সালাফী মুরাব্বী, সংস্কারক বা আলেম-মুআল্লিম

আমরা ইতিপূর্বে ইসলাহ ও তরবিয়তের ব্যাপারে রব্বানী আলেম বা দাঈর কথা বলছিলাম। তাকে জ্ঞানী হতে হবে। নচেৎ যার আলো নেই, তিনি আলো বিতরণ করবেন কীভাবে। হয়তো-বা তিনি গড়ার জায়গায় ভেঙ্গে ফেলবেন। নিম আলেমদের দাঈ বা মুফতী হওয়া, হাদীসের পরিভাষা, (মুসত্বালাহ, জারহ ও তাদীল, আসমাউর রিজাল) প্রভৃতি বিদ্যা অধ্যয়ন না করেই হাদীস সহীহ-যয়ীফ করতে শুরু করা, যথেষ্ট শরয়ী জ্ঞান নেই এমন ব্যক্তিকে আমীর বা নেতা বানানো ইত্যাদিতে অবশ্যই ক্ষতি হবে মানহাজের।

অনুরূপ আমলের ক্ষেত্রেও রাখতে হবে খেয়াল। কেবল ইলম শিক্ষা নয়, আমলেও জোর দিতে হবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সালাফী হওয়ার অবশ্যই চেষ্টা রাখতে হবে। নচেৎ বুকে হাত বাধা, রফয়ে য়্যাদাইন করা, জোরে আমীন বলা, পায়ে পা লাগানো ইত্যাদির মাধ্যমে। সালাতে এবং তালাক প্রভৃতি কয়েটি মাসআলায় আহলে হাদীস হলে যথেষ্ট নয়। আকীদায়, ইবাদতে, চেহারায়, লেবাসে-পোশাকে-পর্দায়, লেনদেন ও চরিত্র-ব্যবহারেও সালাফী হতে হবে।

দাওয়াতী ময়দানে কেবল অসালাফী ফিকাগুলোর সমালোচনার উপর জোর দিয়ে নিজেদের আত্মসমালোচনা ত্যাগ করলে ফল আশানুরূপ ভালো হতে পারে না।

সালাফী মানহাজে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম। বিনা ইলমের দাওয়াতে ফিতনা বেশি হয়। পথের দিশা হারিয়ে গিয়ে পথভ্রষ্টতাই পরিণাম হয়।

মহানবী (সা.) বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا، يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا، اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا، فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ, আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মুখ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ৭৩০৭, মুসলিম ৬৯৭ ১নং)

যিয়াদ বিন হুদাইর বলেন, একদা আমাকে উমার (রাঃ) বললেন, 'তুমি জান কি, ইসলামকে কিসে ধ্বংস করবে?' আমি বললাম, 'জী না।” তিনি বললেন,

يهدمه زلة العالم وجدال المنافق بالكتاب وحكم الأئمة المضلين

‘ইসলামকে ধ্বংস করবে আলেমের পদস্থলন, কুরআন নিয়ে মুনাফিকের বিতর্ক এবং ভ্ৰষ্টকারী শাসকদের রাষ্ট্রশাসন।' (দারেমী ২১৪নং)

সলফে সালেহীন দ্বীনের দাঈ ছিলেন, তাদের অনুসারীদেরও উচিত দাঈ হওয়া এবং তার জন্য ইলম ও আমল-ওয়ালা হওয়া। ইলম ও আমল-ওয়ালাই প্রকৃতপক্ষে যোগ্য দাঈ। যেহেতুঃ

১। প্রত্যেক নবী দ্বীনের দাঈ ছিলেন। আর উলামাগণ নবীর ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে, পয়গম্বরগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি; বরং তাঁরা ইলমের (দ্বীনী জ্ঞানভান্ডারের) উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন। সুতরাং তারাই হবেন সুযোগ্য দাঈ। যারা হবেন মানুষের আদর্শ, যাদের দাওয়াতে থাকবে হিকমত ও সুকৌশল।

২। উলামাগণ পৃথিবীর বুকে সৃষ্টির বিপক্ষে আল্লাহর হুজ্জত। আর ইম ও ফিকহ ছাড়া হুজ্জত কায়েম হয় না। সুতরাং আহলে ইলমরাই হলেন প্রকত দাঈ।

৩। উলামাগণই রাজনৈতিক প্রভাবশালী লোক। যাদের আনুগত্য করতে মহান আল্লাহ নির্দেশ দান করেছেন। তিনি বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসুল ও তোমাদের নেতৃবর্গ (ও উলামা)দের অনুগত হও।” (নিসাঃ ৫৯)।

মুজাহিদ বলেছেন, তোমাদের আহলে ইলম ও ফিকহ ব্যক্তিবর্গের অনুগত হও। উলুল আমরের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস বলেছেন, 'আহলুল ইলম। আবুল আলিয়াহ বলেছেন, 'আহলুল ইলম। সুতরাং স্পষ্ট যে, তারাই হবেন দ্বীনের দাঈ। ৪। উলামাগণই উম্মাহর বৃহত্তম স্বার্থ, সার্বিক কল্যাণ, দ্বীন ও দুনিয়া ও তার নিরাপত্তার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য মানুষ। তাই তারাই হতে পারেন দাওয়াতের জন্য নির্ভরযোগ্য।

৫। উলামাগণই রাষ্ট্রের পরামর্শদাতা ও মন্ত্রণাদাতা। দেশের রাজাপ্রজা সবাই দ্বীন ও দুনিয়ার সমস্যায় তাঁদের দিকেই রুজু করে থাকে এবং উম্মাহর ভালো-মন্দের ব্যাপারে পরামর্শ গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং তারাই হবেন দাওয়াতের ক্ষেত্রেও পরামর্শদাতা।

৬। উলামাগণ হলেন দ্বীনের ইমাম। আর এ ইমামতির আছে সুউচ্চ মর্যাদা ও বিশাল মাহাত্ম্য। দ্বীনের একটি অঙ্গ হল দাওয়াত। দাওয়াত ছাড়া দ্বীন হয় না, দ্বীন ছাড়া দাওয়াতও হয় না। বিধায় তারাই হবেন। দাওয়াতের ইমাম। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا ۖ وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ

“ওরা যেহেতু ধৈর্যশীল ছিল, তার জন্য আমি ওদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত। ওরা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী।” (সাজদাহঃ ২৪)।

৭। উলামাগণ হলেন আহল্য যিকর। আর যিকর হয় ইলম ও দাওয়াতের মাধ্যমে। সুতরাং তারাই আহলুদ দাওয়াহ। মহান আল্লাহ বলেছেন,

فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

“তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।” (আম্বিয়াঃ ৭)।

৮। উলামাগণ হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। জনসাধারণের মাঝে আলেম হলেন তারকারাজির মাঝে পূর্ণিমার চাদের মতো। মহান আল্লাহ তাদের মর্যাদা সুউচ্চ করেছেন।

يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ

“তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন।” (মুজাদালাহঃ ১১)।

আর মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষই দাঈ হওয়ার যোগ্য।

৯। উলামাগণই বেশি দ্বীনদার মানুষ এবং সবার চাইতে বেশি আল্লাহকে ভয় করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ

“আল্লাহর দাসদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, বড় ক্ষমাশীল।” (ফাত্বিরঃ ২৮)

আর তা হলে তারাই দাঈ হওয়ার বেশি হকদার। তাঁরাই দাওয়াতে অগ্রগামী হবেন এটাই স্বাভাবিক।

১০। উলামাগণই ইলম ও হিকমতের সাথে সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দান করে থাকেন। সুতরাং উলামাগণই হবেন দ্বীনের দাঈ।

১১। উলামাগণ আল্লাহর সাক্ষী, তিনি তাঁর তওহীদের উপর তাদেরকে সাক্ষী মেনেছেন এবং নিজের ও ফিরিবর্গের সাক্ষ্যের সাথে তাদের সাক্ষ্যকে আয়াতে সংযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন,

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

“আল্লাহ সাক্ষ্য দেন এবং ফিরিস্তাগণ ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণও সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই। তিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (আলে ইমরান : ১৮)।

আর এতে নিশ্চয় তাদেরকে প্রশংসিত ও বিশ্বস্ত মানা হয়েছে। বিধায় তারাই দাওয়াতের জন্যও নির্বাচিত ও মনোনীত হবেন, এটাই স্বাভাবিক।

অবশ্যই সকল উলামা সমান নন। সকলের গুণাবলী এক নয়। সে ক্ষেত্রে যার ইলম ও আমল বেশি, তিনিই দাওয়াতের জন্য উপযুক্ত বেশি। {দ্রঃ আল-উলামা হুনুদ দুজতু শায়খ নাসের আকুল কারীম আল-আকূল।

আল্লাহর ইচ্ছায় এমন উলামা যুগে যুগে থাকবেন। গণনায় কম হলেও কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। তারা তাদের ইলম ও দাওয়াতের জিহাদ নিয়ে বিজয়ী থাকবেন।

لا تزال طائفة من أمتي ظاهرين على الحق لا يضرهم من خدلهم حتى يأتي أمر الله وهم كذلك

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল হক (সত্যের) উপর বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর আদেশ (কিয়ামতের পূর্বমুহূর্ত) আসা পর্যন্ত, যারা তাদেরকে পরিত্যাগ করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।” (মুসলিম ৫০৫৯নং)

অন্য এক শব্দে বর্ণিত হয়েছে,

لا تزال طائفة من أمتي قوامة على أمر الله لا يضرها من خالفها

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল আল্লাহর নির্দেশ (শরীয়ত)এর উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। যে তাদের বিরোধিতা করবে, সে তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।” (ইবনে মাজাহ ৭নং)

অন্য এক শব্দে বর্ণিত হয়েছে,

لا يزال طائفة من أمتي ظاهرين حتى يأتيهم أمر الله وهم ظاهرون

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর আদেশ (কিয়ামতের পূর্বমুহূর্ত) আসা পর্যন্ত, সে অবস্থায় তারা বিজয়ী থাকবে।” (বুখারী ৭৩১১, মুসলিম ১৯২ ১নং, আহমাদ ৪/২৪৪) অন্য এক শব্দে বর্ণিত হয়েছে,

لا تزال طائفة من أمتي يقاتلون على الحق ظاهرين إلى يوم القيامة

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থেকে হক (সত্যের) উপর লড়াই করবে।” (মুসলিম ৫০৫৯নং)

ইমাম বুখারী উক্ত দলটির ব্যাপারে বলেছেন, তারা হলেন আহলে ইলম (উলামা)।' (বুখারী ৭৩১১নং)। তিরমিযী বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারীর কাছে শুনেছি, তিনি আলী বিন মাদীনীর কাছে শুনেছেন, তারা হলেন আসহাবুল হাদীস। (উমদাতুল ক্বারী ৩৫/৪২৮)

হাকেম ‘উলুমুল হাদীস গ্রন্থে সহীহ সনদে আহমাদ হতে উদ্ধৃত করেছেন, তিনি বলেছেন, তারা যদি আহলুল হাদীস না হন, তাহলে আমি জানি না যে, তারা কারা।' (ফাতহুল বারী ২০/৩৬৮)।

“তারা বিজয়ী থাকবে” অর্থাৎ, সকল মানুষের উপর তারা নিজেদের দলীল-প্রমাণ নিয়ে বিজয়ী থাকবে এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও বিজয়ী থাকবে। কলম ও তরবারি উভয় যুদ্ধে তাদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। তাদের বিরোধীরা তাদের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হবে না। তারা উলামা ও মুজাহিদ রূপে বিরোধীদের উপর সদা বিজয়ী থাকবে।

সালাফী উলামাগণ সদা-সর্বদা সতর্ক করেন, বিনা ইলমে দাওয়াত দিয়ো না। বিনা ইমে ফতোয়া দিয়ো না। আঙ্গুর হয়ে পাকার আগে কাঁচা থাকা অবস্থায় কিশমিশ হয়ো না। অল্প কিছু পড়াশোনা করে জায়েয-না জায়েয ও হারাম-হালাল বলায়, হাদীসকে সহীহ-যয়ীফ নির্ধারণ করায় দুঃসাহসিকতার সাথে নিজেকে লোকমাঝে প্রকাশ করায় গ্রহণযোগ্যতা নেই, উম্মাহর কোন কল্যাণ নেই, বরং ফিতনা আছে, বিভ্রান্তি আছে। সলফদের অন্যতম বড় আলেম তাবেঈ আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'আমি এই মসজিদে নববীতে) ৭০ জন সাহাবাকে পেয়েছি, তাদের কাউকে কোন মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হলে অথবা কোন ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কামনা করতেন। যে, তা উপস্থিত অন্য কোন আলেম সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করা হোক।

এর কারণ হল, তারা ভয় করতেন যে, তারা ভুলে পতিত হবেন, আর তার ফলে অন্যকে ভুলে পতিত করবেন। তাই তাঁদের প্রত্যেকেই এই দায়িত্ব অন্যের দিকে ফিরিয়ে দিতেন। কিন্তু বর্তমানের অবস্থা তার বিপরীত। (আল্লামা আলবানীর দর্স হতে, মাকতাবা শামেলা) এখন তো যোগ্যতা না থাকলেও নতুন কোন ফতোয়া দিতে পারলেই এবং কোন বড় আলেমের ভুল ধরতে পারলেই কিস্তিমাত! যা সালাফী মানহাজের বিপরীত। অবশ্য সঠিকভাবে উলামাদের ফতোয়া নকল। করাতে কোন দোষ নেই।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, যারা সরাসরি কুরআন ও হাদীস পড়ে মাসআলা গ্রহণ করেন, তারা ভুল করতে পারেন। যেহেতু অনেক সময় কেবল একটি আয়াত বা একটি হাদীস পড়েই বিধান গ্রহণ করলে বিপদ হতে পারে। যেমন কেবল কুরআনের অনুবাদ পড়ে এবং তার তফসীর না পড়ে বিধান নিলে সমস্যা হতে পারে।

প্রত্যেক মুসলিমই চায় মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহর উপর আমল করতে। কিন্তু আমলের সময় চোখ বন্ধ করে আমল বাঞ্ছনীয় নয়। হাদীসে আছে বা আল্লাহর নবী বলেছেন পড়ে বা শুনেই আমল করতে লেগে যাওয়া মুসলিমের উচিত নয়। যেমন উচিত নয়, কোন হাদীস শুনে তা অবিশ্বাস করা, তা দলীল স্বরূপ পেশ করা, প্রচার বা শেয়ার করা, নিজ গ্রন্থ বা বক্তৃতায় স্থান দেওয়া। বলা বাহুল্য কোন হাদীসের উপর আমল করার সময় উচিত হলঃ

১। এই দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, হাদীস হল দুটি অহীর অন্যতম।

২। হাদীসের বক্তব্যকে নির্ভুল ও নিষ্কলুষ বলে নিঃসন্দেহে মেনে নেওয়া। যেহেতু হাদীস যার তিনি হলেন নির্ভুল ও নিষ্পাপ মানুষ।

৩। সেটা সত্যপক্ষে তার হাদীস কি না, তা অনুসন্ধান করা ওয়াজেব। তা সহীহ কি না, তা জানা জরুরী।

৪। সহীহ প্রমাণিত হলে তা সর্বান্তঃকরণে মেনে নেওয়া ওয়াজেব; যদিও তা নিজ জ্ঞান ও বিবেক বহির্ভূত মনে হয় এবং তার পিছনে যুক্তি ও হিকমত না বুঝা যায়।

৫। যয়ীফ (দুর্বল), বা মওযু’ (জাল) প্রমাণিত হলে তা বর্জন করা।

৬। হাদীসের সঠিক অর্থ বুঝা। আপাতদৃষ্টিতে দুটি হাদীস পরস্পরবিরোধী মনে হলে তা সমন্বয় ও সামঞ্জস্য সাধনের চেষ্টা করা।

৭। হাদীসের নাসেখ-মনসূখ (রহিত-অরহিত) নির্দেশ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা।

৮। হাদীসের বক্তব্য রাসুলল্লাহ -এর জন্য খাস কি না, তা জানা।

উক্ত সকল নির্দেশ পালন না করলে হাদীসের উপর আমল ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। পক্ষান্তরে প্রামাণ্য হাদীসের সঠিক বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাস ও আমল না করলেও পরিণাম অবশ্যই মন্দ হবে। হাদীসের গ্রন্থগুলিতে এ সব কথার উল্লেখ থাকে। উল্লেখ না থাকলে সত্যানুসন্ধানী মুহাদ্দিস আলেমের নিকট সে হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে আমল করতে হবে। আর এ কাজ সচেতন মুসলিমের জন্য মোটেই কঠিন নয়।