ইমাম আবু হানীফা নু’মান (রাহিমাহুল্লাহ) [৮০-১৫০হিঃ]*

বংশ পরিচয়: তিনি ইমাম আবু হানীফা নুমান ইবন সাবিত। পারস্যের অধিবাসী ছিলেন। কিন্তু তাঁর পিতৃপুরুষ ছিল কাবুলের বাসিন্দা। কাবুল বিজয়ের সময় তাঁর পিতামহ মুসলিমদের হাতে বন্দী হন। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ যদিও তিনি কোনো গোত্রের মাওলা বা তাদের সাথে ইসলামের ভ্রাতৃত্ববন্ধনে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি বা তাঁর পিতা কখনো গোলাম ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন স্বাধীন।

জন্ম ও শৈশবকাল: অধিকাংশ বর্ণনা মতে হিজরী ৮০ সালে আবু হানীফা কূফাতে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর শৈশবকাল কাটে এবং সেখানেই তিনি বড় হন। ইলম অর্জন ও বিতরণের মহানব্রতে জীবনের বেশিরভাগ অংশ তিনি কূফাতেই কাটান।

তাঁর পিতা ‘সাবিত’ও মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বলা হয় ছোটবেলায় তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার জন্য এবং তার অনাগত বংশধরদের জন্য বরকত লাভের দো‘আ করেছিলেন।

আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বেড়ে উঠেছেন সম্পূর্ণ ইসলামী পরিবেশে। তিনি তাঁর জীবনযাত্রা শুরু করেন একজন ব্যবসায়ী হিসেবে। তাঁর প্রখর স্মৃতিশক্তি ও চিন্তার তীক্ষ্ণতা দেখে ‘ফিকহুল হাদীসের’[1] উপর পণ্ডিতব্যক্তি ইমাম শা‘বী তাকে ব্যবসায়ের সাথে সাথে আলেমদের মজলিসে হাজির হওয়ার পরামর্শ দেন। এভাবে তিনি ইলমের পথে অগ্রসর হন। কিন্তু সাথে সাথে ব্যবসার কাজও চালিয়ে যান।

ইলম অর্জন: তাঁর সময়কালে ইসলামী জ্ঞানের যেসব শাখা বিদ্যমান ছিল সেগুলোর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে তিনি তার ইলমী জীবন শুরু করেন। ‘কুরআনে কারীম’ মুখস্থ করেন (আসেমের রেওয়ায়েত অনুযায়ী)। হাদীস অধ্যয়ন করেন। আরবী ব্যাকরণ (নাহু), আরবী সাহিত্য ও আরবী কাব্যের উপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করেন। এছাড়া ইসলামী-আকীদা ও তৎসংশ্লিষ্ট মাসয়ালা-মাসায়েল নিয়ে তিনি বাতিল ফেরকাবাজদের সাথে বিতর্কসভায় অংশ গ্রহণ করতেন। এরপর ফিকহের (ইসলামী আইন শাস্ত্র) জ্ঞান অর্জনে নিমগ্ন হন এবং ফিকহের সাথে লেগে থাকেন। এমনকি তাঁর সকল চেষ্টা-সাধনা এ জ্ঞান অর্জনে ব্যয় করে যান। গভীরভাবে পড়াশুনার জন্য তিনি ফিকহশাস্ত্রকে কেন বেছে নিয়েছেন সে সম্পর্কে তাঁর একটি উক্তি রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি এ ইলমকে নিয়ে যতবেশী নাড়াচাড়া করি, যতবেশী পড়াশুনা করি এর মর্যাদা ততবেশী স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে… আর আমি দেখতে পাচ্ছি- এ জ্ঞান ছাড়া ফরয ইবাদত আদায় করা সম্ভব নয়, দীনে ইসলাম কায়েম করা সম্ভব নয়, ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব নয়। এমনকি এই জ্ঞান ছাড়া দুনিয়া-আখেরাত কোনোটাই পাওয়া সম্ভব নয়।” এরপর আবু হানীফা সে যামানার বড় বড় আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে ‘ফতোয়া’ নিয়ে গবেষণাকর্ম চালিয়ে যান। ২২ বছর বয়স থেকে তিনি তাঁর ওস্তাদ হাম্মাদ ইবন আবু সুলাইমানের সান্নিধ্যে থাকেন। আবু হানীফার বয়স যখন ৪০ বছর তখন শায়েখ হাম্মাদ মারা যান। ততদিন পর্যন্ত আবু হানীফা তাঁর সান্নিধ্যে ছিলেন।

তাছাড়া মক্কা ও মদীনায় বসবাসরত অন্যান্য ফকীহ্‌ ও মুহাদ্দিসদের কাছ থেকেও আবু হানীফা ইলম নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কারণ তিনি খুব বেশী হজ্জে আসতেন। হজ্জে আসলে হারামাইনের আলেমদের কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করতেন, ফিকহ নিয়ে আলোচনা করতেন এবং তারা যেসব ‘সনদ’ (হাদীসের বর্ণনাসূত্র) এ হাদীস বর্ণনা করতেন সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করতেন।

তিনি তাবেয়ীদেরকে খুঁজে বের করতেন, তারা যেখানেই থাকুন না কেন। বিশেষতঃ তাবেয়ীদের মধ্যে যারা সাহাবীদের সান্নিধ্যে থেকে ‘ফিকহ’ শাস্ত্রে ও ‘ইজতিহাদে’ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন তাদেরকে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘উমর, ইবনে মাসউদ ও ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমের ছাত্রদের কাছ থেকে আমি তাদের ফিকহী জ্ঞান গ্রহণ করেছি।”

চল্লিশ বৎসর বয়সে আবু হানীফা কূফার মসজিদে তাঁর ওস্তাদ হাম্মাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ইসলামী জ্ঞান দান শুরু করেন। তাঁর কাছে যেসব ‘ফতোয়া’ ও ‘বিচার’ আসত তিনি ছাত্রদের কাছে সেসব মাসয়ালার সমাধানগুলো বিশ্লেষণ করতেন। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও যুক্তির আলোকে প্রত্যেকটি মাসয়ালাকে তার সাদৃশ্যপূর্ণ অন্য মাসয়ালার সাথে তুলনা করতেন। এভাবেই তিনি ইসলামী আইন (ফিকহ) শাস্ত্রের বিধি-বিধান নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি দাঁড় করাতে সক্ষম হন। যা থেকে বেরিয়ে আসে ‘হানাফী মাযহাব’।

তাঁর আখলাক: আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত দ্বীনদার-পরহেযগার, খুব বেশী ইবাদতগুজার। তিনি দিনে রোজা রাখতেন, রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং প্রচুর কুরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি ছিলেন আল্লাহ্‌র ভয়ে কম্পিত ব্যক্তি। একাধারে ত্রিশ বছর তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছেন। কুরআন ছিল তার সবসময়ের সাথী, একান্ত বন্ধু।

তাঁর অন্যতম গুণ ছিল সহিষ্ণুতা ও বদান্যতা। ব্যবসার মাধ্যমে তাঁর হাতে প্রচুর অর্থ আসত। যদিও তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার এবং যৎসামান্য লাভে ব্যবসায়িক লেনদেন করতেন। তাঁর সম্পদের বেশীরভাগ অংশ তিনি আলেম-ওলামা ও মুহাদ্দিসদের জন্য ব্যয় করতেন। তাঁর প্রতি আল্লাহ্‌পাকের অনুগ্রহের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ দান করতেন।

ফুযাইল ইবন ইয়ায তাঁর ব্যাপারে বলেন, “আবু হানীফা ছিলেন একজন বিজ্ঞ লোক, ফিকহ শাস্ত্রে নামকরা আলেম, অঢেল সম্পদের মালিক। তাঁর কাছে তশরীফ নেয়া কাউকে কিছু না-দিয়ে বিদায় করতেন না। অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে রাতদিন ইলম অর্জনে মশগুল থাকতেন। তিনি ছিলেন রাতগুজার, অল্পভাষী, অতি নীরব। কিন্তু হালাল-হারামের সাথে সম্পৃক্ত কোনো মাসয়ালা উত্থাপিত হলে তিনি মুখ খুলতেন এবং সঠিক মতের পক্ষে সুন্দরভাবে দলীল পেশ করতেন। রাজা-বাদশাহ্‌র সম্পদ থেকে তিনি দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন।

তাঁর ইল্‌মী মর্যাদা ও ইলমের সূত্র: আবু হানীফা ছিলেন একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ ফিকহবিদ। ফিকহের ক্ষেত্রে তিনি একটি স্বতন্ত্র পথে চলেছেন এবং এ অঙ্গনে গভীরতা অর্জন করেছেন। এ কারণে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মুখে তাঁর স্তুতির প্রতিধ্বনি শোনা যায়। জনৈক আলেম বলেন, ‘আমি আবু হানীফার সান্নিধ্যে পাঁচ বছর কাটিয়েছি। তাঁর চেয়ে বেশী সময় নীরব থাকে এমন আর কাউকে আমি দেখিনি। কিন্তু যখন ফিকহের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন করা হত তখন তিনি ছিলেন উপচেপড়া পানিতে ভেসে যাওয়া উপত্যকার মত। তাঁর গুনগুনানি শব্দ এবং উচ্চকণ্ঠ দুটোই আমি শুনেছি।” তাঁর সমসাময়িক পরহেজগার, তাকওয়াবান আলেম আব্দুল্লাহ্‌ ইবন মুবারক বলেন, “তিনি হচ্ছেন ইলমের মস্তিষ্ক। তিনি ইলমের নির্যাস পেয়েছেন এবং তার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে পেরেছেন।”

তাঁর গুণাবলী: আবু হানীফার এমন কিছু গুণ ছিল যে গুণগুলো তাকে আলেমদের শীর্ষে পৌঁছিয়েছে। ঠিক একজন হাক্কানী, নির্ভরযোগ্য আলেমের যেসব গুণ থাকা উচিত। তিনি ছিলেন সুপ্রসন্ন চিন্তার অধিকারী। খুঁটিনাটি বিষয়ও তিনি জানতেন। তড়িৎ চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন।

নিজেকে সংযত রাখতে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাবান। তাঁকে লক্ষ্যকৃত কোনো বিদ্বেষপূর্ণ কথায় তিনি কান দিতেন না। কোনো কটু কথা তাকে সত্য থেকে বিচ্যুত করতে পারত না। তিনি বলতেন, “হে আল্লাহ্‌, যাদের অন্তরে আমাদের স্থান হয়নি, আমাদের অন্তর তাদের জন্য রয়েছে প্রসারিত।” তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা। এ কারণে তাঁর নিজস্ব কোনো মত কুরআন, হাদীস বা কোনো সাহাবীর ফতোয়ার বিপরীতে না গেলে তিনি তা পরিহার করতেন না।

‘হক্ব’ সন্ধানে ছিলেন একনিষ্ঠ, অকপট। যা তার হৃদয় ও বিবেককে আলোকিত করেছিল। হারজিত যাই হোক না কেন ‘হক্ব’টাকেই তিনি গ্রহণ করতেন। এ একনিষ্ঠতার কারণে তিনি নিজের মতটাকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করতেন না। বরং বলতেন, “আমাদের বক্তব্যটা একটা মতামত মাত্র। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টার পর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পেরেছি। কেউ যদি আমাদের মতের চেয়ে উত্তম কোনো মত নিয়ে আসে তাহলে সেটা হবে আরো বেশী যথাযথ।”

এসব মহান গুণাবলীর কারণে আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এমন একজন ফকীহ ছিলেন যিনি নাগালে পাওয়া সব ধরনের আত্মিক খাদ্য (ইলম) থেকে উপকৃত হতে পেরেছেন।

যেসব শিক্ষাগুরু ও শিক্ষা-উপদেষ্টা দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন: যেসব সাহাবী দীর্ঘায়ু পেয়েছিলেন আবু হানীফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের বেশ কয়েকজনের সাক্ষাত পেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- আনাস ইবন মালিক, আব্দুল্লাহ্‌ ইবন আবী আওফা, সাহল ইবন সা’দ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)। তবে তিনি তাদের কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করতে পারেননি। কারণ সেসময় তার বয়স ছিল কম। তবে আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে তিনি বড় বড় তাবেয়ীদের সাক্ষাত পেয়েছেন, তাদের সাথে উঠাবসা করেছেন, ইলমের আদান-প্রদান করেছেন এবং তাদের কাছ থেকে হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রের জ্ঞান গ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমি ইলম ও ফিকহের সুতিকাগারে ছিলাম। আলেম ও ফকীহদের মজলিসে আমি হাজির হতাম এবং তাদের একজনের ঘনিষ্ঠ ছাত্র ছিলাম।”

এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি ইলমী পরিবেশে ছিলেন, আলেমদের মজলিসে হাজির হয়েছেন এবং তাদের গবেষণার পদ্ধতিগুলো আয়ত্ব করতে পেরেছেন। অবশেষে তাদের মধ্য থেকে একজন ফকীহকে বাছাই করে নেন। যার পদ্ধতির সাথে তাঁর ইলমী ঝোঁকপ্রবনতা খাপ খেয়েছিল। তিনি হচ্ছেন ‘হাম্মাদ ইবন আবি সুলাইমান’। যিনি তার সময়কালে ইরাকের ফিকহের পণ্ডিতদের শীর্ষে ছিলেন। সুতরাং তিনি সুদীর্ঘ আঠারো বছর তার সান্নিধ্যে কাটান। সার্বক্ষনিক সাথী হিসেবে থাকেন।

হাম্মাদ ফিকহশাস্ত্রের অধিকাংশ জ্ঞান গ্রহণ করেন ‘ইব্রাহীম নাখায়ী’ থেকে। তার ফিকহ ছিল যুক্তিনির্ভর। আবার শা‘বীর কাছ থেকেও তিনি ফিকহ গ্রহণ করেন। তার ফিকহ ছিল হাদীস নির্ভর। আর এ দুজন ফিকহের জ্ঞান গ্রহণ করেছেন দুজন সাহাবীর কাছ থেকে। তারা হলেন, ‘আব্দুল্লাহ্‌ ইবন মাসউদ’ ও ‘আলী ইবন আবী তালেব’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। এ দু’জন সাহাবী কূফাতে বসবাস করেন এবং কূফাবাসীর কাছে ফিকহের বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার রেখে যান।

এছাড়া আবু হানীফার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন, ‘আতা ইবন আবী রাবাহ্‌’। ‘আতা’ রাহিমাহুল্লাহ আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাসের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জ্ঞানের সার-নির্যাস গ্রহণ করেছেন ইকরিমার কাছ থেকে। ইকরিমা ছিলেন ইবনে আব্বাসের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আযাদকৃত দাস ও তাঁর একান্ত ছাত্র। যখনি আবু হানীফা বায়তুল্লাহর প্রতিবেশী হতেন তখনি ‘আতা ইবন আবী রাবাহ এর সান্নিধ্যে থাকতেন।

আবু হানীফার শিক্ষকদের মধ্যে আরো রয়েছেন- ইবনে উমরের আযাদকৃত দাস ‘নাফে’। তার সান্নিধ্যে থেকে আবু হানীফা ‘ইবনে উমর’ ও ‘উমরের’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ফিকহের জ্ঞান গ্রহণ করতে পেরেছেন। এভাবে তিনি উমর, আলী, ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ ও ইবনে উমরের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইলম গ্রহণ করতে পেরেছেন তাদের ছাত্রদের কাছ থেকে। আবু হানীফা শুধু এসব ফকীহদের কাছ থেকে ইলম নিয়ে ক্ষান্ত হননি; বরং রাসূলের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বংশধরদের কাছ থেকেও ইলম গ্রহণ করেছেন, তাদের কাছে পড়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম যায়েদ ইবন আলী, মুহাম্মদ ইবন বাকের, জাফর সাদেক, আব্দুল্লাহ্‌ ইবন হাসান ইবন হাসান।

অগ্নি পরীক্ষা ও তাঁর মৃত্যু: আবু হানীফার সময়কালটা ছিল নানান ধারার চিন্তাচেতনা ও ফেতনা-ফাসাদে ভরপুর। বনী উমাইয়া ও বনী আব্বাসের সাম্রাজ্যদ্বয়ের শাসনকাল তিনি পেয়েছেন। একবার উমাইয়াদের শাসনাধীন কূফার গভর্নরের পুত্র আবু হানীফার কাছে তলব পাঠাল তার সাথে সহযোগিতা করতে হবে। তখন তিনি তার সাথে সহযোগিতা করতে অসম্মতি জানান। যার ফলে তাকে কারারূদ্ধ করে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি পালিয়ে মক্কায় এসে আশ্রয় নেন এবং ১৩০-১৩৬ হিঃ পর্যন্ত সময়কালে তিনি মক্কাতে অবস্থান করেন। পবিত্র মক্কা ছিল ইবনে আব্বাসের ইলমের প্রাণকেন্দ্র। সেখানে অবস্থান করে তিনি ইবনে আব্বাসের শিষ্যদের কাছ থেকে হাদীস ও ফিকহের জ্ঞান অর্জন করেন।

যখন ইসলামী সাম্রাজ্যের নেতৃত্বের ভার আব্বাসীদের হাতে আসল তখন তিনি কূফাতে ফিরে যান এবং আব্বাসীদের আনুগত্য ঘোষণা করেন। কূফায় ফিরে সেখানকার মসজিদে ইলম শিক্ষা দেওয়ার কাজ পুনরায় চালু করেন। আব্বাসীদের সাথে তার মিত্রতা দীর্ঘদিন অটুট ছিল। কিন্তু বাহ্যতঃ যা মনে হচ্ছে- আলে বাইতের কোনো এক সদস্যের প্রতি অর্থাৎ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর উত্তর পুরুষদের কারো একজনের প্রতি খলিফা মনসুরের বিরূপ অবস্থানকে তিনি সমালোচনা করেন। এছাড়াও খলিফার আশেপাশে এমন অনেক লোক ছিল যারা আবু হানীফার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করত এবং তাঁর বিরুদ্ধে মনসুরকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করত। যার ফলে খলিফা মনসুর তাঁর ইখলাস পরীক্ষা করার জন্য তাঁর কাছে কাজীর (বিচারকের) দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব পাঠান। ভুল বিচার করে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে ইমাম এই পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। কারণ তিনি মনে করতেন ‘কাজী বা বিচারকের পদের মত একটি স্পর্শকাতর পদের দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি যোগ্য নন। তাঁর এই অস্বীকৃতির কারণে তিনি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন। সুযোগ পেয়ে মনসুর তাঁকে বন্দী করে তাঁর উপর নির্যাতন চালায়। তারপর এই শর্তে তাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় যে, তাকে ফতোয়া দিতে হবে। কিন্তু তিনি কোনো ফতোয়া না দিয়েই মাসয়ালাগুলো ফেরত পাঠিয়ে দিতেন। এরপর পুনরায় তাকে জেলে পাঠানো হয়। তারপর আবার জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ফতোয়া দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি বাড়ী থেকে বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মৃত্যু অবধি তিনি এ অবস্থায় ছিলেন। সঠিক বর্ণনা মতে ১৫০ হিজরীতে তিনি মারা যান। কোনো কোনো বর্ণনা মতে, কারাগারে বিষ পান করিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়।

তাঁর ওসিয়ত অনুযায়ী তাকে ‘খায়যারান’ এলাকায় দাফন করা হয়। অনুমান করা হয় তাঁর জানাযাতে পঞ্চাশ হাজার লোক শরীক হয়েছিল। তাঁর উচ্চমানের দ্বীনদারী ও আল্লাহ্‌ভীতির স্বীকৃতি দিয়ে খলিফা মনসুর নিজেই তাঁর জানাযায় শরীক হন। মনসুর তাঁর ব্যাপারে বলেন, “জীবিত বা মৃত কোন সে ব্যক্তি যে আমার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইবে?”

আল্লাহ্‌ তায়ালা ইমাম আবু হানীফার প্রতি রহম করুন, তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাঁকেও সন্তুষ্ট করুন।

>
* ইমাম মুহাম্মদ আবু যাহরার “ইমাম আবু হানীফা হায়াতুহু ওয়া আসরুহু আ-রাউহু ওয়া ফিক্‌হুহু” শীর্ষক গ্রন্থের সহযোগিতা নিয়ে এই জীবনী লেখা হয়েছে।

[1] ফিকহুল হাদীস: যে শাস্ত্রে হাদীসের গ্রন্থগুলোর বিন্যাসের আলোকে ফিকহী মাসয়ালা-মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করা হয়।- অনুবাদক
হিজরতের দেশের ইমাম মালেক ইবন আনাস রাহিমাহুল্লাহ* [৯৩-১৭৯ হিঃ]

বংশ পরিচয়: তিনি হচ্ছেন হিজরতের দেশ মদীনার ইমাম, আবু আব্দুল্লাহ্‌ মালেক ইবন আনাস ইবন মালেক ইবন আবু আমের ইবন আমর ইবন হারেছ ইবন গায়মান ইবন জুছাইল ইবন আমর ইবন আলহারেছ আলআছবাহী।

শৈশবকাল: ইমাম মালেক আলেম-পরিবারে বড় হয়েছেন। তার দাদা মালেক ইবন আবু আমের বয়োজ্যোষ্ঠ তাবেয়ী ছিলেন এবং তাবেয়ীদের মাঝে বড় আলেম ছিলেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর শাসনামলে ‘মুসহাফ’ (কুরআন) লেখার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনি ও রাষ্ট্রীয় কাজে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এ কাজের জন্য সে যুগের যে সব উল্লেখযোগ্য লোকদেরকে ডাকা হয় ইমাম মালেকের দাদা ‘মালেক’ও তাদের একজন ছিলেন।

ইমাম মালিকের ভাই ‘নদর’ তৎকালীন আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে ইলম শিখতেন। এমনকি ইমাম মালেক যখন ইলমী মজলিসগুলোতে হাজির হওয়া শুরু করেন তখন লোকেরা মালেককে ‘নদরের ভাই’ বলে চিনত। এরপর ইমাম মালেকের ইলমী খ্যাতি যখন আলেমদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে তখন নদরকে ‘ইমাম মালেকের ভাই’ বলা হত।

যে অঞ্চলে ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বড় হয়েছেন সার্বিকভাবে সে অঞ্চল ছিল ইলমের জন্য উপযুক্ত, মেধার বিকাশের জন্য উর্বর। যেহেতু তা হচ্ছে মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র মদীনা, শরীয়ত নাযিলের পূণ্যভূমি, আলো বিচ্ছুরণের উৎস, ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম কেন্দ্রস্থল। প্রথম উমাইয়া শাসনামলে এটি ছিল আলেমদের বিচরণভূমি। এমনকি ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কূফাতে থাকাকালে যখন কোনো মাসয়ালায় ফতোয়া দিতেন এবং মদীনায় এসে এর বিপরীত কোনো মত অবগত হতেন তখন তিনি বাহন থেকে নামার আগে ফতোয়া জিজ্ঞেসকারী ব্যক্তিকে সঠিক মতটি জানিয়ে আসতেন।

এমন একটি মনোরম ইলমী পরিবেশে ইমাম মালেক বড় হয়েছিলেন। শৈশবেই তিনি কুরআন শরীফ মুখস্থ করেন। তারপর হাদীস মুখস্থ করায় মশগুল হন। এরপর আলেমদের মজলিসে যাওয়া-আসা শুরু করেন।

ইলম অর্জন ও তাঁর ইলমী মর্যাদা: ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন ইলম তলবে পরিশ্রমী। পরিপূর্ণ উদ্যম, ধৈর্য্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ইলম অর্জনে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। আলেমরা তাদের ঘর থেকে মসজিদে বের হওয়ার সময়ের প্রতীক্ষায় বসে থাকতেন তিনি। ইমাম মালেক নিজের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেন, “তিনি ‘ইবনে হুরমুযের’ কাছে সাত বছর কাটিয়েছেন। এ সময় তিনি অন্য কারো কাছে যান নি।” সাত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হুরমুযের সান্নিধ্যে থাকতেন। ইবনে হুরমুয তাঁর মাঝে শুভ লক্ষণ দেখতে পেয়ে তাঁর ব্যাপারে উত্তম ভবিষ্যতের আশাবাদী ছিলেন। একদিন হুরমুয তাঁর দাসীকে বললেন, ‘দেখ তো দরজায় কে? দাসী মালেক ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেল না। এসে বলল, সেখানে ঐ গৌরবর্ণের ফর্সা লোকটি। হুরমুয বললেন, তাকে ডেকে আন; সে মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আলেম।’

বিশ্রামের সময়ও যদি ইলম তলবের কোনো সুযোগ থাকত মালেক রাহিমাহুল্লাহ সে সুযোগ হাতছাড়া করতেন না। মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “একবার ঈদের দিনে আমি ভাবলাম আজ ‘ইবনে শিহাব’ নিরিবিলি থাকবেন। এই ভেবে আমি ঈদগাহ থেকে সোজা তার বাসার দরজায় গিয়ে বসে থাকলাম। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম তিনি তাঁর দাসীকে বলছেন, দেখ তো দরজায় কে? দাসী বলল, ঐ তো সে মালেক নামের ফর্সা লোকটি। তিনি বললেন, তাকে ঘরে আসতে দাও। আমি ঘরে ঢুকলাম। আমাকে বললেন, তুমি বাসায় যাওনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, কিছু খেয়েছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, কিছু খাবে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে কি চাও? আমি বললাম, আমাকে কি হাদীস শুনাবেন? তিনি বললেন, ঠিক আছে বস। আমি আমার হাদীসের নোট বই বের করলাম। তখন তিনি আমাকে চল্লিশটি হাদীস শুনালেন। আমি বললাম, আরো শুনান। তিনি বললেন, এটাই যথেষ্ট। তিনি বললেন, যদি তুমি এই হাদীসগুলো (মুখস্থ) শুনাতে পার তাহলে তুমি ‘হাদীসের হাফেয’। আমি বললাম, আমি শুনাতে পারব। তিনি তখন আমার হাত থেকে খাতাগুলো নিয়ে ফেললেন। তারপর বললেন, শুনাও দেখি। আমি তাকে শুনালাম। এরপর আমাকে খাতাগুলো দিয়ে বললেন, “উঠে যাও। তুমি ইলমের ভাণ্ডার।”

ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ আবদুল্লাহ ইবনে উমরের আযাদকৃত দাস নাফে’র কাছ থেকেও প্রচুর ইলম শিখতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে ইমাম মালেক বলেন, “ঠিক দ্বিপ্রহরে আমি তার কাছে আসতাম। সূর্যের উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য কোনো গাছের ছায়া পেতাম না। তাঁর বের হওয়ার প্রতীক্ষায় বসে থাকতাম। যখন তিনি বের হতেন তখন কিছু সময় আমি অপেক্ষা করতাম, যেন আমি তাকে দেখতে পাইনি। একটু পর গিয়ে সালাম দিয়ে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। এমনকি তিনি পুনরায় ঘরে ঢুকার আগ পর্যন্ত আমি বলতে থাকতাম ‘ইবনে উমর’ অমুক বিষয়ে কি বলতেন, অমুক মাসয়ালায় কি বলতেন। আর তিনি আমাকে উত্তর দিতেই থাকতেন।

এভাবে ইলম অর্জনের পথে জানমালের সর্বোচ্চ কুরবানী দিতে তিনি সামান্যতম কার্পণ্য করেন নি। তাঁর ছাত্র ‘ইবনে কাসেম’ তাঁর ব্যাপারে বলেন, ইলমের পথে ত্যাগ করতে করতে ইমাম মালেক ফতুর হয়ে পড়েছিলেন। তার ঘরের ছাদ ভেঙ্গে পড়েছিল। তখন তিনি ছাদের কাঠগুলো খুলে বিক্রি করে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বৈষয়িক সমৃদ্ধি পেয়েছেন।

যখন ইমাম মালেকের চিন্তা পরিপক্কতা পেল এবং তার ব্যক্তিত্ব পূর্ণতা লাভ করল তখন তিনি মসজিদে নববীতে পাঠদান ও ফতোয়া দেওয়ার ব্রতে মশগুল হন। তার ওস্তাদদের কাছ থেকে তার ইলমী যোগ্যতার সত্যায়ন ও স্বীকৃতি পাওয়ার পর তিনি উক্ত ব্রতে মশগুল হন। তিনি বলেন, “হাদীসের পাঠদান ও ফতোয়া দেওয়ার জন্য আমি যোগ্য - আমার সত্তরজন ওস্তাদ এই সাক্ষ্য দেওয়ার পর আমি পাঠদান ও ফতোয়া দেওয়া শুরু করি। যারা এই সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের মধ্যে ইমাম যুহরী ও রাবীয়া’র মত ব্যক্তিবর্গও ছিলেন।” তিনি এই কথাটি সবসময় বলতেন, “যে ব্যক্তি নিজের জন্য এমন কোনো পদ দাবী করে, যে পদের জন্য মানুষ তাকে যোগ্য মনে করে না সে ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নাই ।”

তাঁকে যদি কোনো মাসয়ালা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হত, যা তার অজানা, তিনি সাফ বলে দিতেন, “আমি জানি না।” তিনি তাঁর ওস্তাদ হুরমুয থেকে এ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তিনি হুরমুয থেকে বর্ণনা করে বলেন, “আমি হুরমুযকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: আলেমের উচিত তাঁর শিষ্যদেরকে “আমি জানি না” এ কথা বলা শিক্ষা দিয়ে যাওয়া। যেন এই বাক্যটি তাদের হাতে একটি হাতিয়ার হিসেবে থাকে। যখন তাদের কেউ কোনো প্রশ্ন শুনে কি উত্তর দিবে ভেবে না পায় তখন সে যেন বলে, “আমি জানি না”

ইমাম মালেক আলেম সমাজের ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁর ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা বলেন, “কোন প্রশ্নের তড়িৎ জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং সমালোচনামূলক আলোচনায় আমি ইমাম মালেকের তুল্য কাউকে দেখিনি।”

আবু ইউসুফ তাঁর ইলমী মর্যাদার সত্যায়ন করতে গিয়ে বলেন: “তিন ব্যক্তির চেয়ে অধিক ইলমধারী আমি আর কাউকে দেখিনি। তারা হচ্ছেন- মালেক, ইবনে আবি লাইলা, আবু হানীফা।” শেষ দুজন ছিলেন আবু ইউসুফের ওস্তাদ, তাই মালেককে তিনি তাঁদের পর্যায়ে স্থান দেন।

ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ ব্যাপারে তাঁর ছাত্র ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “তাবেয়ীদের পর ইমাম মালেক ছিলেন মাখলুকাতের উপর আল্লাহ্‌ তা‘আলার সাক্ষী। মালেক হচ্ছেন আমার ওস্তাদ, আমি তাঁর কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করেছি। তিনি আমার শিক্ষক। আমার উপর অন্য কারো চেয়ে মালেকের অবদান অনেক বেশী। তাঁকে আমি আমার মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে হুজ্জত মনে করি।”

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “মালেক হচ্ছেন শীর্ষস্থানীয় আলেমদের একজন। তিনি হাদীসের ক্ষেত্রেও ইমাম, ফিকহের ক্ষেত্রেও ইমাম। মালেকের তুল্য আর কে আছে? যিনি পরিপূর্ণ বোধ ও আদবের সাথে পূর্ববর্তীদের আদর্শের অনুসারী ছিলেন।”

হাদীসে এসেছে- “ইলমের সন্ধানে মানুষ দেশ-দেশান্তরে সফর করবে। কিন্তু তারা মদীনার আলেমের চেয়ে অধিক ইলমধারী আর কাউকে পাবে না।”[1] তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের মতে এই হাদীসটিতে ইমাম মালেককে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।

কঠিন পরীক্ষা: আব্বাসী যুগে খলিফা মনসুরের সময় ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন। তৎকালীন সময়ে মদীনার গর্ভনর ছিল খলিফা মনসুরের চাচাতো ভাই। সে ইমাম মালেকের গায়ে হাত তোলে। কারণ পরশ্রীকাতর কিছু ব্যক্তি ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর বিরুদ্ধে একটা অপপ্রচার রটিয়ে দেয়। তারা বলে, “ইমাম মালেক ফতোয়া দিচ্ছেন যে, ‘চাপের মুখে যে ব্যক্তি কোনো স্বীকৃতি দেয় তার কাছ থেকে কসম তলব করা যাবে না।’ এ কথার অর্থ হচ্ছে- আপনারা জোরপূর্বক যাদের কাছ থেকে বায়‘আত (শাসক হিসেবে স্বীকৃতি) গ্রহণ করেছেন ইমাম মালেক তাঁর এ ফতোয়ার মাধ্যমে সে বায়‘আতকে ভঙ্গের কথা বলছে।” তখন গভর্নরের নির্দেশে তাঁকে ধরে আনা হয় এবং সত্তরটি বেত্রাঘাত করা হয়। যার ফলে তিনি কাতর হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন।

ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর প্রতি মুসলিমদের অন্তরে ছিল অগাধ সম্মান। তাই এ ঘটনার পর পুরো মদীনার অলি-গলি থরথর করে কেঁপে উঠে। মানুষ তীব্র প্রতিবাদে ও বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। তখন খলিফা হেজাযবাসীদের অভ্যুত্থানের ভয়ে ইমাম মালেককে ইরাকে ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। অবশেষে খলিফা হজ্জের সময় মিনাতে তার সাথে দেখা করার কথা বলে পাঠান। যখন ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ খলিফার সাক্ষাতে প্রবেশ করেন তখন মনসুর তার আসন থেকে নীচে নেমে বসেন এবং মালেককে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে একবারে তার কাছে নিয়ে বসান। এরপর তাঁকে প্রহার করা ও কষ্ট দেওয়ার কারণে দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আবু আব্দুল্লাহ্‌ (মালেকের উপনাম), সেই আল্লাহ্‌র শপথ যিনি ছাড়া সত্য কোনো মাবুদ নাই- এই নির্দেশ আমি দেইনি। এমনকি ঘটনাটা ঘটার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না এবং জানার পর আমি তা মেনে নিতে পারিনি। আবু আব্দুল্লাহ্, আপনি যতদিন হেজাযে আছেন ততদিন হেজাযবাসী কল্যাণে থাকবে। আমি মনে করি আল্লাহ্‌র শাস্তি থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য আপনিই তাদের সহায়। আল্লাহ্‌ তা‘আলা আপনার মাধ্যমে তাদেরকে বড় এক বিপদ থেকে বাঁচিয়েছেন। আমি ফরমান জারি করেছি গভর্নর জাফরকে যেন মদীনা থেকে খাটে করে আনা হয় এবং একটি সংকীর্ণ স্থানে বন্দী করে রেখে চরম অপমান করা হয়। সে আপনার সাথে যতটুকু বেয়াদবি করেছে আমি তাকে এর চেয়েও বেশী শাস্তি দিব।

ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বললেন, “হে আমীরুল মুমেনীন! আল্লাহ্‌ তাকে মাফ করুন এবং তার সম্মান বৃদ্ধি করুন। আল্লাহ্‌র রাসূলের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুটুম হওয়ার কারণে এবং আপনার সাথে তার আত্মীয়তা থাকার কারণে আমি তাকে মাফ করে দিলাম।”

তাঁর লিখিত গ্রন্থাবলী: সাহাবীদের যুগের মুজতাহিদ আলেমগণ তাদের ফতোয়া লিপিবদ্ধ করতে বাধা দিতেন। যেন ইসলামের মূলনীতির উপর লিপিবদ্ধ বই একটিই থাকে- ‘কুরআন’। এরপর আলেমরা সুন্নাহ্‌ সংকলন করা এবং ফতোয়া ও ফিকহ লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু তখনও এই জ্ঞানগুলো গ্রন্থের রূপ লাভ করেনি, বরং অনেকটা ব্যক্তিগত নোটবুকের আকারে ছিল। ইমাম মালেকের “মুয়াত্তা”- ই ইসলামী জ্ঞানের প্রাচীনতম গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

তিনি এ বইয়ের মধ্যে সহীহ হাদীস, সাহাবী ও তাবেয়ীদের বাণী, তাদের ফতোয়া এবং তাঁর নিজস্ব মতামত উল্লেখ করেছেন। এই গ্রন্থের সংকলন সমাপ্ত করতে তাঁর চল্লিশ বছর সময় লেগেছে। এ থেকেই বুঝা যায় যে, তিনি এ গ্রন্থটি সংকলন করতে কতটুকু পরিশ্রম করেছেন। এই কিতাবের সুনাম কুড়ানোর জন্য এইটুকু যথেষ্ট যে, ইমাম শাফেয়ী এই গ্রন্থের ব্যাপারে বলেন, “পৃথিবীর বুকে ‘মুয়াত্তার’ চেয়ে বিশুদ্ধ কোনো ইলমী কিতাব নেই।” ইমাম নাসায়ী বলেন, “আমার দৃষ্টিতে তাবেয়ীদের পর ইমাম মালেকের চেয়ে উত্তম, উৎকৃষ্ট, নির্ভরযোগ্য এবং হাদীসের ব্যাপারে বিশ্বস্ত আর কোনো ব্যক্তি নেই। দুর্বল রাবীদের কাছ থেকে তার বর্ণনা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।”তাঁর অসুস্থতা ও মৃত্যু: ইমাম মালেক বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হন। যার ফলে তার দরসের মজলিস (শিক্ষা মজলিস) মসজিদে নববী থেকে তাঁর ঘরে স্থানান্তরিত করেন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি ইলম তলব, হাদীস গ্রহণ, পাঠদান ও ফতোয়া দেওয়ার মহানব্রতে রত থাকেন। অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে তিনি দীর্ঘ ২২দিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকার পর ১৪ই রবিউল আউয়াল ১৭৯ হিজরীতে মারা যান। তিনি তাঁর রোগের ব্যাপারে এবং মসজিদে নববী থেকে তার দরস সরিয়ে নেয়ার কারণ সম্পর্কে তার মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত কাউকে কিছু জানাননি। মৃত্যুর দিন তার দর্শনার্থীদেরকে বলেন, “হয়ত এটা আমার শেষ দিন। তাই আপনাদেরকে আমার বহুমূত্র রোগের কথা জানালাম। আমি অজু ছাড়া মসজিদে নববীতে আসাটা অপছন্দ করতাম এবং আমি আমার রোগের কথা জানানোটাও অপছন্দ করেছিলাম। বরং আমার রব্বের কাছেই অভিযোগ করতাম। আল্লাহ্‌ তা‘আলা ইমাম মালেকের প্রতি রহম করুন। তার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন। তার ব্যাপারে ইবনে উয়ায়না যা বলেছেন বাস্তবে তিনি তাই ছিলেন। তিনি বলেছেন, “মালেক হচ্ছে এ উম্মতের প্রদীপ।”

>
* ইমাম মুহাম্মদ আবু যুহরার “মালেক হায়াতুহু ওয়া আসরুহু: আ-রাউহু ওয়া ফিক্‌হুহু” এবং ড. আহমাদ ত্বহা রাইয়্যানের “মালামিহ মিন হায়াতি মালেক ইবন আনাস” শীর্ষক গ্রন্থদ্বয়ের সহযোগিতা নিয়ে এই জীবনীটি সাজানো হয়েছে।


[1] আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে তিরমিযী তার জামে’ গ্রন্থে (নং ২৬৮০) হাদীসটি সংকলন করেছেন।
ইমাম মুহাম্মদ ইবন ইদ্রিস শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ* [১৫০হিঃ-২০৪হিঃ]

বংশ পরিচয়: তিনি হচ্ছেন আবু আব্দুল্লাহ্‌ মুহাম্মদ ইবন ইদ্রিস ইবন আল-আব্বাস ইবন ওসমান ইবন শাফে’ ইবন আস-সায়েব ইবন উবাইদ ইবন আবদ ইয়াযীদ ইবন হাশেম ইবন আল-মুত্তালিব ইবন আবদে মানাফ। এই আবদে মানাফ হচ্ছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরদাদা। আর শাফে’ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ছিলেন। শাফে’র পিতা আস-সায়েব বদরের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মাতা ছিলেন ইয়েমেনের আয্‌দ কবিলার মেয়ে। জন্মগতভাবে এ মহিলা অনেক বুদ্ধিমতি ছিলেন।

জন্ম ও শৈশব: যে বছর ইমাম আবু হানীফা মারা যান সে বছর অর্থাৎ হিজরী ১৫০ সালে ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে ইমাম শাফেয়ী জন্মগ্রহণ করেন। গাজা তার পিতৃভূমি ছিল না। বরং তার পিতা ইদ্রিস একটা বিশেষ প্রয়োজনে সপরিবারে গাজায় যান। সেখানেই তার ছেলে মুহাম্মদের জন্ম হয় এবং তিনি মারা যান। ইমাম শাফেয়ীর বাবা যখন মারা যান তখন তিনি দুই বছরের শিশু। তার বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা তাকে নিয়ে মক্কায় চলে আসেন। তিনি ইয়েমেনে নিজ কবিলা ‘আয্‌দের’ কাছে না গিয়ে ছেলেকে নিয়ে মক্কায় যাওয়াটা শ্রেয় মনে করেন। যেন ছেলের বংশ পরিচয় বিম্মৃত না হয় এবং ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগারে রাসূলের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মীয়দের জন্য যে অংশ বরাদ্দ থাকে তা থেকেও যেন তার ছেলে বঞ্চিত না হয়। এটাই ছিল এই শিশুর জীবনে প্রথম সফর যার পুরো জীবনটা ইলমী সফরে কাটে।

ইমাম শাফেয়ী মক্কাতে বড় হয়েছেন। উচ্চ বংশীয় মর্যাদা নিয়ে তিনি বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু তাকে জীবন যাপন করতে হয়েছে এতীম ও গরীবদের মত। সম্ভ্রান্ত বংশের যে শিশু গরীবি হালতে জীবন যাপন করে বড় হয় তার মাঝে উন্নত চরিত্র ও উত্তম আখলাক শোভা পায়। বংশ ভাল হওয়ার কারণে তার মানসিকতা থাকে অনেক বড়। আর গরীব হওয়ার কারণে সে মানুষের দুখ-দুর্দশা, সমাজের ভেতরের অবস্থা নিজে অনুভব করতে পারে। যে ব্যক্তি সামাজিক কোনো কাজে ভূমিকা রাখতে চায় তার জন্য এ গুণটি অত্যন্ত জরুরী।

ইলম অর্জন ও ইলমী মর্যাদা: সাত বছর বয়সে তিনি কুরআন শরীফ মুখস্থ করেন। মক্কার বড় ক্বারী ঈসমাইল ইবন কুসতানতিনের কাছে তিনি তাজবীদ শিক্ষা করেন। মক্কার আলেমদের কাছে তিনি তাফসীরের ইলম অর্জন করেন। যারা ‘কুরআনের ভাষ্যকার[1] ও কুরআনের মুফাস্সির’ আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাসের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইলমের ওয়ারিস ছিলেন। কুরআন মুখস্থ করার পর তিনি হাদীস মুখস্থ করায় মনোযোগী হন।

ছেলেবেলা থেকে তিনি আরবী ভাষার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। আরবী ব্যাকরণ, সাহিত্য, কবিতা ও ভাষাশৈলী আয়ত্ব করার জন্য তিনি বেদুঈন পল্লীতে চলে যান। দীর্ঘ দশ বছর হুযাইল কবিলাতে অবস্থান করে তিনি তাদের ভাবপ্রকাশের ভঙ্গি এবং শিল্প-সাহিত্য আয়ত্ব করেন। হুযাইল গোত্র ছিল আরবদের মাঝে সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী কবিলা। যার ফলে ইমাম শাফেয়ী অল্প বয়সে আরবী ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেন।

বিখ্যাত আরব্য সাহিত্যিক আসমায়ী’ বলেন, “আমি হুযাইল গোত্রের কবিতামালার ভুলগুলো শুধরে নিয়েছি কুরাইশদের এক বালকের কাছে। তার নাম মুহাম্মদ ইবন ইদ্রীস।” ইমাম শাফেয়ী মক্কার মসজিদে মসজিদে ঘুরে বেড়াতেন, আর মনোযোগ দিয়ে আলেমদের দরস (লেকচার) শুনতেন। খুব সংকটের মাঝে তিনি জীবন ধারণ করতেন। লেখার জন্য কাগজ কেনার পয়সা মিলতো না। তাই তিনি হাড্ডি, চীনামাটির পাত্র, সমান্তরাল যে কোনো কিছু সংগ্রহ করে সেগুলোর উপর লিখতেন। তিনি বলতেন, “অভাবের মাঝে যে ইল্‌ম তলব করে নাই সে ইল্‌ম অর্জনে সফল হবে না। আমি লেখার জন্য খাতা কেনার পয়সা পেতাম না।”

সে যুগের আলেম-ওলামা, ফিকহবিদরা মদীনার উদ্দেশ্যে সফর করত মদীনার প্রসিদ্ধ আলেম মালেক ইবন আনাসকে দেখার জন্য। মসজিদে নববীতে ইমাম মালেকের দরসের মজলিস ছিল। খলিফারাও সে মজলিসের কদর করতেন। ইমাম শাফেয়ীর কানেও ইমাম মালেকের খবর পৌঁছে। তিনি ইমাম মালেককে দেখার জন্য, তার ইলমের বাণী শুনার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে পড়েন। এ উদ্দেশ্যে তিনি মালেকের মুয়াত্তা গ্রন্থ মুখস্থ করে ফেলেন। এরপর ইয়াসরিবের উদ্দেশ্যে সফর করেন। অনেক কষ্ট-ক্লেশের পর তিনি ইমাম মালেকের দরজায় পৌঁছতে সক্ষম হন। ইমাম মালেকের ফারাসা (অর্ন্তদৃষ্টি) ছিল। তিনি শাফেয়ীর দিকে একনজর তাকিয়ে বলেন, “মুহাম্মদ! আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং পাপ থেকে বেঁচে থাক। অচিরেই তোমার মহান মর্যাদা হবে।” অপর এক রেওয়ায়েতে এসেছে, “আল্লাহ্‌ তোমার অন্তরে একটা নূর ঢেলে দিয়েছেন। গুনায় লিপ্ত হয়ে এ নূরকে নিভিয়ে ফেলো না।” এরপর বললেন, “আগামীকাল আস। যে ছাত্র কিতাব পড়বে এবং তুমি শুনবে সেও আগামীকাল আসবে।” শাফেয়ী বললেন, “আমি নিজেই পড়ব। এরপর আমি পুরা মুয়াত্তা মালেককে মুখস্থ শুনিয়েছি, কিতাব আমার হাতে ছিল। আমার পড়ার ধরন এবং ব্যাকরণিক নির্ভুলতা দেখে মালেক বেশ অভিভূত হন। মালেক বিরক্ত হন কিনা - এই ভয়ে যখনি আমি পড়া বন্ধ করতে চাইতাম তিনি বলতেন, এই ছেলে আরো পড়। তাই অতি অল্প দিনে সম্পূর্ণ মুয়াত্তা আমি তাকে পড়ে শুনিয়েছি। তিনি বলতেন, যদি কেউ সফলকাম হওয়ার থাকে, তাহলে সে হল এই ছেলেটি।” মুয়াত্তা পড়া শেষ করার পর তিনি মালেকের কাছে উক্ত কিতাবের আলোকে ফিকহ শিখতে থাকেন এবং মালেক রাহিমাহুল্লাহ যেসব মাসয়ালায় ফতোয়া দিতেন সেগুলো বুঝতে থাকেন। ওস্তাদ ও ছাত্রের মাঝে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলতেন, “আমার কাছে এই ছেলের চেয়ে অধিক সমঝদার কোনো কুরাইশী ছেলে আসেনি।” আর শাফেয়ী বলতেন, “যদি আলেমদের কথা বলতে হয় তবে মালেক হচ্ছেন নক্ষত্রতুল্য। মালেক আমার প্রতি সবচেয়ে বেশী অনুগ্রহ করেছেন।”

তার ইবাদত বন্দেগী ও আখলাক: তিনি ছিলেন অত্যধিক ইবাদতগুজার। রাত্রিকে তিনি তিনভাগে ভাগ করতেন। একভাগ ইল্‌মের জন্য, একভাগ ঘুমের জন্য, আর একভাগ ইবাদতের জন্য। তিনি তার রবের সামনে নামাযে দাঁড়িয়ে তেলাওয়াত করতে থাকতেন; আর আমলে কসুরের ভয়ে তার চক্ষু অঝোর ধারায় অশ্রু বিসর্জন করতে থাকত।” অতি বিনয়ের কারণে তিনি নিজেকে পাপী মনে করতেন। তিনি বলতেন,

“আমি সালেহীনদের (পূন্যবানদের) ভালবাসি; কিন্তু আমি পূন্যবান নই। এ আশায় যে আমি তাদের শাফায়াত পাব।

আমি তাদেরকে অপছন্দ করি যাদের সম্বল হল পাপ; যদিও সম্বলের দিক থেকে আমি এবং ওরা পরস্পর সমান।”

যিনি নিজের ব্যাপারে এই কথা বলেছেন লোকেরা তার ব্যাপারে বলেছে, “পূণ্যের পথ থেকে বিচ্যুতির সামান্যতম মোহ তার ব্যাপারে জানা যায়নি।”

আল্লাহ্‌ এই মহান আলেমকে তার খাস অনুগ্রহ প্রদান করেছেন। এ কারণে তার কথার দারুন প্রভাব ছিল। তার কথা বের হত আলোকিত অন্তর থেকে। তাছাড়া নিরবিচ্ছন্ন ইবাদত ও আল্লাহ্‌র প্রতি তীব্র ভালোবাসা তার কথার প্রভাব ও আকর্ষণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করেছিল। কুরআনের প্রতি ও এর সুহবতের প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত অনুরক্ত। প্রতিদিন তিনি এক খতম কুরআন শরীফ পড়তেন। আর রমযানে দিনে এক খতম এবং রাতে এক খতম পড়তেন। যখন তিনি কুরআন পড়তেন তখন নিজেও কাঁদতেন এবং শ্রোতাদেরকেও কাঁদাতেন। তাঁর সময়কার জনৈক ব্যক্তি বলেন, “আমরা যখন কাঁদতে চাইতাম তখন একে অপরকে বলতাম: চল আমরা মুত্তালিবের বংশধর ঐ ছেলেটার কাছে গিয়ে কুরআন পড়ি। যখন আমরা তার কাছে আসতাম সে কুরআন পড়া শুরু করত। পড়ার এক পর্যায়ে মানুষ তার সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ত এবং কান্নার রোল পড়ে যেত। যখন সে এ অবস্থা দেখত তখন পড়া বন্ধ করে দিত।”

শরীয়তের বিধানের উপর তিনি এক পায়ে খাড়া থাকতেন। তিনি ছিলেন মহানুভব, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, উন্নত চরিত্রের অধিকারী, যেমনটি হয়ে থাকে রাসূলের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বংশধররা। তেমনি ছিলেন দানশীল। গরীব-মিসকীনকে এত অঢেল দান করতেন যেন তিনি অভাবকে কোনো তোয়াক্কা করতেন না। তার দানের ব্যাপারে অনেক বিস্ময়কর সব বর্ণনা রয়েছে।

