আর-রাহীকুল মাখতূম উহুদ যুদ্ধ (غَزْوَةُ أُحُدٍ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) ১ টি
আবূ সুফইয়ানের আনন্দ ও উমার (রাঃ)-এর সাথে কথোপকথন (شَمَاتَةُ أَبِيْ سُفْيَانَ بَعْدَ نِهَايَةِ الْمَعْرِكَةِ وَحَدِيْثِهِ مَعَ عُمَرَ):

মুশরিকরা প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে ফেললে আবূ সুফইয়ান উহুদ পাহাড়ের উপর দৃশ্যমান হল এবং উচ্চৈঃস্বরে বলল, ‘তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (ﷺ) আছে কি?’ মুসলিমরা কোন উত্তর দিলেন না। সে আবার বলল, ‘তোমাদের মধ্যে আবূ কুহাফার পুত্র আবূ বাকর (রাঃ) আছে কি?’ তাঁরা এবারও কোন জবাব দিল না। সে পুনরায় প্রশ্ন করে, ‘তোমাদের মধ্যে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আছে কি?’ সাহাবীগণ এবারও উত্তর দিলেন না। কেননা, নাবী (ﷺ) তাদেরকে উত্তর দিতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। আবূ সুফইয়ান এ তিন জন ছাড়া আর কারো ব্যাপারে প্রশ্ন করে নি। কেননা, তার ও তার কওমের এটা খুব ভালই জানা ছিল যে, ইসলাম এ তিন জনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মোট কথা, যখন কোন উত্তর পাওয়া গেল না তখন সে বলল, ‘চলো যাই, এ তিন জন হতে অবকাশ লাভ করা গেছে।’ এ কথা শুনে উমার (রাঃ) আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওরে আল্লাহর শত্রু। যাদের তুই নাম নিয়েছিস তাঁরা সবাই জীবিত রয়েছেন এবং এখনো আল্লাহ তোকে লাঞ্ছিত করার উৎস বাকী রেখেছেন।’ এরপর আবূ সুফইয়ান বলল, ‘তোমাদের নিহতদের মুসলা করা হয়েছে অর্থাৎ নাক, কান ইত্যাদি কেটে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরূপ করতে আমি হুকুমও করিনি এবং এটাকে খারাপও মনে করিনি।’ অতঃপর সে চিৎকার করে বলল,أعْلِ هُبَل ‘অর্থাৎ হুবল (ঠাকুর) সুউচ্চ হোক।’

নাবী (ﷺ) তখন সাহাবীদেরকে বললেন, ‘তোমরা জবাব দিচ্ছ না কেন? তারা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমরা কী জবাব দিব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল,‏‏(‏قُوْلُوْا‏ :‏ اللهُ أَعْلٰى وَأَجَلُّ‏) অর্থাৎ ‘আল্লাহ সুউচ্চ ও অতি সম্মানিত।’ আবার আবূ সুফইয়ান চিৎকার করে বলল,لَنَا الْعُزَّى وَلاَ عُزَّى لَكُمْ অর্থাৎ আমাদের জন্যে উযযা (প্রতিমা) রয়েছে, তোমাদের জন্যে উযযা নেই।’

নাবী (ﷺ) পুনরায় সাহাবীদেরকে বললেন, ‘তোমরা উত্তর দিচ্ছ না কেন?’ তারা বললেন, ‘কী উত্তর দিব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল,‏‏(‏قُوْلُوْا‏:‏اللهُ مَوْلاَنَا، وَلاَ مَوْلٰي لَكُمْ‏)‏‏ অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের মাওলা এবং তোমাদের কোন মাওলা নেই।’

অতঃপর আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘কতই না ভাল কাজ হল! আজকের দিনটি বদর যুদ্ধের দিনের প্রতিশোধ। আর যুদ্ধ হচ্ছে বালতির ন্যায়।’[1]

উমার (রাঃ) এ কথার উত্তরে বলেন, ‘সমান নয়। কেননা আমাদের নিহতরা জান্নাতে আছেন, আর তোমাদের নিহতরা জাহান্নামে আছে।’

এরপর আবূ সুফইয়ান বলল, ‘উমার (রাঃ) আমার নিকটে এসো।’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন, ‘যাও, দেখা যাক কী বলে?’ উমার (রাঃ) নিকটে আসলে আবূ সুফইয়ান তাঁকে বলে, ‘আমি তোমাকে আল্লাহর মাধ্যম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, ‘আমরা মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে হত্যা করেছি কি?’ জবাবে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! না, বরং এখন তিনি তোমাদের কথা শুনছেন।’ আবূ সুফইয়ান তখন বলল, ‘তুমি আমার নিকট ইবনু কামআর হতে অধিক সত্যবাদী।’[2]

[1] অর্থাৎ কখনও একদল জয় যুক্ত হয় এবং কখনও অন্যদল। যেমন বালতি একবার একজন টেনে তোলে, আরেকবার অন্যজন।

[2] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৯৩-৯৪ পৃঃ, যাদুল মা‘আদ, ২য় খন্ড ৯৪ পৃ: এবং সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৫৭৯ পৃঃ।