এই দুই রাক’আত সালাতকে রাসূলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। কখনোই কোনো অবস্থায় সফরে, বাড়িতে, ব্যস্ততা বা কোনো কারণে তিনি তা ছাড়তেন না। এজন্য কোনো কোনো আলিম এই দুই রাক’আত সালাতকে ওয়াজিব বলেছেন। এই দুই রাক’আত সুন্নাত সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত নিম্নরূপঃ
(১) তা ঘরে আদায় করা। তিনি সর্বদা (সফর ছাড়া) এই দুই রাক’আত সালাত তাঁর নিজ বাড়িতেই আদায় করতেন। কখনো আযানের পরেই এবং কখনো জামা’আত শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তিনি নিজ বাড়িতে সুন্নাত সালাত আদায় করে এরপর মসজিদে যেয়ে জামা’আতে দাঁড়াতেন।
সাধারণভাবে সকল সুন্নাত ও নফল সালাত নিজ বাড়িতে বা নিজের ঘরে আদায় করা উত্তম এবং সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরয সালাতের আগের ও পরের সকল সুন্নাত সালাত ও অন্যান্য সুন্নাত-নফল সালাত ঘরে আদায় করতেন। তিনি এ সকল সালাত ঘরে আদায় করতে উৎসাহ দিয়েছেন। ঘরে আদায় করলে সাওয়াব বেশি হয় বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
أفضل الصلاة صلاة المرء في بيته الا الصلاة المكتوبة
“শুধু ফরয সালাত বাদে সকল সালাত নিজ বাড়িতে পড়া সর্বোত্তম।”[1]
তিনি আরো বলেনঃ
إذا قضى أحدكم الصلاة في مسجده فليجعل لبيته نصيباً من صلاته فإن الله جاعل في بيته من صلاته خيراً
“মসজিদের (জামাতে) সালাত হয়ে গেলে তোমরা বাড়িতে কিছু সালাত আদায় করবে, কারণ বাড়িতে সালাত আদায়ের কারণে আল্লাহ সেই বাড়িতে কল্যাণ ও মঙ্গল (বরকত) দান করবেন।”[2]
আবদ ইবনু সা’দ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রশ্ন করলাম, কোনটি উত্তম, বড়িতে সালাত পড়া না মসজিদে সালাত পড়া? তিনি বললেনঃ
ألا ترى إلى بيتي ما أقربه من المسجد فلأن أصلي في بيتي أحب إلي من أن أصلي في المسجد إلا أن تكون صلاة مكتوبة
“তুমি তো দেখছ যে, আমার বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন। তা সত্ত্বেও আমি মসজিদে সালাত না পড়ে বাড়িতে সালাত পড়া পছন্দ করি। শুধুমাত্র ফরয সালাত মসজিদে পড়ি।”[3]
সুন্নাত-নফল সালাত ঘরে পড়ার ফযীলতে অন্য হাদীসে তিনি বলেছেনঃ
فضل صلاة الرجل في بيته على صلاته حيث يراه الناس كفضل الفريضة على التطوع
“যেখানে মানুষ দেখতে পায় সেখানে সুন্নাত-নফল সালাত পড়ার চেয়ে নিজ বাড়িতে তা আদায় করার ফযীলত এত বেশি যেমন নফল সালাতের উপরে ফরয সালাতের ফযীলত।”[4]
সর্বাবস্থায় সকল সুন্নাত-নফল সালাত সাধারণভাবে মসজিদে আদায় করা জায়েয, কিন্তু বাড়িতে পালন করা উত্তম। হানাফী মাযহাবের ইমামগণ উল্লেখ করেছেন যে, বাড়ি যদি মসজিদ থেকে দূরেও হয় তাহলেও বাড়িতে এসে সুন্নাত আদায় করা উত্তম। পথ চলার কারণে সুন্নাত আদায়ে দেরি হলে কোনো অসুবিধা নেই।[5]
(২) ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ম ছিল তা সংক্ষেপে আদায় করা। সাধারণত তিনি প্রথম রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা এখলাস পাঠ করতেন। আবার কখনো কখনো তিনি ফাতেহার পরে প্রথম রাকাতে সূরা বাকারার ১৩৬ আয়াত ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আলে ইমরানের ৫২ নং আয়াত বা ৬৪ নং আয়াত তিলাওয়াত করতেন।[6]
আযানের পরে সুন্নাত আদায় করে নিলে তিনি সাধারণত জামাত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর স্ত্রীর সাথে কথা বলতেন, অথবা ডান কাতে শুয়ে থাকতেন।
ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরে এই দুই রাক’আত সুন্নাত ছাড়া কোনো প্রকার সালাত তিনি পড়তেন না এবং এই দুই রাক’আত ছাড়া অন্য কোনো সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। এছাড়া ফজরের সুন্নাত ও ফরযের মধ্যবর্তী সময়ে কোনো নির্দিষ্ট যিকর ওযীফার কথা সুন্নাতে আছে বলে আমার জানা নেই।
[2] সহীহ মুসলিম ১/৫৩৯, নং ৭৭৮।
[3] সুনানু ইবনু মাজাহ ১/৪৩৯, নং ১৩৭৮, সহীহুত তারগীব ১/২৫০।
[4] বাইহাকী, শু’আবুল ঈমান ৩/১৭৩, সহীহুত তারগীব ১/২৫০।
[5] হাশিয়াতুত তাহতাবী, পৃ. ৩১২-৩১৩।
[6] সহীহ মুসলিম ১/৫০২, নং ৭২৬, ৭২৭।