ক- ইজারা তথা ভাড়ার পরিচিতি:

নির্দিষ্ট মেয়াদে দু’জনের মধ্যে বৈধ উপকারের বিনিময় চুক্তি করা।

খ- ইজারার হুকুম:

ইজারা জায়েয। এটা দুপক্ষের মাঝে অত্যাবশ্যকীয় চুক্তি।

গ- ইজারা শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:

ইজারা মূলত মানুষের মাঝে পরস্পর সুবিধা বিনিময়। শ্রমিকদের কাজের প্রয়োজন, থাকার জন্য ঘরের দরকার, মালামাল বহন, মানুষের আরোহণ ও সুবিধার জন্য পশু, গাড়ি ও যন্ত্রের দরকার। আর ইজারা তথা ভাড়ায় খাটানো বৈধ হওয়ায় মানুষের জন্য অনেক কিছু সহজ হয়েছে ও তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হচ্ছে।

ঘ- ইজারার প্রকার:

ইজারা দু’প্রকার। তা হচ্ছে:

১- নির্দিষ্ট জিনিস ও আসবাবপত্র ভাড়া দেওয়া। যেমন, কেউ বলল, আমি আপনাকে এ ঘর বা গাড়িটি ভাড়া দিলাম।

২- কাজের ওপর ভাড়া দেওয়া। যেমন, কেউ দেয়াল নির্মাণ বা জমি চাষাবাদ ইত্যাদি করতে কোনো শ্রমিককে ভাড়া করল।

ঙ- ইজারার শর্তাবলী:

ইজারার শর্ত চারটি। তা হলো:

১- লেনদেনটি জায়েয হওয়া।

২- উপকারটি নির্দিষ্ট হওয়া। যেমন, ঘরে থাকা বা মানুষের খিদমত বা ইলম শিক্ষা দেওয়া ইত্যাদি।

৩- ভাড়া নির্ধারণ করা।

৪- উপকারটি বৈধ হওয়া। যেমন ঘরটি বসবাসের জন্য হওয়া। অতএব, কোনো হারাম উপকার সাধনে যেমন, যিনা, গান বাজনা, ঘরটি গীর্যার জন্য ভাড়া দেওয়া বা মদ বিক্রির জন্য ব্যবহার করা ইত্যাদি হারাম কাজের সুবিধার জন্য ভাড়া দেওয়া বৈধ নয়।

মাসআলা:

কেউ বিনা চুক্তিতে গাড়ি, বিমান, ট্রেন ও নৌকা ইত্যাদিতে আরোহণ করলে বা দর্জিকে কাপড় কাটতে বা সেলাই করতে দিলে বা কুলিকে দিয়ে বোঝা বহন করালে তার এসব কাজ জায়েয হবে এবং তাকে সেখানকার ‘উরফ তথা প্রচলিত নিয়মানুসারে ভাড়া প্রদান করতে হবে। কেননা ‘উরফ তথা প্রচলিত প্রথা এসব ব্যাপারে ও এ জাতীয় আরো অন্যান্য ব্যাপারে কথা বলে চুক্তি করার মতোই।

চ- ভাড়াকৃত জিনিসের শর্তাবলী:

ভাড়াকৃত নির্দিষ্ট জিনিসের মধ্যে শর্ত হচ্ছে সেটি ভালো করে দেখা ও এর গুণাবলী জানা, এর প্রদত্ত উপকারের ব্যাপারে চুক্তি করা, এর অংশের ওপর চুক্তি নয়, সেটা সমর্পন করতে সমর্থ হওয়া, বাস্তবেই তাতে উপকার থাকা এবং ভাড়াকৃত জিনিসটি ভাড়া প্রদানকারীর মালিকানাধীন থাকা বা তার ভাড়া দেওয়ার অনুমতি থাকা।

ছ- ইজারার আরো কিছু মাসয়ালা:

  • ওয়াকফকৃত জিনিসের ভাড়া দেওয়া জায়েয। ভাড়া প্রদানকারী মারা গেলে চুক্তিটি বাতিল না হয়ে পরবর্তী যিনি ওয়াকফের রক্ষণাবেক্ষণে আসবেন তার কাছে চুক্তিটি থাকবে এবং তিনি বাকী ভাড়া গ্রহণ করবেন।
  • যেসব জিনিস বেচাকেনা হারাম সেসব জিনিস ভাড়া দেওয়াও হারাম, তবে ওয়াকফ, স্বাধীন ব্যক্তিকে আযাদ ও উম্মে ওয়ালাদ তথা মালিকের কাছে যে দাসীর বাচ্চা হয়েছে এসব বাদে। কেননা এসব জিনিসে ভাড়া জায়েয।
  • ভাড়াকৃত জিনিসটি নষ্ট হয়ে গেলে এবং উপকার সাধন শেষ হয়ে গেলে ইজারা বাতিল হয়ে যাবে।
  • শিক্ষাদান, মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদি কাজের বিনিময়ে ভাড়া (পারিশ্রমিক) নেওয়া জায়েয। আর হজের বিনিময়ে প্রয়োজন হলে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয।
  • ইমাম, মুয়াযযিন বা কুরআন শিক্ষাদানকারী বাইতুল মাল থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করলে অথবা নিঃশর্তভাবে তাদেরকে প্রদান করা হলে তাদের জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ।
  • ভাড়াগ্রহণকারী অবহেলা ও সীমালঙ্ঘন না করলে ভাড়াকৃত জিনিস তার কাছে নষ্ট হলে এর কোনো জরিমানা দিতে হবে না।
  • চুক্তি করার দ্বারা ভাড়া দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়, ভাড়াকৃত জিনিস ফেরত দেওয়ার সময় ভাড়াও জমা দেওয়া ওয়াজিব, তবে দুজনে বিলম্বে বা কিস্তিতে প্রদানে রাজি থাকলে তাও জায়েয। আর শ্রমিক তার কাজ শেষ করলে সে তার পারিশ্রমিকের অধিকারী হবে।