ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজের অনুমতি রয়েছে

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ ও মাকরূহ কাজগুলো ছাড়া মুহরিমের জন্য সব কাজ করার অনুমতি রয়েছে। যেমন :

১. পানি দিয়ে গোসল করা।

২. সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করা।

৩. ইহরামের কাপড় ধোয়া এবং এর বদলে অন্যটি পরিধান করা।

৪. বেল্ট বা অন্য কিছু দিয়ে লুঙ্গি বাঁধা। যদিও তাতে সেলাই থাকে।

৫. শিঙ্গা লাগানো। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।[1]

৬. সেলাইযুক্ত চাদর পরা।

৭. পোষা প্রাণী যবেহ করা। কারণ, এটি শিকারের আওতায় পড়ে না। যেমন, হাঁস, মুরগী ও ছাগল ইত্যাদি।

৮. মেসওয়াক করা। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শর্তহীনভাবেই বেশি বেশি মেসওয়াক করতে উদ্বুব্ধ করেছেন।[2] মেসওয়াকের স্থলে এ জাতীয় অন্য কিছু যেমন ব্রাশ ইত্যাদি ব্যবহারেরও অবকাশ রয়েছে। এতে যদি সুগন্ধি থাকে, তাতেও অসুবিধা নেই যদি না তা কেবল সুবাস পেতেই ব্যবহার করা হয়।

৯. চশমা, ঘড়ি বা আংটি পরা কিংবা শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার করা অথবা আয়নায় মুখ দেখা।

১০. ব্যবসা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ﴾ [البقرة: ١٩٨]

‘তোমাদের ওপর কোন পাপ নেই যে, তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে।’[3] সকল তাফসিরবিশারদের মতে আয়াতে ‘অনুগ্রহ’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে ব্যবসায়িক মুনাফা।

১১. স্বাভাবিকভাবে মাথার চুল আচড়ানো বা চুলকানো। যদিও এতে কোন চুল পড়ে। বিশেষ করে মানুষের মাথা থেকে যেসব চুল পড়ে সেগুলো আসলে মরা চুল। তবে এমন জোরে চিরুনি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত সাধারণত যাতে চুল পড়ে।

১২. যা মাথার সাথে লেগে থাকে না। যেমন ছাতা, গাড়ির হুড, তাঁবু ইত্যাদি ব্যবহার করা। উম্মে হাসীন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহর সাথে হজ পালন করলাম। তিনি আকা‘বার কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর তিনি বাহনে চড়ে প্রত্যাবর্তন করলেন, তার সাথে ছিলেন বিলাল ও উসামা। তাদের একজন বাহন চালাচ্ছিলেন, অন্যজন রাসূলুল্লাহর মাথার ওপর কাপড় উঁচু করে ধরে রেখেছিলেন, যা তাকে সূর্য থেকে ছায়া দিচ্ছিল।[4] অপর এক বর্ণনা মতে, ‘যা তাঁকে তাপ থেকে রক্ষা করছিল, যতক্ষণ না তিনি আকা‘বার কঙ্কর নিক্ষেপ সমাপ্ত করলেন।’

১৩. মাথায় আসবাব-পত্র বহন করা, যদিও তা মাথার কিছু অংশ ঢেকে রাখে। কারণ, সাধারণত এর মাধ্যমে কেউ মাথা আবৃত করার উদ্দেশ্য করে না, বরং বোঝা বহন করাই মূল উদ্দেশ্য থাকে।

১৪. পানিতে ডুব দেয়াতে কোন অসুবিধা নেই, যদিও এর ফলে সম্পূর্ণ মাথা আবৃত হয়ে যায়।

১৫. পরিধান না করে জামা শরীরের সাথে জড়িয়ে রাখা।

১৬. স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে লম্বা জামা পরিধান করা হয়, সেভাবে পরিধান না করে চাদর হিসেবে ব্যবহার করাতে কোন দোষ নেই।

১৭. তালি যুক্ত চাদর বা লুঙ্গি পরিধানে কোন বাধা নেই।

১৮. গলায় পানির মশক বা পানপাত্র ঝুলাতে পারবে।

১৯. যদি চাদর খুলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তা বেঁধে রাখতে পারবে। কারণ, এসব বিষয়ে রাসূলুল্লাহর পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট কিংবা ইঙ্গিতসূচক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। রাসূলুল্লাহকে যখন মুহরিমের পরিধেয় বস্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, সে জামা, পাগড়ি, মস্তকাবরণীযুক্ত লম্বা কোট, পাজামা এবং মোজা পরিধান করবে না। পরিধেয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর যখন রাসূলুল্লাহ পরিধানের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বস্ত্রগুলো সম্পর্কে জানালেন, তখন প্রমাণিত হয় যে, উল্লে­খিত পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া অন্য যাবতীয় পোশাক মুহরিম ব্যক্তি পরিধান করতে পারবে।

২০. জুতো না থাকলে পায়ের সুরক্ষার জন্য মুহরিম ব্যক্তির জন্য মোজা ব্যবহার বৈধ।

২১. ক্ষতিকর পোকা-মাকড় কিংবা হিংস্র প্রাণীকে শিকার-জন্তু হিসেবে গণ্য করা হবে না। সুতরাং হারাম শরীফের এলাকা কিংবা অন্য যেকোনো স্থানে মুহরিম বা হালাল ব্যক্তি, সকলের জন্য তা হত্যা করা বৈধ। আবূ সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিমের জন্য হত্যা করা বৈধ এমন সব প্রাণীর উল্লেখ করে বলেন, সাপ, বিচ্ছু, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ, চিল, পাগলা কুকুর, হিংস্র পশু।[5] তেমনি, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হারাম কিংবা হালাল উভয় এলাকায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ প্রকার প্রাণীকে হত্যা করা বৈধ বলে উল্লেখ করেছেন : কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর। অন্য বর্ণনায় আছে ‘সাদা কাক’।[6]

অপর বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় এক মুহরিমকে সাপ হত্যা করার অনুমতি দিয়েছিলেন।’[7]

[1]. বুখারী : ১৯৭৮; মুসলিম : ১২০২।

[2]. বুখারী : ৮৮৮।

[3]. বাকারা : ১৯৮।

[4]. মুসলিম : ২২৮৭।

[5]. তিরমিযী : ৮৩৮।

[6]. ফতহুল বারী : ৬/ ৫১১; শরহে মুসলিম : ৪/৩৭২।

[7]. শরহে মুসলিম : ৭/৪৯১।