৩১. এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী জাতি বানিয়েছি

وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا

“এরূপে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী জাতি বানিয়েছি।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-১৪৩)

আপনার বিবেক ও আপনার ধর্ম উভয়টিই দাবি করে যে, আপনি মধ্যপন্থী হোন। তার মানে আপনার চরমপন্থী ও নরমপন্থী কোনটাই হওয়া উচিত নয়। বাড়াবাড়ি করাও উচিত নয়, খুব কম করাও উচিত নয়। যে সুখ চায় তাকে মধ্যপন্থী বা ন্যায়ানুগ হতে হবে-সে রাগান্বিত, বিষন্ন বা আনন্দিত যে কোন অবস্থাতেই থাকুক না কেন তাতে কিছু আসে যায় না (অর্থাৎ সর্বাবস্থায়ই তাকে ন্যায়পরায়ণ বা মধ্যপন্থী হতেই হবে। -অনুবাদক)। অন্যের সাথে আমাদের আচরণে বাড়াবাড়ি গ্রহণযোগ্য নয়।

মধ্যমপন্থাই সর্বোত্তমপস্থা। যে তার প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করে, কোন বিশেষ অবস্থার গুরুত্বকে বড় করে দেখারই কথা; এভাবে অকারণে সে বহুকিছু করে। সে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে। যেহেতু সে বাড়াবাড়ি ও কল্পনার জগতে বাস করে তাই সে অন্য সবাইকে তার বিরুদ্ধবাদী বলে মনে মনে জল্পনা-কল্পনা করে। এমনকি এতটা পরিমাণে যে, সে ভাবতে থাকে অন্যেরা তাকে ধ্বংস করার সর্বদা চক্রান্ত করছে। এ কারণে সে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অন্ধকার মেঘের নিচে বসবাস করে।

লোকশ্রুতি ও কুসংস্কার অনুযায়ী জীবন যাপন করা আমাদের ধর্মে নিষিদ্ধ।

يَحْسَبُونَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ

তারা মনে করে প্রত্যেক শোরগোলই তাদের বিরুদ্ধে। (৬৩ সূরা মুনাফিকূন: আয়াত-৪)

প্রায়ই এমন হয় যে, আপনি যা ঘটবে বলে আশংকা করেন তা ঘটে না। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কিছু একটা করা উচিত। আর তা হলো- যখন আপনি কোন কিছুর ভয় করেন তখন কল্পনা করুন যে, সর্বাপেক্ষা অশুভ পরিণতি দেখা দিয়েছে এবং তারপর সে পরিণতিতে নিজেকে প্রস্তুত ও সন্তুষ্ট ভাবতে নিজেকে প্রশিক্ষণ দিন। যদি আপনি এ কাজ করেন তবে আপনি নিজেকে আতঙ্ক ও কুসংস্কার থেকে রক্ষা করতে পারবেন। অন্যথায় এই আতঙ্ক ও কুসংস্কার আপনার অনেক দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাড়াবে।

প্রতিটি বিষয়ের প্রতি তার গুরুত্ব অনুসারে মনোযোগ দিন। কোন (নির্দিষ্ট) অবস্থাতেই তিলকে তাল করবেন না। বরং নিরপেক্ষ বিচার ও দৃঢ়তার কথা মনে রাখুন। অহেতুক সন্দেহ ও বৃথা আশার প্রতারণায় মোহের অন্ধ অনুসরণ করবেন না বা আলেয়ার আলোর পিছে ছুটবেন না। বরং ভারসাম্যপূর্ণ হোন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বর্ণিত ভালোবাসা ও ঘৃণার মাপকাঠির কথা শুনুন

“তোমরা প্রিয়জনকে পরিমিত পরিমাণে ভালোবাস, কেননা এমন দিন আসতে পারে, যখন তুমি তাকে ঘৃণা করবে এবং যাকে তুমি ঘৃণা কর তাকে সংযত পরিমাণে ঘৃণা কর, কারণ এমন দিন আসতে পারে যখন তুমি তাকে ভালোবাসবে।”

عَسَى اللَّهُ أَن يَجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الَّذِينَ عَادَيْتُم مِّنْهُم مَّوَدَّةً وَاللَّهُ قَدِيرٌ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

“সম্ভবত তোমাদের মাঝে ও যাদেরকে তোমরা শক্ৰ মনে কর তাদের মাঝে আল্লাহ বন্ধুত্ব স্থাপন করে দিবেন। আর আল্লাহ (সবকিছুর উপর) ক্ষমতাবান এবং আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।” (৬০-সূরা মুমতাহিনা: আয়াত-৭)