কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত নবম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রসূল (সা.) মীক্বাত নির্ধারিত করেছেন, মদীনাবাসীদের জন্য ‘যুলহুলাইফা’ নামক স্থানকে (যার বর্তমান নাম আবয়ার আলী), শাম দেশবাসীদের জন্য ‘জুহফা’ নামক স্থানকে, নজদবাসীদের জন্য ‘কারনুল মানাযিল’ নামক স্থানকে (যার বর্তমান নাম আস্সায়লুল কাবীর) এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থানকে। আর তিনি একথাও বলেন: এ মীক্বাতগুলি এ এলাকবাসীদের জন্যে এবং ঐ সব লোকের জন্যে যারা অন্য এলাকা থেকে এ পথ হয়ে আগমন করবে, যদি তারা হাজ্জ বা উমরার নিয়্যাতে আসে।[1]

আয়িশা (রা.) হতে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী (সা.) ইরাক্ববাসীদের জন্যে ‘যাতু ইরক’ নামক স্থানকে মীক্বাত নির্ধারিত করেন।[2]

আরো আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সা.) বলেছেন:

يُهِلُّ أَهْلُ الْمَدِينَةِ مِنْ ذِي الْحُلَيْفَةِ وَيُهِلُّ أَهْلُ الشَّأْمِ مِنْ الْجُحْفَةِ وَيُهِلُّ أَهْلُ نَجْدٍ مِنْ قَرْن

মদীনাবাসী যুলহুলায়ফা থেকে ইহরাম করবে, শামবাসী জুহফা থেকে ইহরাম করবে এবং নাজদবাসী ক্বারন হতে ইহরাম করবে।[3]

এ মীক্বাতগুলি আল্লাহর রসূল (সা.) স্বয়ং নির্ধারত করেছেন, যা আল্লাহ প্রদত্ত শরিয়াত। অতএব ইহা কারো জন্য বদল করা বা তাতে বাড়াবাড়ি করা, কিংবা হাজ্জ বা উমরার ইচ্ছুকদের জন্য বিনা ইহরামে তা অতিক্রম করা জায়েয নয়। কারণ, ইহা মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা (আইনসমূহ) লঙ্ঘন করার শামিল। আর আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللّهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

আর যারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, তারাই যালিম।[4]

আর নাবী (সা.) থেকে বর্ণিত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.)-এর হাদীসে আছে যে,

يُهِلُّ أَهْلُ المَدِينَةِ مِنْ ذِي الحُلَيْفَةِ، وَيُهِلُّ أَهْلُ الشَّأْمِ مِنَ الجُحْفَةِ، وَأَهْلُ نَجْدٍ مِنْ قَرْنٍ

মদীনাবাসী যুলহুলায়ফা থেকে ইহরাম করবে, শামবাসী জুহফা থেকে ইহরাম করবে এবং নাজদবাসী ক্বার্ন হতে ইহরাম করবে।[5]

এ হাদীসের অর্থ নির্দেশসূচক। এজন্যই ইবনু উমার (রা.) বলেন, আল্লাহর রসূল (সা.) (মীক্বাতগুলি) ফরয (নির্ধারণ) করেছেন। যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুতরাং হাজ্জ কিংবা উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি উপরোক্ত মীক্বাতগুলি বা তার বরাবর হয়ে অতিক্রম করলে সেখান হতে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। স্থলপথ হয়ে আগমন করুক কিংবা সমুদ্রপথ হয়ে অথবা আকাশপথ হয়ে।

তাই কোন ব্যক্তি যদি স্থলপথে এসে সেই মীক্বাত হয়ে অতিক্রম করে তাহলে সেখানে অবতরণ করবে। আর যদি তার বরাবর দূর দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে মীক্বাত বরাবর হলেই ইহরাম করার সময়ে যা করণীয় তা সম্পাদন করবে: যেমন গোসল করা, শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং পুরুষদের জন্য সিলাই বিহীন ইহরামের কাপড় পরিধান করা। তারপরে মীক্বাত থেকে প্রস্থানের আগেই ইহরামের নিয়্যাত করবে।

আর যদি কোন ব্যক্তি জলপথে হাজ্জে বা উমরার উদ্দেশ্যে আসে এবং জাহাজ মীক্বাত বরাবর থামে, তাহলে সেখানে গোসল করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে এবং অবস্থানরত অবস্থায় (পুরুষরা সিলাই বিহীন ইহরামের কাপড় পরিধান করবে)। তারপরে সেখান থেকে প্রস্থানের আগেই ইহরামের নিয়্যাত করবে। তবে যদি জাহাজ মীক্বাত বরাবর না থামে, তাহলে মীক্বাত বরাবর হওয়ার পূর্বেই গোসল করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে এবং অবস্থানরত অবস্থায় (পুরুষরা সিলাই বিহীন ইহরামের কাপড় পরিধান করবে)। তারপরে মীক্বাত বরাবর হওয়ার আগেই ইহরামের নিয়্যাত করবে।

আর যদি কোন ব্যক্তি হাজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে আকাশপথে আসে, তাহলে বিমানে চড়ার পূর্বেই গোসল করে নিবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে এবং (পুরুষরা সিলাই বিহীন ইহরামের কাপড় পরিধান করবে)। তারপরে মীক্বাত বরাবর হওয়ার অপেক্ষা না করে তার কিছু পূর্বেই ইহরামের নিয়্যাত করবে। কারণ, বিমান খুব দ্রুত পথ অতিক্রম করায় মীক্বাত বরাবর হওয়ার সময় পাওয়া যাবে না; ফলে যদি মীক্বাত বরাবর হওয়ার বেশ আগেই ইহরাম করে নেয় তাতে কোন দোষ নেই।

এখানে কিছু লোকেরা যে ভুলটি করে থাকে তা হলো, তারা বিমানে চেপে মীক্বাতের উপর বা তার আশ-পাশ দিয়ে অতিক্রম করে চলে আসে, তারপর তারা জিদ্দা বিমান বন্দরে অবতরণ করে। অতঃপর সেখান থেকে ইহরাম বাঁধে। অথচ ইহা নাবী (সা.)-এর নির্দেশ পরিপন্থী কাজ এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করা।

আর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বসরা ও কূফা দুই শহর বিজয় হলে লোকেরা উমার (রা.)-এর নিকট এসে বলল যে, নাবী (সা.) নাজদবাসীদের জন্যে ক্বার্ন নামক স্থানকে মীক্বাত নির্ধারিত করেছেন, যা আমাদের পথ হতে উল্টো পথে। তাই যদি আমরা ক্বার্ন নামক স্থানে এসে ইহরাম করি তাহলে তা আমাদের জন্য বড় কষ্টকর হয়ে যায়। তখন খালীফা উমার (রা.) বললেন, তাহলে ‘ক্বার্নুল মানাযিল’ বরাবর তোমাদের রাস্তা খুঁজে নাও তাহলে যারা মীক্বাত হয়ে অতিক্রম করতে পারে না, আমীরুল মু’মিনীন খলীফায়ে রাশিদীন তাদের মীক্বাত বরাবর স্থানকেই মীক্বাত গণ্য করলেন।[6] আর যেমন স্থলে মীক্বাত বরাবর হওয়া তেমনি হচ্ছে আকাশ পথে মীক্বাত বরাবর হওয়া। উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।

অতএব কোন মানুষ যদি এধরণের ভুল করে ফেলে, যেমন ইহরাম করার পূর্বে জিদ্দায় অবতরণ করল, তাহলে বিমান পথে যেই মীক্বাত বরাবর হয়ে অতিক্রম করেছিল সেই মীক্বাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম করবে। আর যদি তা না করে জিদ্দা থেকে ইহরাম করে তাহলে অধিকাংশ আলিমগণের মতে তাকে মক্কায় ফিদয়া (কুরবানী) যবহ করে সমস্ত মাংসটা সেখানকার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে। সে ব্যক্তি তা হতে কিছু খেতে পারবে না এবং কোন স্বচ্ছল ব্যক্তিকে তা থেকে উপঢৌকনও দিতে পারবে না। কারণ, ইহা কাফফারার সমতুল্য।

[1]. সহীহ বুখারী ১৫২৪।

[2]. সুনান আবূ দাউদ ১৭৩৯ ও সুনান নাসঈ ২৬৫৩।

[3]. সহীহ বুখারী ১৫২৬ ও মুসলিম১১৮১।

[4]. সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ২২৯

[5]. সহীহ বুখারী ১৫২৫।

[6]. সহীহ বুখারী ১৫৩১।