কাউকে যাদুর মাধ্যমে শারীরিকভাবে রোগী বানিয়ে দেয়া

এই যাদুর লক্ষণসমূহ

১ । শরীরের কোন অঙ্গে সর্বদায় ব্যাথা থাকা।

২। শরীরে ঝাকুনি বা খিচুনী এসে বেহুশ হয়ে যাওয়া।

৩। শরীরের কোন অঙ্গ অচল হয়ে যাওয়া।

৪ । সমস্ত শরীর নিজীব হয়ে যাওয়া।

৫ । পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কোন একটি কাজ না করা।

এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করতে হয় যে, এই লক্ষণসমূহ সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, তবে এর পার্থক্য নির্ণয়ের জন্যে রোগীর উপর কুরআন পড়ে ঝাড়লে রোগী যদি কোনরূপ খিচুনী অনুভব করে অবশ হয়ে যায়, অথবা সে বেহুশ হয়ে পড়ে অথবা শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয় অথবা মাথায় ব্যাথা অনুভব হয় তবে বুঝতে হবে যে, রোগীকে যাদু করা হয়েছে। আর এমনটি না হলে বুঝতে হবে যে এটা সাধারণ রোগ এর চিকিৎসা ডাক্তার দিয়ে করতে হবে।

এই যাদু কিভাবে হয়ে থাকে (কাউকে যাদুর মাধ্যমে শারীরিকভাবে রোগী বানিয়ে দেয়া)

এটা সবার কাছেই জানা যে, মানুষের মস্তিষ্ক সব অংশের মূল শরীর যে কোন অংশকে মস্তিষ্ক পরিচালনা করে এবং বিপদ আসলে বিপদ সংকেত দিয়ে অঙ্গকে রক্ষা করে। আর তা সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যেই হয়ে থাকে।

فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ

অর্থঃ "এটা আল্লাহর সৃষ্টি আর আল্লাহ ব্যতীত যে (সব মিথ্যা) মাবুদ রয়েছে তাদের সৃষ্ট কিছু আমাকে দেখাও।" (সূরা লোকমানঃ ১১)

যখন মানুষ এই ধরণের যাদুতে আক্রান্ত হয় তখন জ্বিন লোকটির মস্তিস্ককে আয়ত্বে নিয়ে আসে। অতঃপর যাদুকর যে অঙ্গের সমস্যা করতে বলে সেই জ্বিন সেই অঙ্গের সমস্যাই করে। অতএব হয়ত জ্বিন মানুষের শ্রবণ শক্তি অথবা দৃষ্টিশক্তির কেন্দ্র বিন্দুতে প্রভাব বিস্তার করে অথবা মস্তিষ্কের সঙ্গে সম্পর্ক যে কোন অঙ্গে রগ যার সম্পর্ক অঙ্গে প্রভাবিত করে এমতাবস্থায় অঙ্গ তিনটি অবস্থায় পতিত হতে পারেঃ

এর তিন অবস্থাঃ

১। হয়ত জিন আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে কোন অঙ্গে চালিকা শক্তি একেকবার নিস্তেজ করে দেয় তখন সে অঙ্গ সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে যায় ফলে সে রোগী সম্পূর্ণরূপে অন্ধ অথবা শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলা।

২। অথবা জিন আল্লাহর শক্তির দ্বারাই কোন অঙ্গেও চালিকা শক্তি আচল করে আবার কখনো ছেড়ে দেয় যার ফলে সে অঙ্গ কখনো ঠিক হয়ে যায় আবার পুনরায় সে আক্রান্ত হয়ে যায়।

৩ । অথবা রোগীর মস্তিষ্কের চালিকা শক্তি বরাবর চলমান থাকা অবস্থায় তার কোন অঙ্গ ছিনিয়ে নেয় তখন আর নড়াচড়া থাকে না। যার জন্যে অঙ্গসমূহের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় যদিও তা অবশ নয়। আর আল্লাহ তায়ালা যাদুকরদের সম্পর্কে বলেনঃ

وَمَا هُم بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ

অর্থঃ আর তারা আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কাউকে ক্ষতি করতে পারবে না। (বাকারাঃ ১০২)

এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যাদুকর আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কাউকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাই সমস্ত রোগ ব্যধি আল্লাহর ইচ্ছায় হয় এবং আল্লাহর ইচ্ছায় মুক্তি পায়। ঔষধ ব্যতীতও যে, ঝাড়ফুকের মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগমুক্তি হয়, অনেক ডাক্তারই তো মানতে চায় না। তবে বাস্তব প্রমাণ দেখার পর তারা মানতে বাধ্য হয় ।

এক ডাক্তার আমার কাছে এসে বলতে লাগল যে, আমি একটি ব্যাপারে এসেছি যা আমাকে আশ্চর্যাম্বিত করে ফেলেছে। আমি বললাম কি সেই ব্যাপার? সে বললঃ এক ব্যক্তি আমার কাছে তার একটি ছেলে নিয়ে আসল যে পোলিও রোগে আক্রান্ত অর্থাৎ তার বাচ্চাটির শরীরের আচল অবস্থা হয়েছিল। যখন আমি চেক-আপ করে জানতে পারলাম যে, সে মেরুদন্ডজনিত এমন রোগে আক্রান্ত যার কোন চিকিৎসা নেই। অপারেশনও বিফল; কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর লোকটি আমার নিকট আসলে আমি তার সেই চার হাত পা অচল ছেলেটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে বলেঃ আলহামদুলিল্লাহ এখন সে বসে এমনকি দেয়ালের উপর দিয়ে চলে ।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি তোমার সন্তানকে কার নিকট হতে চিকিৎসা করেছ?

উত্তরে সে বললঃ শায়খ ওহীদের কাছে।

ডাঃ বললঃ তাই আমি আপনার কাছে বিষয়টি জানতে এসেছি যে, আপনি তার চিকিৎসা কিভাবে করেছেন?

আমি সেই ডাক্তারকে বললাম, আমি কুরআনের আয়াত পড়েছি এবং কালো জিরার তেলের উপর ফু দিয়ে অবশ অঙ্গগুলিতে মালিশ করতে বললাম। আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। এসব আল্লাহর কৃপা আমার কাছে কিছুই নেই।

১ । যেমন আমি পূর্বে বর্ণনা করেছি অনুরূপ, রোগীর সামনে কোরআনের আয়াত তিনবার তেলাওয়াত করার পর রোগী বেহুশ হয়ে গেলে অনুরূপ পদ্ধতি অবলম্বন করে চিকিৎসা করতে হবে।

২। আর যদি রোগী বেহুশ না হয় আর সামান্য লক্ষণ কেবল দেখা দেয় তবে নিম্নের পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবেঃ ক্যাসেটে সূরা ফাতেহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা দুখান, সূরা জ্বিন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও রোগীকে দিবে। আর রোগী তা প্রত্যেকদিন তিনবার শুনবে।

এছাড়া রোগীকে কালো জিরার তেলের সাথে নিম্নের দুআ, আয়াত ও সূরাসমূহ পড়ে ফু দিয়ে দিবে এবং গুরুত্বের সাথে রোগীর কপালে ও ব্যথিত স্থানে সকাল-সন্ধ্যা মালিশ করতে বলবে।

সেই সব আয়াত ও সূরা এইঃ (১) সূরা ফাতেহা, (২) সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস

(৩) وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ এই আয়াতটি সাতবার পড়বে।

(৪) بسم الله أرقيك والله يشفيك من كلّ داء يؤذيك ومن كلّ نفس أو عين حاسد الله يشفيك
(৫) اللهم رب الناس أذهب البأس واشف أنت الشافي لا شفاء إلا شفاؤك شفاء لا يغادر سقما

এই আমল ষাট দিন পর্যন্ত করবে। সুস্থ হলে তো ভাল আর না হয় দ্বিতীয়বার উক্ত ঝাড়-ফুক করবে অতঃপর একই পদ্ধতি প্রদান করবে। দ্বিতীয়বারের মত অনুরূপভাবে যা তার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন সেভাবে পদ্ধতি গ্রহণ করবে।

এ ধরণের চিকিৎসার কতিপয় উদাহরণঃ এক মাস ব্যাপী এক মেয়ে কথা বলে না

এক মেয়ে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে এক মাস থেকে। সে নিজের ভাই এবং বাবার সাথে আমার নিকট আসল। তারা বললেন, তার মুখ এমনভাবে বন্ধ হয়ে গেছে যে, খাওয়া-দাওয়ার জন্যেই তার মুখ জোর করে খুলতে হয়। তারা বললেন, এমন অবস্থা তার ৩৫ দিন ব্যাপী । তারপর ওর উপর যখন কুরআন পড়লাম আর সে তা শ্রবণ করে কথা বলা শুরু করল আলহামদুলিল্লাহ। অতঃপর সে বাকশক্তি ফিরে পেলো।

এক মহিলা আমার কাছে এসে বলল, তার পায়ে অত্যান্ত ব্যাথা। আমি মনে করলাম যে, হয়তো তার পা কোন ব্যাধির কারণে এমন হয়েছে। কেননা সে একেবারেই পা উঠাতে পারছিল না। তবুও আমি ঝাড়-ফুক শুরু করলাম। সেই মহিলা সূরা ফাতেহা শোনামাত্রই বেহুশ হয়ে গেল। আর জ্বিন কথা বলতে লাগল, সে বললঃ সে এই মহিলার পা ধরে রেখেছে। আমি তাকে বললাম, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাইলে এই মহিলার ভেতর থেকে বেরিয়ে যাও। আলহামদুলিল্লাহ সেই মহিলা থেকে জ্বিন বের হয়ে গেল। আর সে হাটা শুরু করল।

এক ব্যক্তির চেহারা জ্বিন বাকা করে দিয়েছিল

একদিন এক ব্যক্তি আমার কাছে আসল যার চেহারা ডান দিক ঘুরানো ছিল। আমি যখন তাকে উক্ত ঝাড়ফুক করলাম তখন জ্বিন কথা বললঃ এই ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দিয়েছে যার জন্যে আমি তার চেহারা ঘুরিয়ে দিয়েছি। অতঃপর আমি জ্বিনকে ওয়াজ নসীহত করলাম যার ফলে আলহামদু লিল্লাহ জ্বিন সেই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিল। আর সেই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে দাড়াল ও তার মুখমণ্ডল ও সোজা হয়ে গেল।

এমন এক মেয়ের ঘটনা যার চিকিৎসায় ডাক্তারও অপারগ

একদিন এক ব্যক্তি এসে আমাকে বলল, তার মেয়ে হঠাৎ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে বেহুশ হয়ে যায় এরপর দু'মাস পর্যন্ত কথা বলতে পারে না । শুধু এখন শুনতে পায়। খাবার খেতে পারে না, আর না সে তার শরীরের কোন অঙ্গ নড়া-চড়া করে। বর্তমানে সে সৌদি আরবের আবহা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ডাক্তারগণ বলেছেন তার জন্য সকল প্রকার টেষ্ট করা হয়েছে; এমন কি একজন ডাক্তার বলেন তার সব রিপোর্ট ভাল; কিন্তু বুঝে আসছে না এর মূল তথ্য ও রহস্য। এখন সে কঠিন মুহুর্তে সময় কাটছে। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্যে তার গলায় ছিদ্র করে দেয়া হয়েছে। আর নাক দিয়ে পাইপের মাধ্যমে তার পেটে খাবার দেয়া হয় যাতে বাকী জীবন এভাবে চলতে পারে।

আমি চিকিৎসার জন্যে কারো কাছে যাই না; যদিও সে যে কেউ হোক; সে যেহেতু আমার এক প্রিয় বন্ধু এবং বড় আলেম শায়খ সাঈদ বিন মুসফির কুহিতানীর মাধ্যম নিয়ে আমার কাছে এসেছিল এজন্যে বাধ্য হয়ে আমাকে সাথে যেতে হয়।

হাসপাতালে প্রবেশের বিশেষ অনুমতি পাওয়ার পর উপরোক্ত মেয়ের চিকিৎসার জন্যে তার কাছে পৌছলাম। সেখানে দেখতে পেলাম যে, মেয়েটি বোবা হয়ে তার বিছানায় শুয়ে আছে। সে শুনতে ও দেখতে পায় মাত্র; কিন্তু বলতে পারে না, এক মাথা ছাড়া কোন কিছু নড়াতেও পারছে না এবং দুর্বল হয়ে এমন অবস্থায় পৌছেছে যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আমি তাকে কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে মাথায় না বোধক উত্তর দেয় । আমি বুঝতে পারলাম না তার কি হয়েছে এরপর আমি নামায পড়ার জন্যে মসজিদে গেলাম সেখানে নামায পড়ে তার সুস্থতার জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করি এবং ফিরে এসে আমি তার মাথায় হাত রেখে সূরা ফালাকু তেলাওয়াত করি এবং নিম্নে দু'আটি পড়িঃ

اللهم رب الناس أذهب البأس واشف أنت الشافي لا شفاء إلا شفاؤك شفاء لا يغادر سقما

অতঃপর মেয়েটি আল্লাহ তায়ালার করুণায় কথা বলতে লাগল। তার বাবা ও ভাই খুশিতে কেঁদে ফেলল। তার পিতা আমার মাথায় চুম্বন করতে চাইলে আমি তাকে বললাম যে, এতে আমার কোন কৃতিত্ব নেই। এসব আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানী। এরপর মেয়েটি বলল যে, আমি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে যেতে চাই। অতঃপর তারা তাকে বাড়িতে নিয়ে গেল।

এক অসুস্থ যুবক আমার কাছে আসল। যখন আমি তার সামনে কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলাম তখন তার ভীতরের জ্বিন কথা বলতে লাগলঃ সে যাদুর দায়িত্বপ্রাপ্ত তাকে অমুক ব্যক্তি যাদু করেছে। আর যাদুর জিনিসগুলো এক খুঁটির মধ্যে রাখা আছে। এরপর আমি জ্বিনকে বের হয়ে যেতে বললাম অতঃপর সে বের হয়ে গেল আলহামদু লিল্লাহ। আর রোগীর লোকজন খুঁটির নিচে কিছু ছিন্ন-ভিন্ন কাগজের টুকরা পেল যাতে কিছু কিছু অক্ষর লিখা আছে। তারা সেগুলো পানিতে নিক্ষেপ করে যাদুকে নিঃশেষ করলো। আলহামদুলিল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে গেল ।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে