কোনো রোগের চিকিৎসা হিসেবেও মদ পান করা যাবে না

ত্বারিক ইবন সুওয়াইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিকিৎসার জন্য মদ তৈরি করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

«إِنَّهُ لَيْسَ بِدَوَاءٍ، وَلَكِنَّهُ دَاءٌ»

“মদ তো ঔষুধ নয়, বরং তা রোগই বটে”।[1]

উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيْمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ»

“আল্লাহ তা‘আলা হারাম বস্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য কোনো চিকিৎসা রাখেন নি”।[2]

নামের পরিবর্তনে কখনো কোনো জিনিস হালাল হয়ে যায় না। সুতরাং নেশাকর দ্রব্য যে কোনো আধুনিক নামেই সমাজে চালু হোক না কেন তা কখনো হালাল হতে পারে না। অতএব, তামাক, সাদাপাতা, জর্দা, গুল, পচা তথা মদো সুপারি ইত্যাদি হারাম। কারণ, তা নেশাকর। সামান্য পরিমাণেই তা খাওয়া হোক অথবা বেশি পরিমাণে। পানের সাথেই তা খাওয়া হোক অথবা এমনিতেই চিবিয়ে চিবিয়ে। ঠোঁট ও দাঁতের মাড়ির ফাঁকেই সামান্য পরিমাণে তা রেখে দেওয়া হোক অথবা তা গিলে ফেলা হোক। নেশা হিসেবেই তা ব্যবহার করা হোক অথবা অভ্যাসগতভাবে। মোটকথা, এটার সর্বপ্রকার ও সর্বপ্রকারের ব্যবহার সবই হারাম।

আবু উমামাহ বাহিলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تَذْهَبُ اللَّيَالِيْ وَالْأَيَّامُ حَتَّى تَشْرَبَ فِيْهَا طَائِفَةُ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ؛ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا»

“রাত-দিন যাবে না তথা কিয়ামত আসবে না যতক্ষণ না আমার একদল উম্মত মদ পান করে। তবে তা মদের নামেই পান করবে না বরং অন্য নামে”।[3]

‘উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يَشْرَبُ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ بِاسْمٍ يُسَمُّوْنَهَا إِيَّاهُ»

“আমার একদল উম্মত মদ পান করবে। তবে তা নতুন নামে যা তারা তখন আবিষ্কার করবে”।[4]

কেউ কেউ আবার মদ পান না করলেও মদের ব্যবসার সাথে যে কোনোভাবে অবশ্যই জড়িত। মদ পান না করলেও মদ বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও সিগারেট ও বিড়ি বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও তিনি সাদাপাতা, গুল ও জর্দা খাওয়ায় সরাসরি জড়িত। বরং কেউ কেউ তো কথার মোড় ঘুরিয়ে অথবা কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তা হালাল করতে চান। অন্যকে ধূমপান করতে নিষেধ করলেও নিজের পেটে কেজি কেজি সাদাপাতা ও জর্দা ঢুকাতে লজ্জা পান না। তাদের অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা উচিৎ। নিজে ভালো হতে না পারলেও অন্যকে ভালো হতে সুযোগ দেওয়া উচিৎ। আল্লাহর লা‘নতকে অবশ্যই ভয় পেতে হবে।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَـمَّا نَزَلَتِ الْآيَاتُ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِيْ الرِّبَا؛ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ e فَحَرَّمَ التِّجَارَةَ فِيْ الْـخَمْرِ»

“যখন সুদ সংক্রান্ত সূরা বাক্বারাহ্’র শেষ আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘর থেকে বের হয়ে মদের ব্যবসা হারাম করে দেন”।[5]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللهَ حَرَّمَ الْـخَمْرَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـمَيْتَةَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـخِنْزِيْرَ وَثَمَنَهُ»

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও। মৃত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও। শূকর হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও”।[6]

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ ـ ثَلاَثًا ـ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمَ فَبَاعُوْهَا وَأَكَلُوْا أَثْمَانَهَا، وَإِنَّ اللهَ إِذَا حَرَّمَ عَلَى قَوْمٍ أَكْلَ شَيْءٍ حَرَّمَ عَلَيْهِمْ ثَمَنَهُ وَفِيْ رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَةَ: فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا»

“আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত পড়ুক ইয়াহূদীদের ওপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বদ-দো‘আটি তিন বার দিয়েছেন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর চর্বি হারাম করে দিয়েছেন। তখন তারা তা সরাসরি না খেয়ে বিক্রি করে বিক্রিলব্ধ পয়সা খেলো। অথচ তাদের এ কথা জানা নেই যে, আল্লাহ তা‘আলা কোনো সম্প্রদায়ের উপর কোনো কিছু খাওয়া হারাম করে দিলে তার বিক্রিমূল্যও হারাম করে দেন। ইবন মাজাহর বর্ণনায় রয়েছে, যখন তাদের উপর চর্বি হারাম করে দেওয়া হয় তখন তারা চর্বিগুলো একত্র করে আগুনের তাপে গলিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিলো”।[7]

>
[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৮৪; আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৭৩

[2] বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৯৪৬৩; ইবন হিব্বান খণ্ড ৪, হাদীস নং ১৩৯১

[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৭

[4] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৮

[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৯০, ৩৪৯১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৫

[6] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৮৫

[7] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৮৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৬
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে