সাধারণত যাদুকর এবং শয়তান এই কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হয় যে, যাদুকর কতক শিরকভুক্ত কাজ করবে অথবা প্রকাশ্য কুফুরি কাজ করবে। এর পরিবর্তে শয়তান যাদুকরের সেবায় নিয়োজিত হবে বা অন্য কাউকে তার অধীন করে দিবে যে তার সেবা করবে। আর চুক্তিটি হয়ে থাকে সাধারণত যাদুকর এবং জ্বিন শয়তানের গোত্র প্রধানের সাথে । সুতরাং থাকে। আর সেই জ্বিন অথবা শয়তান গোপনীয় তথ্য যাদুকরকে প্রদান করে, দুজনের মাঝে শক্রতা সৃষ্টি বা উভয়ের মাঝে মুহাব্বাত সৃষ্টি করিয়ে দিয়ে থাকে বা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়। অনুরূপ আরো অনেক কিছু সম্পাদন করিয়ে থাকে যা বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে ইনশাআল্লাহ ষষ্ঠ অধ্যায়ে। এভাবে যাদুকর জ্বিন ও শয়তানকে তার অধীনে নিয়ে খারাপ কাজ করে থাকে। অতঃপুর যদি জ্বিন কখনও আনুগত্য না করে তবে যাদুকর তাবিজের মাধ্যমে সে নেতা জিনের নৈকট্য লাভ করে এবং তার গুণ কীর্তন ও তার নিকট ফরিয়াদ করে তার (গোত্রের প্রধান জিনের) কাছে অভিযোগ করে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা না করে তার কাছেই সাহায্য চায়। অতঃপর সেই জ্বিন সরদার সেই সাধারণ জিনকে শাস্তি প্রদান করে এবং যাদুকরের আনুগত্যে বাধ্য করে।

এভাবে যাদুকর আর তার অনুগত জ্বিনের মাঝে বৈরী সম্পর্ক এবং শক্ৰতা ও সৃষ্টি হয়, আর এই জ্বিন যাদুকরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবোধ করে না এমনকি তার সন্তান ও ধন-সম্পদে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে এবং যাদুকরকেও অনেক কষ্ট দিয়ে থাকে। যেমনঃ স্থায়ীভাবে মাথা ব্যথা, ঘুম না আসা, রাতে ভয় পাওয়া ইত্যাদি। আর যাদুকরের সাধারণত সন্তানও জন্ম লাভ করে না। কেননা জ্বিন মাতৃগর্ভে শিশুকে মেরে ফেলে। আর এই বিষয় যাদুকরদের নিকট প্রসিদ্ধ। এমনকি যাদুকর সন্তানের আশায় যাদু করা থেকে বিরত থাকে। এক্ষেত্রে আমার একটি স্মরণীয় ঘটনা উল্লেখ করছিঃ

আমি এক যাদুতে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করছিলাম। যখন আমি তার উপর কুরআন পড়ছিলাম তখন যাদুর হুকুমপ্রাপ্ত জ্বিন সেই মহিলা রোগীর মুখের দ্বারা বলতে লাগল আমি এই মহিলার ভিতর থেকে বের হব না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন? তখন সে বলল যাদুকর আমাকে মেরে ফেলবে। আমি বললাম তুই এমন স্থানে চলে যা যেখানে যাদুকর পৌছতে পারবে না। উত্তরে জ্বিনটি বললঃ যাদুকর আমাকে খোজার জন্যে অন্য জ্বিন প্রেরণ করবে। তখন আমি বললাম তুই সত্য ও নিষ্ঠার সাথে তাওবা করে শিখিয়ে দিব যা তোমাকে কাফের জিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে। তখন সে বললঃ “আমি মুসলমান কখনও হব না; বরং আমি সব সময় খ্রিস্টান থাকব। আমি বললামঃ ধৰ্মগ্রহণে কোন বাধ্য করা নেই; কিন্তু তুই এখন এই মহিলা থেকে বের হয়ে যা। সে বলল কখনও না। আমি বললাম এখন আমি তোর উপর কুরআন পড়ব যে পর্যন্ত তুই জ্বলে না যাবি। এরপর আমি ওকে অনেক মারলাম। যার ফলে সে কাদতে লাগল এবং বলতে লাগল যে, যাচ্ছি এখুনি যাচ্ছি।

অবশেষে আল-হামদুলিল্লাহ সেই জ্বিন মহিলা থেকে বের হয়ে চলে গেল। আল্লাহ সব কিছু থেকে পবিত্র ও মহান এটা সত্য যে, যাদুকর যত বেশি কুফুরী করবে জ্বিন তার আনুগত্য ততবেশি করবে। আর তা না হলে আনুগত্য করে না।

জিন হাজির করার অনেক প্রকার রয়েছে। আর প্রত্যেক প্রকারেই স্পষ্ট শিরক বা কুফরী জড়িত রয়েছে। সেগুলির কতিপয় উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ। নিম্নে আটটি পন্থা ও প্রত্যেক পন্থায় শিরকের কি ধরণ কিছু সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হবে। পরিপূর্ণ বর্ণনা দেয়া হবে না। যাতে কেউ তা শিখে ব্যবহার না করতে পারে। যার কারণে তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিলুপ্ত করে উল্লেখ করা হবে। আর এগুলি এজন্যেই বর্ণনা হলো, কেননা কোন কোন মুসলমান কুরআনী চিকিৎসা ও যাদুর সাহায্যে চিকিৎসার পার্থক্য করতে পারে না। অথচ প্রথমটি হলো ঈমানী চিকিৎসা আর দ্বিতীয়টি হলো শয়তানী চিকিৎসা।

আর বিষয়টি আরো জটিল হয়ে যায় যখন চতুর যাদুকর স্বীয় কুফরী যাদু মন্ত্রকে চুপে চুপে পড়ে; আর যখন এর মাঝে কোন আয়াত হয় তখন তা রুগীকে স্বজোরে পড়ে শুনায় যাতে সে মনে করে তাকে কুরআন দ্বারা চিকিৎসা করা হচ্ছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি তা নয়। এজন্যে রুগী যাদুকরের প্রত্যেক কথা বিশ্বাস করে মানা শুরু করে। সুতরাং এখানে এই পন্থাগুলো বর্ণনার এটিই উদ্দেশ্য যাতে মুসলমানগণ ভ্ৰষ্টতা হতে রক্ষা পায় এবং উক্ত ভন্ড অপরাধীদেরকে চিনতে পারে।

যাদুকরের জিন হাজির করার পদ্ধতি - প্রথম পদ্ধতিঃ শপথ করা

যাদুকর একটি অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে আগুন জ্বালায় । আগুনে তার উদ্দেশ্য মত এক ধরণের ধূপ দেয়। সে যদি পরস্পর বিভেদ সৃষ্টি বা শক্ৰতা-হিংসা বা এমন কিছু ইচ্ছা পোষণ করে তবে আগুনে সে দূর্গন্ধযুক্ত ধূপ নিক্ষেপ করে। আর যদি পরস্পর মুহাব্বত সৃষ্টি বা স্ত্রীর প্রতি স্বামীকে আকৃষ্ট করা বা অন্য যাদু নষ্ট করার ইচ্ছা হয় তবে সে আগুনে সুগন্ধযুক্ত ধূপ মিশ্রণ করে। তারপর যাদুকর নির্ধারিত শিরকী মন্ত্র পড়তে থাকে। যাতে সে জ্বিনদের সরদারের দোহায় বা শপথ দেয়, তার মহত্বের দোহায় দিয়ে চায়; এমন কি তার মন্ত্রে আরো বিভিন্ন ধরণের শিরক অন্তর্ভুক্ত থাকে যেমনঃ বড় জিনের সম্মান ও বড়ত্বের বর্ণনা, তার নিকট ফরিয়াদ ও সাহায্য প্রার্থনা ইত্যাদি।

শর্ত হলো এমতাবস্থায় যাদুকরকে নাপাক থাকতে হবে বা নাপাক কাপড় পরে থাকতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তার কুফ্রী মন্ত্র পাঠ শেষ হওয়া মাত্রই কুকুর বা অজগর বা অন্য কোন আকৃতিতে ভূত-প্রেতের আবির্ভাব ঘটে। অতঃপর যাদুকর যা তার ইচ্ছা তাকে নির্দেশ করে। আবার কখনও তার সামনে কোন কিছুই প্রকাশ পায় না। তবে সে তার একটি শব্দ শুনে। আবার কখনও কোন কিছুই শুনে না, তবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কোন চিহ্নতে যাদুর গিরা লাগায়। যেমনঃ তার চুলে বা তার কাপড়ের টুকরাই যাতে তার গায়ের গন্ধ থাকে ইত্যাদি। এরপর সে যা ইচ্ছা সে অনুযায়ী জিনকে হুকুম করে ।

উক্ত পদ্ধতি হতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি ফুটে ওঠেঃ

১। জিন অন্ধকার কক্ষ পছন্দ করে।

২। জিন ধূপের গন্ধ গ্রহণ করে, যাতে আল্লাহর নাম না নেয়া হয়।

৩। এ পদ্ধতিতে স্পষ্ট শিরক হলো, জিনের দোহায় বা শপথ ও তাদের নিকট ফরিয়াদ ও সাহায্য প্রার্থনা করা।

৪ । জিন নাপাকী পছন্দ করে এবং শয়তান নাপাকের নিকটতম হয়ে থাকে।

যাদুকর একটি পাখি বা জন্তু বা মুরগি বা কবুতর বা অন্য কিছু জিনের আবদার অনুযায়ী হাজির করে। সাধারণত যা কাল রঙের হয়ে থাকে। কেননা জিন কাল রং পছন্দ করে। তারপর আল্লাহর নাম না নিয়ে তা যবাই করে। অতঃপর কখনও সে রক্ত রুগীকে মাখায়। কখনও এরূপ না করে পরিত্যাক্ত গৃহে বা কূপে বা মরুভূমিতে নিক্ষেপ করে। যেগুলিতে সাধারণত জিন বসবাস করে থাকে। নিক্ষেপের সময় আল্লাহর নাম নেয় না। এরপর স্বীয় ঘরে ফিরে এসে শিরকী মন্ত্র পড়ে। তারপর জিনকে যা ইচ্ছা হুকুম করে ।

উক্ত পদ্ধতির বিশ্লেষণঃ এ পদ্ধতিতে দু’ভাবে শিরক হয়ে থাকে।

প্রথমতঃ জিনের উদ্দেশ্যে যবাই করা। যা পূর্ব ও পরবর্তী সকল ইমামের ঐক্যমতে হারাম; বরং তা হলো শিরক। কেননা আল্লাহ ব্যতীত কারো নামে যবাই করা কোন মুসলমানের জন্য খাওয়া জায়েয নয়। আর যবাই করা তো বহুদূরের ব্যাপার তা সত্বেও কোন কোন অজ্ঞরা প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক স্থানে এ ধরণের জঘন্য কাজ করে থাকে।

এক্ষেত্রে ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেনঃ ওয়াহাব আমাকে বলেনঃ কোন এক খলিফা একটি ঝর্ণা কাটায়। যখন সে তা প্রবাহিত করাতে চায়। সে জিনের জন্য সেখানে যবাই করে, যাতে তারা তার পানি ভূ-গর্ভে না নামিয়ে দেয়। অতঃপর তা লোকদেরকে খাওয়ায় । এ খবর ইবনে শিহাব আয যুহরীকে পৌছিলে তিনি বলেনঃ সে তা যবাই করেছে তার উদ্দেশ্যে, যার উদেশ্য যবাই করা হালাল নয়; আবার তা লোকদেরকে আহার করিয়েছে যা তাদের জন্য হালাল নয়; বরং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করেছেন ঐ জিনিস খেতে যা জিনের উদ্দেশ্যে যবাই করা হয় ইত্যাদি। (আহকামুল মারজানঃ ৭৮)

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আলী বিন আবু তালেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার বর্ণনায় বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবাই করল আল্লাহ তার প্রতি লা'নত করুন।”

দ্বিতীয়তঃ শিরকী মন্ত্ৰঃ আর তা হলো, ঐ সমস্ত শিরকী কালাম যা জিন হাজির করার সময় সে উপস্থাপন করে থাকে, যা স্পষ্ট শিরক। যেমনঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রাহেমাহুল্লাহ) তার কিতাবের অনেক স্থানে উল্লেখ করেন। (আল ইবানা ফী উমুমির রিসালা)

এটি অতি নিকৃষ্টতম পদ্ধতি। এতে শয়তানের এক বড় দল অংশ নেয় ও যাদুকরের খেদমত করে এবং তার হুকুম বাস্তবায়ন করে। কেননা যাদুকর এতে সর্ববৃহৎ কুফরী ও কঠিনভাবে নাস্তিকের পরিচয় দেয়।

পদ্ধতির বিশ্লেষণঃ যাদুকর (আল্লাহর লা'নত হোক) জুতা পায়ে কুরআন মাজীদ পদদলিত করে তা নিয়ে পায়খানায় প্রবেশ করে। অতঃপর পায়খানায় কুফরী কালাম পড়ে একটি কক্ষে ফিরে আসে এবং জিনকে যা ইচ্ছা হুকুম করে। জিন দ্রুত তখন তার অনুসরণ করে ও হুকুম পালন করে থাকে। আর জিন তা করে থাকে শুধুমাত্র যাদুকরের মহান আল্লাহর সাথে কুফরী করার জন্য। এভাবে সে শয়তানের ভাইয়ে পরিণত হয় এবং স্পষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। যার ফলে তার প্রতি আল্লাহর লা'নত বর্ষিত হয়।

এ পদ্ধতির যাদুকরের সাথে বেশ কিছু কবীরা গুনায় পতিত হওয়ার শর্তারোপ করা হয়। যেমনঃ যা কিছু উল্লেখ হয়েছে তা ছাড়াও হারাম কাজ সমূহে পতিত হওয়া, সমকামিতা, ব্যাভিচার, ধর্মকে গালি দেয়া ইত্যাদি। এসবগুলি করে থাকে শয়তানের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ।

এ পদ্ধতিতে মালাউন যাদুকর কুরআনের সূরা ঋতুস্রাবের (হায়েজের) রক্ত দ্বারা বা অন্য কোন অপবিত্র কিছু দ্বারা লিখে; তারপর শিরকী মন্ত্র পড়ে, যার ফলে জিন হাজির হয়। এরপর তার যা ইচ্ছা তাকে হুকুম করে।

এ পদ্ধতি যে স্পষ্ট কুফরী তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা কোন সূরা এবং কোন আয়াতকে উপহাস করা আল্লাহর সাথে কুফরী। আর যেখানে তা অপবিত্র জিনিস দ্বারা লিখা হয়, আল্লাহর নিকট আমরা এ অবমাননা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং তার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের অন্তরে ঈমানকে সুদৃঢ় করেন ও ইসলামের উপর মৃত্যুদান করেন ও নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে হাশর করেন। (আমিন)

মালাউন যাদুকর এ পদ্ধতিতে কুরআনের সূরাকে উল্টা অক্ষরে লিখে থাকে। অর্থাৎ শেষ হতে প্রথম, অতঃপর শিরকী কালাম বা মন্ত্র পড়ে, যার ফলে জিন হাজির হয় ও তাকে তার হুকুম প্রদান করে।

এ পদ্ধতিও তাতে শিরক ও কুফর থাকার কারণে হারাম।

এ পদ্ধতিকে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিও বলা হয়। কেননা যাদুকর নির্ধারিত এক তারকা উদয়ের উপেক্ষায় থাকে। অতঃপর সে তাকে সম্বোধন করে যাদু মন্ত্র পড়তে থাকে। তারপর অন্যান্য শিরকী ও কুফরী কালাম পড়তে থাকে। যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। তারপর সে এমনভাবে নড়া-চড়া করে যাতে সে ধারণা পোষণ করায় যে, সে উক্ত তারকার আধ্যাত্মিকতার ভিত্তিতে তা করছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহ ব্যতীত তারকার ইবাদত করছে। যদিও এ জ্যোতিষী বুঝতে পারেনা যে, তার এ কর্ম আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত ও অন্যের মহত্ব প্রকাশ হয়। এরপর শয়তানরা তার নির্দেশে সাড়া দেয়; আর সে মনে করে যে, এ তারকায় তাকে এসবে সাহায্য করে। অথচ উক্ত তারকার এ সম্পর্কে কিছুই অবগতি নেই।

যাদুকররা মনে করে থাকে যে, এ যাদু আর খুলবে না যে পর্যন্ত দ্বিতীয়বার প্রকাশ না পাবে। (এ বিশ্বাস একান্তই যাদুকরদের; কিন্তু কুরআনের চিকিৎসা দ্বারা এ যাদু আল্লাহর ফজলে নষ্ট করা যায়।) আর সত্যই কোন কোন তারকা বছরে মাত্র একবারই প্রকাশ পায়। সুতরাং যাদুকররা তার প্রকাশের অপেক্ষায় থাকে ও পরে সে তারকার নিকট ফরিয়াদ ও সাহায্য কামনা করে মন্ত্র পড়তে থাকে যাতে তাদের যাদু খুলে দেয়।

নিঃসন্দেহে এ পদ্ধতিও আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট সাহায্য প্রার্থনা ও তার বড়ত্বের প্রকাশের জন্য শিরক ও কুফুরী।

এ পদ্ধতিতে যাদুকর ছোট এমন একটি বালককে হাজির করে যে, এখনও প্রাপ্ত বয়সে পৌছেনি। আর সে যেন বিনা ওযু হয় তারপর সে বালকের বাম পাঞ্জা ধরে তার হাতে এরূপ চতুর্ভূজ অংকন করে।



 


অতঃপর এই চতুর্ভূজের পার্শ্বে শিরকী যাদুমন্ত্র লিখে। আর এ যাদুমন্ত্র সে তার চার কর্ণারে লিখে থাকে। অতঃপর বালকের হাতের তালুতে চতুর্ভূজের মধ্যখানে কিছু তৈল, একটি নীল ফুল বা কিছু তৈল ও নীল কালি রাখে । এরপর আবার অন্য এক মন্ত্র লিখে একক অক্ষর দ্বারা এক লম্বা কাগজে, তারপর সে কাগজ বালকটির চেহারার উপর ছাতার আকৃতিতে রাখে। তার উপর পরিয়ে দেয় একটি টুপী যাতে তা ঠিক থাকে। তারপর বালকটিকে মোটা কাপড় দ্বারা পুরোপুরি আবৃত করে ফেলে। এমতাবস্থায় বালকটি তার তালুর দিকে তাকাতে থাকে; কিন্তু ভিতরে অন্ধকার হওয়ার কারণে কিছু দেখতে পায় না। এরপর মালাউন যাদুকর কঠিন প্রকৃতির কুফরী পাঠ করতে থাকে। তারপর বালকটি হঠাৎ করে আলো দেখতে পায় ও দেখে যে তার হাতের তালুতে একটি ছবি নড়া-চড়া করছে। অতঃপর যাদুকর বালককে জিজ্ঞাসা করে কি দেখছ? বালক জবাব দেয় আমি আমার সামনে এক ব্যক্তির ছবি দেখছি।

যাদুকর বলেঃ তাকে বলঃ তোমাকে যাদুকর বা পীর সাহেব এই এই বিষয়ে বলছে। এরপর ছবিটি হুকুম অনুযায়ী নড়া-চড়া করতে থাকে। এ পদ্ধতি তারা সাধারণত হারানো বস্তু খোজার জন্য ব্যবহার করে থাকে।

নিঃসন্দেহে এ পদ্ধতিও শিৱক, কুফর ও অবোধগম্য তন্ত্ৰ-মন্ত্রে ভরা।

এ পদ্ধতিতে যাদুকর রুগীর নিকট হতে তার কোন চিহ্ন তলব করে। যেমনঃ রুমাল, পাগড়ী, জামা বা এমন কোন ব্যবহৃত জিনিস যাতে রুগীর গায়ের গন্ধ পাওয়া যায়। তারপর সে রুমালের এক পাশ্বে গিরা দেয়। এরপর চার আঙ্গুল পরিমাণ পর খুব শক্ত করে রুমালটি ধারণ করে সূরা কাউসার বা অন্য যে কোন ছোট একটি সূরা স্বজোরে পড়ে চুপি চুপি শিরকী মন্ত্র পড়ে। তারপর জিনকে ডাকতে থাকে ও বলতে থাকেঃ যদি তার রোগ জিনের কারণে হয়ে থাকে তবে সে রুমাল (বা কাপড়) টি ছোট করে দাও। যদি তার রোগ বদনজরের কারণে হয় তবে তা লম্বা করে দাও । আর যদি সাধারণ ডাক্তারী কোন রোগ হয় তবে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও। এরপর সেটি পুনরায় পরিমাপ করে যদি তা চার আঙ্গুলের চেয়ে লম্বা পায় বলেঃ তুমি হিংসুকের বদনজরে আক্রান্ত হয়েছো। যদি তা ছোট পায় তবে বলে যে, তুমি জিনের আসরে পতিত হয়েছ। আর যদি অনুরূপ পায় আঙ্গুলই থাকে তবে বলেঃ তোমার নিকট কিছু নেই। তুমি ডাক্তারের নিকট যাও।

এই পদ্ধতির বিশ্লেষণঃ

১। রুগীর মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করে দেয়া, জোরে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে যে, সে কুরআনের দ্বারা তার চিকিৎসা করছে অথচ সে তখনই চুপে চুপে মন্ত্র পড়ে থাকে।

২। জিনের নিকট ফরিয়াদ ও সাহায্য কামনা এবং তাদেরকে আহবান করা ও তাদের নিকট প্রার্থনা করা। অথচ এগুলি শিরক।

৩ । জিনদের মাঝে অনেক মিথ্যা পাওয়া যায়। অতএব আপনি কিভাবে বুঝবেন যে, এ ব্যাপারে এই জিনের কথা সত্য না মিথ্যা। আমরা কোন কোন যাদুকরের কথা ও কাজকে কখনও কখনও পরীক্ষা করেছি, তাতে দেখা গেছে, সে কখনও সত্য বলেছে; কিন্তু অধিকাংশই মিথ্যা। এমনও হয়েছে যে, আমাদের নিকট কোন রুগী এসে বলেছে, তাকে যাদুকর বলেছেঃ তোমাকে বদ নজর লেগেছে। অথচ যখন তার উপর কুরআন তেলাওয়াত করা হয়েছে তখন জিন কথা বলে উঠেছে। তা আসলে বদনজর নয়। এমন অনেক অনেক ধরণের পদ্ধতি আরো রয়েছে যা আমরা জানি না।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »