রাহে বেলায়াত তৃতীয় অধ্যায় - দৈনন্দিন যিকর ওযীফা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
সকালের যিকর: দ্বিতীয় পর্যায় - যিকর নং ৭০ : ফজর ও মাগরিবের পরের দু’আ-২

(اللهم أجرني من النار)

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা, আজিরনী মিনান না-র।

অর্থঃ “হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।” ফজর ও মাগরিবের সালাতের পরে কোনো (দুনিয়াবী) কথা বলার পূর্বে ৭ বার।

হারিস ইবনু মুসলিম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, তুমি ফজরের সালাতের পরেই (দুনিয়াবী) কথা বলার আগে এই দু‘আ ৭ বার বলবে। যদি তুমি ঐ দিনে মৃত্যুবরণ কর তাহলে আল্লাহ তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। অনুরূপভাবে, মাগরিবের সালাতের পরে কথা বলার আগেই এই দু‘আ ৭ বার বলবে। তুমি যদি ঐ রাত্রে মৃত্যু বরণ কর তাহলে আল্লাহ তোমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।” অধিকাংশ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন।[1]

দ্বিতীয় প্রকার যিকর: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে আযকারে নববী ফজরের ফরয সালাতের পরে পালনীয় দ্বিতীয় প্রকার নির্ধারিত যিকর যা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে পালনীয় বলে হাদীস থেকে জানা যায়। এগুলি স্বভাবত অন্যান্য সালাতের ন্যায় ফজরের সালাতের পরেও আদায় করতে হবে।


ফরয সালাতের পরে যিকর ও মুনাজাতের গুরুত্ব

সালাত মুমিনের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর। আর যিকরেই তো মুমিনের হৃদয়ে আসে প্রশান্তি। এজন্য সালাতের শেষে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। আমরা সালাতে মনোযোগ দিতে পারি না বলে এই প্রশান্তি ভালোভাবে অনুভব করতে পারি না। তা সত্ত্বেও যতটুকু সম্ভব মনোযোগ সহকারে, সালাতের সূরা-কিরাআত, তাসবীহ ও দু‘আর অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে সালাত শেষ করলে মুসাল্লী নিজেই হৃদয়ের প্রশান্তি ও আবেগ অনুভব করবেন।

এ সময়ে তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে যাওয়া মুমিনের উচিত নয়। সালাতের পরে যতক্ষণ সম্ভব সালাতের স্থানে বসে দু‘আ মুনাজাত ও যিকরে রত থাকা উচিত। মুমিন যদি কিছু না করে শুধু বসে থাকেন তাও তাঁর জন্য কল্যাণকর। সালাতের পরে যতক্ষণ মুসল্লী সালাতের স্থানে বসে থাকবেন ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করবেন।আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

إذا صلى المسلم ثم جلس في مصلاه لم تزل الملائكة تدعوا له اللهم اغفر له اللهم ارحمه ما لم يحدث أو يقوم


“যদি কোনো মুসলিম সালাত আদায় করে, এরপর সে তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকে, তবে ফিরিশতাগণ অনবরত তাঁর জন্য দু‘আ করতে থাকেন: হে আল্লাহ একে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, একে রহমত করুন, যতক্ষণ না সে ওযু নষ্ট করে বা তাঁর স্থান থেকে উঠে যায়।”[2]

সাহাবী-তাবেয়ীগণ প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে সাধ্যমতো বেশি সময় কোনো কথোপকথনে লিপ্ত না হয়ে যত বেশি সম্ভব তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদি যিকরে রত থাকতে পছন্দ করতেন।[3]


রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরে বিভিন্ন যিকর ও দু‘আ পাঠ করেছেন এবং করতে শিখিয়েছেন। হাদীসের শিক্ষার আলোকে আমরা দেখতে পাই যে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরে কিছু সময় বসে যিকর ও দু‘আ করা মাসনূন বা সুন্নাত সম্মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফলদায়ক কর্ম। আমরা দেখেছি যে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরের দু‘আ কবুল হয় বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যে সকল সালাতের পরে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ সালাত আছে, অর্থাৎ যোহর, মাগরিব ও ইশা’র সালাতের ক্ষেত্রে এ সকল যিকর্ ও দু’আ সুন্নাতের আগে পালন করতে হবে না পরে- সে বিষয়ে হানাফী উলামাগণের কিছু মতভেদ আছে। কিন্তু ফজরের সালাতের ক্ষেত্রে স্বভাবতই কোনো সমস্যা নেই। সালাতের পরে এ সকল যিকর ও দু‘আ সম্ভব হলে সবগুলি, না হলে কিছু বেছে নিয়ে তা আদায় করতে হবে।

[1] নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা ৬/৩৩, সুনানু আবু দাউদ ৪/৩২০, নং ৫০৭৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫/৩৬৭, মাওয়ারিদুয যামআন ৭/৩৬১-৩৬৫, নাবাবী, আযকার, পৃ. ১১৫, যাকারিয়্যা, আল-ইখবার, পৃ. ৬৫।

[2] হাদিসটির সনদ সহীহ। সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ১/৩৭২, সহীহুত তারগীব ১/২৫১।

[3] আব্দুর রাজ্জাক, আল-মুসান্নাফ ২/২৩৯।