দুঃখিত হবেন না : কেননা, আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করছেন এবং ফেরেশতারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। মু’মিনগণ প্রতি সালাতে তাদের দোয়ায় আপনাকে অংশীদার করছে (অর্থাৎ আপনার জন্য দোয়া করছে)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানদারদের জন্য সুপারিশ করবেন। কুরআন মজীদ ভালো ভালো উপদেশে ভরা, সর্বোপরি পরম করুণাময়ের দয়াতো আছেই।

বিষন্ন হবেন না : নেক আমলকে দশগুণ এমননি সাতশতগুণ বা তারও বেশি বর্ধিত করা হবে। অপরপক্ষে যখন নাকি বদ আমলকে বর্ধিত করা বা গুণ করা হবে না এবং আপনার প্রভু তা ক্ষমা করেও দিতে পারেন। কতবারইনা আমরা আল্লাহর মহানুভবতা লক্ষ্য করেছি। এ মহানুভবতা, উদারতা ও দয়া অপ্রতিদ্বন্দী ও অতুলনীয়। অন্য কারোও বদান্যতা তার বদান্যতার এমনকি নিকটেও পৌছতে পারে না।

যদি আপনি আল্লাহর সাথে কোন শরীক না করেন, আপনি সত্য ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেন বা দ্বীনে হক্কের উপর ঈমান রাখেন, আপনি যদি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালোবাসেন তবে আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। যদি আপনি আপনার মন্দ কাজের জন্য অনুতাপ করেন এবং সওয়াবের কাজ করার পর যদি আপনার খুশি লাগে তাহলে আপনার দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার সাথে অনেক কল্যাণ আছে যা আপনি বুঝতে পারেন না।

নিচের হাদীসে যেমনটি আছে তেমনভাবে যদি আপনি আপনার জীবনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে পারেন তাহলে আপনার কোন ভয় নেই।

“মুমিনের অবস্থা কতইনা চমৎকার! তার সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। ঈমানদার ছাড়া অন্য কারো জন্য এমনটি নয়। যদি সুখী হওয়ার মতো কিছু ঘটে তবে সে কৃতজ্ঞ হয়। আর এটা তার জন্য মঙ্গলজনক। আর যদি তিনি সমস্যা বা অভাব-অনটনে পড়েন তবে তিনি ধৈর্য ধরেন এবং এটা তার জন্য উপকারী।”

মন:ক্ষুণ হবেন না: দু:খ যাতনার সময় ধৈর্য ধারণ হলো সফলতা ও সুখের উপায়।

“এবং ধৈর্য ধরুন, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আপনার ধৈর্য ধরা সম্ভব নয়।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-১২৭)

“অতএব, ধৈর্য ধরাই ভাল। আর তারা যা বলছে এর বিরুদ্ধে আল্লাহই সহায়ক।” (১২-সূরা ইউসুফ: আয়াত-১৮)

“সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর উত্তম ধৈর্য।” (৭০-সূরা আল মাআরিজ: আয়াত-৫)

“তোমাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ।” (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত-২৪)

“তোমার উপর যে বালা মুসিবত এসেছে বা আসবে তাতে ধৈর্য ধারণ কর এবং করিও।" (৩১-সূরা লোকমান: আয়াত-২৭)

“তোমরা ধৈর্য ধর এবং (তোমাদের শক্ৰদের সাথে) ধৈর্যের প্রতিযোগিতা কর (অর্থাৎ তাদের চেয়েও বেশি ধৈর্য ধর) এবং যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত থাক বা যেখান থেকে শত্রু বাহিনী আক্রমণ করতে পারে সেখানে সৈন্য-বাহিনী স্থাপন করে তোমাদের অঞ্চলকে রক্ষা কর।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-২০০)

ওমর (রাঃ) বলেন : “ধৈর্যের মাধ্যমে আমরা সুন্দর জীবন লাভ করেছি।”

আহলে সুন্নতের বা সুন্নতের অনুসারী লোকদের বালা-মুসিবতের মুকাবিলার তিনটি উপায় আছে: ধৈর্য, দোয়া ও শুভ পরিণতির জন্য অপেক্ষা।

একজন কবি বলেছেন-

“আমরা তাদেরকে এক গ্লাস পানীয় পান করালাম, অনুরূপভাবে তারাও আমাদেরকে একগ্লাস পানীয় পান করাল। কিন্তু মৃত্যুমুখে আমরাই বেশি ধৈর্যশীল ছিলাম.”

একটি সহীহ হাদীসে আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“মন্দ কথা শুনার পরে আল্লাহর চেয়ে বেশি ধৈর্যশীল অন্য কেহ নেই। তারা দাবি করে যে, আল্লাহর স্ত্রী-পুত্র-কন্যা আছে, তবুও আল্লাহ তাদেরকে সুস্থ রাখছেন ও রিযিক দিচ্ছেন।"

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-

“আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন। (আমি যে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি) তিনি এর চেয়েও বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-

“যে ধৈর্য ধরে আল্লাহ তাকে অনবরত ধৈর্য ধরার জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করবেন।”

একজন কবি বলেছেন-

“মর্যাদার পথে আমি হামাগুড়ি দিয়ে চললাম আর যারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে তারা এতে পৌছে গেছে।”

কঠোর পরিশ্রম করে, চেষ্টার সামান্য ক্রটিও না করে অনেকে সেখানে পৌছার চেষ্টা করেছে, আর অধিকাংশরাই যাত্রা পথে বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর তারা প্রকৃত মর্যাদার সাক্ষাৎ পেয়েছে এবং তারা ধৈর্যশীল। তুমি যে আপেল খাও মর্যাদাকে তা মনে করিওনা (অর্থাৎ মর্যাদা অর্জন করা আপেলের মত মজাদার বা সহজ নয়, বরং তা কষ্টসাধ্য। -অনুবাদক) ধৈর্য দ্বারা সমস্যাকে জয় করতে না পারলে তুমি মর্যাদা অর্জন করতে পারবে না।”

উচ্চতর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্বপ্ন ও কল্পনার মাধ্যমে অর্জিত হয় না; একমাত্র ত্যাগ ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই তা অর্জিত হতে পারে। মানুষেরা আপনার সাথে কতটা খারাপ আচরণ করল তাতে দুঃখ করবেন না। বরং তারা আল্লাহর সাথে কতটা খারাপ আচরণ করে। (আর আল্লাহ কতটা ধৈর্য ধরছেন) তা পর্যবেক্ষণ করে (ধৈর্য ধারণ করে) শিক্ষা গ্রহণ করুন।

ইমাম আহমদ (রহঃ) তার ‘কিতাবুয যুহদ’ বা ‘যুহদ’ নামক পুস্তকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন-

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন-

“হে আদম সন্তান! তুমি বড়ই অদ্ভুত। আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি অথচ তুমি আমাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত কর এবং আমি তোমাকে রিযিক দিলাম অথচ তুমি আমাকে বাদ দিয়ে অন্যের প্রশংসা কর। তোমাকে আমি নেয়ামত দিয়ে তোমার প্রতি আমার ভালবাসার প্রকাশ ঘটাই অথচ তোমার নিকট আমার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি পাপ করে আমার অবাধ্যচারিতা করছ অথচ তুমি আমার নিকট ফকীর, অভাবী ও মুখাপেক্ষী! আমার কল্যাণ তোমার নিকট অবতীর্ণ হচ্ছে অথচ তোমার পাপ ও মন্দকার্য আমার দিকে উঠে আসছে।”

ঈসা (আঃ)-এর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় ত্রিশটি রোগী ও অনেক অন্ধ লোককে আরোগ্য করেছিলেন। পরবর্তীতে তারা তার (বিরুদ্ধে) শক্র হয়ে গিয়েছিল।