যাকাত ত্যাগকারীর পরিণতি
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলূকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং ভাল ও মন্দ উভয় পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। ভাল পথের অনুসারীদের জন্য জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মত ও মন্দ পথের অনুসারীদের জন্য জাহান্নামের কঠিন আযাব নির্ধারণ করেছেন। নিম্নে যাকাত পরিত্যাগকারীদের পরিণতি তুলে ধরা হল :
(১) যাকাত ত্যাগকারীর জন্য জাহান্নাম অবধারিত : হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَانِعُ الزَّكَاةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ النَّارِ-
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যাকাত ত্যাগকারী ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশ করবে।[1]
অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে, মা আয়েশা (রাঃ) বলেন,
دَخَلَ عَلَىَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَرَأَى فِيْ يَدِيْ فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ فَقَالَ مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ؟ فَقُلْتُ صَنَعْتُهُنَّ أَتَزَيَّنُ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أَتُؤَدِّيْنَ زَكَاتَهُنَّ قُلْتُ لاَ أَوْ مَا شَاءَ اللهُ قَالَ هُوَ حَسْبُكِ مِنَ النَّارِ-
‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার হাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান এবং বলেন, হে আয়েশা! এটা কি? আমি বললাম, হে রাসূল (ছাঃ)! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য তা তৈরী করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহর যা ইচ্ছা ছিল। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।[2]
(২) অনাদায়ী যাকাতের সম্পদকে আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের শরীরে দাগানো হবে : যারা তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করে না তাদের সেই সম্পদকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের শরীরে দাগানো হবে এবং বলা হবে, ইহা তোমার ঐ সম্পদ যে সম্পদের তুমি যাকাত আদায় করনি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ، يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ-
‘যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। আর বলা হবে, এটাই তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর’ (তওবা ৯/৩৪-৩৫)।
(৩) অনাদায়ী যাকাতের সম্পদ বিষধর সাপে রুপান্তরিত হয়ে দংশন করতে থাকবে : যারা তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করে না তাদের সেই সম্পদ টাক মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপে রুপান্তরিত হয়ে তাদের উভয় চোয়ালে কামড় ধরে বলবে আমি তোমার সেই সম্পদ যে সম্পদের তুমি যাকাত আদায় করনি। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، لَهُ زَبِيْبَتَانِ، يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِى شِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا مَالُكَ، أَنَا كَنْزُكَ-
‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, ক্বিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্বে কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তেলাওয়াত করেন,
وَلاَ يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَا آتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلِلَّهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ-
‘আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করেছে, তাদের ধারণা করা উচিৎ নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরেই ক্বিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করেছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে’ (আলে-ইমরান ৩/১৮০)।[3]
(৪) অনাদায়ী যাকাতের সম্পদ দ্বারাই কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে : মানুষ যে সম্পদের যাকাত আদায় করবে না আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পদের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্নভাবে শাস্তি প্রদান করবেন। যেমন- স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত আদায় না করলে তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে শরীর দাগানো হবে। উট, গরু ও ছাগলের যাকাত আদায় না করলে উক্ত পশুর ক্ষুর দ্বারা তাদেরকে মাড়াতে থাকবে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلاَ فِضَّةٍ لاَ يُؤَدِّى مِنْهَا حَقَّهَا إِلاَّ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحَ مِنْ نَارٍ فَأُحْمِىَ عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِيْنُهُ وَظَهْرُهُ كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيْدَتْ لَهُ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيْلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَالإِبِلُ قَالَ وَلاَ صَاحِبُ إِبِلٍ لاَ يُؤَدِّى مِنْهَا حَقَّهَا وَمِنْ حَقِّهَا حَلَبُهَا يَوْمَ وِرْدِهَا إِلاَّ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ أَوْفَرَ مَا كَانَتْ لاَ يَفْقِدُ مِنْهَا فَصِيْلاً وَاحِدًا تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَعَضُّهُ بِأَفْوَاهِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُوْلاَهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيْلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَالْبَقَرُ وَالْغَنَمُ قَالَ وَلاَ صَاحِبُ بَقَرٍ وَلاَ غَنَمٍ لاَ يُؤَدِّى مِنْهَا حَقَّهَا إِلاَّ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ لاَ يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئًا لَيْسَ فِيْهَا عَقْصَاءُ وَلاَ جَلْحَاءُ وَلاَ عَضْبَاءُ تَنْطِحُهُ بِقُرُوْنِهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلاَفِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُوْلاَهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيْلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَالْخَيْلُ قَالَ الْخَيْلُ ثَلاَثَةٌ هِىَ لِرَجُلٍ وِزْرٌ وَهِىَ لِرَجُلٍ سِتْرٌ وَهِىَ لِرَجُلٍ أَجْرٌ فَأَمَّا الَّتِى هِىَ لَهُ وِزْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا رِيَاءً وَفَخْرًا وَنِوَاءً عَلَى أَهْلِ الإِسْلاَمِ فَهِىَ لَهُ وِزْرٌ وَأَمَّا الَّتِى هِىَ لَهُ سِتْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِى سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ لَمْ يَنْسَ حَقَّ اللهِ فِيْ ظُهُوْرِهَا وَلاَ رِقَابِهَا فَهِىَ لَهُ سِتْرٌ وَأَمَّا الَّتِى هِىَ لَهُ أَجْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ لأَهْلِ الإِسْلاَمِ فِيْ مَرْجٍ وَرَوْضَةٍ فَمَا أَكَلَتْ مِنْ ذَلِكَ الْمَرْجِ أَوِ الرَّوْضَةِ مِنْ شَىْءٍ إِلاَّ كُتِبَ لَهُ عَدَدَ مَا أَكَلَتْ حَسَنَاتٌ وَكُتِبَ لَهُ عَدَدَ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا حَسَنَاتٌ وَلاَ تَقْطَعُ طِوَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ عَدَدَ آثَارِهَا وَأَرْوَاثِهَا حَسَنَاتٍ وَلاَ مَرَّ بِهَا صَاحِبُهَا عَلَى نَهْرٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ وَلاَ يُرِيْدُ أَنْ يَسْقِيَهَا إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ عَدَدَ مَا شَرِبَتْ حَسَنَاتٍ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَالْحُمُرُ قَالَ مَا أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْ الْحُمُرِ شَىْءٌ إِلاَّ هَذِهِ الآيَةُ الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ (فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ-
‘প্রত্যেক স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যে উহার হক (যাকাত) আদায় করে না, ‘নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত তৈরী করা হবে এবং সে সমুদয়কে জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে এবং তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখনই তা ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন পুনরায় তাকে গরম করা হবে (তার সাথে এরূপ করা হবে) সে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। (তার এ শাস্তি চলতে থাকবে) যতদিন না বান্দাদের বিচার নিষ্পত্তি হয়। অতঃপর সে তার পথ ধরবে, হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।
জিজ্ঞেস করা হল হে রাসূল (ছাঃ)! উট সম্পর্কে কি হবে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে উটের মালিক তার হক আদায় করবে না আর তার হকসমূহের মধ্যে পানি পানের তারিখে তার দুধ দোহন করা (এবং অন্যদের দান করাও) এক হক। ‘ক্বিয়ামতের দিন নিশ্চয়ই তাকে এক ধুধু ময়দানে উপুড় করে ফেলা হবে, আর তার সে সকল উট যার একটি বাচ্চাও সে সেই দিন হারাবে না; বরং সকলকে পূর্ণভাবে পাবে, তাকে তার ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে এবং মুখ দ্বারা কামড়াতে থাকবে। এভাবে যখনই তাদের শেষ দল অতিক্রম করবে পুনরায় প্রথম দল এসে পৌঁছবে। এরূপ করা হবে সেই দিন, যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। (তার এ শাস্তি চলতে থাকবে) যতদিন না বান্দাদের বিচার নিষ্পত্তি হয়। অতঃপর সে তার পথ ধরবে, হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।
অতঃপর জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! গরু ছাগল সম্পর্কে কি হবে? তিনি বললেন, প্রত্যেক গরু ও ছাগলের মালিক যে তার হক আদায় করবে না, ‘ক্বিয়ামতের দিন নিশ্চয়ই তাকে এক ধুধু মাঠে উপুড় করে ফেলা হবে, আর তার সে সকল গরু-ছাগল তাকে শিং মারতে থাকবে এবং ক্ষুরের দ্বারা মাড়াতে থাকবে, অথচ সে দিন তার কোন একটি গরু ছাগলই শিং বাঁকা, শিং হীন বা শিং ভাঙ্গা হবে না এবং একটি মাত্র গরু-ছাগলকেও সে হারাবে না। যখনই তার প্রথম দল অতিক্রম কারবে, তখনই শেষ দল উপস্থিত হবে। এরূপ করা হবে সেই দিন, যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। (তার এ শাস্তি চলতে থাকবে) যতদিন না বান্দাদের বিচার নিষ্পত্তি হয়। অতঃপর সে তার পথ ধরবে, হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।
অতঃপর জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ঘোড়া সম্পর্কে কি হবে? তিনি বললেন, ঘোড়া তিন প্রকার। ঘোড়া কারো জন্য পাপের কারণ, কারো জন্য আবরণ স্বরূপ, আবার কারো জন্য ছওয়াবের বিষয়। (ক) যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে পাপের কারণ, তা হল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে পালন করেছে লোক দেখানো, গর্ব এবং মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে। এ ঘোড়া হল তার পাপের কারণ। (খ) যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য আবরণস্বরূপ, তা হল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে পালন করেছে আল্লাহর রাস্তায়, অতঃপর ভুলে যায়নি তার সম্পর্কে ও তার পিঠ সম্পর্কে আল্লাহর হক। এই ঘোড়া তার ইয্যত-সম্মানের জন্য আবরণস্বরূপ। (গ) আর যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য ছওয়াবের কারণ, তা হল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে পালন করেছে কোন চারণভূমিতে বা ঘাসের বাগানে শুধু আল্লাহর রাস্তায় মুসলমানদের (দেশ রক্ষার) জন্য। তখন তার সে ঘোড়া চারণভূমি অথবা বাগানের যা কিছু খাবে, তার পরিমাণ তার জন্য নেকী লিখা হবে এবং লিখা হবে গোবর ও পেশাব পরিমাণ নেকী। আর যদি তা আপন রশি ছিড়ে একটি বা দু’টি মাঠও বিচরণ করে, তাহলে নিশ্চয়ই উহার পদচিহ্ন ও গোবরসমূহ পরিমাণ নেকী লিখা হবে। এছাড়া মালিক যদি উক্ত ঘোড়াকে কোন নদীর কিনারে নিয়ে যায়, আর তা নদী হতে পানি পান করে, অথচ মালিকের ইচ্ছা ছিল না পানি পান করাতে, তথাপি তার পানি পান পরিমাণ নেকী তার জন্য লিখা হবে।
অতঃপর জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! গাধা সম্পর্কে কি হবে? তিনি বললেন, গাধার বিষয়ে আমার প্রতি কিছু নাযিল হয়নি। এই স্বতন্ত্র ও ব্যাপকার্থক আয়াতটি ব্যতীত, ‘যে ব্যক্তি এক অণু পরিমাণ ভাল কাজ করবে, সে তার নেক ফল পাবে, আর যে এক অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে, সে তার মন্দ ফল ভোগ করবে (অর্থাৎ গাধার যাকাত দিলে তারও ছওয়াব পাওয়া যাবে)’ (যিলযাল ৭-৮)।[4]
[2]. আবূদাউদ হা/১৫৬৫; ছহীহ তারগীব হা/৭৬৯।
[3]. বুখারী হা/১৪০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/৭৯ পৃঃ; মিশকাত হা/১৭৭৪।
[4]. মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ৪/১২৩ পৃঃ।