১। তাওহীদ, আল্লাহর উপর ঈমান এবং শরীকবিহীন একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে দা‘ওয়াত দান ( الدعوة إلى التوحيد والإيمان بالله وعبادته وحده لا شريك له)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ ﴾ [الأنبياء: 25]

‘আর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এ অহি অবতরণ করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া:২৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4) ﴾ [الإخلاص: 1 - 4]

‘বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। (১) আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। (২) তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। (৩) আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই’ (সূরা আল-ইখলাছ: ১-৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ﴾ [النحل: 36]

‘আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এমর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর ত্বাগূতকে’ (সূরা আন-নাহল: ৩৬)।

২। মানুষের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌঁছানো এবং তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করা ও তাদেরকে নছীহত করা (إبلاغ دين الله إلى الناس، والنصح لهم)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا (39) ﴾ ... [الأحزاب: 39]

‘যারা আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দেয় ও তাঁকে ভয় করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট’ (সূরা আল-আহযাব: ৩৯)।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿يَاأَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ (67) ﴾ [المائدة: 67]

‘হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও এবং যদি তুমি না কর, তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না’ (সূরা আল-মায়েদা: ৬৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿هَذَا بَلَاغٌ لِلنَّاسِ وَلِيُنْذَرُوا بِهِ وَلِيَعْلَمُوا أَنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ وَلِيَذَّكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ ﴾[إبراهيم: 52]

‘ইহা মানুষের জন্য পয়গাম। আর যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনি কেবল এক ইলাহ, আর যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা ইব্রাহীম: ৫২)।

৩। গ্রাম-গঞ্জ, বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার সর্বত্রই দা‘ওয়াতের বিস্তার ঘটানো (دعوة الناس وغشيانهم في المدن والقرى والبيوت والأسواق)

আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ) সম্পর্কে বলেন:

﴿اذْهَبْ أَنْتَ وَأَخُوكَ بِآيَاتِي وَلَا تَنِيَا فِي ذِكْرِي (42) اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُطَغَى (43) فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى (44) قَالَا رَبَّنَا إِنَّنَا نَخَافُ أَنْ يَفْرُطَ عَلَيْنَا أَوْ أَنْ يَطْغَى (45) قَالَ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى (46) ﴾[طه: 42 - 46]

‘তুমি ও তোমার ভাই আমার আয়াতসমূহ নিয়ে যাও এবং আমাকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কোনরূপ অলসতা করো না। (৪২) তোমরা দু’জন ফির‘আউনের নিকট যাও, কেননা সে তো সীমালংঘন করেছে। (৪৩) তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (৪৪) তারা বলল, হে আমাদের রব! আমরা তো আশংকা করছি যে, সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে অথবা সীমালংঘন করবে। (৪৫) তিনি বললেন, তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি’ (সূরা ত্বহা: ৪২-৪৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ) [يوسف: 108]

‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।

وكان - صلى الله عليه وسلم - يطوف على الناس في مكة في موسم الحج ويقول لهم: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ قُولُوا: لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله تُفْلِحُوا». صحيح/ أخرجه أحمد برقم (16603)

রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জের সময় মক্কায় মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের বলতেন, হে মানব সমাজ! তোমরা বল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তাহলে সফলকাম হবে (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬০৩, ছহীহ)।

وَعَنْ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنّ النّبِيّ - صلى الله عليه وسلم - رَكِبَ حِمَاراً، عَلَيْهِ إكَافٌ، تَحْتَهُ قَطِيفَةٌ فَدَكِيّةٌ، وَأَرْدَفَ وَرَاءَهُ أُسَامَةَ، وَهُوَ يَعُودُ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ فِي بَنِي الحَارِثِ بْنِ الخَزْرَجِ، وَذَاكَ قَبْلَ وَقْعَةِ بَدْرٍ، حَتّىَ مَرّ بِمَجْلِسٍ فِيهِ أَخْلاَطٌ مِنَ المُسْلِمِينَ وَالمُشْرِكِينَ عَبَدَةِ الأَوْثَانِ، واليَهُودِ. فِيهِمْ عَبْدالله بْنُ أُبَيٍّ، وَفِي المَجْلِسِ عَبْدالله بْنُ رَوَاحَةَ، فَلَمّا غَشِيَتِ المَجْلِسَ عَجَاجَةُ الدّابّةِ، خَمّرَ عَبْدالله بْنُ أُبَيّ أَنْفَهُ بِرِدَائِهِ. ثُمّ قَالَ: لاَ تُغَبّرُوا عَلَيْنَا. فَسَلّمَ عَلَيْهِمُ النّبِيّ - صلى الله عليه وسلم -. ثُمّ وَقَفَ فَنَزَلَ. فَدَعَاهُمْ إلَى الله وَقَرَأَ عَلَيْهِمُ القُرْآنَ. متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (5663) , ومسلم برقم (1798)، واللفظ له.

উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি গাধায় আরোহণ করলেন, যার উপর জীন (বসার গদি) ছিল এবং তার নিচে একটি ফদকী মখমল বিছানো ছিল। তিনি তার পশ্চাতে উসামাহ (রা.) কে বসালেন। বনী হারিছ ইবনু খাযরাজ গোত্রের এলাকায় তিনি সা‘দ ইবনু উবাদা (রা.)-কে (অসুস্থ অবস্থায়) দেখতে যাচ্ছিলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। তিনি এমন একটি মজলিস অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, মুশরিক, পৌত্তলিক ও ইয়াহূদীরা একত্রে বসেছিল। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও ছিল এবং মজলিসে আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রা.)ও ছিলেন। যখন মজলিসটি সাওয়ারীর ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই তার নাক চাদর দিয়ে ঢেকে নিল। এরপর বলল, আপনারা আমাদের উপর ধূলি উঠাবেন না। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সালাম দিলেন। তারপর তিনি সেখানে থামলেন এবং নামলেন। আর তাদের আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত দিলেন এবং তাদের সম্মুখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৮)।

৪। সর্বদা আল্লাহর প্রশংসা করা এবং সর্বাবস্থায় তার যিকর করা ও তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা (دوام الثناء على الله، وذكره واستغفاره في جميع الأحوال)

আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আ.) সম্পর্কে বলেন:

(الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ (39)) ... [إبراهيم: 39]

‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ঈসমাইল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দো‘আ শ্রবণকারী’ (সূরা ইব্রাহীম: ৩৯)।

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ - صلى الله عليه وسلم - يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أحْيَانِهِ. أخرجه مسلم برقم (373)

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৭৩)।

وَعَنِ الأَغَرِّ المُزَنِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِنَّهُ لَيُغَانُ عَلَى قَلْبِي، وَإِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللهَ فِي اليَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ». أخرجه مسلم برقم (2702)

‘আগার আল মুযানী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আমার অন্তরে কখনো কখনো অলসতা দেখা দেয়, তাই আমি দৈনিক একশ’ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রর্থনা করে থাকি (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০২)।

৫। আল্লাহর দিকে ও যে পথ তার কাছে পৌঁছে দেয়, সেদিকে এবং ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা মানুষদের যে ওয়াদা করেছেন, সে দিকে তাদেরকে আহবান করা (الدعوة إلى الله، وإلى الطريق الموصل إليه، وما وعد الله به الناس يوم القيامة)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ (108)) [يوسف: 108]

‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ (125)) ... [النحل: 125].

‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতর পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রব-ই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়াত প্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’(সূরা আন-নাহল: ১২৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ (7)) ... [الشورى: 7].

‘আর এভাবেই আমি তোমার উপর আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি, যাতে তুমি মূল জনপদ ও তার আশপাশের বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করতে পার, আর যাতে ‘একত্রিত হওয়ার দিন’-এর ব্যাপারে সতর্ক করতে পার, যাতে কোন সন্দেহ নেই, সেদিন একদল থাকবে জান্নাতে, আরেক দল যাবে জ্বলন্ত আগুনে’(সূরা আশ-শুরা: ৭)।

৬। দা‘ওয়াত ও ইবাদত উভয়ের মাঝে সমতা বজায় রাখা (التوازن بين العبادة والدعوة)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يَاأَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ (1) قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا (2) نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا (3) أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا (4)) [المزمل: 1 - 4].

‘হে বস্ত্রাবৃত! (১) রাত্রি জাগরণ কর, তবে কিছু অংশ ব্যতীত। (২) রাতের অর্ধেক কিংবা তারচেয়ে কিছুটা কম কর। (৩) অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আর স্পষ্ট ভাবে ধীরে ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর’(সূরা আল-মুযযাম্মিল: ১-৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(يَاأَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (1) قُمْ فَأَنْذِرْ (2) وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ (3) وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ (4) وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ (5)) ... [المدثر: 1 - 5]

‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! (১) উঠ, তারপর সতর্ক কর। (২) আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। (৩) এবং তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র কর। (৪) আর অপবিত্রতা বর্জন কর’ (সূরা আল-মুদ্দাছছির: ১-৫)।

৭। জ্ঞানার্জন, আমল ও জ্ঞানদানের মাঝে সমতা সৃষ্টি করা (التوازن بين العلم والعمل والتعليم)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ (79)) [آل عمران: 79].

‘বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে’ (সূরা আলে ইমরান: ৭৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ (9)) [الزمر: 9].

‘যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখেরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না)। বল, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান? বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা আয-যুমার: ৯)।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَالَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِالْكِتَابِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُصْلِحِينَ ) [الأعراف: 170]

‘আর যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং ছালাত কায়েম করে, নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করি না’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৭০)।

৮। বোধগম্য ভাষায় মানুষকে দা‘ওয়াত দান (دعوة الناس بلغتهم)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (4)) ... [إبراهيم: 4]

‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের নিকট বর্ণনা দেয়।সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা ইব্রাহীম: ৪)।

৯। আল্লাহর দিকে আহবান করে কাফের শাসকদের নিকট বার্তা প্রেরণ (الكتابة إلى ملوك الكفار بالدعوة إلى الله)

আল্লাহ তা‘আলা সাবার রাণীর কথা উল্লেখ করে বলেন:

(قَالَتْ يَاأَيُّهَا الْمَلَأُ إِنِّي أُلْقِيَ إِلَيَّ كِتَابٌ كَرِيمٌ (29) إِنَّهُ مِنْ سُلَيْمَانَ وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (30) أَلَّا تَعْلُوا عَلَيَّ وَأْتُونِي مُسْلِمِينَ (31)) [النمل: 29 - 31].

‘সে বলল, হে পরিষদবর্গ! নিশ্চয় আমাকে এক সম্মানজনক পত্র দেয়া হয়েছে। (২৯) নিশ্চয় এটা সুলাইমানের পক্ষ থেকে। আর নিশ্চয় এটা পরম করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। (৩০) যাতে তোমরা আমার প্রতি উদ্ধত না হও এবং অনুগত হয়ে আমার কাছে আস’ (সূরা আন-নামল: ২৯-৩১)।

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنّ نَبِيّ الله - صلى الله عليه وسلم - كَتَبَ إلَى كِسْرَى، وَإِلَى قَيْصَرَ، وَإلَى النّجَاشِي، وَإلَى كُلّ جَبّارٍ، يَدْعُوهُمْ إلَى اللهِ تَعَالَى. أخرجه مسلم برقم (1774)

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিসরা (পারস্যের সম্রাট), কায়ছার (রোমের সম্রাট) ও নাজাশী এবং অন্যান্য প্রভাবশালী শাসকগণের নিকট পত্র লিখেন, যাতে তিনি তাদের আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৪)।

১০। উপদেশ ও শিক্ষার জন্য নবীগণের সাথে বিভিন্ন জাতির অবস্থা উল্লেখ করা (ذكر أحوال الأمم مع الأنبياء للعظة والاعتبار)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَكُلًّا نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ وَجَاءَكَ فِي هَذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ (120)) [هود: 120]

‘আর রাসূলদের এসকল সংবাদ আমি তোমার নিকট বর্ণনা করছি, যার দ্বারা আমি তোমার মনকে স্থির করি এবং এতে তোমার নিকট এসেছে সত্য, মুমিনদের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ’ (সূরা হূদ: ১২০)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِأُولِي الْأَلْبَابِ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةًلِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ (111)) [يوسف: 111].

‘তাদের এ কাহিনীগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা, এটা কোন বানানো গল্প নয়, বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর হেদায়াত ও রহমত ঐ কওমের জন্য, যারা ঈমান আনে’ (সূরা ইউসূফ: ১১১)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ (176)) [الأعراف: 176]

‘অতএব, তুমি কাহিনী বর্ণনা কর, যাতে তারা চিন্তা করে’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৭৬)।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 পরের পাতা »