জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে বক্তাকে অবশ্যই পর্যায়ক্রমিক, নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক বলতে বুঝায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রথমে আলোচনা করা উচিত। নবী

করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুয়াজ (রাঃ)-কে ইয়েমেনে পাঠান তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা দ্বারা এ কথার সত্যতার সমর্থন পাওয়া যায় (আর তা হলো)-

فليكن أول ما تدعون إليه شهادة أن لا إله إلا الله وانى رسول الله

ভাবাৰ্থঃ “প্রথমে তাদেরকে তোমরা যে কাজের প্রতি আহবান করবে তাহলো এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল বা প্রেরিত পুরুষ।”

আমাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আমরা অনেকেই বুঝি যে, আমাদের ক্রমশ: উন্নতি চাওয়া উচিত, তবে কেন আমরা একসাথে সবকিছু মানুষের গলার ভিতর ঢুকিয়ে দেই!

“এবং কাফেররা বলল, “তবে কেন গোটা কুরআন একসাথে, একবারে তার উপর অবতীর্ণ হলো না? এর দ্বারা আপনার অন্তরকে আমি মজবুত করার জন্যই এরূপে (ধাপে ধাপে) আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং একে স্পষ্টরূপে, ধীরে ধীরে ও ধাপে ধাপে আবৃত্তি করেছি ও আপনার নিকট অবতীর্ণ করেছি।” (২৫-সূরা আল ফুরকানঃ আয়াত-৩২)

ইসলামের শিক্ষা অর্জনে মুসলমানদের শান্তি ও আরামবোধ করা উচিত, বিশেষ করে এ কারণে যে, ইসলাম মানুষকে অন্তর্দ্বন্দ থেকে রক্ষা করার জন্য এসেছে।

তাকলীফ, কথার একটি গৃঢ়াৰ্থ হলো, বোঝা চাপান, যা কুরআনে নেতিবাচক অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে।

“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যাতীত বোঝা চাপান না।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-২৮৬)

সাহাবীগণ যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সাধারণ উপদেশ বা দিক-নির্দেশনা চাইতে আসতেন তখন তিনি তাদেরকে ব্যাপক অর্থবোধক কিন্তু সংক্ষিপ্ত কথায় উপদেশ দিতেন, যা সহজেই মনে থাকত। প্রশ্নকারীর অবস্থা বুঝার পর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা বাস্তব ও সহজ উত্তর দিতেন।

যখন আমরা শ্রোতার নিকট আমাদের অধিকারে (আয়ত্বে) যত উপদেশ, শিক্ষা, আচার-আচরণ ও প্রজ্ঞা আছে তার সবটাই উপস্থাপন করার চেষ্টা করি, তখন আমরা সাংঘাতিক ভুল করি।

“আর কুরআনকে আমি (আয়াতে আয়াতে) বিভক্ত করেছি যাতে তুমি একে মানুষের নিকট থেমে থেমে পাঠ করতে পার।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত-১০৬)