এটা এ জন্য যে, তিনি সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং প্রত্যেক সৃষ্টিই তার মুখাপেক্ষী এবং সব কিছুই তার জন্য সহজ। তিনি কোনো কিছুর প্রতিই মুখাপেক্ষী নন। তার মত কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

ذَلِكَ بِأَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَكُلُّ شَىْءٍ إِلَيْهِ فَقِيرٌ وَكُلُّ أَمْرٍ إليه يَسِيرٌ لَا يَحْتَاجُ إِلَى شَيْءٍ، لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

এটা এ জন্য যে, তিনি সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং প্রত্যেক সৃষ্টিই তার মুখাপেক্ষী এবং সব কিছুই তার জন্য সহজ। তিনি কোনো কিছুর প্রতিই মুখাপেক্ষী নন। তার মত কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

.......................................................

ব্যাখ্যা: এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মাখলুক সৃষ্টি করার পূর্বে অনাদি থেকেই আল্লাহ তা‘আলার সুউচ্চ সিফাতগুলো সাব্যস্ত। এখানে كل (প্রত্যেক) শব্দের মধ্যে যে ব্যাপকতা রয়েছে, তা দ্বারা কতটুকু ব্যাপকতা উদ্দেশ্য, তা শব্দটির প্রয়োগ ক্ষেত্র এবং বিভিন্ন নিদর্শন দ্বারাই নির্ধারিত হবে। আল্লাহর কালাম (কথা বলা বিশেষণ) সম্পর্কে আলোচনা করার সময় এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনা আসবে, -ইনশা-আল্লাহ।

(وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ) ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান’’ (সূরা আল বাকারা:২৮৪)।

মুতাযেলারা এ আয়াতের অর্থ পরিবর্তন করেছে। তারা বলেছে, আল্লাহ কেবল ঐসব বিষয়েই ক্ষমতাবান, যা তার ক্ষমতাধীন। তাদের মতে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের কাজগুলো সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নন। (নাউযুবিল্লাহ)

অতঃপর তারা এ ব্যাপারে মতভেদ করেছে যে, বান্দাদের কাজের অনুরূপ কাজ সৃষ্টি করতে তিনি সক্ষম কি না? আয়াতের অর্থ যদি তাদের কথার অনুরূপ হতো, তাহলে তাদের কথাটি এ কথার সমপর্যায়ের হতো, وهو عالم بكل ما يعلمه وخالق لكل ما يخلقه তিনি যা জানেন, তার সবকিছু সম্পর্কে তিনি জ্ঞানী এবং তিনি যা সৃষ্টি করেন, তার সবকিছুরই তিনি স্রষ্টা’’। অনুরূপ আরো অনেক বাক্য রয়েছে, যাতে কোনো উপকার নেই। সুতরাং তারা প্রত্যেক বিষয়ের উপর থেকে আল্লাহর পূর্ণ ক্ষমতা থাকার বিষয়কে অস্বীকার করেছে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিষয়ের উপরই ক্ষমতাবান। সম্ভাব্য প্রত্যেক বিষয়ই এর অন্তর্ভুক্ত। একই জিনিস একই সময় ও অবস্থাতে অস্তিত্বশীল হওয়া বা অস্তিত্বহীন হওয়াই কেবল অসম্ভব। এ রকম জিনিসের কোনো হাকীকত নেই। এ জাতীয় জিনিসের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। বিবেকবান ও বুদ্ধিমানদের ঐক্যমতে একে কোনো জিনিস বা বস্তু হিসাবে নাম দেয়া যায় না।

আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের কাজের অনুরূপ কাজ সৃষ্টি করতে তিনি সক্ষম কি না, এ প্রশ্নের অনুরূপ বাতিল প্রশ্ন হলো, আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সত্তার মত আরেকটি সত্তা সৃষ্টি করতে সক্ষম কি না? তিনি তার নফস্কে ধ্বংস করতে সক্ষম কি না? অনুরূপ এমন আরো প্রশ্ন, যার কোনো জবাব নেই। প্রশ্নগুলো যেহেতু মূলতই বাতিল, তাই তার জবাব পাওয়া আবশ্যক নয়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পরিপূর্ণ ও সার্বভৌম রুবুবীয়াতের প্রতি ঈমান আনয়নের ক্ষেত্রে এটিই হলো মূলনীতি। যতক্ষণ কোনো ব্যক্তি এ বিশ্বাস করবে না যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান, ততক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহ তা‘আলাকে রব হিসাবে বিশ্বাস করেছে বলে গণ্য হবে না। সুতরাং ঐ ব্যক্তিই আল্লাহ তা‘আলার রুবুবীয়াতের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাসী, যে বিশ্বাস করে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।

অতঃপর বিদ‘আতীরা অস্তিত্বহীন সম্ভাব্য বস্তু সম্পর্কে মতভেদ করেছে। এ রকম বস্তুকে কোনো জিনিস হিসাবে নাম দেয়া যাবে কিনা? আসল কথা হলো, অস্তিত্বহীন বস্তুর কল্পনা শুধু মাথার মধ্যেই জাগ্রত হয়। বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।[1]

কিন্তু যা সৃষ্টি হওয়ার তা সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা অবগত থাকেন এবং লিখে রাখেন। সে সঙ্গে তা আগেই বর্ণনা করেন এবং লিখে রাখেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ

‘‘হে মানব জাতি! তোমাদের রবকে ভয় করো। আসলে কিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার’’। (সূরা হাজ্জ: ১)

কিয়ামত যেহেতু এখনো সংঘটিত হয়নি, তাই এর প্রকম্পন আল্লাহর ইলমে এবং লাওহে মাহফুযে লিখিত রয়েছে। বাস্তবে এখনো তা অস্তিত্বে আসেনি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ

‘‘আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন তার কাজ হয় কেবল এতটুকু যে, তিনি তাকে এ বলে আদেশ করেন যে, হয়ে যাও। সাথে সাথেই তা হয়ে যায়’’। (সূরা ইয়াসীন: ৮২)

আল্লাহ তা‘আলা যাকারীয়া আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বলেন,

وَقَدْ خَلَقْتُكَ مِن قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا

‘‘এর আগে আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না’’। (সূরা মারইয়াম: ৯) অর্থাৎ তোমাকে সৃষ্টি করার পূর্বে তুমি কেবল আল্লাহ তা‘আলার ইলমের মধ্যেই ছিলে। বাস্তবে তোমার কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা দাহারের প্রথম আয়াতে বলেন,

هَلْ أَتَىٰ عَلَى الْإِنسَانِ حِينٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُن شَيْئًا مَّذْكُورًا

‘‘মানুষের উপরে কি অন্তহীন মহাকালের এমন একটি সময় অতিবাহিত হয়নি যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না?’’।


আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের সূরা শুরার ১১ নং আয়াতে বলেন,

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

‘‘তার সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’।

‘‘তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই’’ এ অংশ দ্বারা ঐসব লোকদের প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা আল্লাহর সিফাতকে মানুষের সিফাতের মতই মনে করে। আর ‘‘তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’ এ অংশ দ্বারা ঐসব লোকের প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকার ও বাতিল করে। সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সিফাতে কামালিয়ার মাধ্যমে বিশেষিত। তার সিফাতের কোনো সদৃশ নেই।

সৃষ্টি যদিও এভাবে বিশেষিত যে, সে শ্রবণকারী এবং দ্রষ্টা, কিন্তু তার শ্রবণ ও দৃষ্টি রবের শ্রবণ ও দৃষ্টির মত নয়। স্রষ্টার জন্য সিফাত সাব্যস্ত করাতে কোনো তাশবীহ বা সাদৃশ্য আবশ্যক হয় না। কেননা সৃষ্টির সিফাত সৃষ্টির জন্যই শোভনীয় এবং স্রষ্টার সিফাত তার জন্যই শোভনীয়।

হে মুসলিম! আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সত্তাকে যে বিশেষণে বিশেষিত করেছেন, তা তুমি অস্বীকার করো না। সৃষ্টিকুলের মধ্য হতে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন তার প্রভু সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত। তিনি তার প্রভুকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, তুমি তাও অস্বীকার করো না। কেননা আল্লাহর জন্য যা সাব্যস্ত করা আবশ্যক এবং যা তার জন্য অশোভনীয়, সে সম্পর্কে তিনিই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন। তিনি ছিলেন উম্মতের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকামী, উম্মতের মধ্যে সর্বাধিক স্পষ্টভাষী এবং সত্য বর্ণনায় সর্বাধিক সক্ষম। তুমি যদি স্রষ্টার কোনো সিফাতকে অস্বীকার করো, তাহলে তুমি মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়া সাল্লামের উপর নাযিলকৃত কুরআনের প্রতি অবিশ্বাসী বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, তা দ্বারা যখন তুমি তাকে গুণান্বিত করবে, তখন তুমি স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করেছো বলে বিবেচিত হবে না। কেননা তার মত আর কিছুই নেই। তুমি যদি তাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করো, তাহলে তুমি কাফের বলে গণ্য হবে।

ইমাম বুখারীর উস্তাদ নুআইম বিন হাম্মাদ আল-আনসারী বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টির সমতুল্য মনে করলো, সে কুফরী করলো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কোনো সিফাতকে অস্বীকার করলো, সেও কুফরী করলো।

তবে আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সত্তার জন্য যেসব সিফাত সাব্যস্ত করেছেন এবং তার রসূল তাকে যেসব বিশেষণে বিশেষিত করেছেন, তাতে কোনো সাদৃশ্য নেই। শাইখের উক্তি, من لم يتوق النفي والتشبيه زل ولم يصب التنزيه ‘‘যে ব্যক্তি রবের প্রতি সম্বোধিত গুণাবলীকে অস্বীকার এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে সাদৃশ্য করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে ও সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে’’, এ অংশের ব্যাখ্যা করার সময় এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসবে, ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সত্তার জন্য সর্বোত্তম গুণাবলী ও দৃষ্টান্ত সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ مَثَلُ السَّوْءِ وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

‘‘যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তারাই তো খারাপ গুণের অধিকারী। আর আল্লাহর জন্য তো রয়েছে মহত্তম গুণাবলী, তিনিই তো সবার উপর পরাক্রমশালী এবং জ্ঞানের দিক দিয়ে পূর্ণতার অধিকারী’’। (সূরা আন নাহাল: ৬০) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

‘‘তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই আবার তাকে পুনরুত্থিত করবেন এবং এটি তার জন্য সহজতর। আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ গুণাবলী তারই। তিনি পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী’’। (সূরা আর রূম: ২৭)

আল্লাহ তা‘আলা এখানে তার দুশমন মুশরিক এবং তাদের মূর্তিদের জন্য দোষ-ত্রুটি সম্পন্ন নিকৃষ্ট স্বভাব-প্রকৃতি সাব্যস্ত করেছেন এবং তাদের মধ্যে পূর্ণতার কোনো গুণ নেই বলে উল্লেখ করেছেন। অপর দিকে তিনি সংবাদ দিয়েছেন যে, সর্বোত্তম গুণাবলী কেবল তার জন্যই। এ সর্বোত্তম গুণাবলী একমাত্র তার জন্যই পরিপূর্ণতা সাব্যস্ত করে। সুতরাং যে ব্যক্তি পূর্ণতার একটি গুণ আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র সত্তা থেকে ছিনিয়ে নিল, সে তার জন্য নিকৃষ্ট গুণ সাব্যস্ত করলো এবং আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য যেসব সর্বোত্তম গুণ সাব্যস্ত করেছেন, তাকে অস্বীকার করলো।

আল্লাহ তা‘আলার জন্য পূর্ণতার সর্বোচ্চ গুণাবলী সাব্যস্ত। এ কামালিয়াতের দাবি হলো, প্রকৃতভাবেই তা তার জন্য সাব্যস্ত এবং তার অর্থগুলোও তার সাথে প্রতিষ্ঠিত ও সুসাব্যস্ত। এ কামালিয়াতের সিফাতগুলো দ্বারা বিশেষিত সত্তার মধ্যে যত বেশী এবং যত পূর্ণ আকারে বিদ্যমান থাকবে, তা দ্বারা বিশেষিত হওয়ার কারণে আল্লাহ তা‘আলা অন্যদের তুলনায় অধিক পূর্ণ ও অধিক মহান হিসাবে গণ্য হবেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সিফাত যেহেতু সীমাহীন ও পূর্ণতম, তাই তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম উদাহরণ। অন্যরা ব্যতীত তিনিই এগুলোর জন্য অধিক হকদার। শুধু তাই নয়; পূর্ণতম ও সর্বোচ্চ সিফাত ও উদাহরণ একই সাথে একাধিক সত্তার মধ্যে বিদ্যমান থাকা অসম্ভব। কেননা দু’জন যদি সকল দিক বিবেচনায় সমান গুণাবলী সম্পন্ন হয়, তাহলে তাদের একজন অন্যজনের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারে না। আর দু’জন যদি পরস্পর সমান না হয়, তাহলে সর্বোচ্চ গুণাবলী ও উদাহরণ দ্বারা বিশেষিত কেবল একজনই হয়। সুতরাং যার জন্য সর্বোচ্চ বিশেষণ ও উদাহরণ সাব্যস্ত, তার কোনো সদৃশ বা সমকক্ষ থাকতে পারে না।

المثل الأعلى বা ‘সর্বোচ্চ গুণাবলী ও সর্বোত্তম উদাহরণ, -এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বিভিন্ন কথা বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা যাকে তাওফীক দিয়েছেন, সে কেবল আলেমদের এ কথাগুলোর মাঝে সমন্বয় করা এবং তা বুঝার তাওফীক পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, তা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সুউচ্চ সিফাত, তা সম্পর্কে সৃষ্টিসমূহের পরিচয়, তার ইলমের অস্তিত্ব, তার খবরাদি এবং সিফাতগুলোর যিকির উদ্দেশ্য। সে সঙ্গে ইবাদতকারী ও যিকিরকারী বান্দাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার সিফাতের যে ইলম ও পরিচয় রয়েছে, তার মাধ্যমে তার ইবাদত করাও উদ্দেশ্য। এখানে চারটি বিষয় জেনে রাখা আবশ্যক।

(১) এর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার জন্য সুউচ্চ গুণাবলী সাব্যস্ত হয়। বান্দারা তা সম্পর্কে অবগত থাকুক বা না থাকুক। যারা المثل الأعلى -এর ব্যাখ্যা করেছেন আল্লাহর সিফাতের মাধ্যমে, এটিই তাদের কথা।

(২) সর্বোত্তম উদাহরণ বলতে বান্দাদের ইলম ও অনুভূতির মধ্যে সিফাতগুলোর ইলম বিদ্যমান থাকা উদ্দেশ্য। পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের অনেকেই এ কথা বলেছেন। ইবাদতকারীদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার যে পরিচয়, যিকির, ভালোবাসা, সম্মান, মর্যাদা, আল্লাহর ভয়, তার রহমতের আশা, তার উপর ভরসা এবং তার দিকে ফিরে যাওয়ার গভীর বিশ্বাস রয়েছে, এর দ্বারা তাই উদ্দেশ্য। বান্দাদের অন্তরে উপরোক্ত যে বিষয়গুলো রয়েছে, তাতে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ শরীক নয়। বরং বান্দাদের মধ্যে এগুলো কেবল আল্লাহর জন্যই খাসভাবে রয়েছে। যেমন খাসভাবেই রয়েছে তার জন্য সর্বোত্তম উদাহরণ।المثل الأعلى -এর এ ব্যাখ্যা করেছেন ঐসব মুফাস্সির, যারা বলেছেন, আল্লাহর জন্যই রয়েছে সর্বোত্তম গুণাবলী ও দৃষ্টান্ত, এর অর্থ হলো, আসমানবাসীগণ আল্লাহকে মর্যাদা দেয়, তাকে ভালোবাসে এবং তার ইবাদত করে। যমীনবাসীরাও তাই করে। যদিও লোকেরা আল্লাহর সাথে শির্কও করে থাকে, তার নাফরমানী করে এবং তার সিফাতগুলোকে অস্বীকারও করে। সুতরাং যমীনবাসীরা আল্লাহর মর্যাদা দেয়, তার বড়ত্ব বর্ণনা করে, তার বড়ত্বের সম্মুখে অবনত হয় এবং তার শক্তি ও প্রতিপত্তির সামনে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ كُلٌّ لَّهُ قَانِتُونَ

‘‘আকাশসমূহ ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছুই আছে সবই তার। সবাই তার হুকুমের তাবেদার’’। (সূরা আর রূম: ২৬)

(৩) এর দ্বারা আল্লাহর সিফাতসমূহের আলোচনা, সে সম্পর্কে সংবাদ দেয়া এবং তার সিফাতগুলোকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র করা ও তার জন্য সাদৃশ্য বর্ণনা করা থেকে দূরে থাকা উদ্দেশ্য।

(৪) আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসা, তার তাওহীদ, তার জন্য একনিষ্ঠ হওয়া, তার উপর ভরসা করা এবং তার দিকে ফিরে যাওয়া উদ্দেশ্য। আল্লাহর সিফাতসমূহের প্রতি বান্দার বিশ্বাস যতই গভীর ও পরিপূর্ণ হবে, তার প্রতি বান্দার ভালোবাসা ও একনিষ্ঠতা ততো বেশি শক্তিশালী হবে।

সুতরাংوَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ ‘‘আল্লাহর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম গুণাবলী ও উদাহরণ, এ কথার ব্যাখ্যায় আলেমদের থেকে যত কথা বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে উপরোক্ত চারটি কথাই মূল।

সুতরাং ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ ‘‘সর্বোচ্চ গুণাবলী ও উদাহরণ তারই’’ (সূরা রূম:২৭) এবং আল্লাহর বাণী: لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ‘তার মতো আর কিছুই নেই (সূরা শূরা: ১১), এর মধ্যে পারস্পরিক অসংগতি আছে বলে মনে করে?

সেই সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার বাণী, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ‘‘তার মত আর কিছুই নেই’’, -এ আয়াতকে তার সিফাত নাকচ করার দলীল হিসাবে পেশ করে এবং আয়াতের শেষাংশ, وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (সূরা শুরা: ১১)। পাঠ করা থেকে চোখ বন্ধ করে রাখে।

আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে কারো কারো গোমরাহী এ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে, যার কারণে সে খলীফা মামুনকে পরামর্শ দিয়েছিল যে, কা’বার গেলাফে যেন সূরা শুরার ১১ নং আয়াত لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ‘‘তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’ পরিবর্তন করে এভাবে লিখা হয়, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ‘‘তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই, তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান’’।

আল্লাহর শ্রবণ ও দৃষ্টি সিফাতকে অস্বীকার করার জন্য কাযী আহমাদ বিন দুয়াদ খলীফা মামুনকে এ পরামর্শ দিয়েছিল।[2]

আরেক গোমরাহ জাহাম বিন সাফওয়ান বলেছে, আমার ইচ্ছা ছিল কুরআন থেকে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী: ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ‘‘অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হয়েছেন’’ (সূরা আল আরাফ: ৫৪) এ আয়াতটি হাতের নোখ দিয়ে ঘষে উঠিয়ে ফেলি।[3]

সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা মহান আল্লাহর কাছে আমরা প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে তার বিশেষ অনুগ্রহে ও সত্য-সঠিক কথার উপর দুনিয়া ও আখেরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখেন। আমীন।

كَمِثْلِهِ শব্দের ইরাব বা ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ নিয়ে নাহুবিদদের একাধিক কথা রয়েছে। (১) বিষয়কে শক্তিশালী করার জন্য كاف অক্ষরটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরবী সাহিত্যের কবি আওস বিন হাজার বলেন,

لَيْسَ كَمِثْلِ الْفَتَى زُهَيْرٍ... خَلْقٌ يُوَازِيهِ فِي الْفَضَائِلِ

যুহাইর এমন এক সম্মানিত যুবক, যার অনুরূপ সম্মানের অধিকারী আর কোনো মানুষই নেই। এখানেও কবি বাক্যের মর্মার্থকে শক্তিশালী করার জন্য مثل শব্দের পূর্বে كاف বর্ণকে অতিরিক্তি হিসাবে যোগ করেছেন। আসলে কবির এ কথা বলা উদ্দেশ্য ছিল যে,لَيْسَ مثل الْفَتَى زُهَيْر أحد من الخَلْقٌ। আরেক কবি তার প্রশংসিত ব্যক্তিদের প্রশংসায় বলেন, مَا إِنْ كَمِثْلِهِمُ فِي النَّاسِ مِنْ بَشَرِ ‘‘তাদের মত সম্মানিত আর কোনো মানুষ নেই’’। এখানেও مثلهم শব্দের পূর্বে একটি অতিরিক্ত كاف ব্যবহার করা হয়েছে। আসল বাক্যটি ছিল, ليس مثلهم في النَّاس من أحد ‘‘মানুষের মধ্যে তাদের অনুরূপ আর কেউ নেই’’। আরেক কবি বলেছেন, وَقَتْلَى كَمِثْلِ جُذُوعِ النَّخِيلِ ‘‘খেজুর গাছের কাঠ যেভাবে পড়ে থাকে, অনেক নিহত লোক অনুরূপভাবেই পড়ে রয়েছে’’।

সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে مثله শব্দটি ليس এর খবরে মুকাদ্দাম। كاف অব্যয়টি অতিরিক্ত। আর شيئ শব্দটি ليس -এর ইসম। ইরাবের এ পদ্ধতিটিই অধিক শক্তিশালী ও সুন্দর। আরবদের ভাষায় এভাবে অক্ষর বৃদ্ধি করার বিষয়টি বোধগম্য। এভাবে অক্ষর বৃদ্ধি করে সম্বোধন করা হলে তাদের কাছে বাক্যের অর্থ মোটেই অস্পষ্ট থাকে না। আরবদের ভাষায় বাক্যের বিষয়কে শক্তিশালী করার জন্য حرف جر কাফ বৃদ্ধি করে সম্বোধন করার নযীর আরো কতিপয় কবির কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে।

এমনি কবিদের কবিতায় كاف অতিরিক্ত হওয়ার আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন কবি বলেন, وَصَالِيَاتٍ كَكَمَا يُؤَثْفَيْنَ। অন্য কবি বলেন, فَأَصْبَحَتْ مِثْلَ كَعَصْفٍ مَأْكُولٍ। এখানেও حرف جر কাফ অতিরিক্ত হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

(২) لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ-এর মধ্যে مثل শব্দটি অতিরিক্ত হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মূল বাক্যটি এরূপ ليس كهو شيئ। এ কথা সত্য সঠিক নয়। কেননা مثل শব্দটি اسم বা বিশেষ্য। বাক্যের অর্থকে জোরালো করার জন্য ইস্ম ব্যবহার করার চেয়ে অব্যয় ব্যবহার করাই উত্তম।

(৩) আসলে এখানে অতিরিক্ত কোনো কিছু নেই। বরং কথাটি এমন যে, مِثْلُكَ لَا يَفْعَلُ كَذَا তোমার মত লোক এরূপ করতে পারে না। অর্থাৎ তুমি এমন করবে না। এখানে مبالغة বা আধিক্য বুঝনোর জন্য مثل শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে তারা মুবালাগার অর্থে বলেছেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ مِثْلٌ لَوْ فُرِضَ الْمِثْلُ ‘‘যদিও ধরে নেয়া হয় যে, আল্লাহর উদাহরণ রয়েছে, তাহলেও আল্লাহর উদাহরণের মত আর কোনো উদাহরণ নেই’’।

সুতরাং যেই সত্তার কোনো উদাহরণ নেই, তিনি কত মহান, কত বড় তা কেবল প্রকৃতপক্ষে তিনিই অবগত রয়েছেন। এ ছাড়াও আরো অনেক কথা রয়েছে। তবে প্রথম অর্থটিই অধিক সুস্পষ্ট।[4]

[1]. মানুষের মস্তিস্ক দশ হাত এবং একাধিক মাথা বিশিষ্ট সৃষ্টির কল্পনা করতে পারে। এমন সৃষ্টির ছবিও মানুষ একেঁ থাকে, যার দেহ ঘোড়ার মত, চেহারা সুন্দরী মহিলার চেহারার মত এবং তার রয়েছে পাখির মত পাখা। সাগরে হুবহু মানুষ আছে বলেও কল্পনা করা হয়। একে আরবদের রূপকথায় আরুসুল বাহার বা সাগরের বউ বলা হয়। এগুলো মন ও মাথার কল্পনা মাত্র। বাস্তবে এগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। মানুষ অসম্ভব কল্পনা করতে পারে, তাই বলে বাস্তবে সে রকম কিছু থাকা অসম্ভব। তবে আল্লাহ তা‘আলার কুদরতে কামেলা সম্পর্কে এ বিশ্বাস রাখা আবশ্যক যে, তার জন্য উপরোক্ত স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের বস্তু সৃষ্টি করাও অসম্ভব নয়; বরং সবকিছুই তার জন্য সম্ভব। এবার আল্লাহর সিফাতের প্রশ্নে আসি। আল্লাহর অন্যতম সিফাত হাতের কথা বলা হলেই মানুষের মাথায় তাশবীহ বা সৃষ্টির হাতের সদৃশ কল্পনা জাগতে পারে। এ পরিমাণ ধারণা জাগ্রত হওয়া জরুরী। কিন্তু বাস্তবে স্রষ্টার হাতের সাথে সৃষ্টির হাতের কোনো মিল নেই, আল্লাহর হাত বান্দার হাতের সদৃশও নয়। আল্লাহ তা‘আলার বাকী সিফাতগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা। আল্লাহ তাআলা বলেন, كمثله شيئ وهو السميع البصير ليس ‘‘আল্লাহর সদৃশ কোনো কিছুই নেই, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’।

[2]. এ মূর্খ লোকটি মনে করেছিল, আল্লাহর জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টি সাব্যস্ত করা হলে বান্দার সিফাতের সাথে আল্লাহর সিফাতের তাশবীহ ও সাদৃশ্য হয়ে যায়। তাই সে কুরআন থেকে এ আয়াতটিই উঠিয়ে দিতে চেয়েছিল। সে এটি বুঝতে সক্ষম হয়নি, যে সন্দেহে সে আল্লাহর শ্রবণ ও দৃষ্টি অস্বীকার করেছিল, আল্লাহর জন্য ইজ্জত ও হিকমত সাব্যস্ত করলে সে একই সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে। কেননা মানুষেরও ইজ্জত এবং হিকমত বা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা রয়েছে। মোট কথা আল্লাহর জন্য জ্ঞান ও হিকমত সাব্যস্ত করলে যেমন মানুষের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায় না, ঠিক তেমনি তার জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টি সাব্যস্ত করলেও মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায় না। কেননা সৃষ্টির জন্য যেমন সিফাত শোভনীয়, তার জন্য উহা সেভাবেই সাব্যস্ত এবং স্রষ্টার বড়ত্ব ও সম্মানের জন্য যেমন গুণবলী শোভনীয় তিনি সেভাবেই উহা দ্বারা বিশেষিত।

[3]. অন্য বর্ণনায় রয়েছে, জনৈক আলেম আহমাদ বিন দুয়াদের কাছে এসে বলল, লিখিত কুরআন থেকে তুমি আল্লাহর এ বাণীটি উঠিয়ে ফেলতে সক্ষম হলেও মুসলিম উম্মাহর আলেম ও হাফেযদের অন্তর থেকে উহা উঠিয়ে দেয়া তো দূরের কথা তাদের শিশুদের অন্তর থেকেও এটি উঠাতে পারবে না।

[4]. কুরআনে অতিরিক্ত কিছু আছে, -এ ধারণা থেকে মুক্ত থাকার জন্যই তারা বলেছে, এখানে كاف অব্যয়টি অতিরিক্ত নয়। বরং অর্থের আধিক্য বুঝানোর জন্য كاف অব্যয়টি এসেছে। তাদের কথা ঠিক নয়। বরং অতিরিক্ত হিসাবে ব্যবহৃত হওয়াই অধিকতর বিশুদ্ধ। তবে এর অর্থ এটি নয় যে, কুরআনে এমন বিষয় রয়েছে, যার প্রতি আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই এবং যার কোনো মূল্য নেই। এ রকম ধারণা করা মারাত্মক ভুল। শব্দ ও বাক্যের অর্থগুলো বুঝানোর জন্য এ পরিভাষাগুলো নির্ধারণ করেছে।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে