পরিচ্ছেদ: জলে-স্থলে ফিতনা- ফ্যাসাদ প্রকাশ

কীভাবে ব্যক্তি নিরাপদ থাকবে, তার স্ত্রী আছে, অথচ সে তার প্রতি দয়াশীল নয়, ছেলে-সন্তান আছে, কিন্তু তারা তাকে মান্য করে না; প্রতিবেশী আছে, কিন্তু তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা যায় না; বন্ধু আছে, কিন্তু হিতৈষী নয়; অংশীদার আছে, কিন্তু ইনসাফকারী নয়; শত্রু আছে, যে তার শত্রুতা পোষণ থেকে নিরস্ত থাকে না; নফসে আম্মারা বা খারাপ নির্দেশকারীনী আত্মা রয়েছে, যে শুধু অন্যায়ের আদেশ দেয়; দুনিয়া রয়েছে তার জন্য সুশোভিত হয়ে; প্রবৃত্তি রয়েছে যে তাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর, খাম-খেয়ালী ও মনবাসনা রয়েছে তার ওপর বিজয়ী হয়ে; তার আছে প্রতিশোধস্পৃহ ক্রোধ; আরও রয়েছে শয়তান যে খারাপকে সুসজ্জিতকারীরূপে দেদীপ্যমান; আরও রয়েছে দুর্বলতা, যা তাকে কাবু করে ফেলেছে। অতঃপর আল্লাহ যদি তার দায়িত্ব নেন ও তাকে তাঁর দিকে টেনে নেন তাহলেই কেবল এসব কিছুর ওপর সে বিজয় লাভ করতে পারবে। আর আল্লাহ যদি তাকে ছেড়ে দেন, তার নিজের দায়িত্ব নিজেকে অর্পণ করেন তাহলে উপরোক্ত ফ্যাসাদগুলো একত্রিত হয়ে তার ওপর চড়াও হবে, ফলে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

মানুষ যখন আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এবং এ দু’টি দ্বারা ফয়সালা করবে না, তারা যখন বিশ্বাস করবে এ দু’টির ফয়সালার ওপর নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা নেই, তারা নিজেদের মতবাদ, কিয়াস, ইসতিহসান, শায়খদের মতের দিকে ঝুঁকবে, তখন তাদের স্বভাবজাতের মধ্যে ফ্যাসাদ, অন্তরে অন্ধকার, বুঝ শক্তিতে পঙ্কিলতা ও বিবেকে ধ্বংস আপতিত হবে।

এসব কিছু ব্যাপক আকারে আপতিত হয়েছে এবং তাদের ওপর এগুলো প্রাধান্য বিস্তার করেছে; এমনকি শিশুরাও এসবের ওপর প্রতিপালিত হয়েছে আর বয়স্করা এর ওপরই বুড়ো হয়েছে, ফলে তারা আর এগুলোকে অন্যায় মনে করছে না। এরপরে তাদের ওপর আপতিত হয়েছে অন্য প্রশাসন, যাতে সুন্নাতের জায়গায় বিদ‘আত, বিবেকের বদলে প্রবৃত্তি, দূরদর্শিতার পরিবর্তে খাম-খেয়ালী, হিদায়াতের পরিবর্তে ভ্রষ্টতা, সৎকাজের পরিবর্তে অসৎকাজ, জ্ঞানের পরিবর্তে অজ্ঞতা, ইখলাসের পরিবর্তে লৌকিকতা, হকের পরিবর্তে বাতিল, সত্যের পরিবর্তে মিথ্যা, উপদেশের পরিবর্তে চাটুকারিতা, ন্যায়বিচারের পরিবর্তে যুলুম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ফলে ক্ষমতা ও প্রাধান্য এসব কিছুরই হয়ে গেছে। আর যারা এসব অন্যায় কাজ করছে তাদের প্রতিই মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে, অথচ ইতোপূর্বে অবস্থা ছিল এর সম্পূর্ণ উল্টো। তখন ভালো কাজে সম্পৃক্ত লোকদের প্রতিই ছিল মানুষের দৃষ্টি।

সুতরাং যখন তুমি দেখবে এসব খারাপ বিষয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে, এসবের ঝাণ্ডা স্থাপিত হয়েছে, এর সৈনিকেরা সংগঠিত হয়েছে, তখন জমিনের নিম্নাংশ অর্থাৎ কবর (আল্লাহর কসম) জমিনের উপরিভাগের চেয়ে উত্তম, পাহাড়ের চূড়া[1] সমতল ভূমির চেয়ে উত্তম, মানুষের সাথে মিলিত হওয়ার চেয়ে হিংস্র পশুর সাথে মেলা-মেশা অধিক নিরাপদ।

জমিন প্রকম্পিত হচ্ছে, আসমান অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, পাপীদের যুলুমের কারণে জলে-স্থলে ফ্যাসাদ প্রকাশ পাচ্ছে, বরকত উঠে যাচ্ছে, কল্যাণ কমে যাচ্ছে, জীব-জানোয়ার কৃশকায় হয়েছে, জালিমদের পাপের কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে, মারাত্মক অন্যায় ও হিংস্র কর্মকাণ্ডের কারণে দিনের আলো ও রাতের অন্ধকার কান্না করে যাচ্ছে, অধিক খারাপ কাজ, অন্যায় ও বীভৎসতা ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্মানিত লেখক ফিরিশতারাও আল্লাহর কাছে অভিযোগ করছে।

আল্লাহর শপথ, এগুলো এমন আযাবের সতর্কতা, যে আযাবের মেঘমালা একত্রিত হয়েছে, এমন মুসিবতপূর্ণ রাতের আগমনবার্তা শোনাচ্ছে যার অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। সুতরাং খাঁটি তাওবার মাধ্যমে এ পথ থেকে ফিরে আসো, যতক্ষণ তাওবা করা সম্ভব ও তার দরজা খোলা রয়েছে। মনে করো তুমি এমন এক দরজার সম্মুখে আছো যে দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, এমন ঋণের বিষয়ে বন্ধক রেখেছ যা নিঃশেষ হয়ে গেছে, এমন ডানার সাহায্য নিচ্ছ যা আটকে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَسَيَعۡلَمُ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓاْ أَيَّ مُنقَلَبٖ يَنقَلِبُونَ٢٢٧﴾ [الشعراء : ٢٢٧]

“আর যালিমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কোন প্রত্যাবর্তন স্থলে তারা প্রত্যাবর্তন করবে।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২২৭]

>
[1] قلل الجبال পাহাড়ের চূড়া। লিসানুল আরব, মাদ্দাহ (قلل)।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে