অসিলা ধরার শির্ক বলতে যে কোন উদ্দেশ্য হাসিল অথবা যে কোন প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরাসরি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আবেদন না করে শরীয়ত অসম্মত কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করাকে বুঝানো হয়।
অসিলার প্রকারভেদ:
শরীয়তের দৃষ্টিতে অসিলা দু’ প্রকার। যা নিম্নরূপ:
শরীয়ত সম্মত অসিলাঃ
শরীয়ত সম্মত অসিলা বলতে সে সকল বস্ত্তকে বুঝানো হয় যে গুলোকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা কোর’আন ও হাদীস কর্তৃক প্রমাণিত। যে গুলো নিম্নরূপ:
ক. আল্লাহ্ তা’আলার সকল নাম অথবা যে কোন বিশেষ নামের অসিলা ধরা:
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
» وَلِلهِ الْأَسْمَآءُ الْـحُسْنَى فَادْعُوْهُ بِهَا، وَذَرُوْا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِيْ أَسْمَآئِهِ، سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ »
‘‘আল্লাহ্ তা’আলার অনেকগুলো সুন্দর নাম রয়েছে যেগুলোকে মাধ্যম বানিয়ে তোমরা তাঁর নিকট দো’আ করতে পারো। তোমরা ওদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে যারা আল্লাহ্ তা’আলার নামকে বিকৃত করে। অতিসত্বর তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের শাস্তি দেয়া হবে’’। (আ’রাফ : ১৮০)
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস’ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) এভাবে দো’আ করেন:
اللَّهُمَّ إِنِّيْ عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِيْ بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِيْ كِتَابِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِيْ عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ الْعَظِيْمَ رَبِيْعَ قَلْبِيْ وَنُوْرَ صَدْرِيْ وَجَلاَءَ حُزْنِيْ وَذَهَابَ هَمِّيْ
‘‘হে আল্লাহ্! নিশ্চয়ই আমি আপনার বান্দাহ্ এবং আপনার বান্দাহ্ ও বান্দির সন্তান। আমার ভাগ্য আপনার হাতে। আমার ব্যাপারে আপনার আদেশ অবশ্যই কার্যকর এবং আপনার ফায়সালা আমার ব্যাপারে নিশ্চয়ই ইনসাফপূর্ণ। আপনার সকল নামের অসিলায় যা আপনি নিজের জন্য চয়ন করেছেন অথবা যা আপনি নিজ মাখলূকের কাউকে শিক্ষা দিয়েছেন অথবা যা আপনি নিজ কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন অথবা যা আপনি আপনার গায়েবী ইল্মে সংরক্ষণ করেছেন আপনার এ সকল নামের অসিলায় আমি আপনার নিকট এ আবেদন করছি যে, আপনি কোর’আন মাজীদকে আমার অন্তরের সজীবতা, আমার বুকের নূর এবং আমার সকল চিন্তা ও ভাবনা দূরীকরণের সহায়ক বানাবেন’’। (আহমাদ : ১/৩৯১)
আল্লাহ্ তা’আলার বিশেষ কোন নামের অসিলা ধরার মানে, আপনি যে জাতীয় আবেদন আল্লাহ্ তা’আলার নিকট করতে চান সে জাতীয় আল্লাহ্ তা’আলার কোন একটি গুণবাচক নামের অসিলা ধরবেন। যেমন: আপনার কোন অনুগ্রহের প্রয়োজন হলে আপনি বলবেন:
يَا رَحِيْمُ ارْحَمْنِيْ
‘‘হে দয়ালু! আপনি আমার উপর দয়া করুন’’।
আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) আমাকে নামাযের মধ্যে এ দো’আটি পড়ার আদেশ করেন:
اللَّهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِيْ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর প্রচুর যুলুম করেছি। আপনি ছাড়া আমার গুনাহ্ মাফ করার আর কেউ নেই। সুতরাং আপনি নিজ দয়ায় আমার সকল গুনাহ্ মাফ করে দিন এবং আপনি আমার উপর দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু’’।
(বুখারী, হাদীস ৮৩৪, ৬৩২৬, ৭৩৮৮ মুসলিম, হাদীস ২৭০৫)
উক্ত দো’আর শেষাংশে আল্লাহ্ তা’আলার দু’টি গুণবাচক নাম তথা ‘‘গাফূর’’ ও ‘‘রাহীম’’ এর অসিলা ধরা হয়েছে।
খ. আল্লাহ্ তা’আলার যে কোন গুণের অসিলা ধরা:
সকল গুণের অসিলা ধরা। যেমন:
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِصِفَاتِكَ الْعُلَى أَنْ تَغْفِرَ لِيْ ذُنُوْبِيْ
‘‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার সকল গুণের অসিলা ধরে এ প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমার সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন’’।
কোন বিশেষ গুণের অসিলা ধরা। যেমন:
’উসমান বিন্ আবুল্ ’আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল (সা.) কে পুরাতন একটি ব্যথার কথা জানালে রাসূল (সা.) তাঁকে ব্যথার জায়গায় হাত রেখে সাত বার নিম্নোক্ত দো’আ পড়তে বলেন:
أَعُوْذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
‘‘আমি আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর কুদরতের অসিলায় প্রাপ্ত ও আশঙ্কিত সকল ব্যথা হতে তাঁর আশ্রয় কামনা করছি’’। (মুসলিম, হাদীস ২২০২)
উক্ত দো’আয় আল্লাহ্ তা’আলার নাম ও তাঁর বিশেষ গুণ ‘‘কুদরত’’ এর অসিলা ধরা হয়েছে।
গ. আল্লাহ্ তা’আলার যে কোন কাজের অসিলা ধরা:
কা’ব বিন্ ’উজ্রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা রাসূল (সা.) কে তাঁর উপর দুরূদ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাদেরকে এভাবে দুরূদ পড়া শিক্ষা দেন:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
‘‘হে আল্লাহ্! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর যেমনিভাবে আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর’’। (বুখারী, হাদীস ৩৩৭০ মুসলিম, হাদীস ৪০৬)
উক্ত দুরূদে ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণের অসিলা ধরা হয়েছে।
ঘ. আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূলের উপর ঈমানের অসিলা ধরা:
যেমন বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِإِيْمَانِيْ بِكَ وَبِرَسُوْلِكَ أَنْ تَغْفِرَ لِيْ
‘‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার ও আপনার রাসূলের উপর ঈমানের অসিলায় আপনার নিকট এ প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন’’।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
» إِنَّهُ كَانَ فَرِيْقٌ مِنْ عِبَادِيْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ »
‘‘আমার বান্দাহ্দের এক দল এমন ছিলো যে, তারা বলতো: হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি তো দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ’’। (মু’মিনূন : ১০৯)
উক্ত আয়াতে ঈমানের অসিলা ধরা হয়েছে।
ঙ. নিজের দীনতা, অক্ষমতা ও প্রয়োজন উল্লেখ করে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট দো’আ করা:
যেমন বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ أَنْ تُطْعِمَنِيْ وَأَنَا الْفَقِيْرُ إِلَيْكَ
‘‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট খাদ্য কামনা করছি। আমি আপনার মুখাপেক্ষী’’।
আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ.) সম্পর্কে বলেন:
» فَقَالَ رَبِّ إِنِّيْ لِـمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ »
‘‘অতঃপর মূসা (আ.) বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন আমি উহার কাঙ্গাল’’। (ক্বাসাস্ : ২৪)
আল্লাহ্ তা’আলা যাকারিয়া (আ.) সম্পর্কে বলেন:
» قَالَ رَبِّ إِنِّيْ وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّيْ وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا، وَلَمْ أَكُنْ بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا »
‘‘তিনি বললেন: হে আমার প্রভু! আমার অস্থি শীর্ণ প্রায় এবং আমার মাথা বার্ধক্যের দরুন শুভ্রোজ্জ্বল। হে আমার প্রভু! এরপরও আমার আস্থা এতটুকু যে, আপনার নিকট দো’আ করে কখনো আমি ব্যর্থ হইনি’’। (মারইয়াম : ৪)
চ. জীবিত কোন নেক বান্দাহ্’র দো’আর অসিলা ধরা:
যেমন: রাসূল (সা.) এর জীবদ্দশায় সাহাবারা যে কোন সমস্যায় তাঁর দো’আ কামনা করতেন।
আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ يَوْمَ جُمُعَةٍ، فَقَامَ النَّاسُ فَصَاحُوْا، فَقَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَحَطَ الْمَطَرُ، وَاحْمَرَّتِ الشَّجَرُ، وَهَلَكَتِ الْبَهَائِمُ، فَادْعُ اللهَ يَسْقِنَا، فَقَالَ: اللَّهُمَّ اسْقِنَا، مَرَّتَيْنِ، وَايْمُ اللهِ! مَا نَرَى فِيْ السَّمَاءِ قَزَعَةً مِنْ سَحَابٍ، فَنَشَأَتْ سَحَابَةٌ وَأَمْطَرَتْ، وَنَـزَلَ عَنِ الْـمِنْبَرِ فَصَلَّى، فَلَمَّا انْصَرَفَ لَمْ تَزَلْ تُمْطِرُ إِلَى الْـجُمُعَةِ الَّتِيْ تَلِيْهَا، فَلَمَّا قَامَ النَّبِيُّ يَخْطُبُ صَاحُـوْا إِلَيْهِ: تَهَدَّمَتِ الْبُيُوْتُ، وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللهَ يَحْبِسْهَا عَنَّا، فَتَبَسَّمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ حَـوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، فَكَشَطَتِ الْـمَدِيْنَةُ، فَجَعَلَتْ تَمْطُرُ حَوْلَهَا، وَلاَ تَمْطُرُ بِالْـمَدِيْنَةِ قَطْرَةٌ، فَنَظَرْتُ إِلَى الْـمَدِيْنَةِ وَإِنَّهَا لَفِيْ مِثْلِ الْإِكْلِيْلِ
‘‘আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) জুমার দিন জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন এমতাবস্থায় লোকেরা চিৎকার করে দাঁড়িয়ে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! বহু দিন থেকে বৃষ্টি বন্ধ, গাছগুলো লালচে হয়ে গেছে এবং পশুগুলো মরে যাচ্ছে। সুতরাং আপনি আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে দো’আ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি দেন। তখন রাসূল (সা.) দু’ বার এ দো’আ করলেন: হে আল্লাহ্! আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দিন। বর্ণনাকারী বলেন: আল্লাহ্’র কসম! ইতিপূর্বে আমরা আকাশে সামান্যটুকু মেঘও দেখতে পাইনি। কিন্তু রাসূল (সা.) এর দো’আর সাথে সাথে হঠাৎ কোথা হতে এক টুকরো মেঘ এসে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষালো। অতঃপর রাসূল (সা.) মিম্বার থেকে নেমে নামায আদায় করলেন। নামায শেষ হওয়ার পর হতে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত বিরতিহীন বৃষ্টি হলো। এ জুমা বারেও যখন নবী (সা.) খুতবা দিতে দাঁড়ালেন তখন লোকেরা চিৎকার দিয়ে বললোঃ ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে গেলো, পথ-ঘাট ডুবে গেলো। অতএব আপনি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট দো’আ করুন, যেন তিনি বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। নবী (সা.) মুচকি হেসে বললেন: হে আল্লাহ্! আমাদের আশপাশে বর্ষণ করুন। আমাদের উপর নয়। বর্ণনাকারী বলেন: মদীনা হতে মেঘ একদম কেটে গেলো এবং উহার আশপাশে বর্ষাতে লাগলো। মদীনাতে আর একটি বৃষ্টির ফোঁটাও পড়েনি। এমনকি মদীনাকে দেখে মনে হলো, তাজ পরা এক ফরসা নগরী’’। (বুখারী, হাদীস ১০২১ মুসলিম, হাদীস ৮৯৭)
অনুরূপভাবে নবী (সা.) যখন সাহাবাদেরকে এ বলে হাদীস শুনালেন যে, আমার উম্মতের সত্তর হাজার মানুষ বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে তখন ’উক্কাশা বিন্ মিহ্’সান (রা.) রাসূল (সা.) কে দাঁড়িয়ে বললেন:
اُدْعُ اللهَ أَنْ يَّجْعَلَنِيْ مِنْهُمْ، فَقَالَ: أَنْتَ مِنْهُمْ
‘‘হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি আল্লাহ্’র দরবারে দো’আ করুন, আমি যেন তাদের একজন হই। রাসূল (সা.) বললেন: তুমি তাদেরই একজন’’। (বুখারী, হাদীস ৫৭৫২ মুসলিম, হাদীস ২২০)
তবে এ কথা ভালোভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, শরীয়তে কোন মৃত ব্যক্তির দো’আর অসিলা ধরা জায়েয নেই। কারণ, সে মৃত। সে আপনার জন্য কিছুই করতে পারবে না। এ কারণেই ’উমর বিন্ খাত্তাব (রা.) এর খিলাফতকালে অনাবৃষ্টি দেখা দিলে সাহাবারা রাসূল (সা.) এর কবরে গিয়ে তাঁর দো’আ কামনা না করে বরং তাঁর চাচা ’আব্বাস (রা.) এর দো’আ কামনা করেন।
আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِذَا قَحَطُوْا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِيْنَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا، فَيُسْقَوْنَ
‘‘মদীনায় কোন অনাবৃষ্টি দেখা দিলে ’উমর বিন্ খাত্তাব (রা.) রাসূল (সা.) এর চাচা ’আব্বাস (রা.) এর দো’আর অসিলা ধরে বৃষ্টির জন্য দো’আ করতেন। তিনি দো’আ করতে গিয়ে বলতেন: হে আল্লাহ্! আমরা আপনার নিকট আপনার নবীর দো’আর অসিলা ধরলে আপনি তখন আমাদেরকে বৃষ্টি দিতেন। এখন আপনার নিকট আপনার নবীর চাচার দো’আর অসিলা ধরছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দিন। অতঃপর তাদেরকে বৃষ্টি দেয়া হতো’’। (বুখারী, হাদীস ১০১০, ৩৭১০)
উক্ত হাদীস আল্লাহ্ তা’আলার নিকট কোন সম্মানজনক ব্যক্তির অস্তিত্বের অসিলা ধরা অথবা কোন মৃত মহান ব্যক্তির দো’আর অসিলা ধরা নাজায়িয হওয়া প্রমাণ করে। তা না হলে ’উমর বিন্ খাত্তাব (রা.) কর্তৃক রাসূল (সা.) এর চাচা ’আব্বাস (রা.) এর দো’আর অসিলা ধরে বৃষ্টির জন্য দো’আ করার কোন মানে হয় না। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ’আব্বাস (রা.) এর সম্মান কোনোভাবেই রাসূল (সা.) এর সম্মানের ঊর্ধ্বে নয়।
ছ. যে কোন নেক আমলের অসিলা ধরা:
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:
انْطَلَقَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، حَتَّى أَوَوْا الْمَبِيْتَ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوْهُ، فَانْحَدَرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الْـجَبَلِ، فَسَدَّتْ عَلَيْهِمْ الْغَارَ، فَقَالُوْا: إِنَّهُ لاَ يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلاَّ أَنْ تَدْعُوْا اللهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ: اللَّهُمَّ كَانَ لِيْ أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيْرَانِ، وَكُنْتُ لاَ أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلًا وَّلاَ مَالًا، فَنَأَى بِيْ فِيْ طَلَبِ شَيْءٍ يَوْمًا، فَلَمْ أُرِحْ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا، فَحَلَبْتُ لَـهُمَا غَبُوْقَهُمَا، فَوَجَدْتُهُمَا نَائِمَيْنِ، وَكَرِهْتُ أَنْ أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلًا أَوْ مَالًا، فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى يَدَيَّ أَنْتَظِرُ اسْتِيْقَاظَهُمَا حَتَّى بَرَقَ الْفَجْرُ، فَاسْتَيْقَظَا فَشَرِبَا غَبُوْقَهُمَا، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ، فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا لاَ يَسْتَطِيْعُوْنَ الْـخُرُوْجَ
وَقَالَ الْآخَرُ: اللَّهُمَّ كَانَتْ لِيْ بِنْتُ عَمٍّ كَانَتْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيَّ، فَأَرَدْتُهَا عَنْ نَفْسِهَا، فَامْتَنَعَتْ مِنِّيْ، حَتَّى أَلَـمَّتْ بِهَا سَنَةٌ مِنَ السِّنِيْنَ، فَجَاءَتْنِيْ فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِيْنَ وَمِئَةَ دِيْنَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ نَفْسِهَا، فَفَعَلَتْ، حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا قَالَتْ: لاَ أُحِلُّ لَكَ أَنْ تَفُضَّ الْـخَاتَمَ إِلاَّ بِحَقِّهِ، فَتَحَرَّجْتُ مِنَ الْوُقُوْعِ عَلَيْهَا، فَانْصَرَفْتُ عَنْهَا وَهِيَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ، وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِيْ أَعْطَيْتُهَا، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرِجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ، فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ غَيْرَ أَنَّهُمْ لاَ يَسْتَطِيْعُوْنَ الْـخُرُوْجَ مِنْهَا
وَقَالَ الثَّالِثُ: اللَّهُمَّ إِنِّيْ اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ فَأَعْطَيْتُهُمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ، تَرَكَ الَّذِيْ لَهُ وَذَهَبَ، فَثَمَّرْتُ أَجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنْهُ الْأَمْوَالُ، فَجَاءَنِيْ بَعْدَ حِيْنٍ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللهِ! أَدِّ إِلَيَّ أَجْرِيْ، فَقُلْتُ لَهُ: كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أَجْرِكَ، مِنَ الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ وَالْغَنَمِ وَالرَّقِيْقِ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللهِ! لاَ تَسْتَهْزِئْ بِيْ، فَقُلْتُ: إِنِّيْ لاَ أَسْتَهْزِئُ بِكَ، فَأَخَذَهُ كُلَّهُ، فَاسْتَاقَهُ فَلَمْ يَتْرُكْ مِنْهُ شَيْئًا، اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرِجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ، فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ، فَخَرَجُوْا يَمْشُوْنَ
‘‘পূর্ববর্তী উম্মতের তিন ব্যক্তি সফরে বের হলো। পথিমধ্যে তারা রাত্রি যাপনের জন্য এক গিরি গুহায় অবস্থান নিলো। হঠাৎ পাহাড়ের উপর থেকে এক প্রকান্ড পাথর গড়িয়ে এসে তাদের গিরি গুহার মুখ বন্ধ করে দিলো। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করলো যে, নিশ্চয়ই তোমরা নিজ নেক আমলের অসিলা ধরে দো’আ করলে আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদেরকে এ জগদ্দল পাথর হতে মুক্তি দিবেন। অতঃপর তাদের একজন বললো: হে আল্লাহ্! আমার বৃদ্ধ মাতা-পিতা ছিলো। আর আমি তাদেরকে সন্ধ্যার পানীয় পান না করিয়ে নিজ স্ত্রী পরিজনকে পান করাতাম না। একদা আমি কোন এক প্রয়োজনে বহু দূর চলে গেলাম। ফিরে এসে দেখলাম আমার মাতা-পিতা ঘুমিয়ে গেছে। অতঃপর আমি তাদের জন্য সন্ধ্যার পানীয় তথা দুধ দোহালাম। কিন্তু তারা ঘুমিয়ে রয়েছে বলে আমি তাদেরকে তা পান করাতে পারিনি। অন্য দিকে তাদেরকে তা পান না করিয়ে নিজ স্ত্রী পরিজনকে পান করানো আমার একেবারেই অপছন্দ। তাই আমি তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফজর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলাম। অতঃপর তারা ঘুম থেকে জেগে দুধ পান করলো। হে আল্লাহ্! আমি যদি তা একমাত্র আপনাকে পাওয়ার জন্য করে থাকি তাহলে আপনি আমাদের এ জগদ্দল পাথরটি সরিয়ে দিন। তখন পাথরটি একটু করে সরে গেলো। কিন্তু তারা এতটুকুতে গুহা থেকে বের হতে পারলো না।
অপর জন বললো: হে আল্লাহ্! আমার একটি চাচাতো বোন ছিলো যাকে আমি খুবই ভালোবাসতাম। অতঃপর আমি তার সাথে ব্যভিচার করতে চাইলে সে তা করতে অস্বীকার করে। তবে হঠাৎ সে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে আমার নিকট সাহায্য কামনা করলে আমি তাকে ১২০ দীনার দেই ব্যভিচার করার শর্তে। এতে সে রাজি হলো। অতএব আমি যখন শর্তানুযায়ী ব্যভিচারে উদ্যত হলাম তখন সে আমাকে বললো: আমি তোমাকে শরীয়ত সম্মত অধিকার ছাড়া আমার সতীত্ব নষ্ট করতে দেবো না। তখন আমি তার সঙ্গে ব্যভিচার করতে কুণ্ঠাবোধ করলাম। অতএব আমি তাকে এমতাবস্থায় ছেড়ে আসলাম। অথচ আমি তাকে খুবই ভালোবাসি। এমনকি আমি তার কাছ থেকে টাকাগুলোও ফেরত নিলাম না। হে আল্লাহ্! আমি যদি তা একমাত্র আপনাকে পাওয়ার জন্য করে থাকি তাহলে আপনি আমাদের এ জগদ্দল পাথরটি সরিয়ে দিন। তখন পাথরটি একটু করে সরে গেলো। কিন্তু তারা এতটুকুতে গুহা থেকে বের হতে পারলো না।
তৃতীয় জন বললো: হে আল্লাহ্! আমি কোন এক কাজের জন্য কয়েক জন দিন মজুর নিয়েছিলাম এবং তাদের সবাইকে দিন শেষে নির্ধারিত দিন মজুরি দিয়ে দিয়েছি। তবে তাদের একজন মজুরি না নিয়ে চলে গেলো। অতঃপর আমি তার মজুরিটুকু লাভজনক খাতে খাটালে সম্পদ প্রচুর বেড়ে যায়। কিছুদিন পর সে আমার নিকট এসে বললো: হে আল্লাহ্’র বান্দাহ্! আমার মজুরি দিয়ে দাও। আমি তাকে বললাম: তুমি উট, গরু, ছাগল, গোলাম যাই দেখতে পাচ্ছো সবই তোমার মজুরি। সে বললো: হে আল্লাহ্’র বান্দাহ্! তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করো না। আমি বললাম: আমি তোমার সাথে এতটুকুও উপহাস করছি না। অতঃপর সে সবগুলো পশু হাঁকিয়ে নিয়ে গেলো। একটি পশুও ছেড়ে যায়নি। হে আল্লাহ্! আমি যদি তা একমাত্র আপনাকে পাওয়ার জন্য করে থাকি তাহলে আপনি আমাদের এ জগদ্দল পাথরটি সরিয়ে দিন। তখন পাথরটি সম্পূর্ণরূপে সরে গেলো এবং তারা গুহা থেকে সুস্থভাবে বের হয়ে পথ চলতে শুরু করলো’’। (বুখারী, হাদীস ২২১৫, ২২৭২ মুসলিম, হাদীস ২৭৪৩)