاءُ اللهِ وَرَسُولِهِ، ثَلاَثَ مَرَّاتٍ فَأَمَرَ بِهِ فَقُتِلَ ثُمَّ تَذَاكَرَا قِيَامَ اللَّيْلِ فَقَالَ أَحَدُهُمَا: أَمَّا أَنَا فَأَقُومُ وَأَنَامُ، وَأَرْجُو فِي نَوْمَتِي مَا أَرْجُو فِي قَوْمَتِي
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৫. ন্যায়বিচারক ইমামের মর্যাদা ও স্বেচ্ছাচারী শাসকের অপকারিতা ও প্রজাদের প্রতি নম্রতার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তাদেরকে (প্রজাদেরকে) কষ্টে ফেলা নিষিদ্ধ।
১১৯৯. আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর ক্রীতদাস আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।
فضيلة الإمام العادل وعقوبة الجائر والحث على الرفق بالرعية والنهي عن إِدخال المشقة عليهم
حديث عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: كُلُّكُمْ رَاعٍ فَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالأَمِيرُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَالْعَبْدُ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكمْ رَاعٍ وَكُلُّكمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৫. ন্যায়বিচারক ইমামের মর্যাদা ও স্বেচ্ছাচারী শাসকের অপকারিতা ও প্রজাদের প্রতি নম্রতার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তাদেরকে (প্রজাদেরকে) কষ্টে ফেলা নিষিদ্ধ।
১২০০ হাসান বসরী (রহঃ) হতে বর্ণিত। উবাইদুল্লাহ্ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) মা’কিল ইবনু ইয়াসারের মৃত্যুশয্যায় তাকে দেখতে গেলেন। তখন মাকিল (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করছি যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি যে, কোন বান্দাকে যদি আল্লাহ্ তা’আলা জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে কল্যাণকামিতার সঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না।
فضيلة الإمام العادل وعقوبة الجائر والحث على الرفق بالرعية والنهي عن إِدخال المشقة عليهم
حديث مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ عَنِ الْحَسَنِ، أَنَّ عُبَيْدَ اللهِ بْنَ زِيَادٍ عَادَ مَعْقِلَ بْنَ يَسَارٍ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ، فَقَالَ لَهُ مَعْقِلٌ: إِنِّي مُحَدِّثُكَ حَدِيثًا سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَا مِنْ عَبْدٍ اسْتَرْعَاهُ اللهُ رَعِيَةً فَلَمْ يَحُطْهَا بِنَصِيحَةٍ إِلاَّ لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৬. গুলুল বা বন্টনের পূর্বে গানীমাতের মাল থেকে চুরি করা কঠোরভাবে হারাম।
১২০১. আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ান এবং গনীমতের মাল আত্মসাৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। আর তিনি তার মারাত্মক অপরাধ ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এ অবস্থায় কিয়ামতের দিন না পাই যে, তাঁর কাঁধে বকরী বয়ে বেড়াচ্ছে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার দিচ্ছে। অথবা তাঁর কাঁধে রয়েছে ঘােড়া আর তা হি হি করে আওয়াজ দিচ্ছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট পৌছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে উট যা চিার করবে, সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! একটু সাহায্য করুন।
আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব। না। আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে ধন-দৌলত এবং আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে কাপড়ের টুকরাসমূহ যা দুলতে থাকবে। সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না; আমি তো তোমার নিকট পৌছে দিয়েছি।
غلظ تحريم الغلول
حديث أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَامَ فِينَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ الْغُلُولَ، فَعَظَّمَهُ وَعَظَّمَ أَمْرَهُ، قَالَ: لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، عَلَى رَقَبَتِهِ شَاةٌ لَهَا ثُغَاءٌ، عَلَى رَقَبَتِهِ فَرَسٌ لَهُ حَمْحَمَةٌ، يَقُولُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَغِثْنِي، فَأَقُولُ: لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا، قَدْ أَبْلَغْتُكَ؛ وَعَلَى رَقَبَتِهِ بعِيرٌ لَهُ رُغَاءٌ، يَقُولُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَغثْنِي، فَأَقُولُ: لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ؛ وَعَلَى رَقَبَتِهِ صَامِتٌ، فَيَقُولُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَغِثْنِي، فَأَقُولُ: لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ؛ أَوْ عَلَى رَقَبَتِهِ رِقَاعٌ تَخْفِقُ فَيَقُولُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَغِثْنِي، فَأَقُولُ: لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৭. কর্মচারীর হাদিয়া গ্রহণ হারাম।
১২০২. আবু হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়কারী নিযুক্ত করে পাঠালেন। সে কাজ শেষ করে তাঁর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আপনার জন্য আর এ জিনিসটি আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলতেনঃ তুমি তোমার মা-বাবার ঘরে বসে রইলে না কেন? তা হলে তোমার জন্য হাদিয়া পাঠাত কিনা তা দেখতে পেতে? এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার ওয়াক্তের সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাশাহহুদ পাঠ করলেন ও আল্লাহ্ তা’আলার যথােপযুক্ত প্রশংসা করলেন। এরপর বললেনঃ রাজস্ব আদায়কারীর অবস্থা কি হল? আমি তাকে নিযুক্ত করে পাঠালাম আর সে আমাদের কাছে এসে বলছে, এটা সরকারী রাজস্ব আর এ জিনিস আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে তার বাবা-মার ঘরে বসেই রইল না কেন?
তাহলে দেখত তার জন্য হাদিয়া দেয়া হয় কি না? ঐ মহান সত্তার কসম! যার হাতে মুহাম্মাদ-এর প্রাণ, তোমাদের মাঝে কেউ যদি কোন বস্তুতে সামান্যতম খিয়ানত করে, তা হলে ক্বিয়ামাতের দিন সে ঐ বস্তুটিকে তার কাঁধে বহন করা অবস্থায় আসবে। সে বস্তুটি যদি উট হয় তা হলে উট আওয়াজ করতে থাকবে। যদি গরু হয় তবে হাম্বা হাম্বা করতে থাকবে। আর যদি বকরী হয় তবে বকরী আওয়ায করতে থাকবে। আমি পৌছে দিলাম। রাবী আবু হুমায়দ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হস্ত মুবারক এতটুকু উত্তোলন করলেন যে, আমরা তাঁর দু’বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম।
تحريم هدايا العمال
حديث أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَعْمَلَ عَامِلاً، فَجَاءَهُ الْعَامِلُ حِينَ فَرَغَ مِنْ عَمَلِهِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ هذَا لَكُمْ، وَهذَا أُهْدِيَ لِي فَقَالَ لَهُ: أَفَلاَ قَعَدْتَ فِي بَيْتِ أَبيكَ وَأُمِّكَ فَنَظَرْتَ أَيُهْدَى لَكَ أَمْ لاَ ثُمَّ قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشِيَّةً، بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَتَشَهَّدَ وَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَمَا بَالُ الْعَامِلِ نَسْتَعْمِلُهُ فَيَأْتِينَا فَيَقُولُ هذَا مِنْ عَمَلِكمْ، وَهذَا أُهْدِيَ لِي، أَفَلاَ قَعَدَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ وَأُمِّهِ فَنَظَرَ هَلْ يُهْدَى لَهُ أَمْ لاَ فَوَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَغُلُّ أَحَدُكُمْ مِنْهَا شَيْئًا إِلاَّ جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى عُنُقِهِ، إِنْ كَانَ بَعِيرًا جَاءَ بِهِ لَهُ رُغَاءٌ، وَإِنْ كَانَتْ بَقَرَةً جَاءَ بِهَا لَهَا خوَارٌ، وَإِنْ كَانَتْ شَاةً جَاءَ بِهَا تَيْعَرُ، فَقَدْ بَلَّغْتُ
فَقَالَ أَبُو حُمَيْدٍ: ثُمَّ رَفَعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ حَتَّى إِنَّا لَنَنْظُرُ إِلَى عُفْرَةِ إِبْطَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৮. পাপকৰ্ম ছাড়া আমীরের আনুগত্য করা ওয়াজিব ও পাপকর্মে আনুগত্য হারাম।
১২০৩. ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, (أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولى الأَمْرِ مِنْكُمْ) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে ’আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফাহ ইবনু কায়স ইবনু আদী সম্পর্কে যখন তাঁকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্য দলের দলনায়ক করে প্রেরণ করেছিলেন।
وجوب طاعة الأمراء في غير معصية وتحريمها في المعصية
حديث ابْنِ عَبَّاسٍ (أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولى الأَمْرِ مِنْكُمْ) ، قَالَ: نَزَلَتْ فِي عَبْدِ اللهِ بْنِ حُذَافَةَ بْنِ قَيْسِ بْنِ عَدِيٍّ، إِذْ بَعَثَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَرِيَّةٍ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৮. পাপকৰ্ম ছাড়া আমীরের আনুগত্য করা ওয়াজিব ও পাপকর্মে আনুগত্য হারাম।
১২০৪. আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহ্ই নাফরমানী করল। এবং যে ব্যক্তি আমার (নির্বাচিত) ’আমীরের আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার (নির্বাচিত) আমীরের নাফরমানী করল সে আমারই নাফরমানী করল।
وجوب طاعة الأمراء في غير معصية وتحريمها في المعصية
حديث أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصى اللهَ، وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيرِي فَقَد أَطَاعِني، وَمَنْ عَصى أَمِيرِي فَقَدْ عَصَانِي
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৮. পাপকৰ্ম ছাড়া আমীরের আনুগত্য করা ওয়াজিব ও পাপকর্মে আনুগত্য হারাম।
১২০৫. আবদুল্লাহ বিন ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া না হয়, ততক্ষণ পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় সব বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য তার মান্যতা ও আনুগত্য করা কর্তব্য। যখন নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া হয়, তখন আর কোন মান্যতা ও আনুগত্য নেই।
وجوب طاعة الأمراء في غير معصية وتحريمها في المعصية
حديث عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ؛ فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৮. পাপকৰ্ম ছাড়া আমীরের আনুগত্য করা ওয়াজিব ও পাপকর্মে আনুগত্য হারাম।
১২০৬. ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ক্ষুদ্র সৈন্যদল প্রেরণ করলেন এবং একজন আনসারী ব্যক্তিকে তাঁদের আমীর নিযুক্ত করে সেনাবাহিনীকে তার আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি (আমীর) তাদের উপর ক্ষুব্ধ হলেন এবং বললেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের দৃঢ়ভাবে বলছি যে, তোমরা কাঠ সংগ্রহ করবে এবং তাতে আগুন প্ৰজ্বলিত করবে। এরপর তোমরা তাতে প্রবেশ করবে। তারা কাঠ সংগ্রহ করল এবং তাতে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল।
এরপর যখন তারা প্রবেশ করতে ইচ্ছে করল, তখন একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। তাঁদের কেউ কেউ বলল, আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্যই তো আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করেছি। তাহলে কি আমরা (অবশেষে) আগুনেই প্রবেশ করব? তাঁদের এসব কথােপকথনের মাঝে হঠাৎ আগুন নিভে যায়। আর তাঁর (আমীরের) ক্রোধও অবদমিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করা হলে তিনি বললেনঃ যদি তারা তাতে প্রবেশ করত, তাহলে কোন দিন আর এত্থেকে বের হত না। জেনে রেখো! আনুগত্য কেবলমাত্র বিধিসঙ্গত কাজেই হয়ে থাকে।
وجوب طاعة الأمراء في غير معصية وتحريمها في المعصية
حديث عَلِيٍّ رضي الله عنه، قَالَ: بَعَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرِيَّةً وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ فَغَضِبَ عَلَيْهِمْ، وَقَالَ: أَلَيْسَ قَدْ أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُطِيعُونِي قَالُوا: بَلَى قَالَ: عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ لَمَا جَمَعْتُمْ حَطَبًا وَأَوْقَدْتُمْ نَارًا ثُمَّ دَخَلْتُمْ فِيهَا فَجَمَعُوا حَطَبًا، فَأَوْقَدُوا فَلَمَّا هَمُّوا بِالدُّخُولِ، فَقَامَ يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلى بَعْضٍ، قَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّمَا تَبِعْنَا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِرَارًا مِنَ النَّارِ، أَفَنَدْخُلُهَا فَبَيْنَمَا هُمْ كَذلِكَ إِذْ خَمَدَتِ النَّارُ، وَسَكَنَ غَضَبُهُ فَذُكِرَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: لَوْ دَخَلُوهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا أَبَدًا، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوف
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/৮. পাপকৰ্ম ছাড়া আমীরের আনুগত্য করা ওয়াজিব ও পাপকর্মে আনুগত্য হারাম।
১২০৭. জুনাদাহ ইবনু আবু উমাইয়াহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। আমরা বললাম, আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দিন। আপনি আমাদের এরূপ একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনাকে উপকৃত করবে এবং যা আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আহ্বান করলেন। আমরা তার কাছে বাই’আত করলাম।
এরপর তিনি (উবাদাহ) বললেন, আমাদের থেকে যে অঙ্গীকার তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণাঙ্গরূপে শোনা ও মানার উপর বাই’আত করলাম। আরও (বাই’আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হব না। কিন্তু যদি এমন স্পষ্ট কুফরী দেখ, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তবে ভিন্ন কথা।
وجوب طاعة الأمراء في غير معصية وتحريمها في المعصية
حديث عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ جُنَادةَ بْنِ أَبِي أُمَيَّةَ، قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ وَهُوَ مَرِيضٌ، قُلْنَا: أَصْلَحَكَ اللهُ، حَدِّثْ بِحَدِيثٍ يَنْفَعُكَ اللهُ بِهِ، سَمِعْتَهُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: دَعَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ، فَقَالَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا، أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأُثْرَةٍ عَلَيْنَا، وَأَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيهِ بُرْهَانٌ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/১০. পর্যায়ক্রমে খালীফাদের আনুগত্য করা বা মান্য করার প্রতি নির্দেশ।
১২০৮. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাদের উম্মতকে শাসন করতেন। যখন কোন একজন নবী মারা যেতেন, তখন অন্য একজন নবী তাঁর স্থলাভিসিক্ত হতেন। আর আমার পরে কোন নবী নেই। তবে অনেক খলীফাহ্ হবে। সাহাবগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে কী নির্দেশ করছেন? তিনি বললেন, তোমরা একের পর এক করে তাদের বায়’আতের হক আদায় করবে। আমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায় করবে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন ঐ সকল বিষয়ে যে সবের দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল।
الأمر بالوفاء ببيعة الخلفاء الأول فالأول
حديث أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمُ الأَنْبِيَاءُ، كَلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ، وَإِنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي، وَسَيَكُون خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُونَ قَالُوا: فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ: فُوا بِبَيْعَةِ فَالأَوَّلِ، أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ، فَإِنَّ اللهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/১০. পর্যায়ক্রমে খালীফাদের আনুগত্য করা বা মান্য করার প্রতি নির্দেশ।
১২০৯. ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শীঘ্রই স্বজনপ্রীতির বিস্তৃতি ঘটবে এবং এমন ব্যাপার ঘটবে যা তোমরা পছন্দ করতে পারবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ অবস্থায় আমাদের কী করতে বলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে আর তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর কাছে চাইবে।
الأمر بالوفاء ببيعة الخلفاء الأول فالأول
حديث ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: سَتَكونُ أُثَرَةٌ وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ: تُؤَدُّونَ الْحَقَّ الَّذِي عَلَيْكمْ وَتَسْأَلُونَ اللهَ الَّذِي لَكمْ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/১১. কর্তৃপক্ষের অত্যাচার ও অন্যায়ভাবে অন্যদেরকে প্রাধান্য দানের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ।
১২১০. উসয়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। একজন আনসারী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি আমাকে অমুকের ন্যায় দায়িত্বে নিয়োজিত করবেন না। তিনি বললেন, তোমরা আমার ওফাতের পর অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া দেখতে পাবে, তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে অবশেষে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাতের স্থান হল হাউয।
الأمر بالصبر عند ظلم الولاة واستئثارهم
حديث أُسَيْدِ بْنِ حُضَيْرٍ، أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ أَلاَ تَسْتَعْمِلُنِي كَمَا اسْتَعْمَلْتَ فُلاَنًا قَالَ: سَتَلْقَوْنَ بَعْدِي أُثْرَةً، فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوْنِي عَلَى الْحَوْضِ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/১৩. ফিতনা প্রকাশ পাওয়ার সময় (মুসলিমদের) জামা'আবদ্ধ থাকার অপরিহার্যতা এবং কুফুরীর প্রতি আহ্বান থেকে সতর্কীকরণ।
১২১১. হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। লোজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম; এই ভয়ে যেন আমি ঐ সবের মধ্যে পড়ে না যাই। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহিলীয়াতে অকল্যাণকর অবস্থায় জীবন যাপন করতাম অতঃপর আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ দান করেছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর আবার কোন অকল্যাণের আশঙ্কা আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঐ অকল্যাণের পর কোন কল্যাণ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। তবে তা মন্দ মেশানো। আমি বললাম, মন্দ মেশানো কী? তিনি বললেন, এমন একদল লোক যারা আমার সুন্নাত ত্যাগ করে অন্যপথে পরিচালিত হবে। তাদের কাজে ভাল-মন্দ সবই থাকবে।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কি আরো অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ তখন জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারীদের উদ্ভব ঘটবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাকেই তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এদের পরিচয় বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তারা আমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত এবং কথা বলবে আমাদেরই ভাষায়। আমি বললাম, আমি যদি এ অবস্থায় পড়ে যাই তাহলে আপনি আমাকে কী করতে আদেশ দেন? তিনি বললেন, মুসলিমদের এমন দল ও তাঁদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে। আমি বললাম, যদি মুসলিমদের এহেন দল ও ইমাম না থাকে। তিনি বলেন, তখন তুমি তাদের সকল দল উপদলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবে এবং মৃত্যু না আসা পর্যন্ত বৃক্ষমূল দাঁতে আঁকড়ে ধরে হলেও তোমার দীনের উপর থাকবে।
حديث حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الْخَوْلاَنِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ يَقُولُ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْخَيْرِ، وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ، فَجَاءَنَا اللهُ بِهذَا الْخَيْرِ، فَهَلْ بَعْدَ هذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ: نَعَمْ قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ
قَالَ: نَعَمْ، وَفِيهِ دَخَنٌ قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ قَالَ: قَوْمٌ يَهْدُونَ بَغَيْرِ هَدْيي، تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ: نَعَمْ، دُعَاةٌ إِلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ، مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صِفْهُمْ لَنَا فَقَالَ: هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا، وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي، إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ قَالَ: تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ قَالَ: فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا، وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذلِكَ
পরিচ্ছেদঃ ৩৩/১৩. ফিতনা প্রকাশ পাওয়ার সময় (মুসলিমদের) জামা'আবদ্ধ থাকার অপরিহার্যতা এবং কুফুরীর প্রতি আহ্বান থেকে সতর্কীকরণ।
১২১২. ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি আমীরের কোন কিছু অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে ব্যক্তি সুলতানের আনুগত্য থেকে এক বিঘত পরিমাণও সরে যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহিলি যুগের মুত্যুর ন্যায়।
حديث ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيرِهِ شَيْئًا فلْيَصْبِرْ؛ فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً