(তিন) জেহরী ছালাতে চুপে চুপে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করলে সমস্যা নেই।
পর্যালোচনা : উক্ত দাবীই যথার্থ এবং এর পক্ষেই ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى بِأَصْحَابِهِ فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ فَقَالَ أَتَقْرَؤُوْنَ فِىْ صَلاَتِكُمْ خَلْفَ الإِمَامِ وَالإِمَامُ يَقْرَأُ؟ فَسَكَتُوْا فَقَالَهَا ثَلاَثَ مَرَاتٍ فَقَالَ قَائِلٌ أَوْ قَائِلُوْنَ إِنَّا لَنَفْعَلُ قَالَ فَلاَ تَفْعَلُوا لِيَقْرَأْ أَحَدُكُمْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِىْ نَفْسِهِ.
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদা তাঁর ছাহাবীদের নিয়ে ছালাত আদায় করেন। যখন ছালাত শেষ করলেন, তখন তাদের দিকে মুখ করলেন। অতঃপর বললেন, ইমাম ক্বিরাআত করা অবস্থায় তোমরা কি তোমাদের ছালাতে ইমামের পিছনে ক্বিরআত পাঠ করলে? তারা চুপ থাকলেন। এভাবে তিনি তিনবার জিজ্ঞেস করলেন। তখন তাদের একজন বা সকলে বললেন, হ্যঁা আমরা পাঠ করেছি। তখন তিনি বললেন, তোমরা এমনটি কর না। নীরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। আলবানী বলেন, হাদীছটির সনদ ছহীহ লিগায়রিহী।[1] মুহাক্কিক হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, এর সনদ জাইয়িদ।[2]
উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে বর্ণিত যে সমস্ত হাদীছকে আলবানী ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন, সেগুলোর থেকে এই হাদীছের পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেটা হল, এই হাদীছে রাসূল (ছাঃ) চুপে চুপে পড়ার কথা বলেছেন। এছাড়াও নিম্নের দুইটি হাদীছও তাই প্রমাণ করে-
عَنْ يَزِيْدَ بْنِ شَرِيْكٍ أَنَّهُ سَأَلَ عُمَرَ عَنِ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قُلْتُ وَإِنْ كُنْتَ أَنْتَ؟ قَالَ وَإِنْ كُنْتُ أَنَا قُلْتُ وَإِنْ جَهَرْتَ؟ قَالَ وَإِنْ جَهَرْتُ.
ইয়াযীদ ইবনু শারীক একদা ওমর (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, তুমি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ কর। আমি বললাম, যদি আপনি ইমাম হৌন? তিনি বললেন, যদিও আমি ইমাম হই। আমি পুনরায় বললাম, যদি আপনি জোরে ক্বিরাআত পাঠ করেন? তিনি বললেন, যদিও আমি জোরে ক্বিরাআত পাঠ করি।[3]
فَقِيْلَ لأَبِىْ هُرَيْرَةَ إِنَّا نَكُوْنُ وَرَاءَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِهَا فِىْ نَفْسِكَ.
আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা তো ইমামের পিছনে থাকি। তখন কী করব? তিনি বললেন, চুপে চুপে পড়।[4] এছাড়া জনৈক যুবককে রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞেস করেন, তুমি ছালাতে কী পড়? উত্তরে সে বলেছিল, আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করি এবং আল্লাহর কাছে জান্নাত চাই আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাই। এটা মু‘আয (রাঃ)-এর ইমামতির ঘটনা সম্পর্কিত বিষয়।[5]
ওমর, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী যদি ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করার কথা বলেন, তবে মানসূখ হওয়ার বিষয়টি কিভাবে সঙ্গত হতে পারে? অতএব জেহরী হোক বা সের্রী হোক প্রত্যেক ছালাতে ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণকে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
সুধী পাঠক! পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠ সূরা হল, ‘সূরাতুল ফাতিহা’। আর এর মৌলিক আবেদন হল, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন’। এই মৌলিক প্রার্থনা হতে কোন মুছল্লী বিরত থাকতে পারে কি? এছাড়া উক্ত সূরার মাধ্যমে মুছল্লীরা প্রতিনিয়ত ইহুদী-খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। সেজন্য শেষে দু‘আ কবুলের জন্য উচ্চকণ্ঠে ‘আমীন’ বলে। আর এই আমীনের শব্দ শুনে ইহুদীরা সবচেয়ে বেশী হিংসা করে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মুছল্লী এক সঙ্গে ছালাত আদায় করছে অথচ ইমাম ব্যতীত কোন মুছল্লী কোন রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না। শেষে উচ্চকণ্ঠে আমীনও বলে না। তারা ছালাতের ভিতরে উক্ত প্রার্থনা পরিত্যাগ করলেও ছালাতের পরে প্রচলিত বিদ‘আতী মুনাজাত ছাড়তে চায় না। অন্যদিকে সূরা ফাতিহা পাঠের বিরুদ্ধে অসংখ্য জাল ও বানোয়াট বর্ণনা তৈরি করে মুছল্লীদেরকে প্রকৃত সত্যের আড়ালে রাখা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের শিকড় কি তাহলে এত গভীরে! আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
[2]. ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৮৪১।
[3]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩০৪৭; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯২-এর আলোচনা দ্রঃ।
[4]. ছহীহ মুসলিম হা/৯০৪, ১/১৬৯-৭০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৬২), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত হা/৮২৩, পৃঃ ৭৮-৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৬, মিশকাত ২/২৭২ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৭৯৩, ১/১১৬ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[5]. আবুদাঊদ হা/৭৯৩, ১/১১৬ পৃঃ, সনদ ছহীহ।