তিনি বলতেন, “মনুষ্যত্বের ভিত্তিস্তম্ভ চারটি। সৎচরিত্র, দানশীলতা, বিনয় এবং ইবাদত-বন্দেগী।” লাজুকতা ছিল তার বিশেষত্ব। এমনকি তার ব্যাপারে বলা হয় যে, যদি তার কাছে এমন কিছু চাওয়া হত যা তার কাছে নেই তখন লজ্জায় তার চেহারা লাল হয়ে যেত।

অগ্নি পরীক্ষা: ইমাম শাফেয়ীর বিরুদ্ধে শিয়ামতবাদের প্রতি অনুরক্ততার অভিযোগ তোলা হয়। খলিফা হারুন-অর-রশীদের দরবারে তাকে চক্রান্তকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। ফলে হারুন-অর-রশীদ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ফরোয়ানা জারি করেন। আদেশ মতে তাকে এবং আরো নয়জন আলাওয়ীকে রশীদের কাছে ধরে আনা হয়। তখন তার বয়স ছিল ৩৪ বছর। শাফেয়ীর সামনে আলাওয়ীদের নয়জনকে একের পর এক হত্যা করা হয়। এরপর আসে তার পালা। বিচারক ‘মুহাম্মদ ইবন হাসান’ হারুনের সামনে উপস্থিত ছিলেন। শাফেয়ী তার বুদ্ধিমত্তা ও প্রত্যুৎপন্নমতিতা দিয়ে খলিফার বিবেক ও মন ঝোঁকাতে পেরেছেন এবং তার নির্দোষত্ব তুলে ধরতে পেরেছেন। তখন খলিফা তাকে বিচারক মুহাম্মদ ইবন হাসানের কাছে সোপর্দ করেন। আলেমরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহমর্মী হওয়াই স্বাভাবিক। বিচারক তার পক্ষে কথা বলেন এবং খালাস পেতে সহযোগিতা করেন। বিচারক বলেন, “তার ইলমী মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তার ব্যাপারে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয়।” এভাবে তিনি অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। উপরন্তু খলিফা তার জন্য পঞ্চাশ হাজার মুদ্রা উপঢৌকন হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দেন। শাফেয়ী খলিফার কাছ থেকে এ উপঢৌকন গ্রহণ করে আবার তার সদর দরজাতেই তা বিতরণ করে দেন।

অসুস্থতা ও মৃত্যু: শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ অনেক রোগ-ব্যাধিতে ভুগতেন। বিশেষত অর্শ্বরোগে। তার শেষ জীবনে এ রোগ তীব্র আকার ধারণ করে। তিনি কোনো বাহনে চড়লে হয়তো পরক্ষণেই রক্তপাত শুরু হত। তার বসার বিছানার উপর একটা মোটা নরম কাপড়ের পট্টি থাকত। রক্ত পড়লে এ কাপড়টি চুষে নিত। তিনি রোগ নিয়ে যে কষ্ট করেছেন এমন কষ্ট আর কেউ করেছে বলে মনে হয় না। কিন্তু রোগব্যাধি তাকে পাঠদান, গবেষণাকর্ম ও পড়াশুনা থেকে বিরত রাখতে পারে নি। তার মত মহান ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে এটি অবাস্তব কিছু নয়। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- কোন লোকেরা সবচেয়ে বেশী বিপদাপদের মুখোমুখি হোন? তিনি বলেন, “নবীরা, তারপর তাদের নিকটবর্তী মর্যাদার অধিকারীরা, তারপর তাদের নিকটবর্তী মর্যাদার অধিকারীরা”[2] তার মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার ছাত্র মুযানি তার সাথে দেখা করতে যান। তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন আজ সকালে আপনার কেমন লাগছে? তখন তিনি বলেন, “আজ আমি দুনিয়াকে বিদায় জানাচ্ছি, বন্ধুবান্ধবকে ছেড়ে যাচ্ছি, মৃত্যুর সুধা পান করছি, আল্লাহ্‌র পানে অগ্রসর হচ্ছি। আল্লাহ্‌র শপথ! আমি জানি না আমার রূহ কি জান্নাতের পথযাত্রী, যার ফলে আমি তাকে অভিবাদন জানাব; নাকি জাহান্নামের পথযাত্রী যার ফলে আমি তার জন্য শোক করব। এরপর কেঁদে দিয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে করতে বলেন-

“আমার আত্মা কঠিন হয়ে পড়ল, সব রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে এল। এখন আপনার ক্ষমা আমার জন্য আশার সোপান।

আমার গুনাহ্‌ অনেক বেশী, অনেক বড়; কিন্তু যখন আমি আমার গুনাহকে আপনার ক্ষমার সাথে তুলনা করি তখন দেখি আপনার ক্ষমাই বড়।

আপনি তো ক্ষমা করে যাচ্ছেন, উদারতা দেখিয়ে যাচ্ছেন; ক্ষমা করাটা আপনার একান্ত অনুগ্রহ, নিরেট অনুকম্পা।”

২০৪ হিজরীর রজব মাসের শেষ রাত্রে চুয়ান্ন বছর বয়সে তার রূহ তার রবের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।

এর পরের দিন আসরের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহকে মিসরের “কারাফা” নামক স্থানে তার অন্তিম শয্যার দিকে বহন করে নিয়ে যায়। শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর মৃত্যুতে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। আলেমদের চেহারায় শোকের কালিমা ফুটে উঠে। তার ছাত্রদের ডানা ভেঙ্গে যায়। আমাদের উজ্জ্বল ইতিহাসের একটি পাতা ঝরে পড়ে। মানবাকাশে যে উজ্জ্বল নক্ষত্র উদিত হয়ে পূর্বপশ্চিম দিগন্ত আলোকিত করেছিল তা অস্তমিত হয়ে যায়। আল্লাহ্‌ তা‘আলা শাফেয়ীর প্রতি রহম করুন, তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন, তার অন্তিম শয্যা উত্তম করুন। তার ব্যাপারে ইমাম আহমদ যে মন্তব্য করেছেন তিনি বাস্তবে তেমনি ছিলেন। ইমাম আহমদ বলেন, “শাফেয়ী ছিলেন দুনিয়ার জন্য সূর্য যেমন, দেহের জন্য সুস্থতা যেমন। দেখ এ দুটির কোনো উত্তরসূরী আছে কি অথবা এ দুটির কোনো বিকল্প আছে কি?”

>
* মুহাম্মদ আবু যুহরার “আশ শাফেয়ী” এবং “হাশিয়াতুল বুজাইরামী” শীর্ষক গ্রন্থদ্বয়ের সহযোগিতা নিয়ে জীবনীটি লেখা হয়েছে।


[1] ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর উপাধি।

[2] ইমাম তিরমিজী তার জামে’ গ্রন্থে সাদ ইবন আবি ওক্কাস (রাঃ) এর সূত্রে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হা. নং (২৩৯৮)
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ* [১৬৪হিঃ- ২৪১হিঃ]

বংশ পরিচয়: তিনি আবু আব্দুল্লাহ্‌ আহমাদ ইবন মুহাম্মদ ইবন হাম্বল ইবন হিলাল আশশায়বানী আযযুহলী। তিনি বাবা-মা উভয়ের দিক থেকে শায়বানী কবিলার ছেলে। তার মা হচ্ছেন- সাফিয়্যা বিনতে মায়মুনা বিনতে আব্দুল মালিক আশশায়বানী (শায়বানী হচ্ছে বনু আমেরের শাখা কবিলা)।

ইমাম আহমাদ খাঁটি আরব কবিলাতে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার বংশধারায় কোনো অনারবের অনুপ্রবেশ ঘটেনি কিংবা মিশ্রণও ঘটেনি। নাযার ইবন মা‘আদ ইবন আদনানের সাথে গিয়ে তার বংশধারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশের সাথে মিলিত হয়েছে।

ইমাম আহমাদ তার ঐতিহ্যবাহী পরিবার থেকে আত্মসম্মানবোধ, সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা, ধৈর্য্য, কষ্টসহিষ্ণুতা, সুদৃঢ় ও মজবুত ঈমান ইত্যাদি মহান গুণাবলীর দীক্ষা পান। তিনি বেড়ে উঠার সাথে সাথে তার মাঝে এসব গুণাবলীও বৃদ্ধি পেতে থাকে। যখন তিনি নানা সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তখন এসব গুণাবলী তার চরিত্রে অতি উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠে।

জন্ম ও শৈশব: ১৬৪ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসে ইমাম আহমাদ জন্মগ্রহণ করেন। তার মা তাকে পেটে করে ‘মার্ভ’[1] থেকে বাগদাদে আসেন। তার জন্ম হয় বাগদাদে। অল্প বয়সে তার বাবা মারা যান। তখন তার মা তার বাবার পরিবারে থেকেই তাকে লালনপালন করেন। বাগদাদে তার বাবার বসবাসের জন্য একখণ্ড জমি ছিল। আর অন্য একখণ্ড জমি থেকে সামান্য কিছু ফসল আসত। কিন্তু তা দিয়ে সংসারের খরচ ঠিকমত চলত না। এ কারণে ধৈর্য্য, সংযম ও অল্পেতুষ্টির মাঝে ইমাম আহমাদ বড় হন।

ইলম অর্জন ও তার ইলমী মর্যাদা: পরিবারের পক্ষ থেকে স্পৃহা পেয়ে ইমাম আহমাদ ইলমের পথে পা বাড়ান। পারিবারিক এ নির্দেশনার সাথে তার ব্যক্তিগত ঝোঁকপ্রবনতা খাপ খেয়ে যায়। সে সময় বাগদাদ ছিল ইসলামী বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র। ইমাম আহমাদ তার শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে হাদীস বিশারদদেরকে এবং তাদের পথকে পছন্দ করেন। তাই সূচনাতেই তিনি তাদের সান্নিধ্যে আসেন। তবে সম্ভবত তিনি মুহাদ্দিসদের সান্নিধ্যে আসার আগে ফিকহবিদদের পথ ধরে কিছু দূর এগিয়েছিলেন। যাদের পথ ছিল হাদীস ও কিয়াসের সমন্বিত পথ। বর্ণিত আছে তার ইলমের পথে হাতেখড়ি হয় কাযী[2] আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহর কাছে। যিনি আবু হানীফার ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি সর্বপ্রথম যার কাছ থেকে হাদীস লিখেছি তিনি হচ্ছেন আবু ইউসুফ।” কিন্তু এরপর তিনি একান্তভাবে মুহাদ্দিসদের পথে অগ্রসর হন। যারা শুধুমাত্র হাদীসের জন্য বিসর্জিত ছিলেন। হিজরী ১৭৯ থেকে ১৮৬ পর্যন্ত তিনি বাগদাদে থেকে হাদীসের জ্ঞান তলব করেন। বাগদাদের বড় মুহাদ্দিস হুশাইম ইবন বাশির ইবন আবু হাযেম আলওয়াসেতির (মৃঃ ১৮৩হিঃ) সান্নিধ্যে তিনি দীর্ঘ চার বছর অতিবাহিত করেন। এ সময় তার বয়স ছিল প্রায় ১৬ বছর। ইমাম আহমাদ তার কাছ থেকে হজ্জ অধ্যায়, তাফসীর অধ্যায়ের কিছু অংশ, বিচার অধ্যায় এবং ছোট ছোট আরো কিছু অধ্যায় লিপিবদ্ধ করেন।

তার গুণাবলী: ইমাম আহমাদের এমন কিছু গুণ ছিল যে গুণগুলো তার এ প্রসিদ্ধির মূল কারণ এবং তার এ বিশাল জ্ঞানের মূল হেতু।

প্রথম গুণ হল- তীক্ষ্ম ও মজবুত স্মৃতিশক্তি। সাধারণভাবে সকল মুহাদ্দিসদের মধ্যে এ গুণ বিদ্যমান থাকে। বিশেষতঃ মুহাদ্দিসদের মধ্যে যারা ইমাম তারা এ গুণের অধিকারী। তার সমকালীন আলেমসমাজ তার তীক্ষ্ন স্মৃতিশক্তির সাক্ষ্য দিয়েছেন। বরং তাকে সে যুগের শ্রেষ্ঠতম স্মৃতিশক্তির অধিকারী মনে করা হত।

দ্বিতীয় গুণ: এটি ইমাম আহমাদের উল্লেখযোগ্য গুণাবলীর একটি। যে গুণের কারণে তার সুনাম সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাহলো- ধৈর্য্য, দৃঢ়তা এবং কষ্টসহিষ্ণুতা। এগুলো অতি মহান গুণাবলী। এ গুণাবলীর ভিত্তি হচ্ছে ইচ্ছার দৃঢ়তা, সিদ্ধান্তের অটলতা ও মজবুত মনোবলের উপর। এসব গুণাবলীর কারণে তিনি ইলমের পথে এত কষ্ট সহ্য করতে সক্ষম হয়েছেন। অল্প ইলম নিয়ে তুষ্ট হন নি।

তৃতীয় গুণ: ইমাম আহমাদের অন্যতম আরেকটি গুণ ছিল আত্মসম্মানবোধ। আত্মসম্মানবোধের কারণে তিনি কিছু কিছু হালাল জিনিস থেকেও বিরত থাকতেন। তিনি খলিফাদের উপঢৌকন গ্রহণ করতেন না। কিন্তু তিনি তার কোনো এক ছেলেকে বলেছেন, তা গ্রহণ করা হালাল এবং সে অর্থ দ্বারা হজ্জ করাও জায়েয হবে। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতেন না আত্মমর্যাদার কারণে; হারাম মনে করে নয়। নিজের উপর এই সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে গিয়ে তিনি নিজের হাতের কামাই অথবা পৈতৃক জমিতে উৎপাদিত ফসল ছাড়া অন্য কিছু খেতেন না। আর তা করতে গিয়ে তাকে অনেক কষ্ট সইতে হত, আরাম-আয়েশের জীবন থেকে বঞ্চিত হতে হত। তাই তিনি ছিলেন দুনিয়াবিরাগ। আরাম-আয়েশের জীবনের প্রতি তার অবজ্ঞা ছিল ব্যাপারটি এমন নয়, বরং হালাল তালাশ করতে গিয়ে তিনি বিরাগী হয়েছেন। যেহেতু তিনি সন্দেহপূর্ণ সম্পদের মধ্যে হালাল তালাশ করতে যেতেন না। বরং তিনি হালাল তালাশ করতেন এমন সম্পদ থেকে যা পেতে গিয়ে তার আত্মসম্মান হানি হত না অথবা কোনো মানুষের কাছে ছোট হতে হতো না।

কখনো কখনো অর্থের বিনিময়ে রাস্তায় বহনের কাজ করতে বাধ্য হতেন; অথচ তিনি সেসময় মুসলিম উম্মাহ্‌র ইমাম।

মুতাওয়াক্কিলের শাসনামলে তোষামোদ, আত্মীয়তার প্রস্তাব, উপঢৌকন ইত্যাদি পরীক্ষার সম্মুখীন হন। আবার মু‘তাসিমের শাসনামলে নির্যাতন, সম্পর্কচ্ছেদ্, দুর্ব্যবহার ইত্যাদি পরীক্ষার সম্মুখীন হন। উভয় অবস্থাতেই তিনি ছিলেন সংযমী, নির্লিপ্ত, আত্মসম্মানী। উভয় অবস্থার মধ্যে তার কাছে পরেরটার চেয়ে আগেরটা ছিল বড় মুসিবত। বাস্তবিকই তিনি শাসকের সম্পদ গ্রহণ না করে নিজের বিরাগীপনা ও আত্মসম্মানের উপর অটল ছিলেন। এ বিষয়ে তার সম্পর্কে অনেক বিরল ঘটনা বর্ণিত আছে।

একবার মুতাওয়াক্কিলের উজির তার কাছে চিঠি লিখেন- “আমীরুল মুমেনীন আপনাকে এই উপঢৌকন পাঠাচ্ছেন এবং আপনাকে তার দরবারে তশরীফ আনতে অনুরোধ করছেন। আল্লাহ্‌র দোহাই, আল্লাহ্‌র দোহাই, আপনি অমত করবেন না এবং তোহ্‌ফাটা ফেরত দিবেন না। যদি তা করেন তাহলে আপনার শত্রুরা আপনার বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাবে।” এ পর্যায়ে এসে ইমাম আহ্‌মাদ অন্যায়-অন্ধকারকে নিরসণকল্পে শাসকের উপঢৌকন গ্রহণ করতে বাধ্য হন। কিন্তু তারপরও তিনি নিজ হাতে ধরলেন না। বরং তার ছেলে সালেহকে নির্দেশ দিলেন অর্থটা নিতে এবং পরদিন আনসার-মুহাজিরদের অভাবী ছেলে-মেয়ে ও অন্যান্য গরীব-দুঃখীর মাঝে বিতরণ করে দিতে। সম্ভবত ইমাম আহ্‌মাদ মনে করেছেন তার নিজের চেয়ে মুসলিম উম্মাহ্‌র সম্পদে এ সকল লোকদের অধিকার অনেক বেশী। কারণ তাদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

চতুর্থ গুণ: ইমাম আহমাদের আরেকটি গুণ ছিল ‘ইখলাস’। সত্য সন্ধানে ইখলাস বা আন্তরিকতা থাকলে আত্মা বৈষয়িক মোহ্‌ থেকে পবিত্র থাকে। ফলে অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়, সঠিক বুঝ লাভ করা যায় এবং জ্ঞান ও হেদায়াতের আলোতে হৃদয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। তাই ইমাম আহমাদ রিয়া (লৌকিকতা) থেকে বেঁচে থাকতেন এবং এজন্য যারপর নাই সতর্কতা অবলম্বন করতেন। যখন কোথাও যেতেন শত চেষ্টা করতেন যেন লোকেরা তার আগমনের কথা শুনতে না পায়। তিনি বলতেন, “আমি মক্কায় যাচ্ছি। মক্কায় গিয়ে কোনো একটা পাহাড়ের গিরিপথে আস্তানা গাঁড়ব যেন কেউ আমাকে চিনতে না পারে।”

পঞ্চম গুণ: ইমাম আহমাদের আরেকটি গুণ ছিল, যে গুণের কারণে তার দার্‌স ও আলোচনা মানুষের অন্তরে স্থায়ীভাবে স্থান করে নিয়েছিল তা হল- গাম্ভীর্যতা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত গম্ভীর ও শান্ত। তার এ শান্তপ্রকৃতি ও গাম্ভীর্যতার কারণে মানুষ তাকে সম্মান করত, শ্রদ্ধা করত। এ যেন হাদীসের বাণীর বাস্তব নমুনা “যে আল্লাহ্‌র জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ্‌ তাকে উপরে উঠান”। তার সমকালীন জনৈক ব্যক্তি বলেন, “আমি ইসহাক ইবন ইব্রাহীমের সাথে সাক্ষাত করেছি, অমুক অমুক বাদশাহর সাথে সাক্ষাত করেছি কিন্তু আহমাদ ইবন হাম্বলের মত গম্ভীর্যতা আর কারো মাঝে দেখিনি। আমি একটা বিষয়ে কথা বলার জন্য তার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার গাম্ভীর্যতা দেখে ভয়ে আমার কাঁপুনি এসে গেল।”

অগ্নি পরীক্ষার মুখোমুখি: তার এ পরীক্ষা শুরু হয় খলিফা মামুনের এক চিঠির মাধ্যমে। ২১৮ হিজরীতে খলিফা মামুন বাগদাদের গভর্নরের কাছে এই মর্মে পত্র পাঠান যে, বিচারক ও খতীব পদে নিযুক্ত আলেমদেরকে একত্রিত করে কুরআনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর। তাদের মধ্যে যারা ‘কুরআন সৃষ্ট’[3] এ কথা বলবে না তাদেরকে পদচ্যুত কর। গভর্নর খলিফার আদেশ মত আলেমদেরকে সম্মিলিত করলেন। মাত্র চারজন আলেম ব্যতীত বাকী সবাই উক্ত কথা মেনে নেয়। তখন গভর্নর এ চারজন আলেমের উপর নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। তাদেরকে জেলে পুরে লোহার শিকল পরানো হয়। নির্যাতনের ফলে চারজনের দুইজন উক্ত কথা মেনে নেন। বাকী থাকেন আহমাদ ইবন হাম্বল এবং মুহাম্মদ ইবন নূহ। মামুন নির্দেশ দিল এ দুজনকে তার কাছে পাঠানোর জন্য। তখন গর্ভনর তাদের দুজনকে লোহার শিকল পরিয়ে মামুনের কাছে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু বন্দীরা খলিফার দরবারে পৌঁছার আগে মামুন রাক্কা[4] নামক স্থানে ইহদাম ত্যাগ করে। এদিকে পথিমধ্যে ইবনে নূহ মারা যান। বাকী থাকেন শুধু ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ।

এরপর মু‘তাসিম ক্ষমতায় আসেন। তিনি সুঠাম দেহের মানুষ ছিলেন। এমনকি সিংহের সাথে পর্যন্ত কুস্তি করার ক্ষমতা রাখতেন তিনি। কিন্তু তার ইল্‌ম-কালাম কিচ্ছু ছিল না। কারো সাথে বিতর্ক করার সামান্যতম যোগ্যতাও তার ছিল না। কিন্তু তিনি তার ভাই মামুনকে শ্রদ্ধা করতেন, তাকে আদর্শ হিসেবে মানতেন, ফলে তার মতানুসারেই তিনি চললেন।

ইমাম আহমাদ জেলেই পড়ে থাকলেন। তার স্বাস্থ্য প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু তবুও তিনি সার্বক্ষণিক ইবাদতে মশগুল থাকতেন, আল্লাহ্‌র স্মরণে রত থাকতেন। ইমাম আহমাদের ছেলে বর্ণনা করেন যে, তার বাবা জেলে থাকা অবস্থায় তিনি কিতাবুল ইরজা ও অন্যান্য কিতাব পড়াতেন এবং লোহার বেড়ী পরা অবস্থায় বন্দীদের নিয়ে নামাজে ইমামতি করতেন। শুধু পায়ের বন্ধনটা নামাজের সময় এবং ঘুমের সময় খুলে দেওয়া হত।

মু‘তাসিম তার পক্ষের আলেমদেরকে এবং তার নেতৃবৃন্দকে পাঠাতেন ইমাম আহমাদের সাথে বিতর্ক করার জন্য। ইমাম আহমাদ বিতর্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতেন। তিনি বলতেন, কুরআন অথবা সুন্নাহ্‌র দলীল ছাড়া কোনো মতৈক্য হবে না। একবার তাকে মু‘তাসিমের দরবারে উপস্থিত করা হয় এবং তার সামনে আলোচনা চলে। তখন তিনি প্রতিপক্ষকে বারবার শুধু এ কথাই বলেন, “আমাকে আল্লাহ্‌র কিতাব অথবা রাসূলের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাহ্ থেকে একটা দলীল দিন।” অনেক উপঢৌকন ও পদের লোভ দেখিয়ে তারা তাকে বশ করার চেষ্টা করেছে। তদ্রুপ নানা প্রকার শাস্তির ভয় দেখিয়েও তারা তাকে বাগে আনার কসরত করেছে। কিন্তু কিছুতেই তারা তাকে তার মত থেকে সরাতে পারেনি।

তারা তার কাছে আলেমদেরকে পাঠাত। সেসব আলেমরা মিথ্যা ভান করে তার কাছে আসত। তিনি তাদেরকে বলতেন, “আমাদের পূর্ববর্তীদেরকে করাত দিয়ে চিরে ফেলা হত, তবুও তারা হার মানতেন না।” একবার তিনি বললেন, “আমি জেলকে ভয় পাই না, কিন্তু মারকে ভয় পাই।” তিনি এ ভয়ে উক্ত কথা বলেন- হয়ত সহ্য করতে না পেরে তার বুদ্ধির বিকৃতি ঘটবে। তখন তার সাথে জেলেবন্দী এক চোর তাকে বলল, “আমাকে অন্ততঃ বিশবার প্রহার করা হয়েছে। বেত্রাঘাতের সংখ্যা হবে হাজার হাজার। আমি দুনিয়ার জন্য তা সহ্য করতে পেরেছি; আর আপনি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির পথে সামান্য ক’টি বেত্রাঘাতকে ভয় করছেন। আপনি দুইটা বা তিনটা বেত্রাঘাত টের পাবেন, এরপর আর কিছুই টের পাবেন না।” এ চোরের কথায় তার কাছে বিষয়টাকে হালকা মনে হল।

এরপরও যখন মু‘তাসিম তাকে বশে আনতে পারল না তখন তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য যন্ত্রের ব্যবস্থা করল। যন্ত্রের উপরে তাকে সটান শুইয়ে দিয়ে তারা তাকে পিটাতে শুরু করল। প্রথম আঘাতেই তার কাঁধ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল এবং পিঠ থেকে পিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। তখন মু‘তাসিম তার কাছে গিয়ে বলল, আহমাদ! এই কথাটা বল। আমি নিজ হাতে তোমার বাঁধন খুলে দিব এবং তোমাকে অনেক উপঢৌকন দিব। কিন্তু ইমাম আহমাদ বললেন, আমাকে একটি আয়াত অথবা একটি হাদীস দিয়ে এর পক্ষে দলীল দাও।

তখন মু‘তাসিম জল্লাদকে বলল, “তোর হাতের উপর লানত হোক! আরো কঠিনভাবে শাস্তি দে।”

এরপর তাকে দ্বিতীয় আঘাত করা হল। তখন তার মাংস ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ল।

মু‘তাসিম তাকে বলল, কেন নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছ? তোমার সাথীদের কেউ তো এ পথ বেছে নেয়নি।

মারওয়াযি জনৈক আলেম তাকে বলেন, ‘আল্লাহ্‌ তাআলা কি বলেননি, “তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।” তখন ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ তাকে বলেন, মারওয়াযি দেখ দরজার বাইরে কারা? তখন মারওয়াযি প্রাসাদের আঙ্গিনায় বেরিয়ে দেখেন সেখানে অগনিত মানুষ কাগজ কলম নিয়ে বসে আছে। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা এখানে কি করছ? তারা বলল, ইমাম আহমাদ কি জবাব দেন আমরা তা লিখে রাখি। এরপর মারওয়াযি ফিরে এলেন। তারপর ইমাম আহমাদ বললেন, মারওয়াযি! আমি কি এদের সকলকে পথভ্রষ্ট করতে পারি? আমি নিহত হলেও এদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারব না।”

তারপরও যখন মু‘তাসিম ইমাম আহমাদকে বশ করতে পারছিল না তখন জল্লাদকে বলল, আরো কঠোরভাবে মার। তখন একজন জল্লাদ এসে মাত্র দুইটি বেত্রাঘাত করে চলে যেত। তারপর অন্যজন আসত। এভাবে মারতে মারতে তার দুই কাঁধ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। রক্তে তার পিঠ ভেসে যাচ্ছিল। যেন তিনি মরে গেছেন। তখন মু‘তাসিম ভাবল যদি তিনি মারা যান তাহলে লোকেরা বিদ্রোহ শুরু করবে। এই ভয়ে তাকে নির্যাতন করা বন্ধ করে তার পরিবারের কাছে সমর্পণ করে।

তার অসুস্থতা ও মৃত্যু: মারওয়াযি বলেন, আবু আব্দুল্লাহ্‌ ২রা রবিউল আউয়াল বুধবার রাত্রে অসুস্থ হন। দীর্ঘ নয়দিন অসুস্থ ছিলেন। সময়ে সময়ে তিনি লোকদেরকে সাক্ষাত করার অনুমতি দিতেন। লোকেরা দলে দলে প্রবেশ করে তাকে সালাম জানাত। তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে সালামের উত্তর দিতেন…। তিনি নিরিবিলি থাকতেন না। কখনো বসে, কখনো শুয়ে নামাজ আদায় করতেন। ইশারা করে রুকু-সিজদা করতেন। একবার আমি তার জন্য বাসন ধরেছিলাম। দেখলাম তার পেশাব পেশাব নয়, বরং তাজা রক্ত। ব্যাপারটি আমি ডাক্তারকে জানালাম। ডাক্তার বললেন, উদ্বিগ্নতা ও দুঃশ্চিন্তা এই ব্যক্তির পেটকে ছিদ্র করে ফেলেছে। বৃহস্পতিবারে তার রোগ তীব্র আকার ধারণ করে। ঐদিন আমি তাকে ওজু করিয়েছিলাম। তিনি বললেন, আঙ্গুলগুলো খিলাল করে দাও। শুক্রবার রাতে তিনি আরো বেশী দূর্বল হয়ে পড়েন। সকাল বেলা তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে মানুষ চিৎকার করে কেঁদে উঠে। কান্নার রোলে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে, পুরা দুনিয়া কেঁপে উঠে। রাস্তাঘাট, অলিগলি সব মানুষে ভরে যায়।

মারওয়াযি বলেন, “মানুষ জুমার নামাজ শেষে বের হওয়ার পর আমি লাশ বের করলাম।” আব্দুল ওহ্হাব আলওচ্ছাক বলেন, “জাহেলী যুগে বা ইসলামী যুগে কোথাও এত মানুষের সমাগমের কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এত জনতার সমাগম হয়েছে যে পানির অভাবে মানুষকে তাইয়্যাম্মুম করতে হয়েছে এবং অতি ভিড়ের কারণে তা বিপজ্জনক এলাকায় পরিণত হয়েছে। লোকেরা তাদের বাড়ীর দরজার মুখে দাঁড়িয়ে যারা ওজু করতে চায় তাদেরকে ওজু করার জন্য ডাকাডাকি করেছে।”আল্লাহ্‌ তাআলা ইমাম আহমাদকে তার অশেষ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দিন, তার জান্নাতে স্থান দিন এবং ইমাম আহমাদের সাথে আমাদেরকেও তার রহমতের অন্তর্ভুক্ত করে নিন।

>
* মুহাম্মদ আবু যুহরার “আহমাদ ইবন হাম্বল” শীর্ষক গ্রন্থের সহযোগিতা নিয়ে জীবনীটি লেখা হয়েছে।


[1] মার্ভ হচ্ছে- পারস্যের একটি শহরের নাম। - অনুবাদক।

[2] আরবী ভাষায় বিচারককে কাযী বলা হয়। - অনুবাদক।

[3] আহলে সুন্নাহ্‌ ওয়াল জামায়াতের আকীদা হল- “কুরআন সৃষ্ট নয়। কুরআন আল্লাহ্‌র বাণী।– [অনুবাদক] আর আল্লাহর বাণী আল্লাহর গুণ। আল্লাহর সত্তার সাথে সম্পর্কিত কোনো কিছু সৃষ্ট নয়। এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদা। [সম্পাদক]

[4] ইরাকের একটি শহরের নাম। -অনুবাদক
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে