খাদ্য-পানীয়ের চেয়ে মানুষের জীবনে দ্বীনের প্রয়োজন অনেক বেশি। বরং এতদুভয়ের মধ্যে কোন তুলনাই চলে না। কেননা, দ্বীন ব্যতীত মানুষ দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই হারায়। কিন্তু খাদ্য-পানীয়ের অভাবে কেবল দুনিয়া হারায়।

সুতরাং দ্বীন হলো জীবন, আলো, হেদায়াত, আরোগ্য, সৌভাগ্য, নিরাপত্তা, সফলতা, কল্যাণ এবং মুক্তি। দ্বীন ব্যতীত মানুষ চতুষ্পদ জন্তু, হিংস্র জানোয়ার ও শয়তানের মত হয়ে যায়। যেমন- চতুষ্পদ জন্তু খেয়াল-খুশী মত চলাফেরা করে, সে কারো পরোয়া করে না। আর হিংস্র প্রাণী অন্যদেরকে নির্দয়ভাবে শিকার করে।

মন্দ কর্ম ও ফাসাদ বা বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেয়া ছাড়া শয়তানের আর কোন কর্ম নেই। এসব অধঃপতন থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে আল্লাহর পথে তাদেরকে দা‘ওয়াত দেয়া আবশ্যক। এর মাধ্যমে মানুষ উচ্চস্থান লাভ করে, যা আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন ও সন্তুষ্ট হন। যেমনটি নবী-রাসূলগণ তাদের জীবনে এটা পেয়েছেন।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَنْ مَثَلُهُ فِي الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِنْهَا كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْكَافِرِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (122)) [الأنعام: 122]

‘যে ছিল মৃত, অতঃপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য নির্ধারণ করেছি আলো, যার মাধ্যমে সে মানুষের মধ্যে চলে, সে কি তার মত, যে ঘোর অন্ধকারে রয়েছে, যেখান থেকে সে বের হতে পারে না? এভাবেই কাফেরদের জন্য তাদের কৃতকর্ম সুশোভিত করা হয়’ (সূরা আল-আন‘আম: ১২২)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ ) [محمد: 12]

‘কিন্তু যারা কুফরী করে, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং তারা খায় যেমন চতুস্পদ জন্তুরা খায়। আর জাহান্নামই তাদের বাসস্থান’ (সূরা মুহাম্মাদ: ১২)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى (123) وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّلَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى (124) قَالَ رَبِّ لِمَحَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا (125) قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى (126) وَكَذَلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِآيَاتِ رَبِّهِ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَى (127)) [طه: 123 - 127]

‘তখন যে আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না। আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশ্চয়ই তার জন্য হবে এক সংকীর্ণ জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব! কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। আর এভাবেই আমি প্রতিফল দান করি তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে এবং তার রবের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে না। আর আখেরাতের আযাব তো অবশ্যই কঠোরতর ও অধিকতর স্থায়ী’ (সূরা ত্বহা: ১২৩-১২৭)।

৪। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ ) [فاطر: 6]

‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব, তোমরা তাকে শত্রু হিসাবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়’(সূরা ফাতির: ৬)।

ক. দুনিয়া ও আখেরাতের মর্মার্থ (فقه الدنيا والآخرة)

আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জিনিস সুন্দর করে ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। যেমন উদ্ভিদের সৌন্দর্য পাতা ও ফুল আর এর উদ্দেশ্য হলো শস্য ও ফল। কাপড়ের সৌন্দর্য রং, আর এর উদ্দেশ্য শরীর রক্ষা করা ও আবৃত করা। এরূপ দুনিয়ার ভিতর যা কিছু আছে, সব মিলিয়ে এর সৌন্দর্য, আর ঈমান ও সৎ আমল দুনিয়ার উদ্দেশ্য। সুতরাং দুনিয়ার সৌন্দর্যের মূল উদ্দেশ্য আখেরাত। যে-ই উক্ত উদ্দেশ্য ভুলে যাবে, সে-ই এর সৌন্দর্যের জালে আটকে যাবে। সে স্রষ্টাকে রেখে সৃষ্টি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীগণ দুনিয়ায় উল্লেখিত মহান উদ্দেশ্য নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। আর তা হলো ঈমান ও সৎ আমল। অপরপক্ষে দুনিয়াপ্রেমী লোকেরা সৌন্দর্য, খেল-তামাশা এবং উপভোগ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দুনিয়ার প্রয়োজনীয় বিষয় গ্রহণ করতে এবং সাধ্যানুযায়ী সৎ আমল করতে আদেশ করেছেন।

ইবাদত দুনিয়ার যা কিছু দ্বীনের ব্যাপারে সাহায্য করে, তা ইবাদত বলে গণ্য। ইবাদত হিসাবে আমাদের জীবনের বিষয়াদি ও সৌন্দর্য যদি মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তথা এক আল্লাহর ইবাদত, যার কোন শরীক নেই, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুসরণ এবং তাঁর দ্বীনের প্রচার-প্রসারের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে মন যা ভালোবাসে, তার উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা ভালোবাসেন, তাকে আমরা প্রাধান্য দিবো। আর দুনিয়াবী প্রয়োজনাদির উপর দ্বীনী প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিবো।

যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রবের প্রিয় বস্ত্ত ঈমান ও সৎ-আমল পূর্ণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা পরকালে ঐ ব্যক্তির প্রিয়বস্ত্ত রবের দর্শন ও তার সন্তুষ্টিসহ অন্যান্য নেয়ামত, জান্নাতে স্থায়িত্ব পূর্ণ করবেন।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ ) [القصص: 77]

‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখেরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন, তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ: ৭৭)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِيالْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ (20) سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ (21)) [الحديد: 20 - 21]

‘তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহংকার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখেরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। তা প্রস্তত করা হয়েছে যারা আল্লাহ ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনে তাদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল’ (সূরা আল-হাদীদ: ২০-২১)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا (7))[الكهف: 7]

‘নিশ্চয় যমীনের উপর যা রয়েছে, তা শোভা করেছি তার জন্য, যাতে তাদেরকে পরীক্ষা করি যে, কর্মে তাদের মধ্যে কে উত্তম’ (সূরা আল-কাহাফ: ৭)।

খ. আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا بالنسبة للآخرة)

পাহাড়ের সাথে ক্ষুদ্র বস্ত্ত এবং সমুদ্রের সাথে এক বিন্দু পানির সম্পর্ক যেমন, আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার সম্পর্ক তেমনই। দুনিয়া ধ্বংসশীল আর আখেরাত চিরস্থায়ী। আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূল দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের মূল্য স্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ

১. সত্তাগতভাবে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا الذاتية): আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

‘আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয় আখেরাতের নিবাসই হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত’ (সূরা আল-‘আনকাবূত: ৬৪)।

২. সময়ের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا الزمنية:):

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হও, তখন তোমরা মাটি জড়িয়ে ধর? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য’ (সূরা আত-তাওবা: ৩৮)।

৩. পরিমাপ গত দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا بالكيل:):

عَنِ المُسْتَوْرِد أَخَا بَنِي فِهْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِي الآخِرَةِ إِلاَّ مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ هَذِهِ -وَأَشَارَ يَحْيَى بِالسَّبَّابَةِ- فِي اليَمِّ، فَلْيَنْظُرْ بِمَ تَرْجِعُ؟. أخرجه مسلم برقم (2858)

বানূ ফিহরের ভাই মুসতাওরিদ হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: আল্লাহর শপথ! ইহকাল-পরকালেন তুলনা অতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি সমুদ্রে পানিতে ভিজিয়ে দেখল যে, কতটুকু পরিমাণ এতে পানি লেগেছে। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন’(ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৫৮)।

৪. অর্থ সম্পদের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا بالدراهم):

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِاللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - مَرَّ بِالسُّوقِ دَاخِلاً مِنْ بَعْضِ العَالِيَةِ، وَالنَّاسُ كَنَفَتَهُ فَمَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ؟» فَقَالُوا: مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ قَالَ: «أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ؟» قَالُوا: وَاللهِ لَوْ كَانَ حَيّاً كَانَ عَيْباً فِيهِ لأَنَّهُ أَسَكُّ، فَكَيْفَ وَهُوَ مَيِّتٌ فَقَالَ: «فَوَاللهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ». أخرجه مسلم برقم (2957)

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। একদিন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলিয়া অঞ্চল থেকে মদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উভয় পাশে বেশ লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তার কাছে গিয়ে এর কান ধরে বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এক দিরহাম দিয়ে এটা ক্রয় করতে আগ্রহী’। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বদৌলতে আমরা এটা নিকে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: ‘বিনা পয়সায় তোমরা কি সেটা নিতে আগ্রহী?’ তারা বললেন, এ যদি জীবিত হত, তবুও তো এটা ত্রুটিযুক্ত। কেননা এর কান ছোট। আর এখন সেটা তো মৃত, আমরা কিভাবে তা গ্রহণ করব? অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! এটা তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশী নগণ্য’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৫৭)।


৫. আয়তনের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا بالمساحة):

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قالَ: قالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: «مَوْضِعُسَوْطٍ فِي الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (3250) , واللفظ له، ومسلم برقم (1881)

সাহল ইবনু সা‘দ আস্-সা‘ঈদী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘জান্নাতে চাবুক পরিমাণ সামান্য জায়গাও দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে, তার থেকে উত্তম’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩২৫০, ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৮১, হাদীছের শব্দ ইমাম বুখারী কর্তৃক চয়নকৃত)।

৬. উপভোগের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য:(قيمة الدنيا المتعية)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا

‘তুমি বল, দুনিয়ার সুখ সামান্য। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে, তার জন্য আখেরাত উত্তম এবং তোমাদের প্রতি সূতা পরিমাণ যুলমও করা হবে না’ (সূরা আন-নিসা: ৭৭)।

৭. ব্যবসায়িকভাবে দুনিয়ার মূল্য: (قيمة الدنيا التجارية):

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلَادِ * مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ

‘যারা কুফরী করেছে, নগরসমূহে তাদের বিচরণ তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। (এগুলি) অল্প ভোগ্যসামগ্রী। এরপর তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম আর তা কতইনা মন্দ বিছানা’(সূরা আলে ইমরান: ১৯৬-১৯৭)।

গ. দ্বীন বিমুখ হওয়ার শাস্তি (عقوبة الإعراض عن الدين)

যে ব্যক্তি উপকারী বস্ত্ত পরিত্যাগ করবে, তাকে ক্ষতিকর বস্ত্ত দ্বারা পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং সে উপকারী বস্ত্ত থেকে বঞ্চিত হবে; আর এসব ব্যক্তির বেলায় আল্লাহর নিয়ম এমনই।

দয়াময় প্রভুর ইবাদত থেকে কাফের, মুশরিকরা যখন বিরত থেকেছে, তখন তারা মূর্তি পূজার পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছে। রাসূলগণের আনুগত্য থেকে যখন তারা অহংকার করেছে, তখন বিবেকহীনতা এবং দ্বীন ধ্বংসের পরীক্ষায় পড়েছে। যখন তারা মানুষের হেদায়াতের জন্য নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহ ত্যাগ করেছে, তখন বিবেকের জন্য ক্ষতিকারক নিকৃষ্টতর কিতাবের অনুসরণদ্বারা পরীক্ষায় পড়েছে (তথা গোমরাহীতে লিপ্ত হবে)। অনুরূপভাবে, যখন তারা দয়াময় প্রভুর আনুগত্যে তাদের সম্পদ ব্যয় করা থেকে বিরত থেকেছে, তখন নিজের প্রবৃত্তি এবং শয়তানের আনুগত্যে সম্পদ ব্যয় করার পরীক্ষায় পড়েছে। পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতি রাসূলগণকে যখন মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, দ্বীন থেকে বিমুখ হয়েছে এবং দুনিয়াবী কারণে দ্বীনের প্রয়োজনবোধ করেনি, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস ও নির্মুল করে দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতির আট ধরণের বিশ্বাস ছিল:

নূহ (আ.)-এর জাতি সংখ্যায় বেশি হওয়ার উপর বিশ্বাস করতো

আদ জাতি শক্তি অর্জনে বিশ্বাস করতো

ছামূদ জাতি অট্টালিকা নির্মাণে বিশ্বাসী ছিল

শু‘আইব (আ.)-এর জাতি ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশ্বাস করতো

সাবা জাতি ফসল উৎপাদনে বিশ্বাসী ছিল

ফির‘আউন রাজত্ব দখলে বিশ্বাসী ছিল

ঈসা (আ.)-এর জাতি চিকিৎসায় বিশ্বাসী ছিল এবং

ক্বারূন ধন-সম্পদ সঞ্চয়ে বিশ্বাসী ছিল।

তাদের প্রত্যেককেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের পাপের কারণে পাকড়াও করেন। আল্লাহ তা‘আলা ফির‘আউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে দিয়েছেন, আদ জাতিকে তীব্র বাতাসের মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন, বিকট আওয়াজ, কম্পন ও বজ্রপাতের মাধ্যমে ছামূদ জাতিকে পাকড়াও করেছেন, লূত(আ.)-এর জাতির উপর পাথর নিক্ষেপ ও তাদের বাসস্থান উল্টে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করেছেন, ক্বারুনকে মাটির নিচে ধ্বসে দিয়েছেন এবং শু‘আইব (আ.)-এর জাতিকে আগুনের বৃষ্টির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ (40)) ... [العنكبوت: 40]

‘অতঃপর এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পাপের কারণে আমি পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারো উপর আমি পাথরকুচির ঝড় পাঠিয়েছি, কাউকে পাকড়াও করেছে বিকট আওয়াজ, কাউকে আবার মাটিতে দাবিয়ে দিয়েছি আর কাউকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলম করবেন। বরং তারা নিজেরা নিজেদের উপর যুলম করত’ (সূরা আল-আনকাবূত: ৪০)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَقَوْمَ نُوحٍ لَمَّا كَذَّبُوا الرُّسُلَ أَغْرَقْنَاهُمْ وَجَعَلْنَاهُمْ لِلنَّاسِ آيَةً وَأَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ عَذَابًا أَلِيمًا (37)) ... [الفرقان: 37]

‘আর নূহের সম্প্রদায়, যখন তারা রাসূলগণকে অস্বীকার করল, আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম এবং তাদেরকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। আর আমি যালিমদের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব’ (সূরা আল-ফুরক্বান: ৩৭)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ (94)) [هود: 94]

‘আর যখন আমার আদেশ আসল, তখন শু‘আইব ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা মুক্তি দিলাম এবং যারা যুলম করেছিল, তাদেরকে পাকড়াও করল বিকট আওয়াজ। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল’ (সূরা হূদ: ৯৪)।

৪। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ (102)
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِمَنْ خَافَ عَذَابَ الْآخِرَةِ ذَلِكَ يَوْمٌ مَجْمُوعٌ لَهُ النَّاسُ وَذَلِكَ يَوْمٌ مَشْهُودٌ (103)) ... [هود: 102 - 103].

‘আর এরূপই হয় তোমার রবের পাকড়াও যখন তিনি পাকড়াও করেন কোন অত্যাচারী জনপদসমূহকে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড়ই যন্ত্রণাদায়ক, কঠোর। (১০২) নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন তার জন্য, যে আখেরাতের আযাবকে ভয় করে। সেটি এমন একটি দিন, যেদিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে এবং সেটি এমন এক দিন, যেদিন সবাই হাযির হবে’(সূরা হূদ: ১০২-১০৩)।

৫। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ (96) إِلَى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاتَّبَعُوا أَمْرَ فِرْعَوْنَ وَمَا أَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيدٍ (97) يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ (98) وَأُتْبِعُوا فِي هَذِهِ لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ بِئْسَ الرِّفْدُ الْمَرْفُودُ(99)) .[هود: 96 - 99]

‘আর আমি মূসাকে আমার আয়াতসমূহ ও স্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে পাঠিয়েছি, (৯৬) ফির‘আউন ও তার নেতৃবৃন্দের নিকট। অতঃপর তারা ফির‘আউনের নির্দেশের অনুসরণ করল। আর ফির‘আউনের নির্দেশ সঠিক ছিল না। (৯৭) কিয়ামত দিবসে সে তার কওমের অগ্রভাগে থাকবে এবং তাদেরকে আগুনে উপনীত করে দেবে। যেখানে তারা উপনীত হবে সেটা উপনীত হওয়ার কতইনা নিকৃষ্ট স্থান। (৯৮) আর এখানে (দুনিয়ায়) লা‘নত তাদের পেছনে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কিয়ামত দিবসেও। কি নিকৃষ্ট প্রতিদান, যা তাদের দেয়া হয়েছে’ (সূরা হূদ: ৯৬-৯৯)।

৬। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَسَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا (115)) ... [النساء: 115].

‘আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হেদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব, যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ’(সূরা আন-নিসা:১১৫)।

ঘ. সফলতা ও কল্যাণ অর্জনের পথ (سبيل الفوز والفلاح)

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তার ঈমান ও নেকআমল অনুপাতে কল্যাণ দান করেন এবং কুফরী ও মন্দ কর্ম অনুযায়ী শাস্তি দেন। যারা দুনিয়ায় ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা সৌভাগ্যবান হয়, মৃত্যুর সময় তাদের কল্যাণ বৃদ্ধি পায় একারণে যে, ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাদের খুশীর বিষয়ে সুসংবাদ দেয়া হয়। কবরবাসী হওয়ার পর তাদের সুখ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। কেননা, তিনি কবরকে জান্নাতের একটি বাগান হিসাবে পান। তারপর পুনরুত্থান ও হাশরের দিন তার ভাগ্য আরো বৃদ্ধি পাবে। অবশেষে জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যমে তার সুখ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তা পরিপূর্ণতা লাভ করবে।

পক্ষান্তরে, মানুষ যখন কুফরী করে এবং তার আমল খারাপ হয়, তখন সে দুনিয়াতে দুর্ভাগ্যবান হয়। অতঃপর মৃত্যুর সময় তার দুর্ভোগ বেড়ে যায়, তারপর সে কবরে আরো বেশি দুর্ভাগ্যবান হবে এ কারণে যে, সে কবরকে জাহান্নামের একটি গর্ত হিসাবে পাবে। অতঃপর পুনরুত্থান ও হাশরের দিবসে কষ্ট ও যন্ত্রনা আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর জাহান্নামে প্রবেশের মাধ্যমে শাস্তি বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণতা লাভ করবে।

দুনিয়াতে আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক ও প্রিয় আমল যার বিভিন্নমুখী হবে, বেশী নেক আমলের কারণে জান্নাতে তার স্বাদ আস্বাদনও বিভিন্নমুখী ও ব্যাপক হবে।

পক্ষান্তরে, দুনিয়াতে আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক ও অপ্রিয় আমল যার বিভিন্নমুখী হবে, বেশী পাপ আমলের কারণে জাহান্নামে তার সাজাও বিভিন্নমুখী ও ব্যাপক হবে।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى (123) وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى (124) قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْكُنْتُ بَصِيرًا (125) قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى (126) وَكَذَلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِآيَاتِ رَبِّهِ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَى (127)) [طه: 123 - 127]

‘তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয়েই জান্নাত হতে এক সাথে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হেদায়াত আসবে, তখন যে আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না। আর যে আমার যিকর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে এক নিশ্চিত সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব! কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলি এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। আর এভাবেই আমি প্রতিফল দান করি তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে এবং তার রবের নিদর্শনাবলিতে ঈমান আনে না। আর আখেরাতের আযাব তো অবশ্যই কঠোরতর ও অধিকতর স্থায়ী (সূরা ত্বহা: ১২৩-১২৭)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (97)) [النحل: 97]

‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা মহিলা,আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত, তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব’(সূরা আন-নাহল: ৯৭)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿إِنَّهُ مَنْ يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَى (74) وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَى (75) جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ مَنْ تَزَكَّى (76)) ... [طه: 74 - 76]

‘যে তার রবের নিকট অপরাধী অবস্থায় আসবে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না। আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে, তাদের জন্য-ই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা। স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা তাদের পুরষ্কার, যারা পরিশুদ্ধ হয়’ (সূরা ত্বহা: ৭৪-৭৬)।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে