পরিবার গঠনে শরী‘আতের ভিত্তি ও পদ্ধতি

পরিবার গঠনে ইসলামী শরী‘আতের রহস্য ও তাৎপর্য ততক্ষণ পর্যন্ত অনুধাবন করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবার গঠনে মানুষে স্বভাবসুলভ দিকগুলো সম্পর্কে এবং পরিবারের সকল সদস্যদের দায়িত্ব ও একে অপরের পরিপূরক ভূমিকা সম্পর্কে অনুধাবন করতে না পারবে। কারণ, মানুষ যখন এ সকল বিষয়ে অনুধাবন করতে পারবে তখন ইসলামী শরী‘আতকে বুঝতে পারবে। আর যখন ইসলামী শরী‘আতকে বুঝতে পারবে, তখন পরিবার গঠন সম্পর্কে ইসলামী শরী‘আতের রহস্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে বুঝতে পারবে এবং পরিবারের সকল সদস্যদের দায়িত্ব বুঝাও তখন সহজ হবে।

অতএব, পরিবারের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে পরিবারের সকল সদস্যের পরিপূরকমূলক দায়িত্বের প্রতি খেয়াল রেখেই দায়িত্ব অর্পণ ও পরিবার পরিচালনা করা। এটিই হচ্ছে মানুষের পারিবারিক সদস্যদের মাঝে আত্মিক ও জৈবিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি।

সাধারণত মানুষের মধ্যকার এ সম্পর্ক এবং বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের মাঝে এ ধরনের সম্পর্কের বিষয়ে ইসলামী শরী‘আতের দিক নির্দেশনাগুলো না বুঝার কারণে পরিবার গঠন ও পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কে বুঝতে পারে না। যার কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব ও সম্পর্কের বিষয়ে ভুল করে থাকে। তারা মনে করে যে, পরিবারের সকলের দায়িত্ব ও সম্পর্ক সমান। ফলে তারা মানুষের ফিৎরাত বা স্বভাবকে অনুধাবন করতে ভুল করে। আর যখন স্বভাবকে অনুধাবন করতে ভুল করে, তখনই পরিবারের সদস্যদের মাঝে দায়িত্ব অর্পণে বিশৃঙ্খলা ও সীমালঙ্ঘন করে থাকে- যা শেষ পর্যন্ত পরিবারের মন্দ ডেকে নিয়ে আসে। অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে মানুষের ফিৎরাত সম্পর্কে অনুধাবন না করা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবার গঠনের ব্যাপারে ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করা সম্ভব হবে না।

আর পরিবারের সদস্যদের পরস্পর সম্মতি ও পরিপূরক ভূমিকা পরিবারের নারী-পুরুষ, বাবা-মা, ভাই-বোন, তথা সকল সদস্যের মাঝে ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে। আর যখনই পরিবার থেকে সম্মতি ও পরিপূরক ভূমিকা, ভালোবাসা, দয়া অনুগ্রহ ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যায়, তখনই বাবার সম্পর্ক মায়ের সাথে এবং ছেলে-মেয়ের সম্পর্ক বাবার সাথে তথা পরিবারের প্রতিটি সদস্যের একে অপরের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। তখন সেই পরিবারের প্রতিটি সদস্য তার মানসিক, আর্থিক, জৈবিক, ও দৈহিক বিকাশে প্রয়োজনীয় তা‘লীম-তরবিয়ত, সেবা-যত্ন, সহযোগিতা ও নিরাপত্তা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হয়। একটি শিশুর মানবিক আত্মিক, জৈবিক ও দৈহিক বিকাশ এবং একটি আদর্শ পরিবার গঠন তখনই সম্ভব, যখন পরিবারের সকল সদস্য তার সাধ্যানুযায়ী দায়িত্ব আদায় করে বা আদায় করতে চেষ্টা করে।

পুরুষের তুলনায় নারীর শারীরিক দুর্বলতা এবং সন্তানের সাথে নারীর বৈষয়িক ও আত্মিক আবেগ ও দয়াময় সম্পর্ক তাদের প্রতি দয়া অনুগ্রহ, সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতার প্রতি অনুপ্রাণিত করে। অপর দিকে নারীর তুলনায় পুরুষের জৈবিক দুর্বলতা এবং নারীত্বের কামনা- বাসনা ও তাদের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ ও ভালোবাসার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগায়। এ জন্যই আল্লাহ নারীর হাতে জৈবিক প্রশান্তির লাগাম তুলে দিয়েছেন। সুতরাং তাদের এ জৈবিক ও বৌদ্ধিক প্রশান্তির ওপর পুরুষ সহজে প্রভাব ফেলতে পারে না, বরং নারী তার ইচ্ছায় জৈবিক ও বৌদ্ধিক প্রশান্তির ওপর অবিচল থাকতে পারে। সে তার এ অবিচলতা ততক্ষণ পর্যন্ত হারায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষ তাকে দৈহিকভাবে স্পর্শ না করে বা দৈহিকভাবে স্পর্শ করার অনুমতি না দেয়। সুতরাং যখন একজন পুরষ নারীকে জৈবিক আবেগে স্পর্শ করে, তখন আর নারী তার জৈবিক ও বুদ্ধিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। অপর দিকে নারীর তুলনায় পুরুষের জৈবিক ও কাম-দুর্বলতার কারণে একজন নারীর দৃষ্টি বরং শুধুমাত্র কামনা-বাসনা ও চিন্তা-ধ্যান তাকে জৈবিক-ভাবে প্রভাবিত করে ফেলে। এমন কি অনেক সময় নারী তার বুদ্ধির মাধ্যমে একজন পুরুষকে তার প্রতি দুর্বল করে ফেলতে পারে। যার ফলে পুরুষ স্বাভাবিকভাবে নারী ও সন্তানদের প্রতি দুর্বল, নম্র ও দয়াপরবশ হয়ে পড়ে। এ সকল দিক বিবেচনায় নারী-পুরুষের অস্তিত্ব রক্ষা ও তাদের কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসলামী শরী‘আত নারী-পুরুষের মাঝে বিবাহের ব্যবস্থা করেছে। সেই বিবাহের মাধ্যমে বা বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে মানুষের বংশ মর্যাদা ও রক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে। এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শিশুর মানবিক, দৈহিক ও আত্মিক বিকাশ ঘটে এবং নারী ও সন্তানদের ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। এ জন্যই আল্লাহ পুরুষদেরকে নারী ও সন্তানদের দায়িত্ব ভার গ্রহণ ও বহন করার ক্ষমতা দান করেছেন। এ সবকিছুর মধ্য দিয়ে নারী পুরুষের মধ্যে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, গড়ে উঠে পরিবার। সেই পরিবারই হয় সন্তানের শান্তি, নিরাপত্তা ও আশ্রয়স্থল। নিশ্চয় পুরুষকে নারীত্ব ও মাতৃত্বের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য তাকে নারীর তুলনায় সাহসিক ও শক্তিশালী হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে তারা পারিবারিক প্রয়োজনে নারী ও সন্তানদের প্রয়োজন পূরণ এবং তাদের লালন পালন ও পরিচালনা করতে পারে। নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় দুর্বল, নম্র, কোমল ও আবেগময়ী করে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে পরনির্ভরশীল দুর্বল শিশু ও আবেগময়ী পুরুষ তাদের কাছে শান্তি ও আশ্রয় নিতে পারে।

এ জন্যই পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পুরুষের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আর নারীদেরকে তাদের শক্তি সামর্থ্য ও ইচ্ছানুযায়ী পারিপার্শ্বিক অবস্থার আলোকে কাজ-কর্ম করার নির্দেশ প্রদান করেছে। তার চেয়ে বেশি কিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা বাধ্য করা, তাঁদের প্রতি যুলুম ও দুর্ব্যবহারের নামান্তর, যা শরী‘আত, মানুষের স্বভাব এবং নারী পুরুষের একে অন্যের পরিপূরক নীতির পরিপন্থী।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে