কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত নবম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

মহান আল্লাহ বলেন:

﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيراً﴾

তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।[1] আল্লাহ তা’আলা আরোও বলেন:

﴿قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعاً الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ يُحْيِـي وَيُمِيتُ فَآمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾

বল হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল, সেই আল্লাহর যিনি আকাশসমূহ আর পৃথিবীর রাজত্বের মালিক, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বূদ নেই, তিনিই জীবিত করেন আর মৃত্যু আনেন। কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর প্রেরিত সেই নিরক্ষর বার্তাবাহকের প্রতি যে নিজে আল্লাহর প্রতি তাঁর যাবতীয় বাণীর প্রতি বিশ্বাস করে, তোমরা তাঁর অনুসরণ কর যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার।[2]

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসকল ক্ষমা করবেন, বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[3] আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:

فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّكَ عَلَى الْحَقِّ الْمُبِينِ

কাজেই তুমি আল্লাহর উপর নির্ভর কর, তুমি তো সুস্পষ্ট সত্যের উপর আছ।[4] আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:

فَذَلِكُمُ اللّهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلاَّ الضَّلاَلُ فَأَنَّى تُصْرَفُونَ

তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। প্রকৃত সত্যের পর গুমরাহী ছাড়া আর কী থাকতে পারে? তোমাদেরকে কোন্দিকে ঘুরানো হচ্ছে?[5]

যা কিছুই নাবী (সা.)-এর আদর্শ ও পদ্ধতির পরিপন্থী হবে তা বাতিল, ভ্রষ্টতা এবং উক্ত আমলকারীর মুখে তা ছুঁড়ে দেয়া হবে। যেমন নাবী (সা.) বলেছেন:

مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَد

যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার প্রতি আমাদের আদর্শ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।[6] এর অর্থ হচ্ছে যে, সেই আমল তার দিকেই ছুঁড়ে ফেলা হবে এবং তা গ্রহণ করা হবে না।

তবে কিছু মুসলিম বিভিন্ন ইবাদাতের ক্ষেত্রে কুরআন ও সহীহ হাদীস বিরোধী বহু কাজ করে। আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুন এবং সুন্নাতের অনুসরণের তাওফীক প্রদান করুন। আর বিশেষ করে হাজ্জের সময় না জেনে ফাতওয়া প্রদানকারীদের সংখ্যা বেড়ে যায়। এমনকি এক শ্রেণীর মানুষ ফাতওয়া দেয়াকে খ্যাতির উদ্দেশে পেশা বানিয়ে ফেলেছে। যার কারণে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় এবং বহু লোকদের পথভ্রষ্ট করে। অথচ প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয যে, ফাতওয়া দেয়ার পূর্বে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান হাসিল করে নিবে। কারণ, ফাতওয়া প্রদানকারী মহান আল্লাহর পক্ষ হতে বার্তাবাহকের স্থলাভিষিক্ত। তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহী করতে হবে। অতএব যে কোন মুফতী ফাতওয়া দেয়ার সময় যেন নাবী (সা.)-এর সম্পর্কে মহান আল্লাহর এই বাণী স্মরণ করে নেয়:

﴿وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ۞ لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ۞ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ۞ فَمَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ﴾

আর নাবী যদি কোন কথা নিজে রচনা করে আমার নামে চালিয়ে দিত, আমি অবশ্যই তার ডান হাত ধরে তাকে পাকড়াও করতাম, তারপর অবশ্যই কেটে দিতাম তার হৃৎপিণ্ডের শিরা, অতঃপর তোদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, (আমার গোস্বা থেকে তাকে রক্ষা করার জন্য) বাধা সৃষ্টি করতে পারে।[7]

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:

﴿قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُواْ بِاللّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَاناً وَأَن تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ﴾

বল, আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অন্যায় অত্যাচার, আল্লাহর অংশীদার স্থির করা যে ব্যাপারে তিনি কোন প্রমাণ নাযিল করেননি, আর আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের অজ্ঞতাপ্রসূত কথাবার্তা হারাম করে দিয়েছেন।[8] আর হাজীদের অধিকাংশ ভুলগুলির কারণ হচ্ছে, না জেনে ফাতওয়া দেয়া এবং বিনা দলীলে পরস্পর অন্ধ অনুকরণ করা। তাই আমরা এখানে এমন কতিপয় আমল এবং সে ক্ষেত্রে যে সব ভুল হয়ে থকে সে সব বিষয় উল্লেখ করে ভুল-ভ্রান্তি থেকে সতর্ক করব। মহান আল্লাহর নিকট দু‘আ করি যেন তিনি আমাদেরকে সত্য কথা বলার এবং গ্রহণ করার তাওফীক প্রদান করেন এবং আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের ইহা দ্বারা উপকৃত করেন। নিশ্চয়ই তিনি সম্মানিত দাতা।

>
[1]. সূরা আল-আহযাব ৩৩:২১

[2]. সূরা আরাফ ৭:১৫৮

[3]. সূরা আলি-ইমরান ৩ঃ ৩১

[4]. সূরা আ-নাম্লঃ ৭৯

[5]. সূরা ইউনুসঃ ৩২

[6]. সহীহ মুসলিম ১৭১৮।

[7]. সূরাহ্ আল হা-ক্কাহঃ ৪৪-৪৭

[8]. সূরাহ্ আল-আ‘রাফঃ ৩৩