হজ সফরে সহজ গাইড হজ পরবর্তী কার্যাবলী মুহাম্মাদ মোশফিকুর রহমান ৯ টি
  • হজ সম্পন্ন করার পর আপনি যতো বেশি পারেন মসজিদুল হারামে ফরয, সুন্নাত, নফল, জানাযা, চাশত, তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করুন এবং নফল তাওয়াফ করুন। নফল তাওয়াফ করার নেকী অনেক অনেক বেশি।
  • হজের পর যদি আপনার বাড়ি ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট থাকে তবে বিদায় তাওয়াফ করে ফ্লাইট ধরুন। হজের পর আপনি কিছু ইসলামিক ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখে আসতে পারেন। আপনি এ সময়ে কিছু কেনাকাটাও করতে পারেন। আমাদের হজ সফরের ধারাবাহিকতায় এবার মদীনা যাওয়ার পালা।
  • আপনার ব্যাগপত্র গুছিয়ে মদীনার যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। তাওয়াফে বিদা করে এসেই হোটেল থেকে ব্যাগপত্র নামিয়ে যাত্রার প্রস্তুতি নিন।
  • বাস আসার সাথে সাথে আপনার লাগেজ বাসের ছাদে উঠিয়ে আপনিও বাসে উঠে পড়ুন। ৭-৮ ঘন্টা লাগবে মদীনা পৌছাতে। এটা যেহেতু লম্বা যাত্রা তাই কিছু ফল, হালকা খাবার ও পানি সঙ্গে নিয়ে নিন।
  • পথিমধ্যে বাস একটি রেস্তোরাঁয় যাত্রাবিরতি করবে। আপনি হাতমুখ ধুয়ে ও বাথরুম সেরে নিতে পারেন। কিছু হালকা খাবার খেতে পারেন। সফরে ভারী খাবারের পরিবর্তে হালকা খাবার গ্রহণ করাই উত্তম। হাইওয়েতে বাস সাধারণত ১০০-১৪০ কি:মি বেগে চলে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ইন-শাআল্লাহ কিছু হবে না। রাস্তার চারপাশে শুধু পাহাড়, মরুভুমি ও উঠের দল লক্ষ্য করবেন।
  • মদীনায় পৌঁছানোর পর পরিবহন বাস আপনাকে প্রথমেই নিয়ে যাবে মদীনা হজযাত্রী ব্যবস্থাপনা অফিসে।
  • তারা হজযাত্রী সংখ্যা গণনা করবে। এবং তারা আপনার পরিচয়ের জন্য আপনাকে হাতের ব্যান্ড ও মদীনা পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) প্রদান করবে।

এই হাতের ব্যান্ড ও আইডি কার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর আরবিতে লেখা রয়েছে। আপনি যদি হারিয়ে যান তাহলে এটা আপনার মু‘আল্লিম ও এজেন্সিকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। এরপর মদীনায় হোটেল/বাড়িতে গিয়ে উঠবেন।

  • মদীনা প্রসিদ্ধ শহর। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট প্রিয় এ শহর, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করেছেন, বসবাস করেছেন, ইসলামি রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁর মসজিদ আছে ও তিনি কবরস্থ হয়েছেন।
  • এ পবিত্র শহর আরও কয়েকটি নামে পরিচিত; ইয়াসরিব, তা-বা, তাইবা, মদীনা ইত্যাদি।
  • আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাˆ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; ‘‘হে আল্লাহ! মক্কার ন্যায় অথবা তার চেয়ে অধিক মদীনার মুহাব্বত আমাদের অন্তরে সৃষ্টি করুন। হে আল্লাহ আমাদের খাদ্যে ও উপাদানে বরকত দিন এবং তার আবহাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের উপযোগী করুন”।[1]
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় মক্কার চেয়ে দ্বিগুণ বরকত দানের কথা বলে আল্লাহর কাছে দো‘আ করেছেন। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ঈমান (শেষ যামানায়) মদীনার পানে ফিরে আসবে যেমন: সাপ নিজ আশ্রয় গর্তে ফিরে আসে’’। অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি দুঃখ কষ্ট সহ্য করে মদীনায় অবস্থান করবে এবং মদীনায় মৃত্যুবরণ করবে, আমি কিয়ামতের দিবসে তার জন্য সুপারিশ অথবা সাক্ষ্য প্রদানকারী করব”।[2]
  • মদীনায় বসবাস উত্তম, মদীনার একটি বড় ফযীলত হচ্ছে; নিকৃষ্ট লোকেরা সেখানে অবস্থান করতে পারবে না আর সৎ ব্যক্তিরা সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করতে পারে।
  • মদীনাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। মদীনায় মহামারী/প্লেগ রোগ ছড়াবে না, মদীনায় দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। মদীনায় সকল রাস্তায় আল্লাহর ফিরিশতাগণ রক্ষী হিসেবে অবস্থান করছেন।[3]
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আইর’ ও ‘সাউর’ এর মধ্যস্থলকে মদীনার হারাম বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মক্কার হারামের মতো এখানকার হারামের অভ্যন্তরে কিছু কাজের বিধি-নিষেধ প্রযোজ্য।
  • মদীনায় প্রচুর পরিমাণে খেজুরের বাগান ও কিছু সমতল ভূমি লক্ষ্যনীয়।[4]
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মসজিদ নির্মাণের নিমিত্তে প্রথমে বনু নদ্বীরের সর্দারের কাছ থেকে খেজুর বাগান ও পরে সুহাইল ও সাহল-এর কাছ থেকে মসজিদের জন্য জায়গা করেন এবং নিজে মসজিদ নির্মাণে অংশ নেন। আব্দুল্লাহ ইবন উমরের বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলের যুগের মসজিদের ভিত্তি ছিল ইটের, ছাদ ছিল খেজুরের ডালের এবং খুঁটি ছিল খেজুরের গাছের কাণ্ডের। সে সময় মসজিদের পরিধি ছিল আনুমানিক ২৫০০ মিটার।
  • এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর যুগে এবং ওসমান ইবন আফফান-এর যুগে মসজিদের সম্প্রসারণ ঘটে। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন মুসলিম শাসকের আমলে মসজিদের উন্নয়ন ও সম্প্রসারন ঘটে।
  • এরপর সৌদি সরকার যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন মসজিদের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। ১৯৫১ ইং সালে বাদশাহ আব্দুল আযীয মসজিদের উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম দিকের আশেপাশের ঘর-বাড়ি খরিদ করে ভেঙে ফেলেন। মসজিদের দৈর্ঘ্য ১২৮ মিটার ও প্রস্থ ৯১ মিটার করা হয় এবং আয়তন ৬২৪৬ বর্গ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১৬৩২৬ বর্গমিটার করা হয়। মসজিদের মেঝেতে ঠান্ডা মার্বেল পাথর লাগানো হয়। মসজিদের চার কোনায় ৭২ মিটার উচুঁ চারটি মিনার তৈরি করা হয়। এ সম্প্রসারণে ৫ কোটি রিয়াল খরচ হয় ও কাজ শেষ হয় ১৯৫৫ সালে।
  • বাদশাহ ফয়সাল এর আমলে ক্রমবর্ধমান হাজীদের জায়গার সংকুলান করার জন্য পশ্চিম দিকের জায়গা বৃদ্ধি করা হয় যার আয়তন ছিল ৩৫০০০ বর্গমিটার।
  • সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে বাদশাহ ফাহাদ ইবন আব্দুল আযীয কর্তৃক মসজিদের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন ও বিস্তার সাধিত হয়। পূর্ববর্তী মসজিদের আয়তনের তুলনায় নয় গুণ আয়তন বৃদ্ধি করা হয়। মসজিদকে এত সুন্দর করা হয় যা মুসলিমদের অন্তর জয় করে। মসজিদের ছাদ এমনভাবে বানানো হয়েছে যে প্রয়োজনে দ্বিতল বানানো সম্ভব হবে। মূল গ্রাউণ্ড ফ্লোরের আয়তন ৮২০০০ বর্গমিটার হয়। মসজিদের চারপাশে ২৩৫০০০ বর্গমিটার খোলা চত্বরে সাদা শীতল মার্বেল পাথর বসানো হয়। এর ফলে মসজিদের ভিতরে ২৬৮০০০ মুসল্লি এবং মসজিদের বাইরের চত্বরে ৪৩০০০০ মুসল্লির সালাত আদায়ের জায়গা হয়। সম্পূর্ণ মসজিদে এসি, আন্ডারগ্রাউন্ডে ওয়াশরুম ও কার পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদের কাজ শুরু হয় ১৯৮৫ সালে আর শেষ হয় ১৯৯৪ সালে।
  • মসজিদে নববীর ভিতরে বেশকিছু ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ‎ সংরক্ষিত আছে; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর, রিয়াদুল জান্নাহ, আসহাবে সুফফা, নবিজীর মেহরাব ও মিম্বার।
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মসজিদে হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে (মসজিদে নববী) সালাত অন্য স্থানে সালাতের চেয়ে ১ হাজার গুণ উত্তম, আর মসজিদে হারামে সালাত ১ লক্ষ সালাতের চেয়ে উত্তম”[5]

মদীনা ও মসজিদে নববীর ইতিহাস বিস্তারিত জানতে ‘পবিত্র মদীনার ইতিহাস: শাইখ ছফীউর রহমান মোবারকপুরী’ বইটি পড়ুন।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭৬

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৮৫; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৬৩

[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৮০

[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭২

[5] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৯৬
  • মদীনা সফর করা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে নববী দর্শন করা হজের কোনো অংশ নয় বা হজের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি হজের কোনো রুকন, ওয়াজিব বা সুন্নাতও নয়। তবে কেউ ইচ্ছা করলে হজের আগে বা পরে মসজিদে নববীতে গিয়ে সালাত আদায় করতে পারেন, সেখানে যাওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র মুস্তাহাব কাজ। একটি প্রচলিত হাদীস আছে ‘‘যে হজ করতে এসে আমার কবর জিয়ারতের জন্য এলো না সে আমার সাথে রূঢ় আচরণ করল।’’ এটি সম্পূর্ণ জাল ও মিথ্যা হাদীস।
  • নবীজীর কবর যিয়ারত মূখ্য উদ্দেশ্য মনে নিয়ে মদীনায় যাওয়া ঠিক নয় বা এমনটি করা নিয়ম নয়। মদীনায় যেতে হবে মসজিদে নববী দর্শন ও সালাত আদায় করার নিয়তে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এবাদত বা প্রার্থনার নিয়তে তিনটি মসজিদ; মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও আল-আকসা মসজিদ ব্যাতীত অন্য কোনো স্থানে সফর করো না’’। শুধু তাই নয় বরং কবর কেন্দ্রিক সকল উরস-উৎসব কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এবং আমার কবরকে তোমরা উৎসবে পরিণত করো না’’। উৎসবে পরিণত করার অর্থ; কবর কেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যার মধ্যে কবরকে উদ্দেশ্য করে সফর করাও শামিল। কিন্তু সফররত অবস্থায় পথিমধ্যে আপনার কোনো আত্মীয় বা কোনো ওলির কবর সামনে পড়লে তা যিয়ারত করা জায়েয আছে।[1]
  • মদীনায় হোটেল বা ভাড়া বাসায় উঠে একটু বিশ্রাম নিয়ে নাস্তা করে (কাঁচা পেয়াজ, রসুন পরিহার করে) ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ সেরে মসজিদে নববী জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়ুন। মসজিদে নববীতে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করুন এবং নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করুন:

بِسْمِ الله وَالصَّلاةُ وَالسَّلُامُ عَلٰى رَسُوْلِ الله اَللهم افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

‘‘বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা’’।

‘‘আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর। হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দিন’’

  • মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে ‘রিয়াদুল জান্নাহ’ বা জান্নাতের বাগান নামক স্থানে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করুন। ওই স্থানে হালকা সবুজ রঙের কার্পেট বিছানো থাকে। এখানে যদি অধিক ভিড় থাকে, তাহলে মসজিদের যে কোনো স্থানে সালাত আদায় করে নিন।
  • রিয়াদুল জান্নায় সহজে প্রবেশ করতে মসজিদে নববীর আস-সালাম গেট (১ নং গেট) দিয়ে প্রবেশ করুন এবং রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওজায় প্রবেশ করতে ঐ একই গেট দিয়ে প্রবেশ করলে সহজ হয়।
  • এবার শান্ত ও বিনীতভাবে লাইন ধরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দিকে একমুখি চলাচলের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যান। কবরে হাতের বামে প্রথমে স্বর্ণালী খাঁচার দরজা অতিক্রম করে পরবর্তী দ্বিতীয় স্বর্ণালী খাঁচার দরজা (বড় গোল চিহ্ন আছে) যে বরাবর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর তার সামনে এলে আদবের সাথে দাঁড়ান। দাঁড়ানোর সুযোগ না পেলে চলমান অবস্থায়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাম পেশ করুন। বলুন:

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

‘‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবীয়ু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ’’

‘‘হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার ওপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক’’।

  • পাশাপাশি আপনি চাইলে সালাতের তাশাহুদের পর যে দুরূদ ইবরাহীম পাঠ করেন তা এখানেও এখন পাঠ করতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করার উত্তম পন্থা হলো দুরূদ ইবরাহীম পাঠ করা। বর্তমানে প্রচলিত অনেক ধরনের বানোয়াটি দুরূদ আছে যা সাহাবাদের থেকে বর্ণনা করা কোনো হাদীসে খুঁজে পাওয়া যায় না সেগুলো পরিহার করাই উত্তম।
  • এবার আপনি সামনে এক গজ মতো এগিয়ে বাম পাশের পরবর্তী স্বর্ণালী খাঁচার দরজা (ছোট গোল চিহ্ন আছে) যেখানে যথাক্রমে আবু বাকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কবর আছে তার সামনে এলে আদবের সাথে তাদের উদ্দেশ্যে সালাম পেশ করবেন ও তাদের জন্য দো‘আ করুন। তারা যেহেতু কবরবাসী তাই তাদের উদ্দেশ্যে কবরবাসীদের দো‘আ পাঠ করতে পারেন।
  • কবর যিয়ারতের দো‘আ:

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ، نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةََ.

‘‘আসসালামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা অলমুসলিমীনা, ওয়াইন্না ইনশা-আল্লাহু বিকুম লালা-হিকুন, নাসআলুল্লা-হা লানা ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ’’।

‘‘আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, হে কবরবাসী মুমিন-মুসলিমগণ। আমরা (আপনাদের সাথে) মিলিত হব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য আল্লাহর দরবারে পরিত্রাণ কামনা করি”।[2]

  • কবর যিয়ারত শেষে দো‘আ করার বাধ্যগত কোনো নিয়ম নেই। এবার বাকীউল গারকাদ বা বাকী কবরস্থান যিয়ারতে যেতে পারেন। সেখানে শায়িত কবরবাসীর উদ্দেশ্যে আপনার সালাম পৌঁছে দিন বা কবর যিয়ারতের দো‘আ পড়ুন।
  • অনেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের সামনে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে অতিরঞ্জিত কাজ করে ফেলেন যা মোটেই শরী‘আত সম্মত নয়। যেমন; কবরের সামনে গিয়ে একাকী জোরে তাকবীর বলা, বিলাপ করে কান্নাকাটি করা, দুই হাতের আঙুল চিমটির মতো করে চুমু খেয়ে চোখে দিয়ে ফের চুমু খাওয়া, একাকি বা দলবদ্ধ হয়ে কবরের দিকে হাত তুলে দো‘আ করা, খাঁচার দরজা ধরতে চেষ্টা করা বা হাত বুলিয়ে হাতে চুমু খাওয়া ইত্যাদি। অনেকে রীতিমত কবরের সামনে মাথা নিচু করে সম্মান দেখায় বা সিজদায় পড়ে যায় যা সম্পূর্ণ শির্ক করা হয়ে যায়। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের স্বর্ণালী খাঁচার দরজার সামনে বেশ কিছু আরব পুলিশ ও শাইখ/আলেমগন অবস্থান করেন। তারা হাজীদেরকে এসব আবেগতাড়িত কাজ করা থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকেন।
  • দেখুন; আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বা আরো অন্যান্য সাহাবীদের মতো আমরা কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালোবাসতে পারবো বলে মনে হয় না, তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো তাদের সমপর্যায়ে বা বেশি ভালোবাসতে। ভালোবাসতে গিয়ে ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরন করতে গিয়ে আমরা যেন এমন নতুন কোনো কিছু করে না বসি যা আগে কেউ কোনো সাহাবী করেন নি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত বা মৃত থাকা অবস্থায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নিজকে নিয়ে প্রশংসা করা ও তার গুণগান করা এমন পছন্দ করতেন না। সাহাবায়ে কেরাম যতটুকু যা করেছেন, আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে যদি আমরা ততটুকু পালন করতে পারি।
  • আর একটি বিষয়; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর কবরের সামনে গিয়ে সালাম পেশ করা আর ঘরে বসে বা মসজিদের যে কোনো জায়গায় বসে বা হাজার মাইল দূর থেকে সালাম পেশ করা একই সমমান ও মর্যাদার। মদীনায় কবরের সামনে গিয়ে দেওয়া খাস ব্যাপার! এমন বলে কোনো কথা নেই। এসবই মানুষের বানানো অতিভক্তি। অনেকে আবার বলেন, আমার সালামটি মদীনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের কাছে পৌছে দিয়েন! এসব ভিত্তিহীন। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের বাড়িগুলোকে কবর বানিও না এবং আমার কবরকে উৎসবের কেন্দ্রস্থল করো না। আমার প্রতি তোমরা দুরূদ ও সালাম পেশ করো। কেননা (দুনিয়ার) যেখান থেকেই তোমরা দুরূদ পেশ করো তাই আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়”।[3]
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার একদল ফিরিশতা রয়েছে যারা পৃথিবী জুড়ে বিচরণ করছে। যখনই আমার কোনো উম্মত আমার প্রতি সালাম জানায় ঐ ফিরিশতারা তা আমার কাছে তখন পৌঁছিয়ে দেয়’’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন, ‘‘যে কেউই আমাকে সালাম দেয় তখনই আল্লাহ তা‘আলা আমার রুহকে ফেরত দেন, অতঃপর আমি তার সালামের জবাব দেই”।[4]
  • নারীদের কবর যিয়ারত নিয়ে আলেমগণের মাঝে বিতর্ক আছে। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের লা‘নত করেছেন। পরবর্তীতে এক হাদীসের মাধ্যমে নারী-পুরুষ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে মনে হয়। তাই বিতর্ক থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নারীদের জন্য উত্তম হবে কবর যিয়ারতকে উদ্দেশ্য করে কোথাও না যাওয়া; যেহেতু সালাম যে কোনো জায়গা থেকে দেওয়া যায়। তবে সাধারণভাবে যে কোনো কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কবরবাসীদের সালাম দেওয়া ও দো‘আ করা জায়েয আছে।
  • আরো কয়েকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। যদিও বিষয়টি প্রাসঙ্গিক নয়। অনেকে দেখবেন এ ধারণা, বিশ্বাস বা আকীদা পোষণ করেন যে - ১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি (তিনি মাটির তৈরি মানুষ নন)। ২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হায়াতুন নবী (তিনি জীবিত আছেন, মারা যান নি।)। ৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসীলায় এ বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে (তাঁকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি হত না)। ৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর রাখেন (তিনি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতেন)। ৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের চারপাশের মাটির মর্যাদা আল্লাহ তা‘আলা আরশের চেয়েও বেশি। ৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে শুয়ে এ পৃথিবীর সব কিছু দেখছেন ও খবর রাখছেন এবং প্রয়োজনে তিনি বিভিন্ন পরহেজগার বান্দাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে হাযির হওয়ার ক্ষমতা রাখেন (বিভিন্ন মিলাদ মাহফিলে হাযির হন)। বস্তুত এ সবই পথভ্রষ্টতা ও ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস। এগুলোর কোনো কোনোটি শির্ক, আবার কোনো কোনোটি মারাত্মক ভুল ও কুসংস্কার।
  • শিক্ষিত, সুবিজ্ঞ ও ঈমান বিষয়ে সচেতন পাঠকমন্ডলীর ওপর এ বিষয়গুলো দলীল ভিত্তিক সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ সহ জ্ঞান আহরণ ও বিশ্বাস স্থাপনের জন্য আল্লাহ তা‘আলার হিদায়াতের ওপর ছেড়ে দিলাম। ‘রাবিব যিদনী ইলমা’।
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭৪৬

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৭৫

[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪২

[4] নাসাঈ, হাদীস নং ১২৮২
  • মসজিদে নববী অত্যন্ত প্রশান্তিদায়ক, চমৎকার ও জমকালো মসজিদ।
  • মসজিদে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট আলাদা সালাতের জায়গা রয়েছে।
  • মদীনার আবহাওয়া গরম। কিন্তু বাতাসে কম আর্দ্রতার কারণে খুব বেশি ঘাম হয় না।
  • মক্কার তুলনায় এখানে হোটেল বা বাসা মসজিদের খুব কাছাকাছি হবে এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও এখানে বেশি হবে।
  • মসজিদের প্রতিটি প্রবেশ গেটে নিরাপত্তাকর্মী থাকে এবং তারা বড় আকারের বা সন্দেহজনক ব্যাগ চেক করে।
  • মসজিদের বাইরে বেসমেন্ট ফ্লোরে টয়লেট, অযুর স্থান ও গাড়ি পার্কিং সুবিধা রয়েছে।
  • বাদশাহ ফাহাদ গেট মসজিদের অন্যতম প্রধান বড় প্রবেশ গেট (২১-ডি); এমন ৫ দরজা বিশিষ্ট ৭টি গেট আছে মসজিদে।
  • মসজিদের ভেতরে প্রবেশের জন্য মসজিদে নববীতে ৩০টিরও বেশি গেট বা দরজা রয়েছে।
  • মসজিদের প্রতিটি বড় প্রবেশ ফটকেই সালাতের সময়সূচি টাঙানো রয়েছে।
  • মসজিদের চারপাশে অনেক হকার দোকান ও শপিং মল রয়েছে।
  • মসজিদের চারপাশেই সানশেড বৈদ্যুতিক ছাতা রয়েছে। এসব ছাতা দিনের বেলায় খোলা থাকে এবং রাতে বন্ধ থাকে।
  • হজযাত্রীদের শীতল বাতাস প্রদানের জন্য প্রতি ছাতার খুঁটিতে দুটি করে কুলার ফ্যান রয়েছে।
  • মসজিদের ছাদে সকলের জন্য উন্মুক্ত একটি পাঠাগার রয়েছে। এখানে বাংলা বই আছে পড়ার জন্য।
  • মসজিদের ভেতরে সবদিকেই যমযম কূপের পানির কন্টেইনার পাওয়া যায় এবং এ পানি বোতলে ভরে নিয়ে আসাও যাবে।
  • মসজিদের ভেতরে জুতা রাখার জন্য অসংখ্য শেলফ্ রয়েছে। অনেক ছোট ছোট র‌্যাকও আছে জুতা-স্যান্ডেল রাখার জন্য।
  • মসজিদের ভেতরে প্রতিটি পিলারে নিচের দিকে এসি-র ব্যবস্থা রয়েছে। সম্পূর্ণ মসজিদে এসি রয়েছে।
  • রিয়াদুল জান্নাহ ব্যতীত মসজিদের ভেতরে সকল জায়গার কার্পেটের রঙ লাল। রিয়াদুল জান্নাহ এলাকার কার্পেট হালকা সবুজ।
  • নীল/সবুজ পোশাক পরিহিত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মসজিদের ভেতরে কাজ করছে; এদের অধিকাংশই এসেছে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ থেকে।
  • মসজিদের মধ্যে অনেক বইয়ের শেলফ রয়েছে। এসব শেলফ থেকে কুরআন শরীফ (নীল রং) নিয়ে পড়তে পারেন ।
  • বৃদ্ধ ও অসুস্থ হজযাত্রী বহনের জন্য মসজিদের বাইরে ছোট গাড়ি রয়েছে।
  • মসজিদের সবুজ গম্বুজের ডান দিকে কিছুটা সামনে এগিয়ে ইমাম কিবলামুখি হয়ে সালাতে দাঁড়ান।
  • রিয়াদুল জান্নাহ জায়গা এবং মসজিদের সামনের দিকে প্রথম কয়েকটি সারির নির্মাণ কৌশল পুরনো কায়দায়।
  • মসজিদের বাইরে ইমামের সালাতে দাঁড়ানোর স্থান বরাবর চিহ্নিত সাইনবোর্ড আছে, যেটি পার করে জামাআতে সালাতের সময় দাঁড়ানো যাবে না।
  • যোহর, আসর ও মাগরিবের সালাতের পর মসজিদের ভেতরে কিছু জায়গায় ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় কিছু আলেম/শায়খ ইসলামিক আলোচনা করেন।
  • মসজিদের ভেতরে একটি জায়গায় কয়েকটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিশুদের কুরআন শিখানো হয় আসর ও মাগরিবের সালাতের পর।
  • রিয়াদুল জান্নাহর কিছু অংশ সকালে ও বিকালে মহিলা দর্শনার্থীদের সালাত আদায়ের জন্য মোটা ক্যানভাসের কাপড় দিয়ে আবৃত করে দেওয়া হয়।
  • রিয়াদুল জান্নাহয় রয়েছে রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহরাব, খুতবার মিম্বার ও মিনার।
  • এই এলাকার বাইরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে তাহাজ্জুদের মেহরাব, সুফফা ও ফাতিমার দরজা।
  • রিয়াদুল জান্নাহ এলাকায় সবসময়ই হজযাত্রীদের ভিড় থাকে। এ কারণে হজযাত্রীদের এখানে এসেই সালাত আদায় করে দ্রুত বের হওয়া উচিৎ যাতে অন্য হজযাত্রীরা সুযোগ পান।
  • মসজিদের ভেতরে ও বাইরে হাজীদের আপ্যায়ন হিসাবে অনেকে নাস্তা /ফল/জুস/খেজুর/পানি/চা বিতরণ করে থাকেন।
মসজিদে নববী দর্শনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত
  • মনে মনে মূখ্য উদ্দেশ্য বা শুধু নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওজা জিয়ারতের নিয়তে বা উদ্দেশ্যে মদীনা ভ্রমণ করা।
  • কেউ কেউ হজযাত্রীদের কাছে তাদের সালাম রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে পৌঁছানোর জন্য অনুরোধ করা।
  • রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের ৪০ ওয়াক্ত সালাত পড়ার জন্য পুরো ৮দিন মদীনায় অবস্থান করা বাধ্যতামূলক বা নিয়ম মনে করা।
  • মদীনা ও মসজিদে নববীতে প্রবেশের পূর্বে গোসল করতে হবে মনে করা।
  • মদীনায় প্রবেশের সময় ও মসজিদের মিনার দেখার পর জোরে তাকবীর দেওয়া বা এ দো‘আ পড়া নিয়ম মনে করা: (এ এলাকা তোমার বার্তাবাহকের পবিত্র এলাকা, তুমি একে রক্ষা কর..)।
  • মদীনায় প্রবেশের পর কোনো নির্ধারিত দো‘আ পড়া নিয়ম মনে করা।
  • মসজিদে প্রবেশের পর সালাত পড়ার আগেই রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করা জরুরী মনে করা।
  • কবরের কাছে গিয়ে দো‘আ করা বড় ফযিলত মনে করা ও কবরের দিকে মুখ করে দুই হাত তুলে দো‘আ করা।
  • কোনো মনের ইচ্ছা পূরণের আশায় কবরের কাছে দো‘আ করার জন্য যাওয়া।
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে চুমু খাওয়া অথবা স্পর্শ করার চেষ্টা করা অথবা এর চারপার্শ্বের দেওয়াল অথবা পিলারে চুমু খাওয়া বা স্পর্শ করা।
  • রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে অনুনয়-বিনয় করে শাফা‘আত চাওয়া বা কিছু চাওয়া।
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা বা কবরকে সামনে রেখে বসে দো‘আ-যিকর করা।
  • প্রতি সালাতের পরে রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করতে যাওয়া জরুরী বা ভালো মনে করা।
  • সালাতের পর উচ্চঃস্বরে বিশেয বিশেষ দো‘আ বলা বিশেষ ফযিলত মনে করা বা প্রচলিত বানোয়াটি ও বিদআতি দুরূদ পাঠ করা।
  • রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপরে সবুজ গম্বুজ থেকে পতিত বৃষ্টির পানি থেকে কোনো কল্যাণ বা বরকত কামনা করা।
  • মসজিদের মূল অংশে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা।
  • হজযাত্রীদের নিয়ে রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের পাশে অথবা এর দূরে থেকে সমবেত কণ্ঠে উচ্চৈঃস্বরে দো‘আ করা।
  • মসজিদ থেকে চূড়ান্তভাবে বের হওয়ার সময় সম্মান দেখানোর উদ্দেশ্যে পিছন দিকে হেঁটে বের হওয়া।
  • মসজিদে নববী ও মসজিদে কুবা ব্যতিত মদীনার অন্য কোনো মসজিদ দর্শন করে সওয়াবের আশা করা।
  • মসজিদের খুঁটিতে সুতা বা ফিতা বাঁধা কোনো কল্যাণ বা বরকত মনে করা।
  • মদীনা থেকে নুড়ি পাথর বা বালি নিয়ে সংরক্ষণ করা ও তাবিজ-কবজ বানানোর জন্য নিজ দেশে নিয়ে আসা।
  • কিছু প্রচলিত জাল হাদীসসমূহ:
  • ‘‘যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারত করবে তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।’’
  • ‘‘যে হজ করতে এসে আমার কবর যিয়ারত করল সে যেন আমার সাথে সাক্ষাত করল।’’
  • ‘‘যে হজ করতে এসে আমার যিয়ারত জন্য এলো না সে আমার সাথে রূঢ় আচরণ করল।’’
  • মদীনা থেকে বিদায়ের সময় মসজিদে নববীতে দু’রাকাত বিদায়ী নামাজ পড়া ও বিদায়ী রওজা যিয়ারত করা।
  • রওজার কবর জায়গার প্রথম দরজা ফাঁকা আছে। এ জায়গা ঈসা আলাইহিস সালামের কবরের জন্য সংরক্ষিত আছে বলে বিশ্বাস করা।
  • রওজার তৃতীয় দরজাটিও ফাঁকা। এ জায়গাটি ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম কবরের জন্য সংরক্ষিত আছে ! এ জাতীয় বিশ্বাস করা।
  • মসজিদে নববী থেকে শেষবার বের হওয়ার সময় উল্টোমুখি হয়ে বের হওয়া।
  • আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ অনুসারে, মক্কার তুলনায় মদীনায় খেজুরের দাম কম। এখানে সবকিছুর দাম মক্কার তুলনায় তুলনামূলক একটু কম। সে কারণে আমার মতে, কেনা-কাটা মদীনায় করাই ভালো।
  • আপনাদের আগেই বলেছি; যদি পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য কোনো উপহার বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে চান তাহলে তা হজেরআগেই কিনে ফেলবেন। কেননা, হজের সময় যত কাছাকাছি হয় জিনিসপত্রের দাম ততো বেড়ে যায়। হজের পরেও কিছু দিন দাম চড়া যায়, তারপর কমে।
  • মসজিদে নববীর চারপাশে অনেক শপিং মল, মার্কেট ও হকার মার্কেট রয়েছে। বদর গেটের বিপরীতেই আছে ইবন দাউদ ও তাইয়েবা শপিং মল। কেনাকাটার সময় কোনো দোকানে যদি ফিক্সড প্রাইস (একদাম লেখা) লেখা থাকে তারপরও দামাদামি করতে দ্বিধাবোধ করবেন না। কারণ হজের মৌসুমে তারা জিনিসপত্রের দাম একটু বাড়িয়ে লেখে, সুতরাং কিছুটা দরকষাকষি করতেই পারেন। তবে সুপার মার্কেটের যেসব পণ্যে বারকোড দেওয়া রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে দরাদরি করে কোনো লাভ নেই।
  • এখানে বেশকিছু খেজুরের মার্কেট পাবেন। আপনার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য বিভিন্ন জাতের খেজুর কিনে নিয়ে যেতে পারেন। তবে লাগেজের ওজনের কথা মাথায় রাখতে হবে! বিখ্যাত কিছু খেজুরের জাত হলো: আজওয়া, আম্বার, সুকারি, মাযদল, কালকি, রাবিয়া ইত্যাদি।
  • এছাড়া আপনি এখান থেকে আতর, তাসবীহ, টুপি, জায়সালাত, সৌদি জুববা, সৌদি বোরকা, হিজাব, কাপড়, ঘড়ি, বাংলা বই (দারুস সালাম পাবলিকেশন্স), সিডি, ডিভিডি, কসমেটিকস ইত্যাদি কিনতে পারেন।
  • শেষ কথা হলো: মদীনা থেকে পারলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে ক্রয় করে নিজ অন্তরে গেঁথে নিয়ে যান।
  • আপনার ট্রাভেল এজেন্সি মদীনায় একদিনের যিয়ারাহ ট্যুরের জন্য বাসের ব্যবস্থা করতে পারেন এবং আপনাদের সবাইকে একত্রে মদীনার নিকটস্থ ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে নিয়ে যেতে পারে। আপনি এ যিয়ারাহ ট্যুর উপভোগ করবেন। মদীনার চারপাশ ঘুরে দেখার এটাই সুযোগ। একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন মদীনায় অসংখ্য খেজুর বাগান রয়েছে।
  • কিছু যিয়ারাতের স্থান খুব কাছেই, ইচ্ছে করলে পায়ে হেঁটেই সেসব স্থানে যেতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো একা কোথাও যাবেন না এবং কয়েকদিন মদীনায় থাকার পর যিয়ারাতের স্থানগুলো ভ্রমণ করবেন।
  • বাকীউল গারকাদ কবরস্থান, মসজিদে আবু বকর, মসজিদে উমার ফারুক, মসজিদে আলী, গামামা মসজিদ ও বিলাল মসজিদে পায়ে হেঁটেই যেতে পারবেন।

ফজরের সালাতের পর লক্ষ্য করবেন কিছু মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেট কার ড্রাইভার ‘যিয়ারাহ, যিয়ারাহ’ বলে ডাকবে। গাড়ি ভাড়া করে আপনি কিছু স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় ছোট ছোট দল করে ঘুরতে বের হওয়া, কারণ ড্রাইভার প্রতি ব্যক্তির জন্য ১০/২০ সৌদি রিয়াল ভাড়া দাবি করে থাকে। এসব স্থান ভ্রমণ করার সময় অবশ্যই আপনার পরিচয়পত্র ও হোটেলের ঠিকানা সঙ্গে রাখুন। কারণ, অনেক সময় পুলিশ আপনার মদীনার পরিচয় পত্র চেক করতে পারে।

  • বাকিউল গরকাদ কবরস্থান: সকালে ও বিকালে যিয়ারতের জন্য খোলা থাকে।
  • কুবা মসজিদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজ হাতে স্থাপিত মসজিদ। বাসায় অযু করে এ মসজিদে দু’রাকাত নফল সালাত আদায় করলে ১টি উমরাহ সমান নেকি পাওয়া যায়।
  • উহুদ পাহাড়: দু’মাথা পাহাড়। ৩য় হিজরীতে উহুদের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হামযা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুসহ ৭০ জন সাহাবী শহীদ হন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁত ভেঙে যায়।
  • মসজিদে কিবলাতাইন: কিবলাতাইন মানে দু’টি কিবলা। সালাতরত অবস্থায় আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিবলা পরিবর্তন করে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে কা‘বার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ দেন। খালিদ ইবন ওয়ালিদ রোডে অবস্থিত।
  • জুমু‘আা মসজিদ: মদীনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০০ সাহাবী নিয়ে প্রথম জুমু‘আর সালাত যে স্থানে পড়েছিলেন সেখানে এই মসজিদ নির্মিত হয়।
  • গামামাহ মসজিদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে ঈদের সালাত পড়তেন। একবার তিনি এখানে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার সালাত পড়েছিলেন এবং তখনই বৃষ্টি হয়েছিল। মসজিদে নববীর সাথেই এ মসজিদের অবস্থান।
  • বিলাল মসজিদ: কুরবান রোডে অবস্থিত। মসজিদে নববীর খুব কাছে অবস্থিত, খেজুর মার্কেট-এর পাশে। তবেই এটার সাথে বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর কোনো সম্পর্ক নেই।
  • আবু বকর মসজিদ: এ স্থানে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়ি ছিল, পরবর্তীতে এখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এটি মসজিদে নববী সংলগ্ন।
  • উসমান ইবন আফফান মসজিদ: কুরবান রোড এ অবস্থিত।
  • উমার ফারুক মসজিদ: গামামাহ মসজিদ এর খুব কাছে অবস্থিত। মসজিদে নববী সংলগ্ন।
  • আলী মসজিদ: গামামাহ মসজিদ এর খুব কাছে অবস্থিত। মসজিদে নববীর পশ্চিমে অবস্থিত।
  • ইমাম বুখারী মসজিদ: মসজিদে নববীর উত্তরে অবস্থিত।
  • সালমান ফারসির কথিত বাগান: মসজিদে নববীর দক্ষিণে অবস্থিত খেজুর বাগান।
  • ইজাবা মসজিদ: মসজিদে নববীর পূর্ব উত্তর কোণে অবস্থিত।
  • কেন্দ্রীয় খেজুর মার্কেট: মসজিদে নববীর সন্নিকটস্থ বিলাল মসজিদ সংলগ্ন পাইকারী মার্কেট।
  • আল শাজারাহ মসজিদ: মদীনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে, ১২ কি.মি. দূরত্বে। যুল হুলাইফাতে অবস্থিত মীকাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা যাওয়ার পথে এ মসজিদে সালাত আদায় করতেন। এখানেই মাদীনাবাসীদের ইহরাম বাধতে হয়
  • আশা করা যায় আপনি আপনার ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়েছেন। আপনার জন্য কিছু কৌশলগত টিপস: আপনার মালামাল যদি বেশি হয় তাহলে আপনার মেইন লাগেজের ওজন এয়ারলাইনসের নিয়মানুসারে ৩০/৪০ কেজি করুন। অতিরিক্ত ওজন করবেন না কারণ এর জন্য আপনাকে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর দুই/তিনটি ছোট হ্যান্ড ব্যাগ নিতে পারেন, এতে সবমিলে সর্বোচ্চ ১৫/২০ কেজি পর্যন্ত ওজন করা যাবে। যদিও বিমানে ভিতর বহনের জন্য আদর্শ ওজন হলো ৭/১০ কেজি, হজের সময় এ বিষয়গুলো এয়ারলাইনস খেয়াল করে না ও কিছুটা ছাড় দেয়। অনেকের ব্যাগে কম ওজনের মালামাল থাকে, তাদের ব্যাগেও কিছু মালামাল দিয়ে দিতে পারেন। যমযম পানি পাওয়ার বিষয়টি আপনার এজেন্সির সাথে কথা বলে জেনে নিন কিভাবে ব্যবস্থা করে নেওয়া যাবে।
  • বিমানের শিডিউল বিলম্বের কারণে ফিরতি যাত্রা পরিকল্পনা মাফিক নাও হতে পারে, সেজন্য অস্থির না হয়ে ধৈর্য ধারণ করুন। প্রথমে আপনার এজেন্সির পরিবহণে করে মু‘আল্লিম অফিসে নিয়ে যাবে। আপনার এজেন্সি আপনাদের সবার পাসপোর্ট মু‘আল্লিম অফিস থেকে ফেরত নেবে এবং এরপর বিমানবন্দরে নিয়ে যাবে। জেদ্দা বিমানবন্দরে ওয়েটিং প্লাজায় অপেক্ষা করতে হতে পারে। আপনার এজেন্সি চেক করবে যে শিডিউল অনুসারে আপনাদের বিমান আছে কি না। বিমান আসতে দেরি হলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
  • আপনার পাসপোর্টের ট্রাভেল স্টিকার যদি থেকে যায় তবে তা উঠিয়ে ব্যাংক কাউন্টার থেকে ৩০/৬০ সৌদি রিয়াল উঠিয়ে নিতে পারেন।
  • এবার এয়ারলাইন্সের লাগেজ ওজন কাউন্টারে আপনার মেইন লাগেজটি জমা দিন। এখান থেকে আপনি বোর্ডিং পাস পাবেন। এটি যত্ন করে রেখে দিন। কিছু এয়ারলাইন্স হোটেল থেকেই লাগেজ নিয়ে কার্গোতে তুলে দেয়।
  • এবার ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাবেন। এখান থেকে প্রত্যেক হজ যাত্রীকে এক কপি করে কুরআন শরীফ দেওয়া হবে। এক কপি নিয়ে নেবেন অথবা কাউকে জিজ্ঞেস করুন যে কোথা থেকে কুরআন সংগ্রহ করতে হবে। এ বছর (২০১৫) থেকে বাংলা ভাষাতেও কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর পাবেন ইন-শাআল্লাহ।
  • ইমিগ্রেশন শেষে টার্মিনাল ভবনে প্রবেশ করবেন। এবার আপনার দেহ ও ছোট হ্যান্ড ব্যাগ স্ক্যান করা হবে। মনে রাখবেন ব্যাগে বডি স্প্রে, লোশন, ওজন পরিমাপক যন্ত্র, চাকু ও কাঁচি রাখবেন না। এগুলো নিয়ে নেবে।
  • এবার বোর্ডিং পাস দেখিয়ে ওয়েটিং জোনে প্রবেশ করুন। বিমান আসলে লাইনে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে বিমানে উঠবেন। আপনার নির্দিষ্ট আসনে অথবা যে কোনো আসনে বসে পড়ুন, কারণ বিমান ক্রু যাত্রী সংখ্যা গণনা করবে।

রানওয়েতে বিমান চলা শুরু করলে ক্রুর দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করুন এবং সিট বেল্ট বেঁধে নিয়ে বিমান উড্ডয়নের অপেক্ষা করুন। এবার বিমানযাত্রা এবং অভ্যন্তরীণ আতিথেয়তা উপভোগ করুন।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে