হজ ফরয হয় নবম অথবা দশম হিজরীতে[1], আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ করেন দশম হিজরীতে এবং তিনি চেয়েছেন তাঁর এ হজে তিনি হবেন শিক্ষক ও প্রশিক্ষক। সুতরাং তাঁর থেকে হজ বিষয়ে অনেকগুলো কাওলী (উক্তিবাচক) ও ফে‘লী (কর্মবাচক) হাদীস বর্ণিত হয়েছে; এ বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে ব্যাপক অর্থবোধক হাদীস হলো সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমকে লক্ষ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, যেখানে তিনি বলেছেন:

«لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ، فَإِنِّى لاَ أَدْرِى لَعَلِّى لاَ أَحُجُّ بَعْدَ حَجَّتِى هَذِهِ»

“যাতে তোমরা তোমাদের হজের নিয়ম-কানুন শিখে নিতে পার; কারণ, আমি জানি না, সম্ভবত আমার এ হজের পর আমি আর হজ করতে পারব না।”[2]

সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দৃষ্টিভঙ্গি ও নির্দেশনাকে অনুসরণ করেছেন। সুতরাং তারা যখনই হজ করতেন, তখন তারা এ হাদীসকে তাদের চোখের সামনে রাখতেন; ফলে তারা এমন কোনো কাজ করতেন না, যা শিক্ষাগুরু মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি, আর এ নীতিতে মুসলিমগণ চলেছেন আবহমান কাল ধরে, এমনকি ইসলামী দেশের আয়তন ও পরিধি সম্প্রসারিত হলো এবং জনগণ আল্লাহর দীনে শামিল হলো সকল দিক থেকে; অতঃপর তারাও প্রতি বছর হজ করতেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ থেকে নেয়া হজের নিয়ম-কানূনকে গ্রহণ ও অনুসরণ করে।

কিন্তু বিষয়টি শিথিল ও প্রশমিত হয়ে গেল কিছু কিছু সময়ে এবং কোনো কোনো স্থানে; ফলে আল্লাহ তা‘আলার দীনের মধ্যে এমন কিছু বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটল, যা তার দীনের অন্তর্ভুক্ত কিছু নয়, আর এ দীনের মধ্যে যা অনুপ্রবেশ করেছে, তা দুই প্রকারের:

এক প্রকার, আকীদা-বিশ্বাসগত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত, আরেক প্রকার, আমল বা কর্মগত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। এখানে আমাদের প্রত্যাশিত আলোচ্য বিষয় হলো প্রথম প্রকার, যা আকীদা-বিশ্বাসগত মাসায়েলের সাথে নির্দিষ্ট; তন্মধ্যে আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হয়- আমরা ঐসব মাসয়ালার আলোচনা করব, যার সাথে হাজী সাহেব জড়িত, তার হজ আদায়কালীন সময়ে অথবা তার পূর্বে অথবা তার পরে, যা হজের সাথে সম্পর্কিত।

আর দ্বিতীয় প্রকার: আমল বা কর্ম সংক্রান্ত মাসআলার সাথে নির্দিষ্ট। যা আলোচনার জন্য অপর জায়গা রয়েছে, এটা তার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নয়, তার অনেকগুলো দৃষ্টান্ত রয়েছে। তন্মধ্যে দু’একটি নিম্নরূপ:

১. হজের উদ্দেশ্যে নারীগণ কর্তৃক মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ব্যতীত সফর করা; অথচ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করেছেন; তিনি বলেন,

«لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ تُسَافِرُ مَسِيرَةَ يَوْمٍ إِلاَّ مَعَ ذِى مَحْرَمٍ»

“আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে এমন নারীর জন্য মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ব্যতীত একদিনের দূরত্বের পথ ভ্রমণ করা বৈধ নয়।”[3]

২. হাজী সাহেব কর্তৃক ‘তালবিয়্যা’ পাঠ করার পর, এর সাথে ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবার) এবং ‘তাহলীল’ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) যোগ করে বলা।[4]বস্তুত এটা সুন্নাতের বিপরীত। কারণ, হাজী সাহেবের জন্য সুন্নাত হলো ‘তালবিয়্যা’ পাঠ করা। তালবিয়ার সাথে ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবার) ও ‘তাহলীল’ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পাঠ করা নয়। এ ‘তালবিয়্যা’ পাঠ অব্যাহত থাকবে জামারাতুল আকাবা তথা বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত; এর বিপরীত কাজকে ‘বিদ‘আত’ বলে গণ্য করা হবে।[5]

>
[1] সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে অনুরূপ বলা হয়ে থাকে। আরও দেখুন: ‘যাদুল মা‘আদ’: (২/৯৬)।

[2] হাদীসটি আবূ যুবায়ের আল-মাক্কী ‘মারফু’ সনদে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১২৯৭; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ১৪৪১৯; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ৩০২৩; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ৪২৪৪; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ৩০৬২)।

[3] হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১০৩৮; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৩৩৯; হাদীসের শব্দগুলো ইমাম সহীহ মুসলিম রহ.-এর।

[4] মানাসিক আল-হাজ ওয়াল ‘উমরা: (পৃ. ৪৭)।

[5] দেখুন: ফিকহুল ‘ইবাদাত: (পৃ. ৩৫০, ৩৬২)। আরও দেখুন: বিদা‘উল হজ ওয়াল ‘উমরা: (পৃ. ৩৫০, ৩৬২)।

আর হজ ও উমরার আকিদাগত বিদ‘আত ও অন্যান্য বিষয়গুলো দেখুন নিম্নোক্ত গ্রন্থসমূহে:

আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ আল-খাল্লাল, ‘আল-হাছ্ছু ‘আলাত্ তিজারাত’: (পৃ. ৬৭-৮০)।
আবদুর রাহমান ইবন আলী ইবনুল জাওযী, ‘তালবীসু ইবলিস’ (২/৮৩০-৮৩২)।
মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, ‘মানাসিক আল-হাজ ওয়াল ‘উমরা’: (পৃ. ৪৫ ও তার পরবর্তী পৃষ্ঠাসমূহ)।
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন, ‘ফিকহুল ‘ইবাদাত’: (পৃ. ৩৩৫-৪০৭)।
হামুদ ইবন আবদিল্লাহ আল-মাত্বার, ‘আল-বিদ‘উ ওয়াল মুহদাছাত ওমা লা আসলা লাহু’: (পৃ. ৩৭৭-৪১৪)।
রায়েদ ইবন সাবরী ইবন আবি ‘আলফা, ‘মু‘জাম আল-বিদ‘য়ে’: (পৃ. ১৭২-১৯৭)।
আবদুল ‘আযীয ইবন মুহাম্মাদ আস-সাদহান, ‘মুখালিফাতুল হজ ওয়াল ‘উমরা’।
আবদুল মাজীদ আল-হাদিসী, ‘তানবীহুল আনাম ইলাল মুখালিফাত আল-ওয়ারেদা ফিল মাসজিদাইন আন-নববী ওয়াল হারাম’ ।

আর এর বাইরে আরও আপনি অনেক নির্দেশনা পাবেন, যা ছড়িয়ে আছে ফিকহ’র কিতাবসমূহের আওতাধীন হজের অধ্যায়ে।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে