আল্লাহ তা‘আলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র: কিছু আদর্শিক নীতিমালা ইসলামহাউজ.কম ৫২ টি
আল্লাহ তা‘আলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র: কিছু আদর্শিক নীতিমালা ইসলামহাউজ.কম ৫২ টি

সকল প্রশংসা পরম করুণাময় আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি, ক্ষমা চাই এবং তাঁর কাছে তাওবা করি। আমাদের নিজ নফসের অনিষ্টতা এবং আমাদের আমলের অযাচিত দিকগুলো থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ তা‘আলা যাকে হিদায়েত দান করেন তাকে পথচ্যুত করার কেউ নেই; আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হিদায়েত করার কেউ নেই। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

‘আল্লাহ তা‘আলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র: কিছু আদর্শিক নীতিমালা’ শীর্ষক গ্রন্থটিতে এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে যা পাঠকের বিশ্বাসে যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা, তার বিশ্বাসকে পৌঁছে দিতে পারে স্বচ্ছতার শীর্ষে। উদাহরণত, আমাদের অনেকেই এ বিশ্বাস পোষণ করে থাকি যে, আল্লাহ তা‘আলা সত্তাগতভাবে মানুষের সঙ্গে অবস্থান করছেন। এটি একটি অবান্তর ধারণা যা শুধরিয়ে নেওয়া প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে উক্ত বিষয়সহ আল্লাহ তা‘আলার নামসমগ্রের প্রতি বিশ্বাসের ধরন-ধারণ কী হবে তা বিশ্লেষণসহ আলোচনা করা হয়েছে।

প্রখ্যাত ইসলামী শরীয়তবিদ প্রয়াত শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল উসাইমীন রাহেমাহুল্লাহ কর্তৃক রচিত এই গ্রন্থটি আরবী থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তরিত করেন জনাব ফয়সল শফীক। তিনি ইংরেজি সংস্করণের নাম দিয়েছেন- ‘The Beautiful Names and Attributes of Allah: Important Principles to Remember’ আমেরিকায় যারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আকীদা-বিশ্বাস বিস্তারিতভাবে জানতে চান তাদের কাছে অনুবাদগ্রন্থটি অন্ত্যন্ত প্রিয়। বইটির বাংলা সংস্করণ তৈরি করা যায় কি-না সে ব্যাপারে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল উছাইমিন রাহেমাহুল্লাহ-এর লেখা মূল আরবি সংস্করণটি সংগ্রহ করে সরাসরি আরবি থেকে অনুবাদকর্ম সম্পন্ন করেন। বইটি তাত্ত্বিক আলোচনা-নির্ভর হওয়ায় এর বাংলা সংস্করণ তৈরি করা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক এজন্য বিশেষ ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

আবহাস এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মাওলানা আবদুল্লাহ শহীদ আবদুর রহমান বইটির পাণ্ডুলিপি পড়েছেন এবং আমাদের সার্বিক সহযোগিতায় আবহাস-এর পক্ষ থেকে বইটি প্রকাশ করার জন্য আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন বলে তাকে ও আবহাসের অন্যান্য পরিচালকবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবাইকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন এই অনুবাদকর্মটি কবুল করেন এবং আমাদের সকলের নাজাতের উসিলা বানান। আমিন।

মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন (এফ.সি.এ)

মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

রফিকুল হক রঞ্জু

টেক্সাস, হিউস্টন, আমেরিকা

৩০ আগস্ট ২০১৩

আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা একটি অনিবার্য বিষয়। আকীদা-বিশ্বাস অস্বচ্ছ বা অযথার্থ হলে আমল ও আচার-অনুষ্ঠানগত একনিষ্ঠতা, ত্যাগ ও কুরবানী গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে, এ বিষয়টি আমাদের সকলেরই জানা। তবু দেখা যায় যে, আমাদের মধ্যে অনেকেই আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রটিকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। বরং প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকেই তারা আকীদা-বিশ্বাস হিসেবে ধারণ করে চলেন। পক্ষান্তরে আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিটি উপায়-উপকরণের ক্ষেত্রেই আমাদের হতে হবে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল, সমধিক গুরুত্বারোপকারী ও ঐকান্তিক। বিশেষ করে আল্লাহ তা‘আলার উলুহিয়াত, (ইবাদত) রুবুবিয়াত (প্রভুত্ব), আসমা ও সিফাত (নাম ও গুণাবলী) সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরী। কেননা তাওহিদ বলতে আমরা যা বুঝি, তা এ বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। অতএব এ ক্ষেত্রে কোনো বিচ্যুতির অর্থ মূল বিশ্বাসের জায়গাটি ত্রুটিপূর্ণ থাকা, যা কোনোভাবেই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আল্লাহ তা‘আলার আসমা ও সিফাত তথা নাম ও গুণসমগ্রের ব্যাপারে আমাদের কী ধরনের বিশ্বাস পোষণ করতে হবে সে ব্যাপারে গবেষণাধর্মী কোনো বই বাংলা ভাষায় এখনো আমার নজরে পড়েনি। অতএব ঈমানী তাগিদ থেকেই আমি অনুভব করি যে, প্রখ্যাত শরীয়তবিদ শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল উছাইমীন র. রচিত ‘আল কাওয়িদুল মুছলা ফী সিফাতিল্লাহি তা‘আলা ওয়া আসমাইহিল হুসনা’ গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় অনূদিত হওয়া উচিত। আর তাই বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করার প্রস্তাব আমি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গেই গ্রহণ করি।

হানাফী মাযহাবের মূল বিশ্বাসের সঙ্গে বইটিতে উল্লিখিত বক্তব্যমালার কোনো সংঘর্ষ নেই। যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মৌল আকীদা বলে স্বীকৃত।

মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন (এফ.সি.এ) এবং হিউস্টন প্রবাসী সর্বজনাব শহীদুল ইসলাম, রফিকুল হক রঞ্জু বক্ষ্যমাণ বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করায় অশেষ ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। আবহাস এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটির সম্মানিত পরিচালকবৃন্দ, বিশেষ করে মাওলানা আবদুল্লাহ শহীদ আবদুর রহমান, মাওলানা ইকবাল হোসাইন মাছুম, মাওলানা চৌধুরী আবুল কালাম আযাদ, মাওলানা আখতারুজ্জামান ও মাওলানা কামাল উদ্দিন মোল্লা বইটি আবহাসের পক্ষ থেকে প্রকাশের সম্মতি জ্ঞাপন করায় তাদের সকলের জন্য রইল আমার আন্তরিক দো‘আ। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমিন।

মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

সভাপতি ও মহাপরিচালক

আবহাস এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটি

ইদ্রিস টাওয়ার, টংগী কলেজ গেট, টংগী, গাজীপুর।

৩০ আগস্ট ২০১৩

শায়খ আল্লামা আবদুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায র. এর ভূমিকা

الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، وعلى آله وأصحابه ومن اهتدى بهداه. أما بعد،

‘আল্লাহ তা‘আলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র: কিছু আদর্শিক নীতিমালা’ শিরোনামে আমাদের সম্মানিত ভাই আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল উসাইমীন রচিত মূল্যবান গ্রন্থটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি শুনেছি। এ এক অতি মূল্যবান গ্রন্থ। এতে আছে আল্লাহ তা‘আলার নাম ও গুণসমূহের ব্যাপারে সালাফদের আকীদার বর্ণনা, আল্লাহ তা‘আলার নাম ও সিফাত বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নীতিমালা এবং খুব উপকারী কিছু আলোচনা। আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর মাখলুকের ‘সঙ্গে থাকা’র অর্থ কি লেখক তা ব্যাখ্যা করেছেন, হোক তা সুনির্দিষ্টভাবে সঙ্গে থাকার বিষয় উল্লিখিত হওয়ার ক্ষেত্রে অথবা অনির্দিষ্টভাবে সঙ্গে থাকার বিষয় উল্লিখিত হওয়ার ক্ষেত্রে। তিনি বলেছেন যে এ ‘সঙ্গে থাকা’র যে প্রকৃত অর্থ রয়েছে সে অনুযায়ী তা হক ও সত্য। আর এ ‘সঙ্গে থাকা’ মাখলুকের সাথে মিশ্রিত হয়ে থাকা বা মিশে থাকাকে দাবি করে না। পবিত্র মহান আল্লাহ তা‘আলা বরং আরশের ওপরে- যেভাবে তিনি নিজ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন এবং যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহুর জন্য উপযোগী ঠিক সেভাবে- আছেন বরং এ ‘সঙ্গে থাকা’র অর্থ হলো, বান্দা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার সম্যক জ্ঞান ও অবগতি এবং সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণ। তাদের কথাবার্তা ও নাড়াচাড়া শোনা। তাদের অন্তর্গত ও বহির্গত অবস্থা দেখা। তাঁর রাসূলগণ ও মুমিনদের হিফাজত করা ও সুরক্ষা দেওয়া। তাদের সাহায্য করা ও তাওফিক দেওয়া ইত্যাদি।

এ গ্রন্থে আরো আছে বাতিলপন্থীদের আকীদা বিশ্বাসের খণ্ডন ও প্রতিবাদী বিশ্লেষণ। আল্লাহ তাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন, তার ছাওয়াব বাড়িয়ে দিন, আমাদেরকে ও তাকে আরো অধিক জ্ঞান, হিদায়েত ও তাওফিক দান করুন। পাঠকসহ সকল মুসলিমকে এ গ্রন্থ থেকে উপকার লাভের তাওফিক দান করুন। নিশ্চয় তিনি দো‘আ কবুলের মালিক এবং প্রার্থনা মঞ্জুর করে নেয়ার ব্যাপারে অতি ক্ষমতাবান।

অনুলিপি করিয়েছেন আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী আবদুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায- আল্লাহ তাকে মাগফিরাত দানে ভূষিত করুন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।

আবদুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায

মহাপরিচালক

ইলমী গবেষণা, ইফতা, দাওয়াত ও ইরশাদ বিষয়ক অফিসমূহ

৫/১১/১৪০৪ হি.

সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি। তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। তাঁর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি। আমাদের নিজ নাফসের খারাবি এবং কর্মসমূহের মধ্যে যা অসাধু তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। যাকে আল্লাহ হিদায়েত দান করেন তাকে গোমরাহকারী কেউ নেই, আর যাকে তিনি গোমরাহ করেন তাকে হিদায়েতকারী কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনি একক। তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি, তাঁর সাহাবীগণের প্রতি এবং যারা সততার সাথে তাঁদের অনুসরণ করেছেন তাদের প্রতি সালাত বর্ষণ করুন এবং উত্তম শান্তিতে ভূষিত করুন।

এরপর কথা হলো, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি ঈমান আনা ঈমানের স্তম্ভসমূহের মধ্যে একটি। আর সে রুকনগুলো হচ্ছে, মহান আল্লাহর অস্তিত্বের ঈমান[1], তাঁর রুবুবিয়াত তথা প্রভুত্বের উপর ঈমান। তাঁর উলুহিয়াত তথা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে হবে সেটার উপর ঈমান এবং আসমা ওয়াস্ সিফাত তথা আল্লাহর যাবতীয় নাম ও গুণাবলীর উপর যথার্থ ঈমান।

নাম ও গুণের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাকে অদ্বিতীয় মানা তাওহীদের তিন প্রকারের মধ্যে একটি। আর তা হচ্ছে, তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ (প্রভুত্বে একত্ব) তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ (ইবাদতের ক্ষেত্রে একত্ব) তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত (নাম ও গুণের ক্ষেত্রে একত্ব)।

[দ্বীনে ইসলামে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর জ্ঞান অর্জনের মর্যাদা]

দ্বীন ইসলামে তাওহীদে আসমা ওয়াস্ সিফাত তথা নাম ও গুণসমগ্রের ক্ষেত্রে তাওহীদের মর্যাদা অত্যন্ত উঁচু। এর গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে তা কোনো ব্যক্তিকেই পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার সুযোগ দেয় না, পক্ষান্তরে এর জ্ঞান থাকলে সে আল্লাহ তা‘আলাকে সুস্পষ্ট জ্ঞানসহ ইবাদত করতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমেই ডাক।” (সূরা আল আরাফ: ১৮০)

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাকে তাঁর নামের মাধ্যমে ডাকার যে কথাটি রয়েছে, এই ডাকা দুই প্রকার। একটি হলো আল্লাহ তা‘আলার কাছে কোনো কিছু চাওয়ার জন্য ডাকা, অপরটি হলো এই নামগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার উদ্দেশে ডাকা।

চাওয়ার জন্য ডাকা

চাওয়ার জন্য ডাকার অর্থ হলো, আপনি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাওয়ার পূর্বে এমন নাম চয়ন করবেন যা আপনার প্রার্থিত বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। যেমন আপনি বলবেন, ‘হে ক্ষমাশীল আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, হে দয়াময় আপনি আমার প্রতি দয়া করুন, হে হিফাজতকারী আপনি আমাকে হিফাজত করুন, ইত্যাদি।

ইবাদতের উদ্দেশ্যে ডাকা

ইবাদতের উদ্দেশ্যে ডাকার অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহের যে দাবি রয়েছে সে দাবি অনুযায়ী আপনি আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবেন। অতএব আপনি তাওবা করবেন, কারণ আল্লাহ তা‘আলা হলেন অতি তাওবা কবুলকারী। আপনি জিহ্বা ব্যবহার করে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করবেন, কেননা তিনি সর্বশ্রোতা। আপনি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবেন; কারণ তিনি সর্বদ্রষ্টা। আপনি গোপনেও আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবেন; কারণ তিনি হলেন আল্-লাতীফ আল খাবীর অর্থাৎ অতিসূক্ষ্ণদর্শী ও সকল বিষয়ে সম্যক অবহিত।

[এ গ্রন্থ রচনার মূল কারণ]

নাম ও গুণ বিষয়ক তাওহীদের এ মর্যাদার কারণে আর এ ব্যাপারে মানুষের, কখনো হক আবার কখনো অজ্ঞতা ও একঘেয়েমিবশত বাতিল, কথাবার্তার কারণে আমি এ ব্যাপারে কিছু নীতিমালা লিপিবদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করেছি। আল্লাহ তা‘আলার কাছে আমার প্রত্যাশা তিনি যেন আমার এ আমলকে একমাত্র তাঁর উদ্দেশেই ঐকান্তিকভাবে পেশ করার তাওফিক দান করেন। আমার এ কাজকে তাঁর সন্তুষ্টির অনুগামী বানান এবং তাঁর বান্দাদের জন্য উপকারী বানান। আমি এ গ্রন্থের নাম দিয়েছি:

القواعد المثلى في صفات الله تعالى وأسمائه الحسنى

(আল্লাহর গুণাবলি ও তাঁর নামসমূহের বিষয়ে চমৎকার নীতিমালা)লেখক

>
[1] আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়টির প্রমাণ অগণিত অসংখ্য। তবে সেটা প্রমাণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা কালাম শাস্ত্রবিদদের ব্যবহৃত নিয়মের সাথে অনেক সময়েই খাপ খায় না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য খালেদ আবদুল লতিফ মুহাম্মাদ নূর লিখিত মানহাজু আহলিস সুন্নাত ওয়াল-জামা‘আত ওয়া মানহাজুল আশা‘য়েরা এবং আবদুর রহমান সালেহ আলে মাহমূদ রচিত মাওকাফু ইবনু তাইমিয়্যাহ মিনাল আশা‘য়েরা গ্রন্থদ্বয় দেখা যেতে পারে।
প্রথম মূলনীতি: আল্লাহর সকল নামই অতি নান্দনিক।

 অর্থাৎ সেগুলো সৌন্দর্যে সর্বশীর্ষে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। (সূরা আল আরাফ: ৭: ১৮০)

কারণ তা পূর্ণাঙ্গ গুনাবলীসম্পন্ন, যাতে কোনোভাবেই কোনো প্রকার অপূর্ণতা নেই, না সম্ভাব্য কোনো অপূর্ণতা না অব্যক্ত কোনো অপূর্ণতা।

এর উদাহরণ ( الحي- আল হাইউ) ‘চিরঞ্জীব’ আল্লাহর নামসমূহের একটি নাম, যা এমন পূর্ণাঙ্গ জীবনকে নির্দেশ করে যা অস্তিত্বহীনতার পর্ব পেরিয়ে আসেনি এবং যাকে কখনো অস্তিত্বহীনতা স্পর্শ করবে না। যে জীবন সকল পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর ধারক, যেমন: জ্ঞান, ক্ষমতা, শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদি।

দ্বিতীয় উদাহরণ: ( العليم-আল আলীমু) ‘সর্বজ্ঞ’ আল্লাহর নামসমূহের একটি, যা পরিপূর্ণ জ্ঞানকে নির্দেশ করে, যে জ্ঞান কোনো অজ্ঞতার পর্ব পেরিয়ে আসেনি এবং যে জ্ঞানকে কোনো বিস্মৃতি স্পর্শ করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ قَالَ عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَٰبٖۖ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى ٥٢ ﴾ [طه: ٥٢]

মূসা বলল, ‘এর জ্ঞান আমার রবের নিকট কিতাবে আছে। আমার রব বিভ্রান্ত হন না এবং ভুলেও যান না’। [সূরা তাহা: ২০: ৫২]

সুপরিব্যাপ্ত জ্ঞান যা সবদিক থেকে সকল কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে, হোক তা আল্লাহ তা‘আলার কর্মাদি বিষয়ক অথবা মাখলুকের কর্মাদি বিষয়ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ۞وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩ ﴾ [الانعام: ٥٩]

আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন এবং যমীনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোনো ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে। [আল আনআম: ৫৯]

﴿ ۞وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا وَيَعۡلَمُ ُسۡتَقَرَّهَا وَمُسۡتَوۡدَعَهَاۚ كُلّٞ فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٦ ﴾ [هود: ٦]

আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল[1]। সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে[2]। [সূরা হূদ: ১১: ৬]

﴿ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَيَعۡلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعۡلِنُونَۚ وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ٤ ﴾ [التغابن: ٤]

আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর। আল্লাহ অন্তরসমূহে যা কিছু আছে সে বিষয়ে সম্যক অবগত। [সূরা আত-তাগাবুন : ৬৪: ৪]

তৃতীয় উদাহরণ: (الرحمن-আর রাহমানু) ‘পরম করুণাময়’ আল্লাহর নামসমূহের একটি যা পরিপূর্ণ রহমতকে শামিলকারী, যে রহমত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لله أرحم بعباده من هذه بولدها»

‘এই নারী তার সন্তানের প্রতি যতটুকু করুণশীল আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের প্রতি এর থেকেও অধিক করুণাশীল।’[3] উক্ত হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন। আর তা হলো, এক যুদ্ধ শেষে এক নারী তার শিশুকে যুদ্ধবন্দিদের ভেতরে পেল। সে তাকে তুলে নিল, পেটের সঙ্গে লাগাল এবং তাকে দুধ পান করাল। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদীসটি ব্যক্ত করলেন। রহমান শব্দটি আল্লাহ তা‘আলার ওই ব্যাপক দয়া-করুণাকেও শামিল করে আছে যে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ ﴾ [الاعراف: ١٥٦]

আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত রয়েছে। (আল আরাফ: ৭: ১৫৬)

এই রহমতের ইঙ্গিত মুমিনদের জন্য ফেরেশতাদের প্রার্থনার মধ্যেও ব্যক্ত হয়েছে যা আল্লাহ তা‘আলা নিম্নবর্তী আয়াতে উল্লেখ করেছেন।

﴿رَبَّنَا وَسِعۡتَ كُلَّ شَيۡءٖ رَّحۡمَةٗ وَعِلۡمٗا ﴾ [غافر: ٧]

হে আমাদের রব, আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। (গাফের: ৪০: ৭)

আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে সৌন্দর্য প্রতিটি নাম আলাদা থাকা অবস্থায় যেমন পাওয়া যায়, অনুরূপভাবে একটি নামকে অন্যটির সঙ্গে একত্র করার সময়ও পাওয়া যায়। আর একটি নামকে অন্যটির সঙ্গে একত্র করলে পরিপূর্ণতার পর আরও অধিক পরিপূর্ণতা অর্জিত হয়।

এর উদাহরণ: ( العزيز الحكيم আল আযীযুল হাকীম) ‘সর্বশক্তিমান অধিক প্রজ্ঞাময়’। আল্লাহ তা‘আলা আল কুরআনের বহু জায়গায় এ দুটি নামকে একত্র করে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় প্রতিটি নাম একদিকে তার নিজস্ব পূর্ণাঙ্গতাকে বুঝায়। যেমন ‘আল আযীয’ নামে ‘ইয্যত’ অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ শক্তি এবং ‘আল হাকীম’ নামে পূর্ণাঙ্গ হিকমত ও প্রজ্ঞাকে বুঝায়। আর এ দুটিকে একত্র করলে অন্য আরেকটি পূর্ণাঙ্গ গুণকে বুঝায়। আর তা হলো আল্লাহ তা‘আলার শক্তি হিকমতপূর্ণ। ফলে আল্লাহ তা‘আলার শক্তি কোনো জুলুম-অন্যায় ও অপকর্মকে দাবি করে না, যেমনটি হতে পারে সৃষ্টিজীবের মধ্যে যারা শক্তিধর তাদের ক্ষেত্রে। কেননা সৃষ্টিজীবের মধ্যে যে শক্তিমান সে হয়ত গুনাহ গোপন রাখার জন্য তার শক্তিমত্তাকে ব্যবহারে উদ্রগ্রীব হয়ে ওঠতে পারে। ফলে সে জুলুম-অন্যায় ও অপকর্ম করতে শুরু করবে। অনুরূপভাবে আল্লাহর বিচার ও হিকমত পূর্ণাঙ্গ শক্তিমিশ্রিত, সৃষ্টিজীবের বিচার ও হিকমতের বিপরীত; কেননা সৃষ্টিজীবের বিচার ও হিকমতে নিচুতা ও অজ্ঞতা মিশ্রিত হয়।

[1] এখানে مستقر বা আবাসস্থল বলতে মাতৃগর্ভে অবস্থান মতান্তরে মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়ায় অবস্থানকে বুঝানো হয়েছে। আর مستودع দ্বারা কবরস্থ করার স্থান মতান্তরে জন্মের পূর্বে পিতৃমেরুদন্ডে অবস্থান কিংবা মৃত্যুর সময় বা স্থান বুঝানো হয়েছে।

[2] অর্থাৎ লওহে মাহফুযে।

[3] বর্ণনায় বুখারী, আদব অধ্যায়, অনুচ্ছেদ : সন্তানের প্রতি করুণা, তাকে চুম্বন করা ও গলায় লাগানো। হাদীস নং (৫৯৯৯); মুসলিম, তাওবা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ : আল্লাহ তাআলার রহমতের ব্যাপ্তি, হাদীস নং (২৭৫৪)
দ্বিতীয় মূলনীতি: আল্লাহর নামসমূহ একই মুহূর্তে নাম ও গুণ

নাম এ হিসেবে যে তা আল্লাহ তা‘আলার সত্তাকে বুঝায়। এর পাশাপাশি প্রতিটি নাম যে অর্থ ও ভাবকে নির্দেশ করে, তার নিরিখে প্রতিটি নাম গুণ হিসেবেও বিবেচিত। প্রথমোক্ত বিষয়টির বিবেচনায় যেহেতু প্রতিটি নাম অভিন্ন সত্তা অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলাকে নির্দেশ করছে অতএব তা সমার্থবোধক। আর দ্বিতীয়োক্ত বিষয়টি বিবেচনায় যেহেতু প্রতিটি নাম সুনির্দিষ্ট অর্থবোধক অতএব তা একটি থেকে অন্যটি ভিন্ন। অতএব (الحي - চিরঞ্জীব, العليم - সর্বজ্ঞ, - القديرসর্বশক্তিমান, السميع- সর্বশ্রোতা, البصير - সর্বদ্রষ্টা, الرحمن - পরম করুণাময়, الرحيم - পরম দয়ালু, العزير - সর্বশক্তিমান, الحكيم - প্রজ্ঞাময় ) সবগুলো একই সত্তার নাম। আর সে সত্তা হলেন আল্লাহ তা‘আলা। কিন্তু যেহেতু ‘চিরঞ্জীব’ এর অর্থ ‘সর্বজ্ঞ’ এর অর্থ থেকে ভিন্ন এবং ‘সর্বজ্ঞ’ এর ‘সর্বশক্তিমান’ এর অর্থ থেকে ভিন্ন। অন্যান্য নামের বেলায় একই কথা প্রযোজ্য।

আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ একই মুহূর্তে নাম ও গুণ এ কথার পক্ষে আল কুরআনে প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَهُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٧ ﴾ [يونس: ١٠٧]

আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু’। (সূরা ইউনুস: ১০: ১০৭)

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে:

﴿ وَرَبُّكَ ٱلۡغَفُورُ ذُو ٱلرَّحۡمَةِۖ﴾ [الكهف: ٥٨]

আর তোমার রব ক্ষমাশীল, দয়াময়। (সূরা আল কাহাফ: ১৮: ৫৮ )

দ্বিতীয় আয়াতটি এ কথা বুঝাচ্ছে যে, ‘আররাহীম’ (পরম দয়ালু ) হলেন তিনি যিনি দয়ার গুণে গুণান্বিত। আরবী ভাষাবিদদের এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য রয়েছে যে, যার জ্ঞান রয়েছে কেবল তাকেই জ্ঞানী বলা হবে, যার শ্রবনশক্তি রয়েছে কেবল তাকেই শ্রোতা বলা হবে, যার দৃষ্টিশক্তি রয়েছে কেবল তাকেই দ্রষ্টা বলা হবে। এ কথাটি অত্যন্ত স্পষ্ট, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

আল্লাহর নামসমূহ থেকে তার অর্থগুলো যারা সরিয়ে দেয় এ আলোচনার দ্বারা তাদের বাতুলতা ও গোমরাহীর ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা অর্জিত হলো। তাদের বক্তব্য হলো: আল্লাহ তা‘আলা শ্রবনশক্তি ছাড়াই সর্বশ্রোতা, দৃষ্টিশক্তি ছাড়াই সর্বদ্রষ্টা, শক্তি ছাড়াই তিনি শক্তিমান ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা তাদের বক্তব্যের পক্ষে যে যুক্তি পেশ করে তা হলো আল্লাহর জন্য গুণসমগ্র প্রমাণ করলে একই সত্তার জন্য বহুত্বকে প্রমাণিত করা হয়। এটি একটি খোঁড়া যুক্তি, তা বরং নিঃপ্রাণ মৃত যুক্তি; কেননা খোদ আল কুরআনই এ যুক্তিকে বাতিল করে দিয়েছে। মানুষের বুদ্ধি বিবেচনাও এ যুক্তির বিপক্ষে।

আল কুরআন থেকে দলিল: যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা অদ্বিতীয় হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে বহুগুণে গুণান্বিত করে পেশ করেছেন এতএব আল্লাহ তা‘আলার জন্য সিফাত বা গুণ যে প্রমাণিত তা নিঃসন্দেহ। ইরশাদ হয়েছে:

﴿ إِنَّ بَطۡشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ ١٢ إِنَّهُۥ هُوَ يُبۡدِئُ وَيُعِيدُ ١٣ وَهُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلۡوَدُودُ ١٤ ذُو ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡمَجِيدُ ١٥ فَعَّالٞ لِّمَا يُرِيدُ ١٦ ﴾ [البروج: ١٢، ١٦]

নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন। নিশ্চয় তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়াময়। আরশের অধিপতি, মহান। তিনি তা-ই করেন যা চান । (সূরা আল বুরুজ: ৮৫: ১২-১৬ )

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:

﴿ سَبِّحِ ٱسۡمَ رَبِّكَ ٱلۡأَعۡلَى ١ ٱلَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ ٢ وَٱلَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ ٣ وَٱلَّذِيٓ أَخۡرَجَ ٱلۡمَرۡعَىٰ ٤ فَجَعَلَهُۥ غُثَآءً أَحۡوَىٰ ٥ ﴾ [الاعلى: ١، ٥]

তুমি তোমার সুমহান রবের নামের পবিত্রতা বর্ণনা কর, যিনি সৃষ্টি করেন। অতঃপর সুসম করেন। আর যিনি নিরূপণ করেন অতঃপর পথ নির্দেশ দেন। আর যিনি তৃণ-লতা বের করেন। তারপর তা কালো খড়-কুটায় পরিণত করেন। (সূরা আল আলা: ১৯: ১-৫)

উল্লিখিত আয়াতসমূহে অদ্বিতীয় সত্তার বহু গুণের কথা রয়েছে, কিন্তু গুণের বহুত্বের কারণে খোদ সত্তার বহুত্ব বহুত্বকে দাবি করে না।

যুক্তিবুদ্ধির দলিল: যেহেতু গুণগুলো গুণান্বিত থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো সত্তা নয়। গুণগুলো বিচ্ছিন্ন সত্তা হলে গুণান্বিত সত্তার বহুত্ব হওয়া দাবি করত; তা বরং গুণধারী সত্তার গুণাবলি যা তাঁর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে কায়েম রয়েছে। শুধু তাই নয়, বরং অস্তিত্বশীল এমন কোনো বিষয় নেই যা বহু গুণ-বিশিষ্ট নয়।

উল্লিখিত আলোচনা থেকে এটাও পরিষ্কার হলো যে ‘আদ-দাহর’ (কাল) আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা আদ-দাহর হলো নামবাচক একটি জমাট শব্দ; যাতে এমন কোনো অর্থ নেই যার কারণে একে আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। যেহেতু উক্ত শব্দটি কাল ও সময়ের নাম সে হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা আখিরাত অস্বিকারকারীদের সম্পর্কে বলেছেন:

﴿ وَقَالُواْ مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا نَمُوتُ وَنَحۡيَا وَمَا يُهۡلِكُنَآ إِلَّا ٱلدَّهۡرُۚ ﴾ [الجاثية: ٢٤]

আর তারা বলে, ‘দুনিয়ার জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই। আর কাল-ই কেবল আমাদেরকে ধ্বংস করে।’ (আল জাছিয়া: ৪৫: ২৪)

এর দ্বারা তারা রাত ও দিনের অতিক্রমকে বুঝিয়েছে।

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়, কারণ সে আদ্দাহার (কাল) কে গালি দেয়। অথচ আমিই কাল, আমার হাতেই সব কিছু, আমি রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটাই।’[1]
এ হাদীসটি আদ-দাহার শব্দটিকে আল্লাহর নাম হিসেবে সাব্যস্ত করছে না; কেননা যারা কালকে গালি দেয়, তাদের উদ্দেশ্য মূলত কালের গর্ভে সংঘটিত ঘটনাসমগ্র। তারা আল্লাহ তা‘আলাকে উদ্দেশ্য করে না। অতএব ‘আমিই কাল’ এ কথাটির ব্যাখ্যা হাদীসের পরবর্তী অংশ থেকেই বুঝা যায় যেখানে বলা হয়েছে, ‘আমার হাতেই সব কিছু, আমি রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটাই’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলাই কাল এবং কালের গর্ভে যা আছে সবকিছুর স্রষ্টা। আর এটা তিনি সুষ্টভাবেই বলেছেন যে তিনি রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটান, আর এ দুটোই হলো কাল। আর এটা সম্ভব নয় যে পরিবর্তনকারী ও পরিবর্তনগ্রহণকারী একই জিনিস হবে। এতএব উক্ত হাদীসে উল্লিখিত ‘আদ-দাহার’ শব্দটির দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা কে বুঝায় না।

>
[1] - বর্ণনায় বুখারী, তাফসীরুল কুরআন অধ্যায়, অনুচ্ছেদ : আমাদের তো কালই ধ্বংস করে, হাদীস নয় ৪৮২৭); মুসলিম, অধ্যায় : শব্দ আদবের অংশ, অনুচ্ছেদ : কালকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ, হাদীস নং (২২৪৬)
তৃতীয় মূলনীতি: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ যদি এমন গুণের নির্দেশকারী হয় যা মাখলুককেও স্পর্শকারী, তবে তিনটি বিষয়কে শামিল করবে

প্রথমত: ওই নামটি আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হওয়া।

দ্বিতীয়ত: নামটি যে গুণকে শামিল করে আছে তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হওয়া।

তৃতীয়ত: উক্ত গুণের যে হুকুম ও দাবি রয়েছে তা প্রমাণিত হওয়া।

এ কারণেই ডাকাতরা যদি তাওবা করে তবে তাদের বেলায় শরীয়তের বিধিবদ্ধ শাস্তি ‘হদ’ মওকুফ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মুজতাহিদ আলিমগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং দলিল হিসেবে তারা নিম্নোক্ত আয়াতটি পেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে:

﴿ إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُواْ مِن قَبۡلِ أَن تَقۡدِرُواْ عَلَيۡهِمۡۖ فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣٤ ﴾ [المائ‍دة: ٣٤]

কিন্তু হ্যাঁ তোমরা তাদেরকে গ্রেফতার করার পূর্বে যারা তাওবা করে নেয়, তবে জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (আল মায়েদা: ৫: ৩৪)

কেননা এ দুটি নাম (ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু) এর দাবি হলো, আল্লাহ তা‘আলা নিশ্চয় তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং হদ রহিত করে তাদের প্রতি করুণ করেছেন।

এর উদাহরণ: السميع ‘সর্বশ্রোতা’ এটি একদিকে ‘আস-সামী‘উ’ নামটি আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করছে। অন্যটি তা السمع ‘শ্রবণশক্তি’ কে আল্লাহর গুণ হিসেবে সাব্যস্ত করছে। এবং শ্রবণের যে হুকুম ও দাবি তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা গোপন কথা ও নিভৃতে পরিচালিত কথাও শোনেন। ইরশাদ হয়েছে:

﴿وَٱللَّهُ يَسۡمَعُ تَحَاوُرَكُمَآۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ ١ ﴾ [المجادلة: ١]

আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (আল মুজাদালা: ১)

আর যদি আল্লাহর নাম এমন গুণকে নির্দেশকারী হয় যা আল্লাহ তা‘আলার সত্তায় সীমিত থাকে, তবে তা দুটি বিষয়কে শামিল করে:

প্রথমত: ওই নামটি আল্লাহর জন্য প্রমাণিত হওয়া।

দ্বিতীয়ত: ওই নামটি যে গুণকে ধারণ করে আছে তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হওয়া।

এর উদাহরণ: الحي ‘চিরঞ্জীব’ এটি একদিকে ‘আল হাইউ’ শব্দটিকে আল্লাহর নাম হিসেবে সাব্যস্ত করছে। অন্যদিকে ‘আল হায়াত’ তথা ‘জীবন’- কে আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণ হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

চতুর্থ মূলনীতি: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ তাঁর সত্তা ও গুণাবলির উপর (তিনভাবে প্রমাণবহ) সর্বদিক থেকে প্রমাণ করে, অন্তর্ভুক্তি হিসেবে প্রমাণ করে এবং দাবি হিসেবেও প্রমাণ করে

এর উদাহরণ: الخالق ‘স্রষ্টা’ নামটি আল্লাহ তা‘আলার সত্তা এবং সৃষ্টি করার গুণকে সরাসরি বুঝাচ্ছে। আর শুধু আল্লাহর সত্তা এবং শুধু সৃষ্টি করার গুণ (এ দুয়ের যে কোনো একটি)কে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে বুঝায়। অর্থাৎ খালিক শব্দটি দুটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে আছে। একটি আল্লাহর নাম, অপরটি আল্লাহর গুণ। অতএব যেকোনো একটিকে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে বুঝায়। এর পাশাপাশি খালিক শব্দটি দাবি হিসেবে ‘ইলম’ ও ‘কুদরত’ এ দুটি গুণকে সাব্যস্ত করছে।

এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা যখন আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেছেন:

﴿لِتَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ وَأَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عِلۡمَۢا ١٢ ﴾ [الطلاق: ١٢]

যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে। (সূরা আত্-তালাক:১২)

শব্দের দাবিগত অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শরীয়তের জ্ঞান অন্বেষণকারীদের জন্য খুবই উপকারী। তারা যদি শব্দের অর্থ উদ্ধারে মনোনিবেশ করে এবং দাবিগত অর্থ কিভাবে উদ্ধার করতে হয় তা বুঝার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাওফীক দান করেন তবে একটি মাত্র দলিল থেকে বহু মাসআলা বের করতে তারা সক্ষম হবে।

জেনে রাখা ভালো যে, আল্লাহ তা‘আলার কথা এবং আল্লাহর রাসূলের কথার দাবিগত অর্থ, যদি তা শুদ্ধ দাবিগত অর্থ হয়, তবে তা হক ও সত্য। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের কথা হক, অতএব যা হকের দাবি তাও হক। উপরন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার যে দাবিগত অর্থ হতে পারে সে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা সুপরিজ্ঞাত। অতএব তা উদ্দিষ্ট।

আর আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের কথা ব্যতীত অন্য কারো কথার দাবিগত অর্থের অবস্থা তিনটি:

প্রথমত: বক্তাকে বলা হবে যে আপনার কথার দাবিগত অর্থ হলো এই এবং বক্তাও তা মেনে নেবে। উদাহরণত যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার কর্মগত গুণসমূহ অস্বীকার করে সে যদি এ প্রকৃতির গুণ আল্লাহর জন্য সাব্যস্তকারীকে উদ্দেশ্য করে বলে: আপনি যে আল্লাহ তা‘আলার কর্মগত গুণ সাব্যস্ত করছেন এর দাবি হলো যে আল্লাহ তা‘আলার কিছু কর্ম অনাদি নয় বরং তা নতুন। এর উত্তরে কর্মগত গুণ সাব্যস্তকারী বলবে: হ্যাঁ, আমি এ বিষয়টি স্বীকার করি; কারণ আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করেন। তাঁর কথা ও কর্ম শেষ হয়ে যাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ قُل لَّوۡ كَانَ ٱلۡبَحۡرُ مِدَادٗا لِّكَلِمَٰتِ رَبِّي لَنَفِدَ ٱلۡبَحۡرُ قَبۡلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَٰتُ رَبِّي وَلَوۡ جِئۡنَا بِمِثۡلِهِۦ مَدَدٗا ١٠٩﴾ [الكهف: ١٠٩]

বল, ‘আমার রবের কথা লেখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়ে যায় তবে সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগেই। যদিও এর সাহায্যার্থে অনুরূপ আরো সমুদ্র নিয়ে আসি’। (সূরা আল কাহাফ: ১৮: ১০৯)

অন্যত্র তিনি বলেছেন:

﴿ وَلَوۡ أَنَّمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن شَجَرَةٍ أَقۡلَٰمٞ وَٱلۡبَحۡرُ يَمُدُّهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦ سَبۡعَةُ أَبۡحُرٖ مَّا نَفِدَتۡ كَلِمَٰتُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٢٧ ﴾ [لقمان: ٢٧]

আর জমিনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র (হয় কালি), তার সাথে কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা লুকমান: ৩১: ২৭)

অতএব বিশেষ বিশেষ নব কর্ম যদি আল্লাহ তা‘আলা সম্পাদনা করেন তবে এর দ্বারা তাঁর কোনো ত্রুটি প্রমাণিত হয় না।

দ্বিতীয় অবস্থা: বক্তাকে তার কথার দাবিগত অর্থের কথা বলা হবে, কিন্তু সে এ দাবিগত অর্থ অস্বীকার করবে। যেমন আল্লাহর গুণসমূহ অস্বীকারকারী গুণসমূহ সাব্যস্তকারীকে লক্ষ্য করে বলবে: আপনি যে আল্লাহর গুণসমূহ সাব্যস্ত করছেন এর দাবি হলো - আল্লাহ তা‘আলা তার গুণসমূহের ক্ষেত্রে মাখলুক সদৃশ। এর উত্তরে গুণসমূহ সাব্যস্তকারী বলবে: না, দাবিগতভাবে তা প্রমাণিত হয় না। কেননা সৃষ্টিকর্তার গুণসমূহ সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে উল্লিখিত। সম্পৃক্তি ছাড়া সাধারণভাবে তা উল্লেখ করা হয়নি। সাধারণভাবে উল্লেখ করলে আপনার কথা মেনে নিতাম। অতএব আল্লাহর গুণসমূহ কেবল আল্লাহর জন্যই তাঁর শান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট। উপরন্তু আমি আপনাকে বলব যে আপনি আল্লাহর গুণসমূহ অস্বীকার করা সত্ত্বেও তিনি যে একজন ‘সত্তা’ তা মেনে নেন, অর্থাৎ তাঁর জন্য যাত্ তথা সত্তা হওয়াকে সাব্যস্ত করেন এবং বলেন যে আল্লাহর সত্তা কোনো মাখলুকের সত্তা সদৃশ নয়। তাহলে যাত ও সিফাত তথা সত্তা ও গুণের মধ্যে পার্থক্য করার কারণ কি?

উল্লিখিত দুই অবস্থায় দাবিগত অর্থের বিষয়টি পরিষ্কার।

তৃতীয় অবস্থা: দাবিগত অর্থের ব্যাপারটি অব্যক্তভাবে আছে। কথাতে সেটার স্বীকারও নেই, আবার অস্বীকারও নেই। এ অবস্থার হুকুম হলো - দাবিগত অর্থটি বক্তার কথার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে না; কেননা এ ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, যদি বক্তার সম্মুখে তা উল্লেখ করা হয়, তবে সে তা মেনে নেবে অথবা দাবীগত অর্থটি অস্বীকার করবে। এক্ষেত্রে এটারও সম্ভাবনা রয়েছে যে যদি তার সম্মুখে দাবিগত অর্থের কথা উল্লেখ করা হয়, তখন সে দাবীগত অর্থটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং সেটার অসারতা বুঝতে পেরে তার কথা থেকে ফিরে আসবে। কারণ, যে অর্থ দাঁড়ালে সমস্যা অবধারিত হয় সে অর্থটি অগ্রহণযোগ্য হওয়াটি অবধারিত।

এ দুটি সম্ভাবনা থাকার কারণে বলা যাবে না যে, কোনো কথার দাবিগত ভাবও কথা হিসেবে ধর্তব্য।

যদি প্রশ্ন করে বলা হয় যে, যদি বক্তার কথার দাবি থেকে বিষয়টি ওঠে আসে, তবে এটিও বক্তার কথা হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। কারণ এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক; বিশেষ করে কথা ও তার দাবির মধ্যে যদি কাছাকাছি সম্পর্ক থাকে।

উত্তরে বলব: এ প্রশ্নটি এ হিসেবে অবান্তর যে, মানুষ তো মানুষই। মানুষের অন্তর্গত ও বহির্গত নানা অবস্থা রয়েছে, যার কারণে তার কথার দাবিগত অর্থ কি দাঁড়াচ্ছে তা হয়ত তার অন্তর থেকে হারিয়ে যায়, সে হয়ত উদাসীন হয়ে পড়ে, অথবা ভুল করে, অথবা সে দিশেহারা হয়ে পড়ে, অথবা সে তর্কের চাপে দাবিগত অর্থে চিন্তা করা ব্যতীতই কোনো কথা বলে ফেলে ইত্যাদি।

পঞ্চম নীতিমালা: আল্লাহর নামসমূহ কুরআন-সুন্নাহ নির্ভর, এ ক্ষেত্রে মানুষের বুদ্ধিবিবেচনার কোনো দখল নেই।

অতএব কুরআন ও সুন্নায় আল্লাহর নামসমূহের ব্যাপারে যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুই আমাদের গ্রহণ করতে হবে, এর ওপর কোনো কিছু বাড়ানোও যাবে না, কমানও যাবে না; কেননা আল্লাহ তা‘আলা যা কিছুর উপযোগী মানুষের আকল-বুদ্ধি দ্বারা তা আয়ত্ব করা সম্ভব নয়। অতএব কুরআন-সুন্নাহর টেক্সট তথা ভাষ্যের সীমানায় আমাদের সীমিত হয়ে যেতে হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦ ﴾ [الاسراء: ٣٦]

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না; নিশ্চিত কর্ন, চক্ষু, হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। [আল ইসরা: ১৭: ৩৬]

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:

﴿ قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣ ﴾ [الاعراف: ٣٣]

বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’। (আল আরাফ: ৭: ৩৩)

উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলার ওপর এমন নাম আরোপ করা যা তিনি নিজেকে দেননি, অথবা তিনি নিজেকে যে নাম দিয়েছেন তা অস্বীকার করা আল্লাহর বিরুদ্ধে স্পর্ধা প্রদর্শন বই অন্যকিছু নয়। অতএব এ ব্যাপারে আদব রক্ষা করতে হবে এবং কুরআন-সুন্নাহর পাঠে যা কিছু আছে সেখানেই সীমিত হয়ে যেতে হবে।

ষষ্ঠ নীতিমালা: আল্লাহর নামসমূহ সুনির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমিত নয়

কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রসিদ্ধ একটি হাদীসে বলেছেন:

«أسألك بكل اسم هو لك، سميت به نفسك، أو أنزلته في كتابك، أو علمته أحداً من خلقك، أو استأثرت به في علم الغيب عندك»

‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে প্রত্যেক ওই নাম দ্বারা প্রার্থনা করছি যা আপনার, যে নাম আপনি নিজেকে দিয়েছেন, অথবা আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন, অথবা আপনি আপনার সৃষ্টিজীবের কাউকে শিখিয়েছেন, অথবা যে নাম আপনি আপনার কাছে, আপনার গায়েবী ইলমে একান্তভাবে রেখে দিয়েছেন।’ হাদীসটি ইমাম আহমদ, ইবনে হিববান এবং ইমাম হাকেম বর্ণনা করেছেন আর হাদীসটি সহীহ।[1]

বলার অপেক্ষা রাখে না যে আল্লাহ তা‘আলা তার গায়েবী ইলমে যা একান্তভাবে রেখে দিয়েছেন তা কারও পক্ষেই হিসেব করে দেখা অথবা তা আয়ত্বে আনা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

আর যে হাদীসটিতে আল্লাহ তা‘আলার নিরানব্বই নামের কথা এসেছে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

«إن لله تسعة وتسعين اسماً، مائة إلا واحداً، من أحصاها دخل الجنة»

‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিরানব্বইটি, একটি বাদে একশটি, এমন নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা ইহসা[2] (তথা যথাযথভাবে কার্যে পরিণত) করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’[3] এ হাদীসটি নিরানববই সংখ্যায় আল্লাহর নাম সীমিত হওয়াকে বুঝাচ্ছে না। যদি সীমিত হওয়া বুঝাত তবে হাদীসের ভাষ্য এমন হত: ‘নিশ্চয় আল্লাহর নাম নিরানব্বইটি, যে তা ইহসা করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ অথবা এ জাতীয় কোনো ভাষ্য।

তাহলে হাদীসের অর্থ হলো: এ সংখ্যার বাস্তবতা, যে ব্যক্তি এই সংখ্যায় আল্লাহর নামগুলোর বাস্তব অর্থ কাজে লাগাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ‘যে ব্যক্তি তা ইহসা (যথার্থভাবে কার্যে পরিণত) করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ এর পূর্ববর্তী বাক্যের পরিপূরক বাক্য। এটি কোনো স্বনির্ভর আলাদা বাক্য নয়। এর উদাহরণ হলো আপনি যদি বলেন: আমার কাছে একশ’ টাকা আছে যা আমি দান করার জন্য গণনা করে রেখেছি, তাহলে এ কথার অর্থ এটা নয় যে আপনার কাছে এ ছাড়া অন্য কোনো টাকা নেই। বরং এর অর্থ হলো আপনার কাছে আরো টাকা আছে, তবে দান করার জন্য একশ’ টাকা গণনা করে রেখেছেন।

এ নামগুলো কোন্ কোন্‌ নাম তা নির্ণয় করে সহীহ কোনো হাদীস বর্ণিত হয়নি। এ ক্ষেত্রে নাম নির্দিষ্ট করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীসটি এসেছে তা দুর্বল।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া র. ‘আল ফাতাওয়া’ গ্রন্থে বলেন,‘এই নামগুলো সুনির্দিষ্ট করণের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কোনো বাণী উল্লিখিত হয়নি। এ ব্যাপারে হাদীস বিশেষজ্ঞদের ঐক্যমত্য রয়েছে।[4] ইমাম ইবনে তাইমিয়া এর পূর্বে বলেছেন, (নিরানব্বইটি নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে) তা আল ওয়ালীদ নামক এক বর্ণনাকারী তার শামদেশীয় একজন শায়খের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইবনে হাজার তার গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী’- তে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম ওয়ালীদ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটিকে পরিত্যাগ করেছেন। এ পরিত্যাগ করার কারণ শুধু এটা নয় যে, এ হাদীসটি ওয়ালীদ এককভাবে বর্ণনা করেছেন, বরং হাদীসটিতে মতদ্বৈততা ও অসঙ্গতি রয়েছে, হাদীসটিতে তাদলীস ও অন্য কারও বক্তব্য তাতে অনুপ্রবিষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’[5]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুনির্দিষ্ট কোনো হাদীসে যেহেতু এ নিরানব্বইটি নাম উল্লেখ করেননি, তাই সালাফদের মধ্যে এ নামগুলো সুনির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে মতানৈক্য হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের থেকে নানামুখী বর্ণনা উল্লিখিত হয়েছে। যাই হোক, আমি কুরআন হাদীস ঘেঁটে আল্লাহ তা‘আলার নিরানব্বইটি নাম এখানে একত্র করেছি। নামগুলো আমি দু’ভাগে ভাগ করেছি। প্রথম ভাগ হলো কুরআন থেকে এবং দ্বিতীয় ভাগ হলো সুন্নাহ থেকে।

প্রথমত: কুরআন থেকে:

الإله

উপাস্য

الأكرم

অনেক সম্মানিত

الأعلى

অনেক উপরে

الأحد

একক

الله

আল্লাহ

البارئ

সঠিকভাবে সৃষ্টিকারী

الباطن

সর্বনিকটে অপ্রকাশিত

الظاهر

সবার উপরে প্রকাশিত

الآخر

সর্বশেষ

الأول

অনাদি

الحافظ

রক্ষাকারী

 

الجبار

দুর্নিবার

التواب

তাওবা কবুলকারী

البصير

সর্ববিষয় দর্শনকারী

البر

পরম উপকারী অনুগ্রহশীল

المبين

সুস্পষ্ট

 

الحق

পরম সত্য

الحفي

পুরোপরি অবহিত

الحفيظ

সংরক্ষণকারী

الحسيب

হিসাব গ্রহণকারী

القيوم

সবকিছুর ধারক ও সংরক্ষণকারী

الحي

চিরঞ্জীব

الحميد

الحليم

অত্যন্ত ধৈর্যলীল

الحكيم

الرحمن

পরম দয়ালু

الرءوف

পরম স্নেহশীল

الخلاق

সর্বস্রষ্টা

الخالق

সৃষ্টিকর্তা

الخبير

সকল ব্যাপারে অবহিত

السميع

সর্বশ্রোতা

 

السلام

শান্তি দানকারী

الرقيب

তত্বাধায়ক

الرزاق

রিযকদাতা

الرحيم

অতিশয় মেহেরবান

العالم

জ্ঞানী

 

الصمد

সর্ববিষয়ে পূর্ণতাপ্রাপ্ত

الشهيد

সর্বজ্ঞ সাক্ষী

الشكور

গুণগ্রাহী

الشاكر

যথার্থ পুরস্কারদাতা

الغفار

পরম ক্ষমাশীল

 

العلي

উচ্চ মর্যাদাশীল

العليم

সর্বজ্ঞ

 

العظيم

সর্বোচ্চ- মর্যাদাশীল

العزيز

মহাপরাক্রমশালী

القاهر

পরাক্রমশালী

القادر

মহা ক্ষমতাবান

الفتاح

বিজয় দানকারী

الغني

অমুখাপেক্ষী

الغفور

পরম ক্ষমাশীল

القهار

কঠোর

 

القوى

পরম শক্তির অধিকারী

القريب

অতি নিকবর্তী

القدير

প্রবল ক্ষমতাধর

القدوس

মহাপবিত্র

المتعالي

সৃষ্টির গুনাবলীর উর্দ্ধে

 

المؤمن

নিরাপত্তা ও ঈমান দানকারী

اللطيف

সুক্ষ্মদর্শী কৌশলী

الكريم

সুমহান দাতা

الكبير

সবচেয়ে বড়

المحي

জীবন দানকারী

المجيد

মর্যাদার অধিকার

المجيب

জবাব দানকারী

المتين

সুদৃঢ়

المتكبر

শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী

المليك

মালিক

 

الملك

সর্বকর্তৃত্বময়

المقيت

জীবনোপকরণ দানকারী

المقتدر

নিরঙ্কশ সিদ্বান্তের অধিকারী

المصور

আকৃতি দানকারী

الوارث

উত্তরাধিকারী

الواحد

এক ও অদ্বিতীয়

النصير

সাহায্যকারী

المهيمن

রক্ষণাবেক্ষণকারী

المولى

মহাপ্রভূ

الوهاب

মহাদাতা

 

الولي

অবিভাবক

الوكيل

কর্ম সম্পাদনকারী

الودود

সদয়

الواسع

পরিব্যাপ্ত

 

 

 

 

العفو

পরম উদার


দ্বিতীয়ত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকে:

الرفيق

দয়াবান

الرب

প্রভূ

الحيي

চিরঞ্জীব

الحكم

মহাবিচারক

الجواد

মহাদাতা

الجميل

সুন্দর

الباسط

প্রশস্তকারী

সংকীর্ণকারী

الطيب

উত্তম পবিত্র

الشافي

আরোগ্যদানকারী

السيد

সর্দার

السبوح

পবিত্র-মহান

الوتر

বেজোড় একক

المنان

দানশীল

المعطي

মহাদাতা

المحسن

অনুগ্রহকারী

 

المؤخر

অবকাশ দানকারী

المقدم

অগ্রসরকারী


এ নামগুলো যথার্থভাবে ঘেঁটে নির্বাচন করেছি। কুরআনে কারীম থেকে ৮১টি আর সুন্নাতে রাসূল থেকে বাকী ১৮টি গ্রহণ করেছি। যদিও আমি ‘আল-হাফীয়্য’ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত। কারণ এ নামটি এককভাবে আসেনি, বরং ইবরাহীম আলাইহিস সালাম থেকে শর্তযুক্ত ভাবে এসেছে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহ সম্পর্কে বলেছেন,

﴿إِنَّهُۥ كَانَ بِي حَفِيّٗا ٤٧ ﴾ [مريم: ٤٧]

“নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি খুবই অনুগ্রহশীল”। [সূরা মারইয়াম: ৪৭] অনুরূপভাবে ‘আল-মুহসিন’ নামটিও। কারণ তাবারানীতে বর্ণিত এ নামটির বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে আমি অবগত হতে পারি নি। তবে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ এটিকে আল্লাহর নাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া আল্লাহর নামসমূহের কিছু রয়েছে অন্য শব্দের সাথে সন্ধন্ধযুক্ত হয়ে। যেমন, ‘মালিকাল মুলকি’ ‘যিল-জালালি ওয়াল ইকরামি’।

[1] বর্ণনায় আহমদ (১/৩৯১, ৪৫২); ইবনে হিববান হাদীস নং (২৩৭২); হাকেম (১/৫০৯), আলবানী এটিকে ‘ আল আহাদীসুস্সাহীহা’- তে উল্লেখ করেছেন।

[2] নামগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর অর্থ এ নামগুলোর শব্দমালা মুখস্ত করা, তার অর্থ বোঝা এবং তার দাবি অনুযায়ী আমল করা (লেখক)

[3] - বর্ণনায় বুখারী, তাওহদী অধ্যায়, অনুচ্ছেদ : নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার একটি কম একশটি নাম রয়েছে, হাদীস নং (৭৩৯২); মুসলিম, যিকির অধ্যায়, অনুচ্ছেদ : আল্লাহর নাম এবং যে তা গুণবে তার মর্যাদা, (২৬৭৭)।

[4] - মাজমুউল ফাতাওয়া, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩৮৩

[5] - ইবনে হাজার আল আসকালানী, ফাতহুল বারী, খন্ড১১, পৃ. ২১৫
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »