ইসলামী জীবন-ধারা সালামের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

পরস্পর সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ ও সতেজ রাখার জন্য ইসলামের বিধানে সালাম একটি সুন্দর ব্যবস্থা। সাক্ষাতের সময় একে অন্যের চেহারার দিকে না তাকালে, একটু মুচকি না হাসলে, কথা না বললে স্বাভাবিকভাবে উভয়ের মনে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। কিন্তু হাসিমুখে সালাম দিয়ে কথা বললে মহববত ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। আর সেটাই হল ইসলামের কাম্য।

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘প্রত্যেক কল্যাণমূলক কর্মই হল সদকাহ (করার সমতুল্য)। আর তোমার ভায়ের সাথে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির সাহায্যে (কুয়ো থেকে পানি তুলে) তোমার ভায়ের পাত্র (কলসী ইত্যাদি) ভরে দেওয়াও কল্যাণমূলক (সৎ)কর্মের পর্যায়ভুক্ত।’’[1]

তিনি আরো বলেন, ‘‘কল্যাণমূলক কোন কর্মকেই অবজ্ঞা করো না, যদিও তা তোমার ভায়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করেও হয়।’’[2]

আস্-সালাম হল মহান আল্লাহর অন্যতম নাম এবং সালাম মানে শান্তি। সুতরাং সালাম দিয়ে ও নিয়ে এ দু‘আই করা হয় যে, আস্-সালাম আল্লাহ তোমার সাথী হোক অথবা তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

সালাম দেওয়ার মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব রয়েছে ইসলামে। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ- فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা সতর্ক হও। যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও তাহলে তোমাদেরকে যতক্ষণ পর্যন্ত অনুমতি না দেওয়া হয় ততক্ষণ ওতে প্রবেশ করবে না। আবার যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।’’ (সূরা নূর-২৪:২৭-২৮)

নিজ ঘরেও প্রবেশকালে সালাম দেওয়ার গুরুত্ব আরোপ করে মহান আল্লাহ বলেন,

فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

অর্থাৎ, সুতরাং তোমরা যখন গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র। (সূরা নূর-২৪:৬১)

সালামের জবাবে সালাম প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا

অর্থাৎ, আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন করবে অথবা অনুরূপই করবে। (সূরা নিসা-৪:৮৬)

একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন, মুসলিমের উপর মুসলিমের ৬টি হক রয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হল, তা কি কি হে আল্লাহর রসূল? বললেন, ‘‘যখন তার সাথে দেখা হবে, তখন তাকে সালাম দেবে।---’’[3]

রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘হে মানুষ! তোমরা সালাম প্রচার কর, অন্নদান কর, জ্ঞাতি-বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখ এবং লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা নামায পড়। এতে তোমরা নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’’[4]

আনাস (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (ﷺ) আমাকে বললেন, ‘‘বেটা! তুমি তোমার পরিবারে প্রবেশ করলে সালাম দিও; এতে তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য বরকত হবে।’’[5]

এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করল যে, ‘কোন্ ইসলাম উত্তম? (ইসলামের কোন্ কোন্ কাজ উত্তম কাজ?) উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘(অভাবীকে) খাদ্যদান করা এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।’’[6]

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না মু’মিন হয়েছ; আর ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতেও পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপোসে সম্প্রীতি কায়েম করেছ। আমি কি তোমাদেরকে এমন এক কাজের সংবাদ দেব না, যা করলে তোমাদের আপোসে সম্প্রীতি কায়েম হবে? তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’’[7]

আসলে যে সালাম দিতে কার্পণ্য করে, সে সবচেয়ে বড় কৃপণ। রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় চোর সে, যে নামায চুরি করে এবং সবচেয়ে বড় বখীল সে, যে সালাম দিতে বখীলি করে।’’[8] তিনি আরো বলেন,

إِنَّ أَعْجَزَ النَّاسِ مَنْ عَجَزَ فِي الدُّعَاءِ، وَأَبْخَلَ النَّاسِ مَنْ بَخِلَ بِالسَّلَامِ

‘‘সবচেয়ে বড় অক্ষম সে, যে দু‘আ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে এবং সবচেয়ে বড় কৃপণ সে, যে সালাম দিতে কৃপণতা করে।’’[9]

[1]. আহমাদ, তিরমিযী, হাকেম

[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬২৬

[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১৬২

[4]. তিরমিযী হা/, ইবনে মাজাহ, সহীহ তারগীব হা/৬১০

[5]. তিরমিযী হা/২৬৯৮

[6]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৬২৩৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৩৯

[7]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৫৪

[8]. সহীহুল জা’মে হা/৯৬৬

[9]. সহীহুল জা’মে হা/৯৬৬, আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১০৪৪